somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষণিকের সুখ.......... :(

১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুমে আচ্ছাদিত চোখ। খুলতে ইচ্ছা করছে না একদমই। প্রচণ্ড অনিচ্ছা সত্বেও খুললাম। খুলে অবাক হলাম। হওয়াটা যদিও খুব স্বাভাবিক। নতুন পরিবেশ। আমার অন্ধকারাচ্ছাদিত রুম নেই, মায়ের হাতের স্পর্শে ঘুম ভাঙেনি, আমার চিরচেনা বিছানাটাও পাল্টে গেছে। পুরোপুরি অন্যরকম এক সকাল। সকাল বলাটা ভুলও হতে পারে। তবে যাই হোক, বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। শব্দ শুনে মনে হচ্ছে ঝুম বৃষ্টি। ওঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। এর পিছনে অনেকগুলো কারণ আছে। যেমন প্রথমত আমার শরীরটা অসম্ভব দূর্বল, তারপর বিছানার উপরে স্ট্যান্ড থেকে তরল কি যেন একটা সরু নলের মধ্য দিয়ে আমার শরীরে প্রবেশ করছে। আর মাথার পিছনের দিকে ভারী ভারী কি সব যন্ত্র পিক-পিক করছে। ভালোই। পরিবেশটার মধ্যে কেমন জানি একটা মোহ আছে।


অতঃপর আমার কৌতূহল ভাঙাতে সাদা অ্যাপ্রন পরা একটা মহিলাকে দেখতে পেলাম। রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি কোথায়?? এই কথা জিজ্ঞেস করতেই সে মুখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিল আমার কথা বলা নিষেধ। কি আজব কথা !!! এই স্বাধীন দেশে মানুষের বাকস্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ !!! মেজাজটা খারাপ হল খুব। কিন্তু কিছু বলার আগেই তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেলেন তিনি। খুব রাগ হল। ঘুম থেকে উঠে মা’কে দেখছি না বলে। একটু পর এক ভদ্রলোক এসে জানান দিলেন তিনি ডাক্তার। এবং আমার জ্বর হয়েছে। আপাতত বিশ্রাম নিতে হবে কয়েকদিন। আরও বললেন আমি এখন মোটামুটি সুস্থ এবং কিছুক্ষনের মধ্যেই সবার সাথে দেখা করতে পারব। কিন্তু বেশি কথা বলতে পারব না।


মায়ের উপর রাগ দ্বিগুণ হলো। সামান্য জ্বরের জন্যে হাসপাতালে নিয়ে আসার কোন মানে আছে নাকি। বাসায় একটু সেবা যত্ন করলেই তো সুস্থ হয়ে যেতাম। ধ্যাৎ, অনর্থক টাকা খরচ। এসব চিন্তা করতে করতে আবার ঘুমিয়ে পরলাম কখন টেরই পেলাম না।


ঘুম ভাঙল মায়ের হাতের স্পর্শে। যাক এইবার ঘুম থেকে উঠে কিছুটা ভালো লাগলো। সবাই এসেছে দেখতে। সবার চোখে মুখে এমন হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে মরা বাড়িতে এসেছে। নিরবতা ভাঙল মা।

-কি রে?? কেমন লাগছে এখন?

-ভালো মা।

-ক্ষুধা লাগছে?? খাবি কিছু??

-না, মা। কিছু খাইতে ইচ্ছা করছে না।

-চিন্তা করিস না, বাবা। ভালো হয়ে যাবি।

এই বলে আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল। বুঝলাম না কিছু। যা হোক সবার সাথে কথা হলো টুকটাক। সবাই ফুল নিয়ে দেখতে এসেছে আমাকে। খুবই বিশ্রী একটা ব্যাপার। আমি ফুল একদম অপছন্দ করি। সবাই কি ব্যাপারটা ভুলে গেছে নাকি? আজব !!!


