somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বর্গ দর্শন: ভূ-স্বর্গ কাশ্মির ভ্রমন (প্রথম পর্ব)

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বর্গ লাভের ইচ্ছে তো সবারই, কিন্তু ইহকালে এমন কোন পূন্যকাজ করিনি যে স্বর্গপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে। তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেঠানোর মতো মর্তের-স্বর্গ তথাপি ভূ-স্বর্গ দর্শনের দূর্বার ইচ্ছে বাস্তবায়ন করলাম গেল সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে। বিদেশ তো বটেই, তার উপর ঝুঁকি-বহুল এলাকা কাশ্মির। যেখানে প্রতিদিনই কোন না কোন দুর্ঘটনা বা সস্বস্ত্র হামলা ঘটছেই। তবুও ভূ-স্বর্গ বলে কথা। কলকাতা থেকে দুরপাল্লার যেকোন ভ্রমনকে আরামদায়ক ও ইকোনমি করতে ট্রেনই হলো সবচে' সুবিধাজনক।অন্যান্য রুটে অনেক ট্রেন থাকলেও জম্মু অবদি শুধুমাত্র দুটি ট্রেনই আছে। তার মধ্যে সবচে' ভালো আর অপেক্ষাকৃত কম সময় নেয় হিমগিরি এক্সপ্রেস। সপ্তাহে মাত্র তিনদিন চলা এই ট্রেনের টিকেটও অনেকটা সোনার হরিণের মতো। যাই হোক একটু আগেভাগে প্ল্যান করাতে প্রায় দেড়মাস আগে এসি টু-টায়ারে ছয়টির মধ্যে চারটি কনর্ফাম টিকেট পেয়ে গেলাম, বাকি দু'টি রেক (রিজার্ভেশন এগেইনস্ট ক্যানসেলেসন) এ থাকলো। আমার ইন্ডিয়ান ট্রাভেল এজেন্ট জানালো এই দু'টি টিকেট নিশ্চিন্তে কনফার্ম হয়ে যাবে ভ্রমনের চব্বিশ-ঘন্টা আগেই। আমাদেরকে শুধুমাত্র অনলাইনে অথবা স্টেশনে গিয়ে চার্ট দেখে সিট ও বগি নম্বরটি জেনে নিতে হবে। টিকেট কাটার মুহুর্ত থেকেই শুরু হয়ে গেল আমাদের স্বর্গ দর্শনের প্রতিক্ষা.....প্রতিক্ষার প্রহর সত্যিই খুব যন্ত্রনাদায়ক।
নোমান,আমি এবং আমাদের পরিবার ইতিমধ্যে হিমাচল প্রদেশ সহ ভারতের দর্শনীয় জায়গাগুলোতে ভ্রমণ শেষ করেছি। তাই কি ধরনের ট্রাভেল গিয়ার নিতে হয় সে-সম্পর্কে আমাদের বেশ ভালোই ধারনা আছে। ভ্রমনের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসতে লাগলো, আমরা ততই এক্সাইটেড হতে লাগলাম। প্রায় সপ্তাহ খানেক ধরে ঘুচানো শেষে একদিন সত্যি সত্যি সোহাগ-পরিবহনের তথাকথিত স্ক্যানিয়াতে করে রওনা দিলাম কলকাতার উদ্দেশ্যে।বেনাপোল সীমান্ত পার হলে ভারতের হরিদাসপুর থেকে কলকাতাগামী বাসে দেখা হলো একসময়ের চিত্রনায়ক সাকিল খান ও তার স্ত্রীর সাথে, সহজাত মিশুক স্বভাবের নোমান শুরুতেই গল্প জুড়ে দিলো ওই দম্পতির সাথে। কিছু পরে আমরা বাকীরা যোগ দিতেই আসর জমে উঠলো। