somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনাকাংখিত পরিস্হিতির জন্য প্রষ্তুতি নেয়াটা কতটা জরুরী আর কতটা বাড়াবাড়ি ?

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনাকাংখিত পরিস্হিতির জন্য প্রষ্তুতি নেয়াটা কতটা জরুরী আর কতটা বাড়াবাড়ি ?
- জিন্নাহ্‌



ভয়ংকর অনাংকাখিত কোন পরিস্হিতি আমাদের জীবনে কখনো আসবেনা, এমনটা ভাবতেই আমরা পছন্দ করি। অনেকটা সচেতনভাবে ভান করার মত ব্যাপার । যেমন মৃত্যু; এটা আসবেই আমরা সবাই জানি। তারপরও আমরা এটা নিয়ে খুব একটা ভাবতে চাইনা। তাই বিশেষ কোন প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ও আমরা পাইনা। হঠাৎই এসে পড়ে । এটা শুধু মৃত্যুতেই সীমাবদ্ধ নেই। এমন অনেক ভয়ংকর- অনাংকাখিত পরিস্হিতিতে আমরা পড়তে পারি যা আমরা ঐ পরিস্হিতি আসার আগ পর্যন্ত বিশ্বাস করতে চাইনা।

অনেক সময় এরকম পরিস্হিতি আবার সময় নিয়েও আসতে পারে। কিন্তু শুরুর দিকে আমরা খুব একটা পাত্তা দিইনা ঘটনার gravity ধরতে না পারার কারনে, অনেক সময় পাত্তাও দিইনা। একটা পানি ভর্তি পাতিলে কিছু ব্যাঙ রেখে চুলাতে বসালে পানি যখন হাল্কা গরম হতে শুরু করবে ব্যাঙগুলু লাফিয়ে বেরিয়ে যাবেনা, কারন ওরা বুঝতে পারেনা যে একটু পরেই উষ্ণতার আরাম কেটে যাবে। যখন পানি টগবগ করে ফুটতে শুরু করবে তখন অনেক দেরী হয়ে যায়।

এবার মুল প্রসঙ্গে আসা যাক। রাশিয়া কয়েকমাস ধরে ইউক্রেনকে প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার সেনা দিয়ে ঘিরে রাখার পরও আমরা বিশ্বাস করিনি যে পুতিন আসলেই একটা অল-আউট আক্রমনে যাবে। চোখের সামনে সব দেখার পরও কিয়েভের বা ওডেসার লোকজন ২৪ ঘন্টা আগেও বিশ্বাস করতে পারেনি যে তাঁদের জীবনের সকল স্বপ্ন তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়বে। ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সের সকল পুরুষকে বাধ্যতামুলকভাবে প্রতিরোধ বাহিনীতে যোগ দিতে হবে। কিন্তু এদের অনেকেই জীবনে কোনদিন অস্ত্র ছুঁয়ে দেখেনি। অনেকেরই ১০০ মিটার দৌড়েই জিহ্বা বেরিয়ে যাবে। এদের সবাইকে পরিবার থেকে বিচ্ছন্ন হতে হয়েছে আগ্রাসী রাশিয়ান সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার জন্য। অনেকের জন্যই এটা হয়তো পরিবারের সাথে শেষ দেখা। এই মানষিক ধকল নিতে পারবে ক'জন ? কিন্তু যে সিভিলিয়ানদের আগে টুকটাক অস্ত্র সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা আছে, যারা নিজেদেরকে এবং পরিবারকে এমন একটা দিনের জন্য শারীরিক-মানষিক ভাবে প্রষ্তুত করেছে, টাকা-পয়সা, স্বর্ণ, রুপা ইত্যাদি জমা করেছে। অনেকদিন চলার মত খাবার এবং পানি মজুদ করেছে। যাদের বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চালানোয় অভিজ্ঞতা রয়েছে, বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা রয়েছে তারা এমন পরিস্হিতিতে অনেক এগিয়ে থাকবে। এমন সিভিলিয়ান কি সেখানে আছে? হ্যাঁ! অবশ্যই আছে। শুধু ইউক্রেনই নয়, গোটা পৃথিবীতেই এমন প্রস্তুতি নেয়াটা একটা ট্রেন্ড। দেশে-দেশে Dooms day prepper দের সংখ্যা দিন-দিন বাড়ছেই। এলিটরা সেই প্রষ্তুতি আগেই নিয়ে রেখেছে। বিলিয়নারদের প্রায় সবারই আন্ডার-গ্রাউন্ড বাংকার রয়েছে। কোন পারমানবিক যুদ্ধ, জীবানু অস্ত্রের আক্রমন, ব্যাপক প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় কোথায় আশ্রয় নেবে সে বিষয়ে তাদের রয়েছে পূর্নাঙ্গ পরিকল্পনা। এখন আমার আপনার মত সাধারণ মানুষও বিষয়টা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে।

