Take Me to Town (1953): হলিউডের এই ছবির বাংলা নাম বাংলায় করে আপনাদের জানাতে হলে আমি এর বাংলা লিখবো, ‘মাঝি, আমাকে নেবে’ কিংবা ‘আমাকে সাথে নাও’! এত বছর আগে এমন ছবি বা এমন কাহিনী নিয়ে ছবি আমি অন্তত কল্পনা করতে পারছি না, মানে এই দাড়াচ্ছে যে, ওরা ছবি বানাতে কত এডভান্সড ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ছবিটাও আপনাদের আমি দেখতে বলি, এর কারন হিসাবে আমি বলবো, এই ছবিতে গল্প আছে (যদিও এমন গল্পের অনেক ছবি নিশ্চয় আপনারা আরো আরো দেখে ফেলেছেন বা এমন গল্প নিয়ে এই দুনিয়াতে আরো আরো অনেক ছবি হয়েছে বটেই) যা এর আগে হয়ত কোন দেশের কেহ এমন গল্প নিয়ে ছবি বানায় নাই বা এটাই হয়ত মৌলিক গল্প ছিলো সেই সময়ে। ছবির চিত্রগ্রহন চমৎকার, অভিনেতা অভিনেত্রীদের কাজ ভাল হয়েছে। বিশেষ করে এই ছবির নায়ক নায়িকা স্টারলিং হেইডেন ও অ্যান শ্রীদান চমৎকার কাজ করেছেন এবং এদের সেই সময়ের স্মার্টনেস এখনো ফলো করা যেতে পারে বলেই আমি মনে করি। নায়িকা অ্যানের চুল সহ শারীরিক গঠনের বা এক কথায় বলা চলে রুপের ঝলকের কথা এখনো মনে করা যেতে পারে। আপনারা যারা এখনো মরলিন মনরোকে ভুলতে পারেন না, আমি বলবো এই ছবি দেখলে আপনারা আপনাদের চয়েস বা পছন্দ থেকে কিছুটা হলেও সরে এসে অ্যানের দিকে যাবেন, এক কথায় সি ইস বিউটিফুল। যাই হোক, বেশি কথা বলা চলে না। চলুন ছবির ক্যাপশনে কথা বলি।
ছবি ১, সাদাকালো থেকে কিছুটা রঙ্গীন দুনিয়াতে প্রবেশের কালের এই ছবি যাকে তখন বলা হত টেকনোকালার। মানে রঙ্গীন দুনিয়া! তবে আমি ছবিটা দেখে যা বুঝতে পারছিলাম, এই ছবির গান গুলোই হয়ত রঙ্গীন ছিল, বাকী সাদাকালো, যা আমাদের বাংলা ভাষায় বলা হত, আংশিক রঙ্গীন! আপনারা নিশ্চয় আংশিক রঙ্গীন ছবি গুলোর কথা ভুলে যান নাই। আমাদের দেশে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত এমন অনেক ছবি হয়েছিল। নিশ্চয় অনেকের এখনো মনে আছে।
ছবি ২, এই ছবির এটাই মনে হয় আকর্ষনীয় পোষ্টার ছিলো। এই পোষ্টার নিশ্চয় সেই আমলে দর্শক টানায় খুব কাজে দিয়েছিল। যাই হোক, এখানে এই ছবির ঘটনা বা গল্প সংক্ষেপে বলে দেই, কারন এতে আপনারা যারা ছবিটা দেখবেন, তাদের জন্য আলাদা একটা আকর্ষন হবে। আমিও মনে করি, আমাদের বাংলা ভাষা ছাড়া অন্য ভাষার ছবি দেখতে বসলে যদি আগে থেকেই গল্পের কিছুটা জানা যায় তবে দেখতে আরো মনযোগ দেয়া যায় বা বুঝতে সহজ হয়। একজন সুন্দরী গায়িকা এবং নৃত্য পারদর্শি মাফিয়া চক্র থেকে কৌশলে পালিয়ে একটা ছোট শহরে চলে যান এবং সেখানে এক ছোট স্টেশনে ছোট সদ্য মাতৃহারা তিনটে ছেলের সাথে পরিচিত হন। এদের সাথেই তিনি সেই শহরে থেকে যাবার সিন্ধান্ত নেন, মানে এই তিনটে দুষ্টু মিষ্টু ছেলের মা হিসাবে নিজকে দাড়া করান (এর মধ্যে অনেক ঘটনা অনেক হাসি তামাশা আছে) কিন্তু এই ছেলেদের বাবা কিছুতে এটা মেনে নিচ্ছিলেন না, তিনি মুলত এই মহিলাকে এড়িয়ে যেতে চাইছিলেন এবং বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এর মধ্যে এই শহরের নানা অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহনের