somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রস্থান,, আলো-ছায়া অন্ধকারে......

১১ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোখের কোল দিয়ে গড়িয়ে পরছে স্বচ্ছ রংহীন অণুগুলো। তবুও আমি ভাবছি বোধহীন আমার অনুভূতি। আমি শুয়ে আছি। আধো অন্ধকার চারপাশ। এমন নয় যে আমি বুঝতে পারছি না আমার চারপাশের শব্দগুলো সবই অপার্থীব। কিংবা আমার এখনকার অবস্থায় আমার অসেপাশের কোনকিছুই আমার জানতে পারাটা ঠিক স্বাভাবিক না। তবুও কিভাবে যেন আমি ঠিক বন্ধ চোখেই বুঝতে পারছি চারপাশের আলো-ছায়ার খেলা। ঠিকই শুনতে পাচ্ছি আমার পাশের ছোট্ট কটে শোয়ানো এক নবজাতকের কান্না। আর কান্নার সাথে সাথেই অসার আমার এই শরীরেও কোথাও যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে।

আমি শুয়ে আছি একটা কাঁচ ঘেরা ঘরে। ঘরের চারপাশে একটা অপরিচিত ঘ্রাণ। কিছু অশরীরি স্পন্দন যেন আমায় ঘিরে। কারা যেন আমায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে প্রতিক্ষণে। কিন্তু এই বোধহীনতায় আমার কোন শস্তি নেই।
কোন এক মুহূর্তের একটা স্থীর চিত্রে আটকে গেছি আমি আর আমার অস্তিত্মরা।
তবুও এক নতুন কন্ঠের চিৎকার আমার বোধহীন শরীরকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। আমি ফিরে যাচ্ছি কয়েক মুহূর্ত আগের অদ্ভুত রকমের সত্যি সময়টাতে।
কি যেন একটা সুর ভেসে আসছিলো সেই সময়টায়। কেউ বোধহয় বাঁশি বাজাচ্ছিলো দূরে। আমি কি একটু অসাবধান ছিলাম?কিংবা হয়ত ঠিক নিজের কথা ভাবিনি সেই মুহুর্তটিতে। তারপর যেন ঢেউ ভাঙছিলো ভেতরে আমার। তারপর কেউ একজন!!
না না কেউ একজন কেন??আমার খুব কাছের কেউ।
আমাকে তো বলা হয়েছিলো একটা আগমণ বার্তার কথা। বলা হয়েছিলো কোন সংবাদ!!
কোথাও একটা ভুল হয়েছে বটে। কেন নয়ত আমার প্রিয় মুখগুলো আমার কানে কানে জানিয়ে গেল যে সে এসেছে।
কিন্তু এতে ভুলটা কোথায়?? ভুল। হ্যা ভুল বোধহয় সেই মুখগুলোয়। হ্যা হ্যা আমি জানি ভুল আমার দেখা মুখগুলোয় কারণ এদের আমি দেখেছি। বহুকাল হলো এদের সবাইকে আমি চলে যেতে দেখেছি এক অজানার উদ্দেশ্য। একেকটা ভিন্ন সময়ে এরা সবাই চলে গেছে আমাকে ছেড়ে। তবে এরা সবাই কি করে আমার চারপাশে??
কি করে তারা ঠিক যেন একটা আমন্ত্রণ রক্ষার্থে আজ আমার বাড়ি?
আর যার জন্যে আমার এত অপেক্ষা.....

কেউ যেন কিছু বলার চেষ্টা করছে আমাকে?
কেউ কি কিছু জানাতে চাইছে?
কি আশ্চর্য অন্ধকারে ভেষে বেড়ানো আনন্দ ধ্বনিদের আমি ঠিক শুনতে পাচ্ছি। তবুও কেন মনে হচ্ছে একটা বোবা শব্দ যেন কোন আকুতি নিয়ে আমার পথ চেয়ে আছে। কেন আমি তাকে শুনতে পারছি না??....কেন?? রক্তের অভাবে ক্লান্তিতে নুয়ে আসা আমার হৃদপিন্ডে কেউ যেন অবিরাম কড়া নেড়ে যাচ্ছে। কিসের এত আকুতি.......কে তুমি??
আমার তো আজ কিছু অর্জন করার কথা। আজ বোঝার কথা কোন বিশেষ শব্দের মানে। আমি ছিলাম। আমায় একটা ঘরে নিয়ে এল ওরা।ভেতরের ঢেউ ভাঙ্গা তখনও চলছিলো অবিরাম। শুইয়ে দিলো শক্ত বিছানায়। আমি চিৎকার করতে চাইছিলাম। কষ্টের ভয়াবহ সবগুলো নীল শিরা উৎসব করছিলো আমার অবয়বে। তবুও আমি ভেঙে পরিনি। কারণ আমি জানতাম আজ আমার কিছু অর্জন করার কথা।
আমায় ঘিরে ছিলো সেই একজন।
সে শক্ত করে ধরে ছিলো আমার হাত।
যেন সে বলতে চাইছিল,, ভয় পেওনা এইতো আমি পাশেই আছি।
তারপর একসময় ঠিক সেই নবজাতক চিৎকার করে জানান দিলো তার আগমণ।
আমি যেন বিহ্বল তখন।
তারপর,,,,,,তারপর যেন সময় হঠাৎ থমকে গেলো।
তারপরের ক্ষণগুলোয় আমি যেন আটকে গেলাম........
আটকে গেলাম আমি নতুন শিশুর কান্নায়। সময় আমার হাত থেকে আমার অস্তীত্মের সমস্ত অনুভূতি কেড়ে নিলো একে একে। কিন্তু তবুও......তবুও ক্ষণে ক্ষণে আমার ভেতর থেকে জন্ম নেয়া নবজাতক বোবা কন্ঠে আমায় ডাকতে থাকলো বিশ্রাম হীন ভাবে।
আর আমি??
কাঁচ ঘেরা এই ঘরের শক্ত বিছানাটায় পরে থাকলাম অসার হয়ে।
একটু আগে জন্ম নেয়া নবজাতককে জানিয়ে দিলাম পৃথীবির ভয়ালতম সত্য। ধীরে ধীরে আমি পা বাড়ালাম অন্ধকারের দিকে।
আমার চারপাশের মুখগুলোর আনন্দ ধ্বনি বেড়েই চললো। শুধু যেতে যেতে বারবার আমার মনে হলো,,,
একবার।একবার কি একটু হলেও দেখা যায়।
পথে আমি যেন বারবার পেছন ফিরে তাকালাম। বারবার।
একবার কি দেখতে পারবো না ছোট্ট খাটে শোয়ানো আমার নাড়ি ছেড়া টুকরো মেঘের দলাটাকে।

তারপর সেই আলো-ছায়া অন্ধকারে,,
উত্তাপহীন আমার শরীর কি বুঝতে পারছিলো আমার প্রস্থান.......।।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৩:২৮
২৫টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×