নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদ নামাজ কি এবং কেন পড়া হয় তা আপনারা নিশ্চয় জানেন। ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নামাজ।
নফল ইবাদতের (যে ইবাদত করলে আল্লাহ গুনা মাফ করে সোয়াব যোগ করতে থাকেন, প্রিয় নবী সময় পেলেই নফল ইবাদত করতেন) মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নফল নামাজ। প্রতিটি নফল ইবাদতের জন্য নতুনভাবে অজু করা মোস্তাহাব। রাতের নিয়মিত নফল ইবাদতের মধ্যে রয়েছে; বাদ মাগরিব ছয় থেকে বিশ রাকাত আউওয়াবিন নামাজ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করবে; এসবের মাঝে কোনো মন্দ কথা না বলে, তার এই নামাজ ১২ বছরের ইবাদতের সমতুল্য গণ্য হবে।
অনেকে ছোট বেলায় দেখেছেন যে, আগে প্রতিটা নামাজের পরে অন্তত দুই রাকাত এই নফল নামাজ পড়া হত! আবার অনেক মানুষকে দেখতাম কোন চাহিদা আল্লাহর কাছে চাইতে গেলেও বা সেই চাহিদা পূর্ন হলে মানত করা নফল নামাজ পড়া হত! আজকাল অবশ্য আর তেমন পড়া হয় না, মানুষের হাতে এখন আর নফল নামাজের সময় নেই!
তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ হলো রাত জাগা, ঘুম থেকে ওঠা, এ প্রসঙ্গে কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, "আর রাতের কিছু অংশে আপনি তাহাজ্জুদ পড়তে থাকুন। এটা আপনার জন্য আল্লাহর অতিরিক্ত ফজল ও করম। আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে।(সূরা বনী ইসরাইল : ৭৯)"। তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত। প্রিয় নবী সা: এ নামাজ নিয়মিত পড়তেন। অত্যন্ত ফজিলত ও বরকতময় এ নামাজ। রাসূল সা: সবাইকে এ নামাজ পড়ার জন্য উৎসাহ দিতেন। এখন আমাদের দেশে এই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের আর তেমন মানুষ পাওয়া যায় না, হাতে গোনা!
তবে বর্তমান আমাদের দেশের ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপ্রধানের নামে এই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার কথা শোনা যায়, তিনি সহ তার নেতা কর্মীগন এটা প্রচার করেন যে, আমাদের নেত্রী তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েন! যদিও বিরোধী দল সহ দেশের উল্লেখযোগ্য মানুষ এটা বিশ্বাস করে না! তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ব্যক্তি বিশেষ কথা আচার চাল চলনে পুরাই বদলে যান বলে জানা যায়!
যাই হোক, উল্লেখিত নামাজের গুণগান আপনারা জানেন, আবারো জানিয়ে দিলাম। একজন লেখক হিসাবে নুতন করে জানিয়ে দেয়া উচিত বলে মনে করি। তবে এই প্রসংগ এসেছে এই কারনে যে, আমার প্রিয়তমা স্ত্রী বেশ কথা বলেন কিন্তু কাজে তা বাস্তবায়ন করেন না! ফলে আমি নিজে এখন আর উনাকে তেমন বলি না, কারন কে এত কথা বলে নিজের জীবন মাটি করবে!
এই তো, কয়েক সপ্তাহ আগের কথা। রাতের খাবার রাত ১২টায় খাচ্ছিলাম আমরা দুইজনে, যা এখন রাতের খাবারের আমাদের সঠিক সময় হয়ে গেছে! ডোন্ট মাইন্ড! এই যে এত রাতে রাতের খাবার এবং বিষয়টা যে আমরা ভুল করছি তা আমরা দুইজনেই জানি বা বুঝি! কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, এখন থেকে রাত ৮টায় তিনি রাতের খাবার খেয়ে ফেলবেন কারন ওজন সহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন বলে জানালেন! আরো জানালেন, কে খেল না খেল তা তিনি আর দেখবেন না! আমি মনে মনে 'আলহামদুলিল্লাহ' বললাম এবং মনে মনে এই সিধান্ত নিলাম যে, তিনি যদি তা করে দেখাতে পারেন, তবে আমি প্রতিদিন রাতে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বো। কথাটা মুখ ফুটে উনাকে বলি নাই, নিজস্ব একটা টেকনিকের কারনে! বিবাহিতেরা এটা বুঝবেন নিশ্চয়!
না, এই কয়েক সপ্তাহে আমি গোপনভাবে নজর রাখছিলাম যে, প্রিয়তমা স্ত্রী কি সত্য সত্য রাত ৮টার মধ্যেই কি রাতের খাবার শেষ করছেন কি না! না, তেমন কোন দিন দেখি নাই, পরে এক সময়ে মনে হল, তিনি তার কথা ভুলেই গেছেন! আমি মনে মনে হাফ ছেড়ে বাঁচি! গত কয়েকদিন আগে কথা প্রসঙ্গে বড় ছেলেকে বললাম, তোর আম্মার দোয়ার জন্য নফল নামাজ পড়তে চাইছিলাম, পারছি না! এবং ছেলেকে পুরা ঘটনা জানালাম, সে তো হেসেই শেষ! বাবা, তুমি কি যে চিন্তা করো! দাঁড়াও, আম্মাকে জানাই!
যে ঘটনা যেই কাজ, ছেলে আমার তার আম্মাকে বলল, তোমার জন্য বাবা নফল নামাজ পড়তে চেয়েছিল, পারছে না! তুমি রাতে ৮টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নিলেই পার! এতে বাবা প্রতিদিন দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়বে!
প্রিয়তমা স্ত্রী আমার মনে মনে কি চিন্তা করলো জানি না, তবে কঠোর হাসি মুখে আমার ছেলেকে জানান দিলো, "দাঁড়া, তোর বাপেরে নফল নামাজ না তাহাজ্জুদ নামাজ পড়াবো"! মানে, মনে হচ্ছে এখন থেকে তিনি রাতের খাবার সন্ধ্যা ৬টাতেই শেষ করবেন বা এমন কিছু!
আমার তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার কারনে যদি প্রিয়তমা স্ত্রী নিয়মে আসে তথা দেশবাসী ভাল থাকে, তবে পড়তে দোষ কোথায়! অন্যদিকে রাতের আঁধারে এই নামাজ পড়লাম কি না, কে দেখবে, দিনে বলতে তো আসুবিধা নেই যে, আমি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ি!
(মার্জিত)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:২৯