somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চরণামৃতঃ আমার ফেলে আসা পংক্তিমালা

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৬ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছুদিন আগে পরিণীতা ছবিটা দেখছিলাম। ছবিটায় একটা অংশে ছিল র্দূগা পূজা। পূজার ঢাকের সাথে তাল মিলিয়ে উম্মাতাল নাচ। অনেকদিন পর, অনেক অনেক দিন।

একটা সময় ছিল যখন অক্টোবর মাসের কোন একটা দিন ভোরবেলা মাইকের শব্দ শুনে বেরিয়ে উঠে পড়েছি মায়ের হাত গলে। খুব ভোর, মিহি বাতাস ঘাসের ধারালো প্রান্ত ধরে ছুটে চলেছে ।

মা র্দূগা র্দূগতিনাশিনী, এসে পড়েছেন আমাদের রোজকার ডাল-ভাত মাপের জীবনে আনন্দের ধ্বনি নিয়ে। আমার ক্ষণস্থায়ী বাল্যকালের ম্যাজিক রিয়েলিজম এর নাম র্দূগা পূজা ।

সকাল থেকে মাইকে ভক্তি সংগীত, এরপর পুরোনো বাংলা ছবির গান। লতা-আশা-সন্ধ্যা'র গান এতো বেশী শুনেছি এই পূজায় , আমার আর শোনার প্রয়োজন হয়নি গানগুলো। সবচেয়ে বেশী সংখ্যকবার শোনা গানটা হচ্ছে , ''তুমি আমার নয়ন গো , যে নয়নে দেখি গো...'' , '' জন্মদিনে কি আর দেব তোমায় উপহার '', '' গুরুদক্ষিণা'' ..........। সাথে সমসাময়িক হিন্দি ছবির হিট গান '' সাজন সাজন ও মেরে সাজন... '', '' তুমসে মিলকে এ্যায়সা লাগা তুমসে মিলকে '', '' এক দো তিন ......'' । দুপুর বারটায় শুরু হতো লাইভ পূজা পাঠ। দুপুরে মধ্যাহ্ণ ভোজনের বিরতি, সাথে একটু আলতো গড়াগড়ি বিছানায়। বিকাল থেকে আবার শুরু গান। তবে সন্ধ্যার পর গান বন্ধ। ঢাক-ঢোলের বাজনা শুরু (আমি ঢাক এবং ঢোলের তফাৎ ভুলে গিয়েছি তাই দুঃখিত), সাথে খোল-করতাল।

দেবীকে সামনে রেখে নাচছে সবাই, সে কী ভীষণ প্রণোদনা নাচে। নাচটার মধ্যে অদৃশ্য শক্তির র্প্রাথনা যতখানি তারচেয়েও বেশী ছিল জীবনের সব তুচ্ছতার গন্ডি অতিক্রম করে নিজেকে মেলে ধরবার এক প্রবল বাসনা।

শিশু আমার একটা সময় গিয়েছে একগাদা প্রশ্নে। আমার দোস্ত রানা, শান্তুনু, বাপ্পা এদের মাথা খারাপ করে দিয়েছি একশো একটা প্রশ্নে। দেবীর পায়ের নীচে কে? দেবীর দশ হাত কেন ? মানুষের দশ হাত হয় নাকি ? পাশে এগুলো কে ? কেন তিনি আসেন ? কিভাবে আসেন ? কেন এবার ঘোড়ায় চড়ে এলেন ? কই আমি তো দেখিনি ঘোড়া ?
নদীর স্রোতের মত কৌতুহল , একটা ঢেউ যেতে না যেতেই একটা , আবার একটা আবার একটা। পরের বছ র রাত জেগে বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলাম দেখবার জন্য এবার হাতি চড়ে আসবে দেবী। নিদ্্রাদেবীর কারণে হলো না দেখা।

বড় হই আর বুঝতে থাকি এই দেবীর অবয়ব তার আর্দশের প্রতিফলন। দশ ভূজে তিনি তার সন্তানের দেখ ভাল করেন, রক্ষা করেন , লালন করেন , সব করেন তিনি দশ দিক সামলান। তিনি ধরিত্রী সমান। ধরিত্রী দিয়েই বানানো দেহ। আবার চলে যায় ধরণীর কোলে। কি এক অপরুপ র্নিমাণ। কি এক অদ্বৈত চেতনা। একই অঙ্গে কত রুপ মায়ের।

বছর ঘুরে বছর আসে। আমি দেখি , আমি শিখি , স্রোতেরা মুখ ছেড়ে , মাথায় খেলা করে। কি এক অপরুপ রুপের আধার হয়ে সবার কাছে মা আসে , সবারই মা থাকে। অথচ আমরা ঠিক মায়ের সর্ব কূল হেরি রুপ অবলোকনে র্ব্যথ হই।

ঢাকের শব্দ অনেক বছর আর কানে আসেনা, আমার মস্তিষ্কে খেলা করে ঢাকের দ্্রমি-দ্্রমি তাল। একটা অব্যক্ত বেদনা অনুভব করি। চকচকে আধূলি হারানো বালকের মত ক্ষত-বিক্ষ ত হৃদ য়ে অপেক্ষা করি অক্টোবর মাসের কোন এক ভোরের জন্য। ঘাসের বুকে জমা শিশির আলতো পায়ে টোকা দিয়ে এগিয়ে যাব, প্যান্ডেলের বাঁশ ধরে দাড়িয়ে দেখব মায়ের সাজ সজ্জা।

[আমার শৈশব এবং বাল্যকালের সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতি এই র্দূগাপূজা। অনেক মমতায় যেকয়টা স্মৃতি এখনো স্পিরিট দিয়ে ধুয়ে মুছে রাখি সেটা এই পূজোর ঢোল। যার দেখা পাইনা অনেক বছর। আমার মাকে শুধু এই ভাবে ঢোল বাজিয়ে কাব্যনাট্য আর পালাগানের পালা উৎর্সগ করে বলতে চাই , আমি আনন্দিত এবং র্গবিত তাঁর সন্তান হতে পেরে। এই প্রসাদ টুকু সবার সমীপে পেশ করছি সেই বাসনায় ।]
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ১০:২২
২১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×