সজলের বাবা অসুস্থ। সজল আমার কলেজের বন্ধু, খুবই কাছের। এখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ওর বাবার অপারেশনের জন্য প্রয়োজন ১০ লক্ষ টাকার। খুব ছোটাছুটি করেও খুব বেশি সংগ্রহ করতে পারেনি ও। যাই হোক, টাকা সংগ্রহের ব্যাপারেই ওর আমার কাছে আসা, আমার ক্যাম্পাস-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শত চেষ্টা করেও কোন হল থেকেই আশানুরূপ কিছুই পাচ্ছি না আমরা। এত কম টাকা সংগ্রহ হচ্ছে যে, ওর হাতে তুলে দিতে আমার লজ্জায় মাথা হেট হয়ে আসছে। একে তো ক্যাম্পাসে গরমের ছুটি চলছে, তারপর আবার হলগুলো থেকে টাকা সংগ্রহ করার মতো সাহায্যকারী হিসেবে কাউকেই পাচ্ছি না, সবাই বাড়িতে চলে গেছে। কার্জন হলের খোলা মাঠে দাড়িয়ে হতাশ আমি। কি করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। এমতবস্থায় অণু’র ফোন-
অণুঃ কোথায় তুমি?
আমিঃ এইতো কার্জন হলে। সজলের ওই কাজটাতেই আছি। কিছু বলবা?
অণুঃ (ইতস্তত বোধ করছে, কিন্তু মনে হচ্ছে কিছু বলবে) ও ব্যাস্ত?? আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে পরে কথা বলবো।
আমিঃ না, তুমি বলতে পারো। আমি এখন কিছুটা ফ্রি আছি।
অণুঃ (কান্নাজড়িত কণ্ঠে) আগামিকাল আমাকে দেখতে আসবে।
(বুকের ভিতর হটাৎ ধক করে উঠলো। কিছু একটার শূন্যতা অনুভব করলাম সঙ্গেসঙ্গেই। আবেগ ধরে রাখাটাই এখন বড় দায়।)
আমিঃ ও আচ্ছা, এই ব্যাপার। চিন্তা করো না। আরে পাগলি, দেখতে আসলেই তো আর বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে না, তাই না?
অণুঃ তুমি প্লিজ বুঝতে চেষ্টা করো আমার মনের অবস্থাটা।
আমিঃ আচ্ছা বুঝলাম। ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়ার তো কোন উপায় নেই। তুমি বরং তোমার আব্বু-আম্মুর সাথে কথা বল। আমি রাখছি, রাতে কথা হবে।
ফোন কেটে দেওয়ার পর নিজেকে শান্ত রাখাটা আমার জন্য খুবই কষ্টের ছিল। সংবাদটা যেন মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে আসলো। চারপাশটা ঘুরতে আরম্ভ করল তৎক্ষণাৎ। তখনও আমার কানে ভেসে আসছে এখনো টাকা সংগ্রহ বাকি জগন্নাথ হল, শহিদুল্লাহ হল, সূর্যসেন হল, মহসিন হল, এস এম হল...............সবকিছুই মিলে মিশে একাকার হয়ে যাওয়ার অবস্থা।
কিছুক্ষণ পর সংবিত ফিরে পেলাম সজলের কথায়......
সজলঃ কি রে, তোকে চিন্তিত মনে হচ্ছে। কি হয়েছে?
আমিঃ আরে কিছু না দোস্ত। চল অন্য হলগুলোতে যেয়ে দেখি কি অবস্থা।
সজলঃ তোর শরীর খারাপ মনে হচ্ছে। তুই এক কাজ কর, হলে যেয়ে বিশ্রাম নে। আমি এদিকটা দেখছি।
আমিঃ না দোস্ত কিছু হইনি আমার। তুই চল।
সজলের কাজ শেষ হতে অনেক দেরি হয়ে গেল, ততক্ষনে অণু ঘুমিয়ে পড়েছে মনে হয়। আমি আর ফোন দিলাম না। রুমে ঢুকলাম অজস্র চিন্তা আর খারাপ লাগা নিয়ে। মাথার ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছে অনেক কিছু। কোন সমাধানে আসতে পারছি না। কোনোমতেই না। কিই বা করব আমি? নিম্নবিত্ত পরিবারে বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে আমি। সমস্ত আশা ভরসা অথবা অবলম্বন বলা যেতে পারে নিঃসন্দেহে। এত কিছুর পরেও কি করে আমি এই মানবসৃষ্ট কিন্তু অসম্ভব শক্তিশালী ধর্মের বেড়াজাল ভেঙ্গে অণু’কে নিয়ে আসবো??? সমস্ত পৃথিবী, আমার পরিবার সবাই আমাকে ধিক্কার দেবে, পদদলিত করবে আমার ভালবাসাকে। নাহ সম্ভব না। কিছুই সম্ভব না। আমাকে মাফ করে দাও অণু। আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। ভীরু কাপুরুষ আমি। তোমার সমস্ত ঘৃণা আমার জন্য উপহার হিসেবে তুলে রেখ, কোন এক সময় নিয়ে নেব।
আজ হৃদপিণ্ডটা দুমড়ে মুচড়ে বের হয়ে আসতে চাইছে কষ্টে। রাতের অন্ধকারে নিরবে-নিভৃতে মরে যাওয়া দেখছি একটি “অকৃত্তিম ভালোবাসা”।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



