ছোটবেলায় আমি সোনার ফসল দেখেছি। ধানের শীষেঁর উপর ভোরের শিশিরবিন্দু দেখেছি। কর্মব্যাস্ত কৃষককে দেখেছি। স্রোতস্বীনি নদী দেখেছি। দেখেছি পালতোলা নৌকা, অবাধ্য কিশোরের সাতার কাঁটা, পদ্মার রুপালি ইলিশ...সর্বপরি মাছেভাতে বাঙালি। দিনশেষে গরীবের একটুখানি সুখ খুঁজে পেতে দেখেছি।
আজ সেই সোনাফলা মাঠে বড় দালান ওঠা দেখছি। দেখছি পোকাধরা ধানের শীষঁ, বিষাক্ত পদার্থ নিঃসৃত ইঞ্জিনের নৌকায় দূষিত নদী...রৌদ্রের খরতাপে শুকিয়ে যাওয়া মরা নদী। কৃষকের হাহাকার, সোনার হরিণ হয়ে যাওয়া ইলিশ...সর্বপরি গরীবের মরে যাওয়া দেখছি। দুর্ভিক্ষপীড়িত বাঙালি দেখছি।
না, খুব বেশিদিনের কথা নয়...কিন্তু এত কম দিনে আমি অজস্র পরিবর্তন দেখেছি। আমি দেখতে চাইনি, তাও আমাকে দেখতে হয়েছে। কেন দেখতে হয়েছে, হচ্ছে কিংবা হবে??? আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ চাইনি...চেয়েছি ঐ একটু সুখের অ্যানালগ সোনার বাংলা। যেখানে আধুনিকতা ছিলনা, ঠিক। কিন্তু ছিল অপার মমতা। আমি কৃত্তিমতা চাইনি, চেয়েছি অগাধ ভালবাসা। না, পাইনি...আমি কিছুই পাইনি। যা না চেয়েও পেয়েছি, তা খুবই ভয়াবহ।
আমি বিশ্বজিত হত্যার লাইভ ভিডিওচিত্র দেখতে চাইনি কিংবা দেখতে চাইনি ঐ স্কুলপড়ুয়া ছাত্রীটির ককটেল বিস্ফোরণে আহত হওয়া। দেখতে চাইনি তাজরিন ফ্যাশানের আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া শতশত লাশ, রানা প্লাজা ধ্বসে সহস্রাধিক আহাজারি, মানিকগঞ্জে ঐ বাসের ভিতরে ধর্ষিত আমার বোনটিকে, প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় অজস্র মেধাবীদের ঝরে যাওয়া, গরীবের পেটে দু’বেলা ভাত না জোটা। আমি কিছুই দেখতে চাইনি...দিনের পর দিন আমি চোখ বুজে না দেখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু, ঐ আত্মচিৎকার, ঐ আর্তনাদ, ঐ হাহাকার আমি উপেক্ষা করতে পারিনি কিছুতেই।
হুমায়ুন আজাদ স্যারের একটা বিখ্যাত কবিতার এক বিখ্যাত লাইন মনে পড়ে গেল......“পৃথিবী একদিন নষ্টদের অধিকারে চলে যাবে।’’ চলেই তো গেছে, পুরোটাই আজ নষ্টদের অধিকারে চলে গেছে। এই নষ্ট হয়েই আমাদের থাকতে হবে...আর দেখতে হবে অজস্র “নষ্টামি”।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



