somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলটোপ

৩১ শে অক্টোবর, ২০০৮ দুপুর ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

--চোর,তুই চোর!
খালামার দোষারোপ শুনে আমি কাঁদলাম।ভীষণ কাঁদলাম।
আমি যদি খালামার নিজের ছেলে হতাম,তবে কি তিনি এমন করে 'চোর 'বলতে পারতেন?

খালামার নাকের সোনার জলটোপটা হারিয়ে গেছে।কখন থেকে খুঁজছেন আর আমাকে গালাগালি
করছেন।

আমি এ-বাড়ির কাজের ছেলে।হা-ভাত ঘরের।তাই তো পরের বাড়ি কাজ করতে হয়।আমি চুরি না
করলে করল কে?

আমারই বয়সী দি-ভাই।ডাক নাম মউ।কেমন নীল-সাদা ইউনিফর্ম পরে,প্রজাপতির মত বাতাসে
ভাসতে ভাসতে,স্কুল যায়।আমি অবাক হয়ে দেখি।একটুও হিংসে হয় না আমার।মউ যে আমার
বোন।হোক না পাতানো।তবু সে আমার দি-ভাই।

এখন যদি দি-ভাই থাকতো,তা-হলে হয়তো এমন বকাঝকা খেতাম না।

আজ সকালেই দি-ভাই গেল মৌরি,তার ফুপুমণির বাড়ি।ওদের গাড়িতে তুলে দিলাম।গাড়ি
ছাড়ল,দি-ভাই হাত নাড়ল।আমারও নাড়তে ইচ্ছে করছিল।পারলাম না।কে-জানে কেউ
হয়তো বলে বসবে,চাকরের শখ দ্যাখ,বাই-বাই,করছে।
ফিরে এসে শুনি,খালামা জলটোপ খুঁজছেন,পাচ্ছেন না।

হায়-রে সোনার জলটোপ,কোথায় গেলে তুমি?ছিল নাকি চানঘরের তাকে।খালা-মা রেখেছিলেন
সকালে।তারপর দি-ভাইকে রওনা করানোর ব্যস্ততায় ভুলেছেন।এখন খুঁজছেন।তুমি নেই,
জলটোপ।সোনার জলটোপ!

এ-বাড়িতে আমি ছাড়াও কাজের লোক আছে বাবুর্চি খলিল ও তাঁর সহকারী মিশিরজী।তাঁদের সারাটা দিন কাটে রান্নাঘরে।কাজের শেষে রাতের বেলায় একজন কুরআন,অন্যজন তুলসী
দাসের রামায়ণে ডুবে যান।চানঘরে কখনোই যান না তাঁরা।তবু আমি তাঁদের কাছে গেলাম।
বললাম,আপনারা কি ওপরে গেছিলেন।
মিশিরজী হিন্দীতে বললেন--না,বাবুয়া।
--কী হয়েছে বাপ?খলিল চাচার কৌতুহল।
সব বললাম।
দুজনেই প্রায় একই সুরে বললেন--ওপরওলা আছেন,তিনিই সব মুশকিল আসান করবেন।

