চোখের কোল দিয়ে টপটপ করে জল গড়াচ্ছে মেয়েটার। জানালার কার্নিশে ভর দিয়ে গালে হাত দিয়ে বসা মেয়েটা বাইরের নিকেশ কালো অন্ধকারে ঠিক কি দেখছে যদিও সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না তবু সে যে বাসের ভেতরকার কোলাহল থেকে বহু,,, বহু দূরে এটা অনুধাবন করা যাচ্ছে সহজেই। চুলগুলো ওর চুড়ো খোপা করে বাধা তবুও কেমন করে যেন অবাধ্য এক গোছা চুল বাতাসের সাথে দুষ্টুমি করে বারবারই ওর চোখে গিয়ে পরছিলো,,,, কিন্তু মেয়েটা যে তাতেও স্থীর।
দৃশ্য দুই:
দৃশ্যটা দেখতে সাদাকালো আবার সেই সাথে কিছুটা যেন ধূসরও,,,, তবে শব্দগুলো ঠিক যেন আলোর মতই তীক্ষ্ণ.........
ডোরবেলটা বাজছে খুব ঘন ঘন। এই মাঝরাতে এমন ঘন ঘন ডোরবেল বাজবে কেন এটা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। ও ঘর থেকে মা-বাবার হইচই ও কানে এলো সাথে। একটু কৌতুহল হলেও উঠে কি হচ্ছে সেটা দেখব কি দেখব না এমনটা ভাবতে ভাবতেই দেখি মা আমার দরজায় নক করে উঠতে বলছে। আমার উঠে নিজের ঘর থেকে বের হয়ে লিভিং রুম অব্দি আর যেতেও হলো না তার আগেই সম্রাট, শাহানশাহ, ফারজানা আপু, সায়মন সব হুরমুর করে পারলে গায়ের উপরই উঠে এলো।
কি ব্যাপার কি হচ্ছে কি এই মাঝ রাতে??
আমার মায়ের বান্ধবীর চার ছেলে এবং তার ননদ ও তার পরিবারের এমন মাঝ রাত্রিতে বাসায় আগমনের কারনটা কি সেটা নিয়ে আমরা বিন্দুমাত্র কৌতুহলী হওয়ার আগেই মিমি আন্টি হাসতে হাসতে যা বললেন তার সারমর্ম হলো,, আজকে নাকি এই শতাব্দীর বিশালতম চাঁদটি ঢাকার আকাশে ঝুলে রয়েছে আর সেই খুশিতে চৌধুরি আঙ্কেল একটা বিশাল বড় মাইক্রোবাস জোগার করেছেন। এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে ডেকে তুলছেন কারন আমরা আজ চন্দ্রীমায় যাব জোছনা উৎসব করতে!!
অদ্ভুত সুন্দর একটা রাত,,,,
আমি, আমরা একটা মাইক্রো আর একটা চাঁদ।
চন্দ্রীমার লেকের সিড়িতে খালি পায়ে বসে থেকে কালো পানিতে যখন চুপটি করে মন খারাপ করা আকশটা দেখছিলাম কিংবা ছুটছিলাম যখন গাছগুলোর ফাঁকে নুপুর পায়ে কানামাছি খেলায়,,,,
মনে হয়েছিলো আমি যেন একটা পরি।সে রাতে চাঁদের নরম আলোয় আমি কিন্তু একটা জোছনা পরি হয়েছিলাম ঠিকই।
দৃশ্য তিন:
আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে ভাবলাম এমনটাই কি হয়।
ভদ্রলোকের ব্রেইন স্ট্রোক করলো দুবার। সাথে নাকি দুটো কিডনিও আর কাজ করছে না।
তবুও তিনি আমায় চিনতে পারলেন।
চৌধুরি আঙ্কেল আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,, ভালো থাকিসরে মা।
আমি অবাক হয়ে ভাবলাম এমনটাই কি হয়।
পাশেই মিমি আন্টি বসে ছিলেন। আমি আমার মায়ের দিকে একবার তাকালাম। কাছের মানুষগুলো নিয়ে আসলে বড্ড ভয় হয় ভেতরে ভেতরে।
ঘরটায় একটা বিষণ্ন নিরবতার ছায়া নেমে এলো। আমরা সবাই কেমন যেন কিছু বলার খুজে না পেয়ে চুপ হয়ে থাকলাম,,,,,, কিংবা হয়ত আমরা সবাই একটু কোলাহল তৈরির চেষ্টা করছিলাম মাত্র।
বড় বড় ফুলতোলা চাদরের বিছানাটায় একপাশে আধশোয়া হয়ে এক পা মাটিতে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করতে থাকলেন ভদ্রলোক।
আমি অবাক হয়ে ভাবলাম এমনটাই বুঝি হয় একটা সময়।
দৃশ্য চার:
মেয়েটা তার কালো ওভার কোটের কোনা দিয়ে একবার বোধহয় চোখ মোছার একটু চেষ্টাও করলো না অথবা একবার একটু ডুকরেও উঠলো না পাশের সিটে বসা লোকটিকে বিরক্ত করার আশায়।
ও তাকিয়ে থাকলো বাইরের নিকেশ কালো অন্ধকারে। আমি ঠিক জানি সেই রাতের চাঁদটিকেই খুজছিলো ও কালো আকাশটায়।
তারপর ও যেন অবাক হয়ে ওর হাতের সেলফোনটির দিকে তাকালো একবার।
আমাকে এমন করে একলা ফেলে চলে গেলোরে মা,,, তুই বল এমন করে ফেলে যেতে পারলো.......
যখন ঐ প্রান্ত থেকে মিমি আন্টি বারবার করে বলছিলো।
আমার মনে হলো মেয়েটার ঠিক কষ্ট হলো কি?? মনে হয় কষ্টের চেয়ে ভয়টাই বেশি দলা পাকিয়ে ছিলো ওর গলায়।
মেয়েটার মনে পরলো সেই কিশোরিটির কথা যাকে ভদ্রলোক পরি বানিয়েছিলেন।
লোনা পানিতে দৃশ্যগুলো ক্রমশ ঘোলা হয়ে উঠতে লাগলো।
চাঁদটা কেন যেন আরো মন খারাপিয়া হয়ে ধরা দিলো লেকের পানিতে আর সেই সাথে ঝুমুরঝুমর নুপুরের আওয়াজটা কানে বাজতে থাকলো কর্কশ সুরে।
আমি অবাক হয়ে ভাবলাম এমনটাই বুঝি হয় সবার শেষে.......।।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