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ হঠাৎই প্রবল বৃস্টি শুরু হলো। মারকিউস স্ট্রিটে বাস যখন পৌঁছালো তখন বৃষ্টি কিছুটা ধরে আসলেও একেবারে থেমে যায়নি। নামায়িত সেই সন্ধ্যায় টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যেই জলকাদা ভেঙে আমি আর নোমান হোটেল ঢুরতে বেরুলাম বউ-বাচ্চাদের বাস কাউন্টারে বসিয়ে রেখে । অনেক খুঁজেও বাজেটের মধ্যে কোন হোটেল না পেয়ে শেষে হোটেল কন্টিনেন্টালে উঠলাম প্রতিরাত ২০০০ রুপি চুক্তিতে । শুরুতেই বাজেট বিপর্যয়ের বিষয়টা একেবারেই ভালো লাগলো না আমাদের হিসেবি মন। যাইহোক প্রথমদিন কলকাতায় রাত্রিযাপন শেষে পরদিন সকালে নাস্তা সেরেই ছুটলাম ফেয়ারলি প্লেসে ফরেন কোটায় দি্ল্লি টু কলকাতা টিকেট কাটাতে। কেনানা আমাদের যাওয়ার টিকেট কনর্ফাম থাকলেও আসার টিকেট পাইনি পূজার ছুটির ভিড়ের কারনে। ওই দিনের জন্যে মাত্র ছয়টি টিকেটই ছিল এসি -থ্রিটায়ারে ফরেন কোটতে। রিজার্ভেশন অফিসারকে অবাক করে দিয়ে ছ'টি টিকেটই কনফার্ম করলাম আমরা । তারপর আধুনিক জিপিএস সুবিধা ব্যবহার করে পুরানো কলকাতা নগরীর পথে পথে হেঁটে-হেঁটে আমি আর নোমান হোটেলে ফিরলাম দুপুরবেলায়। ওইদিনই আমাদের ট্রেন রাত ১১.৫৫ মিনিটে। তাই ঠিক করলাম একদিনের জন্যে শুধু শুধু ৪০০০ রুপি খরচ না করে সেই সময়টা সিনেমা দেখে আর মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে পার করে দিবো। নিউমার্কেট সংলগ্ন এলিট সিনেমা হলের ছটি টিকেট কাটলাম ৬০০ রুপি দিয়ে। তিনটে থেকে ছটা অবদি সিনেমা দেখলাম তারপর কলকাতা নিউমার্কেটের অলিগলি ঘুরে সামান্য শপিং করলাম। রাত সাড়ে-আটটায় হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে রাধুনীতে ডিনার সারলাম সাড়ে-ন'টা অবদি। হোটেল লবিতে খানিক অপেক্ষা শেষে রাত দশটায় টেক্সি ধরলাম হাওয়ার উদ্দেশে। বাকী সবাই সহ নোমান রইল এসি ওয়েটিং রুমে আর আমি নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে লাগেজ-পত্তর নিয়ে একা একা বসে রইলাম প্রায় দু'ঘন্টা অবদি। । ট্রেন আসার ঘোষনা শুনেই ফোন লাগালাম নোমানকে, সে সবাইকে নিয়ে উপস্থিত হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ট্রেন লেগে গেল প্ল্যাটফর্মে। দশমিনিটের মাথায় রওনা দিলাম ভূ-স্বর্গের উদ্দেশ্যে ।স্বর্গ-যাত্রা হলো শুরু ………
হিমগিরি এক্সপ্রেস। নামটি যেমন সুন্দর ট্রেনটিও তেমনি। অপেক্ষাকৃত অন্যান্য সিটের চেয়ে এসি-টু টায়ারের শোয়ার এবং বসার সিটগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বেশি। শুয়ে শুয়ে বই পড়ার জন্যে এডজাস্টটেবল রিডিং লাইট, ধোলাই করা টাওয়াল-বেডসিট সাথে খাওয়াদাওয়ার মানও বেশ উন্নতমানের। কলকাতা থেকে জম্মুর দূরত্ব প্রায় ২০২০ কিলোমিটার। প্রায় চল্লিশ ঘন্টা জার্নি শেষে আমরা যখন জম্মু রেল স্টেশনে পৌঁছলাম তখন বেলা প্রায় তিনটা। স্টেশন থেকে বেরিয়েই আক্কেল গুড়ুম