বাইরে গাড়ির শব্দ।দি-ভাইকে পৌঁছে দিয়ে ফিরে এলেন পিটার আংকেল।তিনি এ-বাড়ির
বাগান পরিচর্যা করেন আর প্রয়োজনে গাড়ি নিয়ে এ-বাড়ির সকলকে অফিস-স্কুল-বাজার
নিয়ে যান।ওপরে ওঠেন না কক্ষনো।
আমার অশ্রুভরা চোখ দেখে তিনি বললেন--এনি প্রবলেম?
বললাম সব।বুকে ক্রশ আঁকলেন তিনি।তারপর বললেন,আজ সানডে,এখনই চার্চে যাব।লর্ড
যিশাসের কাছে প্রেয়ার করব তোমার জন্যে।
জলটোপ,হায় সোনার জলটোপ!
তোমার জন্যে আমি এ-বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।তোমার জন্যেই আমি চোর হয়ে গেছি।এ-বাড়ি
তে আমার আর ঠাঁই নাই।
ফিরে যাব আমাদের সেই ছোট্ট গাঁয়ে।যেখানে আমার বাবা থেকেও নেই।আছে সৎ-মা।যার চোখে
আগুন,মুখে ধোঁয়া।সে আমাকে কারো বাড়িতে রাখাল খাটতে বলবে।নইলে কোন চায়ের দোকানে
লাগিয়ে দেবে।লাথি-ঝাঁটা খেতে-খেতে আমিও একদিন পাল্টা দেব।কোন ওস্তাদ আমাকে তার
দলে ডেকে নেবে।তার হয়ে অ্যাকশন করব।দু-দশটা মারব।তারপর নিজেও একদিন মরে যাব।না,সে
জীবন আমি চাই না।
কিন্তু তাছাড়া কোন উপায় দেখছি না।এ-বাড়িতে এতদিন শুনেছি--বুজলে মউয়ের মা,একা
আর সামলাতে পারছি না।বাবুটাকে আর একটু লেখাপড়া শেখাক মউ,তারপর ওকে আমি
ব্যবসার কাজ শিখিয়ে দেব।পয়সা দিয়ে অত বিশ্বাসী ছেলে পাওয়া যায় না।
কথা গুলো আমার বুকে কাঠবেড়ালীর মত ছোটাছুটি করে।যখনই অবসর পাই ,বই নিয়ে বসি।
আরো শিখতে হবে আমাকে।চাকর নয়,ব্যবসার ম্যানেজার হয়ে বাঁচব আমি ।বড় হবো।
কিছুই হবে না সে-সব।হবে,আবার অন্যকোন বাড়ির কাজের ছেলে।তাই-বা কি করে হবে।
এ-বাড়িতে চুরির অপবাদ পেয়েছি শুনলে,কেউ আমাকে চাকরও রাখবে না। আমার শেষগতি
সেই বাঘের মত বাঁচতে চেয়ে কুকুরের মত মরা।না,না,তা হয় না,হতে পারে না।

বাক্স-বিছানা বাঁধা হয়ে গেছে।ভাড়ার টাকা হাতে পেয়ে গেছি।মাইনে নাকি বাবা আসবে
তবেই দেবে।মৌয়ের বাবা এখন আর আমার খালুজান নন,এ-বাড়ির মালিক,যিনি আমাকে
ইচ্ছে করলে পুলিশে দিতে পারতেন,দেননি,দয়া করেছেন।
গেটের কাছাকাছি চলে এসেছি,ঠিক তখনই দি-ভাইকে নিয়ে গাড়ি ঢুকল।অবাক দি-ভাই
বলল--কোথায় যাচ্ছো?
বলতে গেলাম কিছু একটা,অশ্রু হয়ে বেরিয়ে এল তা।
গাড়ি থেকে নামল দি-ভাই।আমার হাত ধরল।বলল--চলো তো ভেতরে।

দি-ভাইকে অমান্য করার মত বুকের পাটা আমার নেই।

--মা,ওকে তাড়িয়ে দিচ্ছো কেন?খালামার চোখে-চোখ রেখে প্রশ্ন করল দি-ভাই।
--ও তোর মায়ের জলটোপ চুরি করেছে।মউয়ের মা নয়,বাবা বললেন।
--মায়ের জলটোপ!দি-ভাইয়ের মুখের পাপড়ি ঝরা হাসি বন্ধ হলো।একঝলক দেখে নিলো
আমার অপরাধী মুখ।বলল--সেটা কি চানঘরের তাকে ছিল?
--হ্যঁ,তাই-তো রেখেছিলাম।উদ্বেগ-ভরা কন্ঠে বললেন খালামা।
--ওটা তো আমি যাওয়ার আগে তুলে রেখেছিলাম আমার শো-কেসে।তখন ভেবেছিলাম তুমি
যা ভুলোমনের লোক,আমাকে একবার শুধাবে নিশ্চয়,এখন দেখছি অনেক-কান্ড ঘটে গেছে।
একটু থামল দি-ভাই,সকলকে দেখে নিলো একঝলক।তারপর বলল--আব্বু তুমি তো সবকিছুতেই
আমাকে ফোন কর,শুধু চোর ছেলেটাকে তাড়ানোর সময় ভুলে গেলে।
মউয়ের বাবা মাথা চুলকে বললেন--বড্ড ভুল হয়ে গেল-রে মা।

--মা,মামণি আমার,তুমি মানুষকে বিশ্বাস করতে শিখলে না কেন?বলে খালা-মা'কে জড়িয়ে
ধরে কাঁদতে শুরু করল দি-ভাই।
তার অশ্রু আমার চোখে সোনার চেয়ে উজ্জ্বল মনে হলো


১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×