পাটের উন্নত জাতের চাষ-৪-৫ বছরের মধ্যে শুরু হবে
---বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম
পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনকারী বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম বলেছেন, আগে আমরা পাট থেকে বৈদেশিক মুদ্রা পেতাম ৪০ শতাংশ। কিন্তু সেটা হারিয়ে ফেলেছি। এখন আমরা আবার পাটের গৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, দেশি পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করায় পাট নিয়ে গবেষণা করে এর বিভিন্ন উন্নত জাত আবিষ্কার ও কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেয়ার সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে। আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে কৃষকের হাতে রোগ প্রতিরোধী ও প্রতিকূল পরিবেশে বাড়তে পারে এমন উন্নত পাটের জাত তুলে দেয়া সম্ভব হবে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর পাট গবেষণা কেন্দ্রে (বিজেআরআই) অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিজেআরআই-এর মহাপরিচালক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.মঞ্জুরুল আলম, ড. শামসুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে মাকসুদুল আলম জানান, এ ধরনের গবেষণার ফলাফল পাওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে সময়সীমা বেধে কাজ করা কঠিন। তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তাতে আশা করা যায়, আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আমরা নতুন ওই জাত পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করতে পারব। সবকিছু ঠিকঠাক মতো চললে কৃষকের হাতে নতুন জাত পৌঁছে দিতে সর্বোচ্চ চার-পাঁচ বছর লাগতে পারে।
মাকসুদুল আলম বলেন, আমাদের নলেজগুলোকে হানড্রেড গতিতে নয়, এর চেয়েও বেশি গতিতে এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের ভবিষ্যত্ প্রজন্মের কথাও চিন্তা করতে হবে। এই বিজ্ঞানী বলেন, মনে রাখতে হবে শুধু সরকারি উদ্যোগে এই কাজ পরিচালনা করা সম্ভব নয়। বেসরকারি উদ্যোগও গুরুত্বপূর্ণ। যৌথ উদ্যোগে এটার একটা সফল গবেষণা সম্ভব। আর দেশি পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের ফলে পাট জাত দ্রব্য উদ্ভাবনে সকল বাধা দূর হবে।
সম্মেলনে তিনি জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের 'পাটের মৌলিক ও ফলিত গবেষণা শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আমরা ২০১০ সালে তোষা পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছিলাম। এবার দেশি পাটের জীবনরহস্য উদ্ভাবন করেছি। ফলে এ দুই জাতের মধ্যে শংকর করে নতুন উন্নত জাতের পাট উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে এবং আমাদের গবেষণার প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে প্রতিকূল পরিবেশ ও জীবাণু প্রতিরোধক পাটের নতুন জাত উদ্ভাবন।
মাকসুদুল আলম বলেন, সরকার আমাদের প্রকল্প বাবদ যে অর্থ দিয়েছে, আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিজেরা উপার্জন করে তা ফেরত দিতে পারব। আমাদের এই কেন্দ্রের গবেষণার ফলাফল ও দক্ষতাকে কাজে লাগানোর জন্য অনেক ধরনের প্রস্তাব ইতিমধ্যে আমাদের কাছে আসতে শুরু করেছে। ফলে আমরা আত্মবিশ্বাসী এই গবেষণা কেন্দ্রটি আগামীদিনের বাংলাদেশের বিজ্ঞান গবেষণার নতুন পথের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে। সে ধরনের বিজ্ঞানী আমরা ইতিমধ্যে এখানে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।
সম্মেলনে জানানো হয়, সরকার দেশে ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট নামে একটি নতুন আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশীয় প্যাকেজিং শিল্পে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করায় ভবিষ্যতে বর্তমানের চাইতে অন্তত আরো ১৫ লাখ বেল পাটের দেশীয় চাহিদা সৃষ্টি হবে। রোগ প্রতিরোধী দেশি পাট কৃষকদের হাতে তুলে দেয়া গেলে পাটের উত্পাদন অনেকাংশে বাড়িয়ে দেশীয় অতিরিক্ত চাহিদা মিটিয়ে তা আরো অধিকহারে বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে নতুন জাত উদ্ভাবনের এই গবেষণা সফল হলে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে এ ধরনের জাতের চাষ শুরু করবে।
আবিষ্কার সম্পর্কে মঞ্জুরুল আলম বলেন, পোকার আক্রমণের কারণে কৃষকেরা সাদা পাটের (দেশি পাটের) চাষ কমিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এই পাটের আঁশের মান বেশ উন্নত। তা দিয়ে বস্ত্রশিল্পের উপযোগী সুতা উত্পাদনও সম্ভব। এই আবিষ্কারের ফলে উন্নত জাতের দেশি পাটের জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে বস্ত্রশিল্পে তুলার বিকল্প হিসেবে এই পাট ব্যবহার করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচানো যাবে।