ভয়াবহ কোন দুর্যোগের সময় কিভাবে টিকে থাকতে হবে এ বিষয়ে যারা প্রস্তুতি নেয় তাদেরকে Doomsday Prepper বা Prepper বলা হয়। এই prepper community মুলত প্রষ্তুতি নিচ্ছে ভয়াবহ কোন দুর্যোগের সময় দীর্ঘদিন ধরে নিজে এবং পরিবারকে টিকিয়ে রাখার জন্য। Cyber বা Electro magnetic pulse আক্রমণে ফাইনেন্সিয়াল ব্যবস্হা অচল হয়ে গেলে, বিদ্যূৎ-গ্রীড ভেন্গে পড়লে , জ্বালানী তেল পাওয়া না গেলে, দোকানে খাবার পাওয়া না গেলে, পানি সরবরাহ ব্যবস্হা বন্ধ হয়ে গেলে বা বায়োলজিক্যাল ওয়ার-ফেয়ারে পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়লে, কোন সামাজিক অস্হিরতার সময় সংঘবদ্ধ লুটেরাদেরর হাত থেকে নিজের পরিবারকে রক্ষার জন্য এরা সবসময় প্রস্তুত থাকে। এছাড়া প্রাকৃতিক দূর্যোগতো আছেই! এই এই prepper community মুলত প্রস্তুতি নিচ্ছে SHTF (Shit Hit The Fan) পরিস্হিতির জন্য। অর্থাৎ যখন আইন-শৃঙ্খলা সহ রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক গোটা অবকাঠামোই এলোমেলো হয়ে যাবে সেই পরোস্হিতির জন্য।

এই prepper communityও কামনা করেনা যে এমন দিন কখনো আসবে। কিন্তু যদি আসে? না আসার গ্যারান্টি নিশ্চয় আমাকে আপনাকে কেউ দেয়নি! যেই মুহুর্তে আপনি এগুলুকে পাগলের কান্ড কারখানা বা বাড়াবাড়ি বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন সেই মুহুর্তে আপনার শহরের দিকে কেউ পারমানবিক মিসাইল তাক করে রেখেছে (একদম লকড্‌ এন্ড লোডেড!) । ইউক্রেনিয়ানদের কথা বাদই দিলাম; কোন রাশিয়ানকে ১ মাস আগেও আপনি যদি বলতেন এমন দিন আসবে যেদিন তারা নিজেদের ব্যাংক একাউন্টে রাখা টাকা তুলতে পারবেনা, ক্রেডিট কার্ড ব্যাবহার করা যাবেনা, তারা কি সে গুলু বিশ্বাস করতো? কিন্তু সেগুলু এখন বাস্তবতা । এরকম হাজারো পরিস্হিতি আছে যার একটা ট্রিগার করলেই আপনি-আমি ১ সপ্তাহ ও টিকতে পারবোনা। শত্রুর আঘাতে মরার আগে ক্ষুধা আর পিপাসায় মরে যাবো আমরা। মুল গ্রীড থেকে বিচ্ছিন্ন হবার সাথে-সাথে আমাদের মনে হবে আমাদের অক্সিজেন বন্ধ হয়ে গেছে। "অফ দ্যা গ্রীডে" বেঁচে থাকার প্রস্তুতি বা পরিকল্পনা তো দূরে থাক, এটা আমরা কখনো ভেবেও দেখিনি।

