যা লিখতে বসেছিলাম! কালের আবর্তে আজকাল অনেক পরিবারে ধনী আছেন, পরিবারের তিন/চার/পাচ/ছয় ভাই বোনের মধ্যে একজন নিশ্চয় পাওয়া যাবেই! হয়ত তিনি ধনী হয়েছেন নানান কৌশলে কিংবা বিদ্যাবুদ্ধিতে, দেশে কিংবা প্রবাসে, আপত্তি নাই।! আমার দুঃখটা হচ্ছে, এই যে আপনি এত এত টাকার মালিক হলেন, পাশাপাশি আপনার এক ভাই/বোন যে না খেয়ে আছে কিংবা নিন্ম-হীন জীবন যাপন করছে, আপনি কি তা দেখছেন না! আপনার কি লজ্জা হয় না, আপনি খাচ্ছেন দেশ বিদেশে, কত বড় বাসায় থাকেন, ছোটবেলায় পাশাপাশি বড় হয়েছেন, অথচ এখন বুঝি এই গরীব ভাইবোনটার দিকে একবারো তাকাতে ইচ্ছা হয় না! হয়ত কোন কারনে, ভাগ্যে, আপনার সেই ভাই/বোনটা আপনার মত অর্থ জমাতে পারে নাই! আপনার এত শত অর্থ থেকে সেই ভাই/বোনের জন্য সামান্য অর্থ দিলে কি এমন আপনার ক্ষতি হয়ে যাবে! আপনি কি আপনার সব অর্থ নিয়ে কবরে যাবেন! চলুন কয়েকটা উদাহরন দেই, আমি যে ঘটনা গুলোর সাক্ষী!
১। আমাদের অফিসের কিছু কাজ (যাতে প্রতিটা কেইস টু কেইসে পাঁচশত থেকে হাজার খানেক লাভ হয়) করেন এক পঞ্চাশ পেরিয়ে ভদ্রলোক। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী, আমার দেখা ভদ্রলোক। আমি একদিন জানলাম, উনার ভাই এই শহরে অনেক ধনী, বাংলাদেশ/চায়নাতে নাকি নিজেই কয়েকটা ফ্যাক্টরী দিয়েছে, অন্য দেশেও আছে। ঢাকার অফিস বাসা এলাহি কারবার। বলা চলে, শত কোটি টাকার মালিক! সব শুনে আমার কথা বন্ধ, বলে কি! মাত্র দুই ভাই উনারা। ধনী ভাইটা কি এই ভাইকে এমনি এমনি মাসে টাকা দিতে পারে না? ধনী ভাইটার কি এক বারের জন্য এই গরীব ভাইটার কথা মনে পড়ে না?
২। আমার অনেক বন্ধু। নাম পরিচয় ছাড়া বলি। ৬/৭ ভাই বোনের মধ্যে আমার বন্ধুটা ছোট বেলা থেকেই বেখেয়ালী। ক্যারিয়ার বা জীবন নিয়ে তেমন চিন্তা ছিল না! আড্ডা এবং সাধারন জীবনেই সে খুশি ছিল। গত কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছে বটে। খুব টাকার দরকার হলে আমার কাছে আসতো, বলতো, এই বারের মত দেন (আমাদের আপনি সম্পর্ক ছিল)।! তার একটা বোনের কথাই বলি (তার মাত্র একটা মেয়ে), আমেরিকায় বিরাট ব্যবসা আছে, ঢাকার বনানী/গুলশানে তিন কোটি দামের ফ্লাট/জমি আছে, আরো কত কি! অথচ ভাইটা মারা গেল কি অর্থ কষ্টে!
৩। আমার আরেক বন্ধু, প্রায় অফিসে আসে। টাকার দরকার হলে অবশ্য একটু ঘনঘন আসে! নয় ভাই বোন। প্রায় সবাই দেশ বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। কানাডা, ইংল্যান্ডে কয়েকজন সেটেল্ড আছে। বাংলাদেশে যে কয়েকজন আছে (নাম বললে আপনারাও চিনবেন দুইজনকে) যাদের কার কত টাকা হয়ত সে নিজেও জানে না! আমার বন্ধুটি হয়ত জীবনবোধের জন্য পিছিয়ে পড়ছে কিংবা বেশী চালাক বলে কিছু করতে পারছে না! ওকে জিজ্ঞেস করি, তোর টাকার দরকার, ভাই বোন থেকে নিতে পারিস না! উত্তরে সে যা বলে, আমি অবাক হই! এই ভাইয়েরা কি টাকা নিয়ে কবরে যাবে! দেশে বসে ইংল্যান্ড, আম্রিকায় বাড়ী কেনা ভাইয়েরা কি এই নিরীহ ভাইটাকে একটা মসোহারা দিতে পারে না!
৪। উপ সচিবের ছেলে আমার বন্ধু, জীবন নিয়ে বেকুবি চিন্তা ও চাকুরী ছাড়া ধরায় অস্থিরতা, তার জীবনের সাফল্য আসে নাই। এই মৃত বয়সে এখনো সে চাকুরী খোঁজে কিংবা খোঁজে কিছু একটা করা যায় কি না! আমি দেখে অবাক হই, বলার কোন ভাষা আমার থাকে না! যার ভাই বোনেরা প্রাইভেট কারে সাধারন বাজার করতে যায়, অথচ এই ভাইটাকে এই বয়সে এখনো হেঁটে বাসায় ফেরার কথা ভাবতে হয়! আজ হয়ত পকেটে রিক্সা ভাড়া নেই! স্ত্রী কিছু একটা নিতে বলেছে, সে ভেবেই যাচ্ছে, কার কাছে ধার চাইলে আজ টাকা পাবে!
৫। আমার আরেক বন্ধু, ওর সাথে আমার বেশ জমে তবে বেশী সময় দিতে পারি না! পড়াশুনা তেমন করে নাই। যৌবনে একটা প্রেম ছিল, সেখানেও সাফল্য আসে নাই। মনের দুঃখে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিল, কিছুই করতে পারে নাই! বাবা মায়ের সাথে আছে, তাদের দয়ায় চলে ফিরে! ভাই বোনেরা ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার, দেশ বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত। শুনি ওর ভাই বোনেরা ওকে কি দেখবে, ওরা যে বাবা মায়ের দিকেও ফিরে চায় না!
এমনি আরো কত কি ঘটনা জানি! কোনটা রেখে কোনটা বলবো? আমার শুধু আফসোস হয় এই ধনী বা প্রতিষ্ঠিত লোক গুলোর কথা ভেবে, এত টাকা দিয়ে কি করবেন? এত স্ট্যাটাস দিয়ে কি করবেন? এত গাড়ি বাড়ি দিয়ে কি করবেন? এত সম্পদ শুধু কি স্ত্রী, মাত্র এক/দুই সন্তানের জন্য রেখে যাবেন? যে বাবা মার জন্য দুনিয়াতে আসছেন, যে ভাই বোন আপনার ছোট বেলায় আপনার সাথে ছিল, তাদের কথা কি একবারের জন্য মনে পড়ে না! আপনি খাবার খান কি করে? খেতে বসলে কি আপনার সেই দরিদ্র ভাই বোনের কথা মনে হয় না! প্রতি মাসে অসহায় ভাই/বোনটাকে একটা মাসোহারা দিলে কি এমন আপনার টাকা কমে যাবে? মৃত্যুর পর কি জবাব দিবেন?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:২১