সামুতে ১২ বছর পার! আসলে না, এর চেয়েও বেশী সময় পার হয়েছে, বলা চলে সামুর শুরুর দিন থেকেই ছিলাম একজন পাঠক হয়ে। আমি বাংলা টাইপ না জানার কারনে সামুতে শুরুতে যোগ দিতে পারি নাই বা বাংলা টাইপ না জানার কারনে ব্লগ পড়লেও একাউন্ট করি নাই। যাই হোক, একদিন আমার এক বন্ধু আমাকে বলল, ইংরেজী টাইপ করেই তো বাংলা লিখতে পার, মানে সে আমাকে অভ্র দিয়ে ফোনেটিক ওয়েতে বাংলার কথা জানালো এবং সাহস দিয়ে বলল, তোমার যা জ্ঞান তাতে কয়েক ঘন্টাতেই সব বুঝে যাবে। এমন অনেক কথা আগে শুনলেও আমি আমার মনে বাংলা টাইপের যে ভীতি ছিল (কয়েকবার বিজয় ধরে চেষ্টা করেছিলাম এবং কিছুতেই কীবোর্ড মনে রাখতে পারছিলাম না বলে আমি কখনো বাংলা টাইপে যাই নাই, তা ছাড়া আমার চাকুরী ব্যবসা জীবনে, দেশ বিদেশে আমার কোথায়ও বাংলা টাইপ করার দরকার হয় নাই, বিদেশের প্রায় ১০ বছরেও সেই সময়ের সব প্রযুক্তি মানে ডায়ালাপ ইন্টারনেট বা তার আগের প্রযুক্তিও দেখেছি, ১৯৮৬/৮৭ সালে আইবিএম কম্পিউটার ধরেছি, ম্যাক দেখেছি তার আগেও) তার কারনে আমি কখনো বাংলা লেখার চেষ্টা করি নাই এবং এর উপরে আবার বাংলা ব্লগে লেখা! তবে সব সময়েই কম্পিউটারে যা কিছু বাংলা চোখে পড়ত তাই পড়তাম।
আমার এই বন্ধুর নাম মেজবাহ যাযাদ, পুরানো অনেক ব্লগার তাকে চিনে থাকবেন, সামুতেও শুরু থেকেই লিখত, এখন তাকে লেখক বলা চলে, বাজারে তার প্রকাশিত তিনটে বই আছে এবং এখন আরো লিখছে। এই প্রসঙ্গে আরো বলি, আমি প্রযুক্তির সাথে থাকলেও মেজবাহ তেমন প্রযুক্তি পছন্দ করত না, আমি সেই ১৯৯০ সাল থেকে কত বলেছি কম্পিউটার শিখো কাজে লাগবে, ধরেও দেখত না। আমি বিদেশ থেকে দেশে এসে জানি সে কাজের প্রয়োজনে কম্পিউটার ধরে এবং জানালো বাংলা বিজয় দিয়ে টাইপ করে, এর কারন দেশে চাকুরীর চাপ! চাকুরীর চাপে শিখতে বাধ্য হয়েছিল হয়ত! যাই হোক, সে কম্পিউটারে বাংলা লিখে, আমি পারি না, এতে কিছুটা লজ্জাও পাচ্ছিলাম! অন্যদিকে দেখতে পারছি, দেশে চাকুরী করতে হলে বাংলা টাইপ মাষ্ট জান্তেই হবে, তবে বেক্সিমকোর প্রায় ১০ বছর এসিষ্ট্যাট দিয়ে কাজ চালালেও ল্যাব এইডে যোগ দিয়ে বুঝতে পারি, বাংলা টাইপ জানা ছাড়া আর উপায় নাই। ফলে রাগে ক্ষোভে অভ্র নিয়ে বসে পড়ি এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বাংলা টাইপ করা বুঝে যাই! ব্যস, এর পর আর থেকে থাকি নাই। এই টাইপ করতে পারার পর থেকেই সামুতে প্রথম একাউন্ট খুলে ফেলি, পাশা পাশি অন্যান্ন বাংলা ব্লগেও নানান বিষয়ে আনন্দের সাথে লিখতে থাকি।
সত্য এই যে, শুরুর বেশ কয়েক বছরে দিকে আমি সামুকে বেশী আমলে নেই নাই, আমি বাংলা নুতন আসা অনেক ব্লগে এমনই নিয়মিত হয়েছিলাম যে, যারা আমার বয়সী বা আশে পাশে আছেন, তারা আমাকে জেনে থাকবেন। সেই বাংলা ব্লগ গুলোর নাম নিচ্ছি না, কারন প্রায় সেই সব ব্লগ হারিয়ে গেছে বা হারিয়ে যাবার পথে। এতে আমার অনেক লেখাই হারিয়ে গেছে!