হ্যাঁ, আমার - আপনার পক্ষে এমন কোমর বেঁধে প্রস্তুতি নেয়াটা সম্ভব নয়। কিন্তু এই prepper community এর গাইড লাইনে এমন কিছু বিষয় আছে সেগুলু ফলো করাটা একদমই বাড়াবাড়ি হবেনা। যেমন সু-স্বাস্হ্য বজায় রাখা লিস্টে ১ নম্বর। SHTF পরিস্হিতি মাথায় রেখে আমি যদি নিজেকে শারীরিকভাবে ফিট রাখার চেস্টা করি সেটা নিশ্চয় বাড়াবাড়ি হবেনা ! এর পরে রয়েছে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়া। এরকম পরিস্হিতিতে শহরই সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া রয়েছে, ঘরে জরুরী অবস্হার জন্য ছোট নোটের কিছু ক্যাশ সব সময় রাখা। পিজিক্যাল গোল্ড -সিলভার কয়েনে কিছু ইনভেস্টমেন্ট রাখা। ষ্টক মার্কেট , ক্রিপ্টো, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, ব্যাংক একাউন্ট সহ ডিজিটাল সিস্টেমে নিজের নিজের সব অর্থ-কড়ি না রাখা। এছাড়াও রয়েছে , প্রাথমিক চিকিৎসার ঔষুধপত্র সংগ্রহে রাখা এবং প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ থাকা। ঘরের যতটা সম্ভব মেরামত নিজে করতে পারা এবং এ সংক্রান্ত টুলস সংগ্রহে রাখা। ব্যাটারি, ফ্লাশ লাইট, ওয়াটার ফিল্টার, ফায়ার ষ্টার্টার, হোম ডিফেন্সের জন্য বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহে রাখা এবং অপারেট করতে পারা । শাক-সব্জী ফলাতে পারা, ফিশিং, হান্টিং এ দক্ষতা থাকা। ২০-২৫ বছর নষ্ট হয়না এবং রান্না ছাড়া খাওয়া যায় এমন খাবার মজুদ করা। বৃস্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্হা রাখা। বুঝতেই পারছেন লিষ্টটা বেশ লম্বা! SHTF পরিস্হিতির প্রস্তুতি নেয়ার পর সেটা আসুক বা না আসুক এতে আমরা ওভার-অল যে আরো অর্গানাইজড হবো, এবং ছোট-খাটো দূর্যোগ মোকাবেলায় আরো সক্ষম এবং প্রস্তুত থাকবো তাতে সন্দেহ নাই।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০২২ ভোর ৬:৪০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নতুন নবীর আবির্ভাব!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪০



গত ২৫ ডিসেম্বর প্রবল বন্যায় পৃথিবী ধ্বংস হবার কথা ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন ঘনার এক স্বঘোষীত নবী। বন্যার হাত থেকে ভক্তদের বাঁচাতে নূহ নবীর মত নৌকা বানাতে ভক্তদের কাছ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪



ইয়ে মানে বছর শেষ। ২০২৫ সাল বিদায় নিচ্ছে । তা আপনার কাছে ২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি ?


আমার কাছে সেরা মশকরা হচ্ছে- এনসিপির জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা।

আরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়া মরিয়া প্রমাণ করিলেন , তিনি মরেন নাই ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮


বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। এই খবরে জাতি শোকাহত। কিন্তু একদল মানুষ আছে যারা উনার মৃত্যুর পরেও নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তার মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×