somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাতাসের খাঁচা

১৮ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বড় রাস্তার মোড়টা সাবধানে ঘুরে একটু সামনে যেতেই শিশির ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হয়ে গেল। রাস্তার একপাশ ধরে অন্যমনস্কভাবে হেঁটে যাচ্ছেন। শিশির ভাইকে দেখেই আমি বুঝে গেলাম তিনি এখন "দার্শনিক" মুডে আছেন! শিশির ভাইকে যারা চিনে তারা সবাই জানে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মুডে থাকেন! এই তো কয়দিন আগেও ছিলেন কবি মুডে! তখন হলুদ রংয়ের একটা পাঞ্জাবি পড়ে কাঁধে শান্তিনিকেতনি ব্যাগ ঝুলিয়ে মুখে উদাস উদাস ভাব নিয়ে দিস্তা দিস্তা কবিতা লিখে ফেলতেন! তার'ও আগে হঠাৎ ভাব উঠল ফটোগ্রাফার হবেন, সেসময় হাতে ক্যামেরা, পিঠে backpack ঝুলিয়ে সারা শহর চষে বেড়িয়েছিলেন! তবে এসব মুড কোনোটাই বেশিদিন থাকে না, এখন যেমন উসকোখুসকো চুল আর মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি নিয়ে এখন তিনি দার্শনিক মুডে আছেন!
সাবধানে পাশ কাটিয়ে রাস্তার উপারে যেয়ে পিছন থেকে ডাকতেই আমার দিকে ফিরে তাকালেন। কি খবর কেমন আছেন ইত্যাদি ভদ্রতাসূচক দু'একটা কথা জিজ্ঞেস করতে যাব তার আগেই তিনি আমায় প্রশ্ন করলেন " আচ্ছা উদয়! বলতো জীবনে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য কী?"
তিনি এখন দার্শনিক পর্যায়ে আছেন সেটা আগেই সন্দেহ করেছিলাম, তবে সেটা যে এত গভীরে চলে গিয়েছে তা বুঝতে পারি নাই!
"না মানে....ইয়ে.." আমতা আমতা করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম তিনি তখন হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিলেন।
"আচ্ছা, বাদ দে! তার আগে বল তুই বেঁচে আছিস কেন?"
প্রাথমিক ধাক্কা সামলিয়ে কিছুটা সাহস ফিরে পেতে শুরু করেছি!
"না মানে..আসলে সামনে আমার প্রি- টেস্ট, পিতাজী বলেছেন রেজাল্ট ভালো করতে না পারলে পিটিয়ে সোজা করে ছেড়ে দিবেন! তাই পিঠ বাঁচানোর আশায় এখন বেঁচে আছি! পরীক্ষার আগে নাক মুখ গুঁজে কিছুদিন পড়াশুনা করে চালিয়ে দিব!"
শিশির ভাই অবশ্য আমার রসিকতায় বিশেষ আহ্লাদিত হলেন বলে মনে হল না। গম্ভীর মুখে কিছু একটা ভেবে বললেন - "চল মনোয়ারের টং-এ বসে কথা বলি। হাতে সময় আছে তো?"
আমি বিশেষ কিছুই করি না, তাই সময়েরও কখনো অভাব হয় না। তবে সেটা তো আর সরাসরি বলা যায় না! মাথা নেড়ে মুখে ব্যস্ততার একটা ভাব ফুটিয়ে বললাম- "সময়..ঠিক নাই...তবে এত করে যেহেতু বলছেন তখন তো যাওয়াই লাগে!"
শিশির ভাই এবারো কিছু বললেন না। ভ্রু কুঁচকে কিছু একটা চিন্তা করতে করতে হাঁটতে লাগলেন। আমি চললাম পিছন পিছন।
টং-এ বসে শিশির ভাই প্রথমবারের মত মুখ খুললেন। "বিষয়টা তোকে বুঝানো দরকার! " আমি নাকমুখ খিঁচে প্রস্তুত হলাম! সম্ভবত এবার একটা ঝড় বয়ে যাবে! তিনি শুরু করলেন— "প্রত্যেকের জীবনেই লক্ষ থাকা দরকার। দৃঢ় লক্ষ না থাকলে জীবনে কখনো উন্নতি হয় না । লক্ষহীন জীবন হচ্ছে নাবিকহীন নৌকার মতো! জীবনে লক্ষ না থাকলে —"
ছোটবেলায় যখন পরীক্ষায় রচনা লিখতে হত তখন "সময়ের প্রয়োজনীয়তা" "অধ্যবসায়" বা "তোমার জীবনের লক্ষ" এই জাতীয় রচনায় "লক্ষহীন জীবন নাবিকহীন নৌকার মতো!" এসব কথাবার্তা লিখে আসতাম! তবে কারো মুখে শুনতে হবে এমনটা আশা করি নাই! আমি ভাবতাম এসব নীতিকথা শুধু বইয়ে লিখার জন্যই লিখা থাকে! পরীক্ষার আগের রাত ছাড়া কেউ আর কখনো এসব পড়ে না!
শিশির ভাই বলতে লাগলেন— "জীবনের লক্ষ না থাকলে চলবে কি করে? তুই সামনে এগুবি কীভাবে?"
আমি জোরে জোরে মাথা নেড়ে বললাম- "ঠিক বলেছেন ভাই!"
ঠিক এই সময় দোকানের কম বয়সী ছেলেটা কাপে করে চা নিয়ে আসল। হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে চা'তে চুমুক দিতেই বেশ ভালো লাগল। চা'টা চমৎকার বানিয়েছে। অন্যান্যবারের মত এক গামলা চিনি দিয়ে দেয় নি! চায়ের লিকার আর চিনির কম্বিনেশনটা মাপমতো হয়েছে। মুখ তুলে শিশির ভাইকে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করতে যাব, তাকিয়ে দেখি তিনি এখনো কাপটা হাতে ধরে রেখে সোজা রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন । দূরে একজন বৃদ্ধকে দেখা যাচ্ছে, রিকসা চালিয়ে আসছে। চুল, দাড়ি পেকে সব সাদা হয়ে গিয়েছে। বুঝাই যাচ্ছে বেশ বয়স হয়েছে। গলায় একটা গামছা ঝুলানো। পড়নের মলিন পাঞ্জাবিটার রং একসময় নিশ্চয়ই সাদা ছিল, এখন দেখে বুঝার কোনো উপায় নেই। রিকসা চালাতে লোকটার নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হচ্ছে। এতটুকু যায়গা আসতে গিয়েই কয়েকবার প্যাডেলে পা বেধে গেল। লোকটা পাশ কাটিয়ে চলে যাবার পরও কি মনে করে শিশির ভাই সেদিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন।

কে জানে তিনি হয়তো জীবনে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছেন!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১১:৩৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ, পাকিস্তানের ধর্মীয় জংগীবাদ ভারতের মুসলমানদের সাহায্য করছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০



এনসিপির জল্লাদরা, ফেইসবুক জেনারেলরা ও ৫/১০ জন ব্লগার মিলে ৭ সিষ্টার্সকে আলাদা করে দিবে বলে চীৎকার দিয়ে ভারতের মানুষজনকে অবজ্ঞা ও বিরক্ত করার ফলে ভারতের ২২ কোটী... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

×