যাই হোক, মনে পড়লেই সামুতে আসছি, তাও তেমন লিখি নাই, মাঝে মাঝে নানান ক্যাচালে সামান্য অংশগ্রহন করেছি বটে! নানান ব্লগে, অনলাইনে নানান অভিজ্ঞতার শেষে আমি ২০১১ নিজেই নিজের ওয়ার্ডপ্রেস সাইট খুলে ফেলি, গল্প ও রান্না এবং তা জমিয়ে ফেলি, সাথে তো ফেইসবুকে আছি শুরু থেকেই (যদিও আমি অরকুট আমলের)। এদিকে মাঝে আবার ল্যাবএইড ছেড়ে এই শহরে এক বছর পুরাই বেকার, ফলে নিজের ব্লগ জমাতে এই সময়ে বেশী কাজ করেছি। তবে এই সময় থেকেই মুলত সামুতে লিখতে শুরু করি এবং সামুর প্রেমে ভাল মতে পড়ি! অনেক ব্লগের নামধাম ভুলে গেলেও সামুকে কি ভোলা যায়! কি মায়াময় নাম, স্যামহোয়ার ইন ব্লগ ওরফে সামু!
আমি মুলত আমাকে একজন খাঁটি ব্লগার মনে করি, লেখক না, সাহিত্যিক না, কবি না! আমি ব্লগারের কঠিন ব্যাখ্যা দিতে পারি, যা শুনলে আমি নিশ্চিত আপনাদের ভাল লাগবে। ব্লগারের মুলত যে কোন বিষয়ে লেখার অধিকার বা যে কোন বিষয়ে ভাবনা চিন্তার অধিকার থাকে। একজন ব্লগার যে কোন বিষয় নিয়েই লিখতে পারে বা মতামত দিতে পারে, এই জন্য আমি নিজকে ব্লগার মনে করি। মানে ব্লগারের চিন্তায় কোন লিমিটেশন নেই। আকাশ বাতাস সব কিছুই তার এবং সে পারেও বটে! ব্লগারদের আমি সমাজের দর্পন হিসাবে দেখি।
যাই হোক, অনেক স্মৃতি আছে, কোনটা ফেলে কোনটা লিখবো। এদিকে বেশী বড় লেখা এখন কেহ পড়ে বলে মনে হয় না!
সামুর সকল কাল দেখার অভিজ্ঞতা সত্যি আমাকে আনন্দ দেয়। আমি আনন্দিত এই ভেবে যে, আমি স্যামহোয়ার ইন ব্লগের একজন সাধারন সদস্য। এই দেশে হয়ত আর কোন নুতন বাংলা ব্লগ জন্ম নিবে না বা এখন আর সেই সময় নেই বা হবে না কিন্তু সামু! বাংলাভাষাভাষীদের কাছে এ এক অবিস্মরণীয় নাম, অবিশ্বাস্য ভালবাসা।
আমি আমার ছাইপাশ লেখা নিয়ে সামুতে এক্টিভ আছি, এটাই আমার গর্ব এবং এখানে ১২ বছর পার করেছি, এর চেয়ে আর আনন্দ কি হতে পারে। তবে একটা গর্ব করেই বলি, আমার একাউন্ট একটাই, আমি কখনো ভিন্ন নিকে বা নামে আর কোন একাউন্ট খুলি নাই, আমার একাউন্ট একটাই, সাহাদাত উদরাজী।
সামান্য দুঃখের কথা মনে পড়ছেঃ কি এক অজানা কারনে সামু আমাকে প্রায় বছর দেড় ব্যান করে রেখেছিল, সেই কোন এক ক্যাচালের কমেন্ট রিপ্লাই হয়ত, যদিও এর মুল কারন আমি জানি না বা জানানো হয় নাই, আমিও আসা যাবার মধ্যে থাকলেও আমার একাউন্ট ওপেনের ব্যাপারে কাউকে কিছু বলতেও পারছিলাম না। যাই হোক, এমন এক সময়ে আমি জানতে পারি যে সরাসরি মিঃ জানা আপার কাছে মেইল লেখা যায় এবং একদিন আমি উনাকে মেইল লিখি, এর কয়েক দিনের মধ্যেই আমি দেখি আবার আমার একাউন্টের পাসওয়ার্ড কাজ করছে। এর অনেক পরে আমি একবার স্যামহোয়ার ইন ব্লগের অফিসেও যাই, সেই অনেক কথা। ব্লগার হিসাবে যদিও সব সময় নিজকে লুকিয়ে রাখি তবে এখন ব্লগারদের যে কোন অনুষ্টানে যেতে পছন্দ করি, হয়ত বয়স বাড়ছে বলেই।
আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:০৬