ফলে তিনি আবারো সেই কুচক্রীদের নজরে পড়েন এবং সেই কুচত্রীরা তাকে ধরে আগের জায়গাতে নিয়ে যেতে চায় এবং পুলিশের ভয় দেখায়। এই সময়ে নায়কের মনে মায়া জাগে এবং তিনি সব কিছু ভুলে তাকে স্ত্রী বা প্রিয়তমার মর্যদা দেন এবং পরে এই তিন সন্তান সহ উনারা আবার চমৎকার জীবন যাপন শুরু করেন। এই হচ্ছে মুল গল্প! আশা করি আপনারা বুঝতে পারছেন। মানে এখনকার দৃষ্টিতে খুব একটা সাধারন গল্প কিন্তু সেই আমলের বিবেচনায় এই গল্পে যথেষ্ট মায়া বা আকর্ষন ছিলো। নায়িকা তিনটে শিশুকে ভালবেসে এবং সাথে তাদের পিতাকে আপন করে নেয়ার গল্প সেই আমলে নেহাত বিরল ছিলো। হা হা হা, এটা অবশ্য এই আমলেও চিন্তা করা যায় না, এমন কোন মহিলা পাওয়া যাবে না যে, তিন সন্তান সহ তাদের পিতাকে বিবাহ করবে! অসম্ভব কল্পনা বটেই।
এই ছবির নায়ক বাহাদুরকে দেখে আমার আমাদের বাংলাদেশের ছবির নায়ক মিঃ ওয়াসিমের কথা বার বার মনে পড়ছিলো। হোয়াট এ টল এবং বডি। এই নায়ক নিয়ে আর একটু জানতে গিয়ে যা জানতে পারলাম, তিনি সেই আমলের অনেক জনপ্রিয় একজন নায়ক ছিলেন। তিনি মুলত আমেরিকার নৌবাহিনীর একজন নাবিক ছিলেন, পরে চাকুরী ছেড়ে অভিনয়ে মনোযোগ দেন। ১০১৬ সালে জন্ম নেয়া এই অভিনেতা ১৯৮৬ সালে ৭০ বছর বয়সে মারা যান, তিনি অনেক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। তার চেহারা এবং বলিষ্ট শরীরের জন্য বেশ সুনাম কুড়িয়ে ছিলেন। পাশাপাশি স্মার্টনেসের জন্য তো বটেই। তার আরো কয়েকটা ছবি আমি দেখেছি, সময় নিয়ে লিখবো।
যাই হোক, যারা পুরানো ছবি দেখতে পছন্দ করেন, তারা আজই দেখে ফেলতে পারেন। এখানে আর একটা তথ্য উল্লেখ না করে পারছি না, এই ছবির গল্পের হের ফেরে হিন্দিতে সালমান খান এবং নিলমকে নিয়ে একটা ছবি হয়েছিল, আমি এই ছবি সেই ১৯৯২ সালেই দেখে ফেলেছিলাম প্রবাসে থাকার সময়েই, দুবাই ভিত্তিক আল মুনসুর ভিডিও (মনে আছে কি!) থেকে! এখনো সেই ঘটনা বা ছবির কথা মনে আছে, সেখানে মেয়েটার স্মৃতি নষ্ট হয়ে তিন বাচ্চা সহ চাচা সালমানের কাছে এসেছিল এবং পরে এই দুষ্টু মিষ্টু তিন বাচ্চাকে আপন করে নিয়ে ছিলো, এর মধ্যে তার আসল পরিচয় প্রকাশ হয় এবং সাথে স্মৃতিও ফিরে পায়। ফলে মাঝের এই বছর গুলো সে ভুলে যায় কিন্তু ছবি তো, পরে সে আবার ফিরে আসে। আমার ধারনা ১৯৫৩ সালের এই হলিউডের ছবি Take Me to Town থেকেই এই হিন্দি ছবির গল্প চুরি করা হয়েছিল বা হয়েছে! যাই হোক, এই হিন্দি ছবির নাম ‘Ek Ladka Ek Ladki (एक लड़का एक लड़की)’, আপনারা আগে পিছে এই ছবিটাও দেখে নিতে পারেন!
ছবিটা সেই আমলে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল বলে জানি। বিশেষ করে এই হিন্দি ছবির গান গুলো অনেকের মুখে মুখে ফিরত! তবে মজার ব্যাপার এই হিন্দি ছবির এমন কোন পোষ্টার পাই নাই যেখানে সেই তিন বাচ্চার ছবি ছিলো, ছবিতে শুধু নায়ক নায়িকার ছবিই ছিলো, মানে ছবি দেখতে বসলেই ওদের দেখা পাবেন!
আনন্দে কাটুক আপনাদের জীবন। সবাই ভাল থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ২:২৪