somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিনের অভিজ্ঞতাঃ আমেরিকান মানেই সুপেরিয়র নয়; ওদেরও আতেল আছে !

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমেরিকান দূতাবাসের উদ্দোগে আয়োজিত এক ওয়ার্কসপে গিয়েছিলাম। আমেরিকার ইয়াং জেনারেশনের প্রোডাক্টিভিটি ও ম্যাচিউরিটিকে বাংলাদেশের ইয়াংদের কাছে ইন্ট্রোডিউস করে দেয়াই হচ্ছে এই ওয়ার্কসপের মু্খ্য উদ্দ্যেশ্য। ওয়ার্কশপের টাইটেল ছিল "Workshop on introducing developed generation towards developing generation" [/sb

বলাই বাহুল্য ওয়ার্কসপে ইন করার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত অনেক ঘেমেছি। প্রচণ্ড স্নায়ুচাপে। বিদেশী ডেভেলপড ডেলিগেশনের সামনে আমি কি নিজেকে আদৌ এক্সপ্রেস করতে পারবো? বিব্রত হয়ে যাব না তো? এত বড় মানুষদের সামনে আমার মত নস্যি একজন কিভাবে মুভ করবো?

খুব স্বাভাবিকভাবেই আশা করেছিলাম-আমেরিকার ইয়াংম্যানদের কারিশমা দেখবো। তাদের প্রাজ্ঞ মুভমেন্ট দেখবো। কিভাবে ওদের ইয়াংরা ভাবে, চিন্তা করে, স্বপ্ন দেখে, সময় কাটায়। কিভাবে ওরা ওদের ক্রিয়েটিভিকে কাজে লাগিয়ে ক্রিয়েটিভ কিছু করে যাচ্ছে, যা আমরা পারছি না। তাদের পাইপলাইনের সাথে ইন্ট্রোডিউস হওয়ার উৎসুক মন উশখুশ করতে লাগলো। কিন্তু একটি শেষন শেষেই আমার ধারনার পরিবর্তন হতে থাকলো। ওয়ান টু ওয়ান কন্টাক্ট ছিল। ডেভিড ওয়াকার নামের এক ইয়াংম্যানের সাথে আমার সিটিং। শুরু হলো কনভার্সেশন। ওর প্রথম প্রশ্ন আমি স্পষ্ট করে ইংরেজী বলতে পারি কি না। আমার উত্তর না শুনেই সমাধানও দিয়ে দিলো। প্রয়োজনে আমি দোভাষী নিতে পারি। খুবই ইম্পর্ট্যান্ট ডিসকাশন হবে তাই কি না।


এই অনাকাঙ্খিত প্রশ্নে আমার জড়তা কেটে তো গেলোই, সাথে অটোমেটিক মেজাজটাও খারাপ হয়ে গেল। ছেলেটাকে আর যাই হোক ভদ্র বলতে পারলাম না। ইংরেজী দক্ষতার প্রশ্ন ছাপিয়ে উল্টো বলে বসলাম-ঢাকায় যে কয়েকদিন আছো আমার সাহায্য নিতে পারো। আমরা কিন্তু ভাষা জাতীয়তাবাদে প্রচন্ডভাবে ডুবে আছি। তুমি জানো কি না ভাষার জন্য ৫২ সালে আমাদের কয়েকজন ইয়াংম্যান জীবন দিয়েছে। মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে পাবা, যারা তোমাদের সাথে ইংরেজীতে কথা বলবে। কিন্তু অধিকাংশ লোকই বাংলা ছাড়া কথাই বলবে না। যদিও তারা প্রায় সবাই ই ইংরেজী, হিন্দী, উর্দু পারে (জাতি হিসেবে চাপাবাজীর গুনটা তো আছেই ! )। আমি তোমাকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত আছি।

