অবশেষে চাকরিটা পেয়েই গেলাম। তুমি জানতে পারলে খুশিই হতে। দারুন চাকরি। যমদূতের সহকারি পি এস। ইহকালে কোন ধর্ম বিশ্বাস না করায় স্বর্গ কিংবা নরক কোনটার কাঠগড়াতেই দাঁড়াতে হইনি আমাকে। ইহকালে তোমার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে অধর্য্য লাগেনি কখনই। তার পরিপ্রেক্ষিতেই পরলোকে এসে এই চাকরির খোঁজ এবং শেষমেশ জয়েন করা। এর পিছনে সুনির্দিষ্ট কারণও আছে। যমদূতের সাথে সাথে থাকায় ইহলোক থেকে কে কখন কিভাবে পরলোকে আসছে তা জানা যায় ভালভাবেই। বুঝতে পারছ নিশ্চয়?? তোমার জন্য আবারও নিরবচ্ছিন্ন অপেক্ষা। এর শেষ কখনই হবে না আমার। এখানে এসেও তোমার খোঁজ রাখতাম নিয়মিত।
তবে হ্যা মন থেকে বলছি কখনই চাইনি তুমি তোমার সুখের সংসার, নাতি-নাতনি, পরিবার ছেঁড়ে চলে আসো তাড়াতাড়ি। কেননা ভালো লাগত যখন দেখতাম একটু নির্জনতা বা একাকীত্ব পেলেই আমাদের ভালোবাসার স্মৃতি কাঁদাত তোমায়। এখান থেকেই শিহরিত হতাম আমি তোমার অনুভুতিতে। কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম অমান্য করার সাধ্য কারো আছে নাকি!!! অনেক অনুনয় বিনয় করেও তোমার ইহলোকে থাকার স্থায়িত্বটা বাড়াতে পারলাম না একদিনও।
প্রতি মিনিটে প্রায় একলক্ষ লোক পাড়ি জমায় এই পরলোকে। সিরিয়াল অনুযায়ী তোমাকে খুঁজে পেতে বেশ কষ্ট হল আমার। যমদূতের সাথে লবিং থাকায় যদিও এতটা বেগ পেতে হইনি। অনেক অপেক্ষার পর এল সেই মহেন্দ্রক্ষন। তোমার সাথে যুগযুগ পর আবার সেই চোখাচোখি। কিন্তু একি!!! পুরাই স্তম্ভিত তুমি। যেন আশায় করনি আমাকে, এইভাবে দেখবে এখানেও। তোমার প্রথম প্রশ্ন—
: তুমি?
: হ্যা, আমি। চিনতে পেরেছ তাহলে।
: না চিনতে পারার তো কিছু নেই। কেমন আছো??
: ভালই আছি। তোমার অপেক্ষায় প্রহর গুণতে গুণতে সব সংখ্যা শেষ হয়ে গেছে।
: তুমি আর বদলালে না। আগের মতোই পাগলামিটা পিছু ছাড়েনি তোমার।
: কিই বা করব বল? ভালোবাসার পরিপূর্ণতাটা যে এখনও বাকি।
কথা শেষ হওয়ার আগেই কথার মোহআবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে হল দুইজনকেই। কে যেন ডাকছে তোমায়। আরে হ্যা, এই তো তোমার সেই ইহকালের স্বামী, যার সাথে কাটিয়েছ জীবনের বেশ কিছু সময়। ইহলোকের ইঞ্জিনিয়ার এখানে এসে স্বর্গগামি ট্রেনের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দিয়েছে। তোমায় ডাকছে। কেননা এই পরলোক জংশন থেকে স্বর্গের উদ্দেশ্যে শেষ ট্রেনটি ছেড়ে যাচ্ছে। আমাকে অবাক করে দিয়ে, আমার দিকে একবারের জন্যও না তাকিয়ে তুমি প্রাণপণে দৌড় দিলে ধীরে ধীরে গতি বাড়তে থাকা, সর্বপরি ট্রেনের দরজা দিয়ে হাত বাড়িয়ে থাকা তোমার স্বামীর দিকে। হতবিহবল আমি নিঃসঙ্গ দাড়িয়ে তাকিয়ে আছি তোমার চলে যাওয়া পথটির দিকে।
শেষ হইয়াও হইল না শেষ। মাঝপথে আমাকে চমকে দিয়ে হটাৎই থামলে তুমি। পিছনে তাকালে। আমি দেখলাম ভালবাসায় পরিপূর্ণ আবেগমাখা অসম্ভব সুন্দর তোমার চাঁদমুখটি। কি অপরূপ তুমি। চোখের কোণে চিকচিক করতে থাকা জল তোমার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে সহস্রগুণ। কাছে এসে হাতটি ধরে আবেগজড়িত কণ্ঠে বললে “ ইহলোকে চেয়েছিলে আমার স্বত্বা হয়ে থাকতে, এখন পারবে তো থাকতে?? ভুলে যাবে না তো আর??”।
নির্বাক আমি। প্রচণ্ড আবেগে আলিঙ্গন করলাম তোমায়। শত বছরের আশা আকাঙ্ক্ষার ভালবাসা স্পর্শ করেছে আমায়। অনুভূতিটা অন্যরকম। চাকরি থেকে পাওয়া সম্মানি দিয়ে মেঘের উপর বানিয়েছি তোমার জন্য ছোট্ট স্বপ্নপুরি। নিয়ে যাব তোমায়। আজ কোন বাধায় রুখতে পারবে না। আজ ইহলোকের ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পাবে পরলোকে, অনেকটা বছর অপেক্ষার পর। পাবেই, পেতেই হবে। কেননা আমি যে সবচেয়ে তোমাকেই বেশি ভালোবাসি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