আমাদের। শ'য়ে শ'য়ে মানুষ দাঁড়িয়ে-বসে-শুয়ে আছে কিন্তু কোন গাড়ি যাচ্ছে না। প্রি-পেইড টেক্সি কাউন্টারে খবর নিয়ে জানতে পারলাম আজ বনধ। কোন গাড়ি শ্রীনগরে যাবে না। আশেপাশে তাকালাম, দেখলাম বৃদ্ধ, কোলের শিশু নিয়ে মানুষজন বড্ড অসহায় হয়ে মালপত্তর নিয়ে কেউ দাঁড়িয়ে কেউবা বসে আছে। আমার দীর্ঘ ভ্রমণ অভিঙ্ঘতা থেকে আমি জানি পৃথিবীতে দু'নম্বর ব্যবস্থা সবখানেই থাকে।তাই একটুও দেরী না করে বিকল্প-সন্ধানে ঢুড়তে বেরুলাম আমি আর নোমান। এগলি-সেগলি পেরিয়ে শেষে স্টেশনের পাশেই সরু গলিতে একটি ট্রাভেল এজেন্সির সাথে কথা বলতেই তারা মোটামুটি সহনীয় ভাড়াতেই আমাদের শ্রীনগর নিতে রাজি হয়ে গেল। আপেলের ভরা মরসুর, তাই গাড়িতে ওঠার আগে খুব সস্তায় প্রতিজনের জন্যে দু'টি করে বিশাল আকৃতির আপেল কিনে বেলা সাড়ে তিনটায় রওনা দিলাম ২৯৮ কি:মি: দুরে কাশ্মিরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে। প্রায় ১৪ ঘন্টা পাহাড়ী রাস্তায় জার্নি শেষে যখন শ্রীনগরে পৌঁছলাম তখন রাত দু'টো। মেইক মাই ট্রিপ ডট কমে হোটেল রির্জাভেশন আগেই করা ছিল। এই রাত দুপুরে হোটেল ওয়ালাকে ফোন করতেই সে জানালো যে লোক পাঠাচ্ছে আমাদেরকে চোদ্দ নম্বর ঘাটের সামনে থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। শুরুতেই যা খটকা লাগলো একটু পরেই সত্যি প্রমানিত হলো তা। ওয়েবসাইটে হোটেলের ছবিতে হোটেলটির অবস্থান ডাঙাতে দেখালেও সত্যিকারের ওটির অস্থিত্ব বিখ্যাত ডাল-লেইকের ওপাড়ে। শুনশান শীতল মধ্যরাতে প্রায় আধ-ঘন্টা অপেক্ষার পর ঘুটঘুটে অন্ধকার ডাল-লেইক থেকে ভেসে এলো লম্বা জোব্বা পরিহিত বৃদ্ধ-তরীওয়ালার ডাক। পরিস্থিতি অনেকটা ব্যাখাতীত, মাঝ-রাত, পুরো শ্রীনগর শহর সুনসান, এর মধ্যে অন্ধকার লেইক থেকে যেন নরকের দুত আমাদের নিতে এসেছে শয়তানের কেয়ারা নিয়ে। যাই হোক বউ-বাচ্চা নিয়ে বিপদ-সংকুল কাশ্মিরের পথে পড়ে থাকার চেয়ে সেই ডাকে সাড়া দেওয়াই উত্তম মনে করলাম। লেইকের ওপাড়ে গিয়ে হোটেল রুম দেখে আরেকবার দমে গেলাম টয়লেটের অবস্থা দেখে। রুমের মধ্যেই টয়লেটের ভ্যান্টিলেশন । এই মাঝ রাতে কিছুকরার নাই দেখে কোনক্রমে রাতটি পার করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
রাত প্রায় তিনটের দিকে ঘুমালেও চিরাচরিত অভ্যাসের কারনে ভোর ৫ টা তেই ঘুম ভাঙলো। কিছুক্ষণ মটকা মেরে পড়ে থেকে ট্রেকসু্ট ও কেটস পড়ে বেরিয়ে পড়লাম। কিন্তু মেইনল্যান্ডে যাওয়ার জন্যে এই ভোরে কোথাও কোন পারাপারের ডিঙি তথা শিকারা দেখলাম না। পাশাপাশি সারিবদ্ধ হাউসবোটগুলোর হালচাল দেখে আবারও রুমে ফেরত এলাম। আটটার দিকে নোমানকে ডেকে নিয়ে মেইনল্যান্ডে চলে এলাম একটা শিকারা