যতটা সম্ভব স্মার্টলি কথাগুলো ডেভিডকে শুনিয়ে দিলাম। এবার ডেভিড স্মিত হেসে বললো- তোমার জীবনের টার্গেট কি ? আমি ইচ্ছে করেই প্রফেশনাল টার্গেট এভোইড করে বললাম- মা-বাবার সেবা করা। ডেভিড এবার যেন আকাশ থেকে পড়লো। তুমি এখনো বাবা-মার সাথে থাকছো- বলে বিস্ময় প্রকাশ করলো। এবার আমি বললাম-তুমি কার সাথে থাকছো?
গার্লফ্রেন্ড আর আমি-রুম শেয়ার করে থাকি।
কততম গার্লফ্রেন্ড?
হাত তুলে আঙ্গুল দেখালো। বুঝলাম কমপক্ষে তা এক হালি হবে।
বাবা-মা কোথায় থাকে?
বাবা মিশিগানে, মা ওক্লাহোমায়।
আমি বললাম-কিন্তু আমার বাবা-মা, ভাইবোন একই বাসায় থাকে এবং সেখানে আমারও একটা রুম আছে। আমার পুর্বপুরুষরাও ঐ বাসাতেই থাকতেন। কি করবো বলো? মায়া ছাড়তে পারি না। এক সাথেই থাকি। আমি নই পুরো বাংলাদেশী জাতিই এভাবে একসাথে যৌথ পরিবারে বেড়ে ওঠে। ডেভিড খুবই মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিলো।
আমি দৃষ্টি আকর্ষনী দিয়ে বললাম- মূল ডিস্কাশনের টপিকসে আসা দরকার।
ডেভিড ইয়াহ...ইয়াহ বলে শুরু করলো
ডেভিড এক নাগারে ৫ মিনিট ধরে আমেরিকা বিশ্ব মানবতার জন্য কি কি করেছে তার সালতামামী পেশ করলো। খুবই কনফিডেন্সের সাথে। তোতাপাখীর বক্তব্য শেষ হলো-সো এভরি নেশন শুড হ্যাভ রেস্পেক্ট, ফলো এন্ড ওবেয় আমেরিকা টু বি ডেভেলপড ইন কালচারালী, সোস্যালী, ইজুক্যাশোনালী এন্ড টেকনিক্যালী।


এবার বুঝলাম এই ওয়ার্কশপের মুখ্য উদ্দ্যেশ্য কি। ডেভিডের কথা বলার সময় খেয়াল করলাম মুখস্থ কথা বলছে। আগে থেকে তৈরী করা কথা বলছে। আমি বাজিয়ে দেখতে চাইলাম। বললাম- আমেরিকা জাপানের জন্য কি মানবীয় কাজ করেছে?
চিন্তা করে বললো-এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না। বিকালের শেষনে বলবো। আমি বললাম জাপান-আমেরিকা নিয়ে ১৯৪৫ সালের কোন কথা জানা আছে?
ডেভিডের স্পষ্ট জবাবঃ না।
১৯৪৫ সালের ৬ ই আগষ্ট জাপানের হিরোশিমা শহরে বোমা ফেলে পৃথিবীবাসীকে তোমরা প্রথম পারমানবিক বোমার সাথে পরিচিত করে দিয়েছিলে তোমরা-মনে পড়ছে?
ডেভিড বিস্মিত হয়ে বললো-তাই না কি ? জানি না তো।
এবার ডেভিডকে মিথ্যাবাদী মনে হলো। আমেরিকার এক তরুন জাপানের পারমানবিক বোমার ব্যাপারে কিছু জানে না-বিশ্বাস হলো না। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরেকজন আমেরিকান তরুন টনির সাথে ব্যাপারটি নিয়ে ডিসকাস করলাম। সেও বেমালুম অস্বীকার করে বসলো। এ ধরনের কোন তথ্য তার জানা নেই বলে জানালো। ল্যপটপ ওপেন করে এ বিষয়ে অনলাইন থেকে আর্টিকেল বের করে প্রমাণ দিয়ে যখন ওদের দিকে তাকালাম, খেয়াল করলাম ওরা বিস্মিত। ডিটেইলস আলোচনা করে বুঝলাম-ওদের একাডেমিক বইয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এই ভয়াবহ আক্রমন নিয়ে কোন আলোচনায় নেই। হয়তো ওরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মকে সেই কলঙ্কজনক মানবতাবিরোধী ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চায়। তবুও অনলাইন থেকে এই ঐতিহাসিক ধবংসযজ্ঞের কোন ধারনা নেয় নি বলে আমিও বিস্মিত না হয়ে পারি নি। দেখতে বেশ ভালই লাগছিল ওয়ার্কশপের মাধ্যমে আমাদের মগজ ধোলাই করতে আসা আমেরিকান তরুণের কপালে চিন্তার ভাঁজ। জানি না ওরা আমার সাথে না জানার অভিনয় করলো কি না। আগে থেকেই জেনে থেকে আমার সাথে না জানার ভান করলে-এটা ওদের হিপোক্রেসি।

ডেভেপলপিং কান্ট্রির আমরা অবচেতন মনে ধরেই নেয় সাদা চামড়ার পশ্চিমা প্রত্যেক মানুষই ব্রিলিয়ান্ট এবং ক্রিয়েটিভ। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে চিরন্তন সুপেরিওটির যে ধারনা-তা থেকে আমিও বের হতে পারতাম না, যদি এই ওয়ার্কশপে না যেতাম। আমার বন্ধু ঢাবির এক ইয়াংম্যান তো আমেরিকার আরেক ইয়াং মশাইকে ধুয়ে দিলেন। সোশ্যাল কমন কিছু ইস্যু নিয়ে ওদের ন্যূনতম জ্ঞানেরও অভাব দেখেছি। পলিটিক্স নিয়ে আমাদের স্টুডেন্টরা যা জানে, ওরা তার ধারেকাছেও নেই। গ্লোবাল পলিটিক্সের প্রতিটি শিরা উপশিরার একাডেমিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ আমাদের তরুণেরা। ওরা শুধু জানে- কিভাবে ওরা বিশ্ববাসীকে করুণা করে চলেছে। একটা আধিপত্যবাদী অবচেতন ধ্যান-ধারনার স্বাভাবিক প্রকাশ দেখেছি ওদের বডি লাঙ্গুয়েজ এবং প্রেজেন্টেশনে। সাউথ এশিয়ার জিওপলিটিক্স নিয়ে প্রশ্ন করলে ডেভিড তো বলেই বসলো-কোন দিকে যেন সাউথ এশিয়া? উত্তরে যখন আমার আঙ্গুল মাটির দিকে তাক করলাম-সে লজ্জায় লাল হয়ে গেল। ওদের ড্রেস চয়েজ নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। ম্যাচিং সেন্স কমই দেখেছি। খাবারের শিষ্টাচার দেখেও হতাশ হয়েছি। পাগলরা একটা কথা নিয়েই পড়ে থাকে-আমেরিকানরা সেরা জাতি।

তবে হ্যাঁ, ওয়ার্কশপে গিয়ে অনেককিছুই শিখেছি। পজেটিভ। এখানে শুধু নেগেটিভ কিছু লিখলাম। আমাদের অবচেতন মনের ভুল ধারনা তুলে ধরতে। নিঃসন্দেহে আমেরিকানরা জাতি হিসেবে সুপেরিয়র। তবে তাদের জাতির প্রত্যকেই সুপেরিয়র- এটা মানতে আমার খুব কষ্ট হবে। পশ্চিমা মাত্রই সুপেরিওর। এই ধারনা ভুল। অবশ্যই পশ্চিমারা সামগ্রিকভাবে আমাদের চেয়ে যোজন যোজন মাইল এগিয়ে। বস্তুবাদী চেতনায় নিশ্চয় ওরা সুপেরিওর নেশন । কিন্তু ওদের প্রত্যেকেই অসাধারন-এটি একটি ভুল কথা। ওদের দেশেও আতেল শ্রেনী আছে। হাবাগোবা আছে। ডিজুস পোলাপান আছে। নেশাখোর পাগল আছে। সংখ্যাটা সম্ভবত অনেক বেশী। জাতি হিসেবে ডেভেলপড হওয়া মানেই, প্রত্যেক নাগরিক ডেভেলপড নয়।
একদিনের ওয়ার্কশপের এক্সপেরিয়েন্সে কথাটা বলা কতটা ঠিক হলো-পশ্চিমা দেশগুলোতে অবস্থান করা আমাদের নাগরিকরাই তা ভাল বলতে পারবেন। আমি স্রেফ আমার একদিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৬
১২টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×