somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছেঁড়া পাতায়...

২৫ শে মার্চ, ২০১০ সকাল ৭:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কদিন ধরে মনটা কেমন যেন ভীষণ এলোমেলো হয়ে আছে.... এলোমেলো হয়ে আছি আমি! মনে হচ্ছে এই আমি থেকেও নেই কোথাও! নিজেকে কেমন যেন ছায়া মানুষ ছায়া মানুষ মনে হচ্ছে আমার... মনে হচ্ছে আমি আছি ঠিকই কিন্তু আমার কোনো অস্তিত্ব নেই,, কিন্তু সেটাও যে কি করে সম্ভব কে জানে!
নিজেকে একদম নিস্তরঙ্গ একজন হিসেবে নিজের সাথে পরিচয় করিয়েছি সে তো অনেকদিন হল... কিন্তু এবারের এই নতুন উপসর্গটা যে ঠিক কী সেটা এখনও বুঝে উঠতে পারছি না!

একটু পরেই ভোর হবে। একটু একটু করে আকাশে আলো ফুটবে এখন! এখানকার আকাশটা কেন যেন লালচে কিংবা সোনালি হয় না কখনই,, শুধু একটা একহারা আলো চোখে ধরা দেয় আর বুঝিয়ে দেয় নতুন দিনের শুরু হলো...
আমি বসে আছি। দু পা ঝুলিয়ে দিয়ে আমি বেশ অনেকক্ষণ ধরেই আমার সানসেটে বসে আছি!!
অনেক সময়ই রাতে বাড়ি ফেরার সময় এমন দেখতাম জানালা দিয়ে ঢালু ব্রিকের চালের ওপর বসে থাকা অনেককেই... কিন্তু এই ব্যাপারটা যে বেশ আরামদায়ক মন খারাপের সময় এটা ঠিক জানা ছিল না তখনো! তো আজ হঠাৎই জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কি মনে করে জানালা খুলে কিছুটা চোরের মতই বাঁকাচোরা হয়ে নিজের জানালা গলিয়ে বাইরের ঢালু সানসেটের মত জায়গাটায় নেমে পড়লাম।
আমি বসে রইলাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা... একমনে কি কি যেন ভাবতেই থাকলাম। উপরের আকাশটা যেন একদম নিকেষ কালো। আমি সেই কালোতেই কি যেন দেখতে থাকলাম অসম্ভব মনোযোগ দিয়ে... একসময় আমার মনে হলো আমার কেমন যেন সব ঘোলাটে লাগছে,, আমার মনে হয় এক রকম হেলুসিনেশন হলো সেই সময়টায়!!
আমি দেখলাম আমার পাশেই একটা মেয়ে..
আমি অবাক হয়ে ভাবলাম কে এই মেয়ে!! কোথা থেকে উদয় হলো হঠাৎ!
মেয়েটা দেখি একমনে বসে কি যেন লিখছে... চিঠি কি? হুমম মেয়েটা খুব যত্ন করে রুল টানা কাগজে গুটিগুটি করে পেন্সিল দিয়ে লিখছে... চিঠিই ত,, লিখতে লিখতে মাঝে মাঝে মেয়েটার হাত কেঁপে কেঁপে উঠছে,,
মাঝে মাঝে মেয়েটা যেন একটু ফুঁপিয়েও উঠছে... আমি আরেকটু পাশে ঝুঁকে উঁকি দিয়ে বুঝতে চাইলাম কি লিখতে গিয়ে এত কষ্ট হচ্ছে ওর! মেয়েটা একবারও আমার দিকে ফিরে দেখল না!
অথচ ও আমার পাশে বসে লিখেই চলছে,,
রুলটানা একটা খাতায় গুটিগুটি....

আমি লজ্জায় কুঁকড়ে মুকড়ে যাই!!
কষ্টগুলো যেন শরীরের সমস্ত কোষের নিউক্লয়াসের সাথে মিশে যায় আমার,, ওরা যেন শক্তিতে পরিণত হয়ে গায়ের চামড়ার নিচে ঠিক আগুন ধরিয়ে দেয়! ওহ সে কি প্রচণ্ড কষ্ট!! আমি একটু একটু করে হারাতে দেখি তোমায়,,
আমার তিল তিল মরণ যন্ত্রণা হয়!!
তোমার মিথ্যেগুলো আমাকে দেয় কুষ্ঠ রোগের অনুভূতি...

আমি আর এগোতে পারি না...
ওর চিঠিটা আমার কাছে অসহ্য ঠেকে!
কিন্তু তারপর হঠাৎই যেন আমি মেয়েটার কষ্টগুলিকেও দেখতে পাই। ওরাও কীভাবে যেন আমার চোখে ভিসিবল হয়ে যায়!
আমি দেখি কষ্টগুলো আনন্দে চিৎকার করছে,, গাইছে... ওরা মেয়েটাকে ঘিরে ঠিক যেন উৎসবের মতই মেতে উঠেছে।
আমার কেমন যেন অসুস্থ লাগে....
আমি চোখের সামনে থেকে ওদেরকে তাড়িয়ে দিতে চাই। কিন্তু আমি কিছুই করতে পারি না...
মেয়েটার জন্যেও আমার খুব কষ্ট হতে থাকে।
আমি ওর জন্যে হাউমাউ করে কেঁদে উঠি। আমি কাঁদতেই থাকি ওর অসহায়ত্বে..
মেয়েটা তখনও লিখেই চলছে গুটিগুটি ওর রুলটানা খাতাটায়...
আমার খুব ইচ্ছে করে ওর মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেই। ইচ্ছে করে ওকে বলি, যে কাউকে নিয়েই এতটা কষ্ট পেতে হয় না জীবনে,, জীবনটা আরও অনেক কিছু দেয়ার আশাতেই বসে আছে,, ওকে শুধু ঘাড় ঘুরিয়ে একটু দেখতে হবে...
মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি এক সময় আবিষ্কার করি,, ওর কষ্টেরা ওকে যেন একটুও ভাঙতে পারেনি... ওর বসে থাকায়,, ওর ভঙ্গিতে একটা অসম্ভব ভালোবাসার দৃঢ়তা আছে। ওকে দেখে মনে হল, ঐ কষ্টগুলি লিখে ফেলতে পারায় ও এমন কিছু অনুভব করছে যার স্বাদ আমি কোনোদিনই পাইনি....

একটু পরেই ভোর হবে। এই ব্যাপারটা আমার এখন আর কিছুতেই পছন্দ হচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে ভোর হলেই আমার হেলুসিনেশন কেটে যাবে। আর আমার হেলুসিনেশন কেটে গেলেই মেয়েটা একা হয়ে যাবে এই ভাবনাটা আমাকে কেমন অস্থির করে তোলে....
আমি কেন যেন অনন্তকাল ধরে মেয়েটার পাশেই এভাবে বসে থাকতে চাই। ওকে খুব আপন লাগতে থাকে আমার। আমি ভাবি মেয়েটা নিশ্চিন্তে এভাবেই বসে থাক পিঠময় খোলাচুলে...
ও গুটিগুটি লিখে যাক ওর রুলটানা খাতাটায়....





সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১০ সকাল ৮:৪০
৩৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×