ধরে। বউ-বাচ্চাদের নাস্তার ব্যবস্থা হোটেলে করে এলেও তখনও আমরা দু'জনের কেউ নাস্তা করিনি। ছোট একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকে ব্রেকফাস্ট সারলাম ডিম ও মাখন-পাউরুটি দিয়ে, তারপর বেরুলাম স্থলভাগে হোটেলের সন্ধানে। অনেক খোঁজাখোঁজির শেষে মেইন রোড থেকে সামান্য ভেতরে "হোটেল মধুবন" কে একেবারে মনেপ্রাণে পছন্দ হয়ে গেল। বিস্তির্ন ফুলের বাগান, সবুজ ঘাসের লন, সুদৃশ্য হোটেল দালান সবকিছু এতো ভালো লাগলো যে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এবার নোমান কথা বললো হোটেল ম্যানেজার মেহেদী হাসানের সাথে প্রথমে ২৫০০ রুপি ভাড়া চাইলেও পড়ে সেটিকে আমরা প্রতিরাত ১২৫০ রুপিতে ম্যানেজ করলাম পাচঁ দিনের জন্যে । এডভান্সের টাকাটা দিয়েই ভোঁ-ছুট লাগালাম বউ-বাচ্চাদের আগের হোটেলের বাটপারদের থেকে রক্ষা করতে। চেক-আউট সেরে ব্র্যাকফাস্টের বিল দিতে গিয়ে চক্ষু-ছানাবড়া আমাদের । সামান্য দু'টি পরটা আর একটু ভাজির জন্যে ১৫০ রুপি করে মাথাপিছু বিল.....ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি......এক নৌকাতে সবাই উঠতে পারবো না, তাই আমি, আমার স্ত্রী-কন্যা ও নোমানের দুই মেয়েকে নিয়ে প্রথম ট্রিপে মেইনল্যান্ডে চলে এলাম। পরের ট্রিপে নোমান ও তার স্ত্রী আসতে আসতে এরই মধ্যে ডাললেইক ও নেহেরু পার্কের শ'খানেক ছবি তোলা হয়ে গেল আমাদের। নতুন হোটেলে চেক-ইন করলাম, আমি ও নোমানের মতো আমার স্ত্রী টুম্পা, মেয়ে কান্তম, নোমানের সহধর্মিনী ফারহানা ও মেয়ে ইসাবা ও আরিনারও খুব মনে ধরলো হোটেল-মধুবন। লাগেজ রেখে মোটামুটি রুম-গুছিয়ে সবাইমিলে শ্রীনগরের আশ-পাশ ঘুরতে বেড়ুলাম । কিছুক্ষণ হেঁটেই বুঝলাম এভাবে লোকাল সাইটসিংয়ি সম্ভব নয়। তাই একেবারে কাছের ট্রেক্সি-স্ট্যান্ড থেকেই ১৬০০ রুপি দিয়ে হাফ-ডে সাইট সিংয়ি এর ব্যবস্থা করলাম। আমাদের ড্রাইভারের নাম রিয়াজ। কাশ্মির ভ্যালিতে অবস্থিত শ্রীনগর শহরটির আয়তন ১৮১ বর্গ কিলোমিটার, স্থানীয় লোকসংখ্যা প্রায় দশ লাখের কাছাকাছি। সমগ্র কাশ্মির তিন স্তরের নিরাপত্তা বেস্টনিতে ঘেরা-প্রথম স্তরে পুরোপুরি যুদ্ধাবস্থা-পোশাকে ভারতীয় সেনাবাহিনী, দ্বিতীয় স্তরে আধা-সামরিক বাহিনী বিএসএফ ও তৃতীয় স্তরে কাশ্মিরী পুলিশ। প্রথম দেখাতেই অনেকেই ভড়কে যাবে মাত্রারিক্ত এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে। অবশ্য আমরা কাশ্মিরে পৌঁছানোর মাত্র দু'দিন আগেই আজাদ কাশ্মিরের বিচ্ছিন্নতাবাদী গেরিলারা একজন পূর্ন কর্ণেল সহ সেনাবাহিনীর ৮ জন সদস্যকে হত্যা করেছে। ফলশ্রুতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন আরো কঠিনতম অবস্থায়। অবশ্য এর বিপরীতে যা দেখলাম তাতে চোখ জুড়িয়ে গেল। পুরো ভারতবর্ষ সহ অনেক দেশ ঘুরলেও কাশ্মিরের বাসিন্দা তা পুরুষ হোক আর মহিলা, এত রুপবান পুরুষ ও রুপবতী নারী আমি আগে কোথাও দেখিনি। প্রধানত: আবহাওয়া গত কারনে এদের স্বাস্থ্য, রঙ ও মেজাজ এতো ভালো । আমাদের পুরো দলই কাশ্মিরীদের রুপ-মুগ্ধ হয়ে গেলাম। প্রথমেই আমরা গেলাম মুগল গার্ডেন এ। পথে পথে পাইন সারির শোভা-বেস্টিত পর্বতমালা, তারই মাঝে অসংখ্য নাম না জানা ফুলেল স্বর্গ, চারদিকে এতো রঙ যে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। অনেক ছবি তোলা শেষে শহর প্রান্তে পরিমহল এ গেলাম। অনেক উপরে অবস্থানগত কারনে নাগিন ও ডাল লেইকের প্রান্তঘেষা মোটামুটি অর্ধেক শ্রীনগর শহরকে দেখা যায় এখান থেকে। এখানেও প্রাচীন দুর্গের ফাঁকে ফাঁকে নানাবর্নের অর্কিডের মেলা। এরপর নিশাত গার্ডেন এ ভিরলো আমাদের ভাড়াকরা টয়োটা-ইনোভা। যতটুকু জানি এটিই এই এলাকার সবচে' বিলাসবহুল গাড়ী।
তিনদিক থেকে পর্বতে ঘেরা এই উদ্যানের আয়তন বিস্তীর্ন। দু'তিনশ বছর বুড়ো মেপল ট্রি ও কৃত্রিম পানির ফোয়ারা এই গার্ডেনের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন। হজরতবাল মসজিদ আমাদের পরবর্তী গন্তব্য। এরই মাঝে লাঞ্চ সারলাম বেশ নামী দামী একটি রেস্টুরেন্টে (বাজেটের কথা মাথায় রেখে শুধুমাত্র একবারের জন্যে )।
এরপর রওনা হলাম হযরতবাল মসজিদের উদ্দেশ্যে। যেতে যেতে গাড়ীতেই খানিকটা ঝিমবার চেস্টা করলাম, কিন্তু রসিক ড্রাইভারের উচ্চ-ভলিয়্যুমের অডিও আমার দিবানিদ্রার বারোটা বাজিয়ে দিল। কারন জিগ্গেস করতে জানালো সেও ঘুম তাড়াবার চেষ্টা করছে।
হাজার হাজার জালালী কবতুর আকাশ অন্ধকার করে উড়ছে। তার আড়াল থেকে দর্শন মিলল সুগম্ভীর হজরতবাল দরগা। এখানে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পবিত্র চুল সংরক্ষিত আছে যা মুগল সম্রাট শাহজাহানের আমলে সৈয়দ আবদুল্লাহ সুদুর মদিনা শহর থেকে নিয়ে এসেছিলেন ভারতবর্ষে।
মাজার দর্শন শেষে আমরা ফিরে চললাম আমাদের হোটেলের উদ্দেশ্যে। মাথার ওপরে তখন ঝুঁকে আছে সন্ধ্যাবেলা, নাগিন লেকে কৃত্রিম ফোয়ারা আলো আর দূরে দু'একটি দোকানের বিঙ্ঘাপনের আলোগুলোও জলের উপরিভাগে সৃষ্টি করছে লাল-নীল আভা, সেসব সৌন্দর্য মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে নামাঢিত অস্তরাগে। টেক্সিস্ট্যান্ডে ফিরেই পুরো ৪ দিনের কাশ্মিরের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার জন্যে ভাড়া করলাম। হোটেলে ফিরেই চটজলদি ডিনার সেরেই ঘুমিয়ে পড়লাম। আগামীকাল আমাদের গন্তব্য গুলমার্গ। চলবে......
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৪৭
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×