somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিংবদন্তী হুমায়ূন আহমেদ এবং হতভাগা আমি

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঢাকা থেকে বকুল মামা মাঝেমধ্যেই ফোন করেন। কুশলাদি
জানার পর তিনি বলেন,আমাদের দেশে একবার বেড়াতে এসো।
আমি বারবার একটি কথা বলি,যাব মামা,যদি একবার হুমায়ূন
আহমেদের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করেন।
মামা বলেন,উরি বাস,তিনি খুব বিখ্যাত মানুষ,আমি বাপু একটা
ছোট চাকরী করি,তার নাগাল পাব না।
আমি হাসি। বলি,বেশ,যেদিন ব্যবস্থা করত পারবেন,বলবেন,
অবশ্যই যাব।আমার পাসপোর্ট রেডি আছে, ভিসা পেতেও অসুবিধা নাই,তাঁর সাথে দেখা করার খুব ইচ্ছে আমার।
একদিন মামা ফোন করলেন,ব্যবস্থা একটা হয়েছে ভাগনে,তুমি আসতে পার।
ছুটলাম ভিসা অফিসে।নিজের অফিস কামাই করে,একে-তাকে ধরে,কোনরকমে একমাসের ভিসা পেলাম।
মামার বাসায় ভালমন্দ খাই আর হুমায়ুন আহমেদের বই পড়ি।অপেক্ষা করি জোছনা রাত্রির। মামার কাছে খবর আছে,আগামী শুক্লপক্ষতে তিনি নুহাশপল্লীতে থাকবেন।
ভারতীয় সাংবাদিক জেনে, নুহাশপল্লীর কেয়ারটেকার আমাকে তিরিশ মিনিট ছাড়পত্র দেবেন তাঁর সঙ্গে কথা বলার।
অবশেষে এল সেই দিন। নুহাশপল্লীর সিকিউরিটি পার হলাম যেন স্বপ্নের ঘোরের মধ্যে।
বেলা তখন চারটে দশ।তিনি এলেন।আমার সামনের চেয়ারে বসলেন।
বললেন,আপনি আমাকে দেখতে কলকাতা থেকে ছুটে এসেছেন।
আমার তখন হাঁচি হবে না কাশি হবে ভেবে পাচ্ছি না।কোনরকমে
ঢোক গিলে বললাম, জী-না, আমি কলকাতা থেকে একশ কিমি দূরের
একটা গ্রামে থাকি।ছোট্ট একটা কাগজ আছে ‘শুভেচ্ছা’।
---তারমানে আপনি লেখালেখি করেন?
---জী,হ্যাঁ,না,মানে, ওই আর কি,ওই একটু।
আমি যে এত তোতলা তা তাঁর সঙ্গে কথা না বললে বুঝতাম না।
---আমাদের দেশের কাগজে লেখা বেরিয়েছে?
--জী হ্যাঁ,একটা গল্প
---বই?
---অনু গল্পের সংকলন ‘তবুও মানুষ’।
--- বেশ এবার বলুন আমার কাছে কেন?
স্মিত হাসলেন তিনি। কলেজ-সুন্দরীরা আমাকে ‘খামখেয়ালী রাজা’
খেতাব দিয়েছিল,তাঁর হাসিতে তা যেন সম্পূর্ণতা পেল।বললাম,
আমার কাগজে আপনার একটা সাক্ষাতকার ছাপব।
---বেশ, যা খুশি লিখে দেবেন,আমি কোন প্রতিবাদ করব না।
ফের মৃদু হাসি। আমার বুক ধড়ফড়ানি বেড়ে যাওয়া।গলার মধ্যে
হাঁচি-কাশী সব জট পাকিয়ে আছে।কোনরকমে উঠে বললাম,
একটা কপি আপনার কাছে পাঠিয়ে দেব,পড়ে দেখবেন।
---নিন,চা এসেছে,খেয়ে তারপর যাবেন।
‘শুভেচ্ছা’র কয়েকটা পুরোন সংখ্যার কপি তাঁর পায়ের কাছে রেখে
কোনরকমে উঠে দাঁড়ালাম।
দেশে ফিরে ‘শুভেচ্ছা’ তে একটা লেখা লিখলাম,
‘হুমায়ুন আহমেদের সঙ্গে আমার মিল-অমিল’।
তার কয়েকটা চুম্বক অংশ এখানে তুলে দিচ্ছি,
১) জন্মসুত্রে হুমায়ুন আহমেদ আমার চেয়ে একধাপ এগিয়ে আছেন,তিনি
বাবার প্রথম সন্তান,আমি দ্বিতীয়।
২)দুজনের বাবাই উচ্চপদস্থ সরকারী অফিসার ছিলেন। কর্মরত অবস্থায়
দুজনেই মারা যান।হুমায়ুনের বাবা শহীদ,আমার বাবার স্ট্রোকে মৃত্যু।
৩) বাবার মৃত্যুর সময়ে আমরা দুজনেই নাবালক ছিলাম।তবে হুমায়ুনের
বাবা,ছেলের লেখক হওয়ার ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলেন,আমার কোন
লেখা বাবার পড়ার সৌভাগ্য হয়নি।
৪)তাঁর বাবা লেখালেখি করতেন,আমার বাবাও। বাবার একটি উপন্যাস
‘অতৃপ্ত আত্মা’ পাঠকমহলে হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছিল। ‘ঘটনা ও রটনা’ নামের
একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা তিনি সম্পাদনা করতেন।
৫)লেখার প্রয়োজনে তিনি অধ্যাপনা ছেড়েছেন,জীবনের প্রয়োজনে আমাকে
বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করতে হয়েছে,জীবিকাই আমার জীবন হয়ে দাঁড়িয়েছে,
লেখালেখি নয়।
৬)তাঁর বই সকলেই আগ্রহ নিয়ে কিনে পড়ে,আমার বই ফ্রিতে পড়ে
সবাই প্রশংসা করে।
৭)হুমায়ুনের এক বোনের নাম শিখা,আমার একমাত্র বোনের নামও তাই।
৮)হুমায়ুনের ছোট মেয়ের নাম,আমার ছোট মেয়ের নাম একই ‘বিপাশা’।
৯)প্রকাশকরা তাঁর লেখা আগাম দিয়ে কিনে রাখে। আমার লেখা গল্প ,কবিতা
প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পেলেও, পুরস্কার আমার হাতে আসে না।
(কিংবদন্তী সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের সঙ্গে আমার কখনই দেখা হয়নি,
বাংলাদেশে আমার কোন আত্মীয় নাই,তাই সেই দেশে যাওয়ার সৌভাগ্যও
আমার হয়নি। শুধুমাত্র,কিংবদন্তী সাহিত্যিককে শ্রদ্ধা জানাতে আমার এই লেখার প্রয়াস,অপরবাস্তব- ৭ এর জন্য। )
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৫৩
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×