বন্ধু মারফত জানতে পারলাম আরও দুই-তিন দিন থাকতে হবে এখানে আমাকে। খারাপ লাগছে না। প্রতিদিনই অনেক অনেক বন্ধুরা আসে। অবাক হই। এত বন্ধু আমার !!! একটা অজানা ভয়ও কাজ করে মনের ভিতর। সামান্য জ্বরের জন্য এতলোক কেন?? রাজনৈতিক বড় এবং ছোট ভাইয়েরাও এসেছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক আশ্বাস দিয়ে গেল। আবারও সুস্থ হয়ে মাঠ গরম করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।


সবচেয়ে অবাক হয়েছি, আজ পাঁচ বছর ধরে যে মেয়ের পিছনে ঘুরেছি সে এসেছিল। নিতু। কত রাতকে দিন আর দিনকে রাত বানিয়েছি তার হিসেব নেই। কত পাগলামো। কিন্তু ফলাফল শুণ্য। রাজি করাতে পারিনি। আজ এসেছে। আমার অপ্রিয় ফুল নিয়ে। মুখের কোণে হাসি নিয়ে আসার ব্যর্থ চেষ্টা করে কথা বলা শুরু করল।

-কি অবস্থা শরীরের এখন?

-এই তো। ভালো।

-তুমি আসলে? আমি কখনো কল্পনাতেই আনতে পারিনি।

-কেন? আমি আসতে পারি না নাকি?

-না। তা না। আচ্ছা বল কি খবর?

-ভালোই। শোন, তুমি আগের কথা মনে রেখ না হ্যা। আমার ভুলটা আমি বুঝতে পেরেছি। আর আমি তোমার সাথে নতুন করে বন্ধুত্ব করতে চাই। তুমি কিন্তু না করতে পারবা না।

-কিন্তু নিতু, আমি তো কখনো বন্ধুত্ব করতে চাই নি। আমি তো তোমার হাতে হাত রেখে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে চেয়েছি, শিশির ভেজা ঘাসের উপর আলতো পায়ের স্পর্শ দিতে চেয়েছি। তোমার চোখে চোখ রেখে হারিয়ে যেতে চেয়েছি। আমার বন্ধুত্ব চাই না। তুমি আসতে পার। আর হ্যা। যদি কখনো এইগুলো দিতে পার তবেই এসো। নতুবা নয়।

নিতু কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেল। মনটা ভালোই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই কেন জানি কালো মেঘে ছেয়ে গেল। পরের দিনও নিতু আসলো। কিন্তু কিছু বলেনি। শুধু হাতে হাত রেখে কেঁদেছে। বড় বড় চোখগুলো থেকে কাজল নিঃসৃত জলে অসম্ভব সুন্দর লাগছিল। এরপর থেকে প্রতিদিনই নিতু আসতো। তবে সবার এই অত্যধিক প্রীতি আমাকে আগে থেকেই ভয়ঙ্কর কিছুর সংকেত দিয়েছে। তবে আমি কারো কাছে কিছু জানতে চাইনি।


অবশেষে এখান থেকে আমার মুক্তির দিন চলে আসলো। মা-বাবার সাথে বন্ধুদেরও একটু চিন্তিত মনে হল। আমাকে বের করে গাড়িতে ওঠানো নিয়ে। খুব ব্যতিব্যাস্ত তারা। মনে হচ্ছে কাজটা তারা যত দ্রুত সারতে পারবে ততই ভালো। কিন্তু সবার শত চেস্টার পরেও বের হওয়ার সময় হাসপাতালের অভ্যর্থনাকক্ষের দরজার উপরের লেখাটা আমার অলক্ষ্য হল না। লেখাটা ছিল- “জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, ঢাকা, বাংলাদেশ”।


আমি এখন বাড়ি যাচ্ছি। গাড়িতে। এই গাড়িটিকে সম্ভবত এ্যাম্বুলেন্স বলা হয়। সাইরেনের আওয়াজ শুনে বুঝলাম। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে গাড়িটি। পাশে আমার বন্ধুরা। ওদের কাছে খুব জানতে ইচ্ছা করছে আমার ডেড-লাইন এর কতদিন বাকি। থাক আর জিজ্ঞেস করছি না। জানালা দিয়ে অপলক বাইরে তাকিয়ে আছি। মন হারিয়ে গেছে কিছু অসঙ্গায়িত চিন্তায়। সব কিছু মিথ্যা মনে হয়। সব ভালোবাসা অভিনয় মনে হয়। কিছুদিনের জন্য দয়া মনে হয়। ক্ষণিকের জন্য কিছু সুখ ধরা দিয়েও উড়াল দেয়। দূর অজানায়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×