উইন্ডোজ ১১ ঘোষনা দিয়ে বাজারে এসেছে, তবে মাইক্রোসফটের ঘোষনার আগেই এই সফটওয়ার লিক হয়ে কিছু পাব্লিকের হাতে চলে আসে এবং অনেকেই ঘোষনার আগেই ইন্সটল করে ব্লগ বানিয়ে ছেড়ে দেয়। এটা দেখার পরে আমার আগ্রহ হয় এবং কোথায় পাওয়া যেতে পারে এটা চিন্তা করি। অনেক গুলো লিঙ্ক পেয়ে গেলেও ডাউনলোড করা যাচ্ছিলো না, কারন ফাইল সাইজ এবং আমার নেট সংযোগ স্লো থাকার কারনে, পুরা দুই দিনে মাত্র হাফ নামাতে পারছিলাম এবং এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে পড়ি, অ্যামেরিকা থেকে এক ভাই হেল্প করেও আমার কম্পিউটারে ফাইল ট্রান্সফার করতে পারছিলাম না, অসহ্য স্লো লাইন।
যাই হোক, এর মধ্যে মাইক্রোসফট ঘোষনা দিয়ে দিল গত ২৪ তারিখে এবং তাদের পুরাও ঘোষনা শুনে বারো আগ্রহ বাড়লো, এদিকে আমার স্ট্যাটাস দেখে আমার এক সময়ের কলিগ হাসান জানালো, আমি চাইলে তার কাছে থেকে হেল্প নিতে পারি কারন সে ইত্যমধ্যে ইন্সটল করে চালিয়ে দেখেছে। বাংলাদেশে হয়ত হাতে গোনা কয়েকজন এটা ইন্সটল করে দেখতে পেরেছে, আমার প্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহের কথা হাসান জানে। সেই বলল সে একটা লিঙ্ক দিবে টরেন্ট থেকে খুব কম সময়ে নামিয়ে নেয়া যাবে, ব্যস, নামিয়েই হাসানকে জানালাম। বাকী কোথায় কি করতে হবে তা বলে দিল এবং আমি যে ভয় পাচ্ছিলাম তা ছিল, এতে আমার উইন্ডোজ ১০ এর লাইসেন্স নষ্ট হবে কি না, এর উত্তরে সে তার কম্পিউটারের লাইসেন্সের ছবি পাঠালো, আগেই জানিয়ে দিল, উইন্ডোস ১১ ইন্সটল করার সময়েই এমন একটা অফশন আসে, সেটা মেনে চললে আগের সব ঠিক থাকে। যাই হোক, এভাবে উইন্ডোস ১১ ইন্সটল হল গত ২৬ তারিখ রাতে এবং দেখতে থাকলাম।
যাই হোক, আমি টেকনিক্যাল লোক নয় তবে এই পথ ছেড়ে আসা লোক! সেই DOS থেকে কম্পিউটারের সাথে আছি এবং এখনো। এই পথের একজন সাক্ষী হিসাবে সব সময়ে কাজ করেছি। আমি বিদেশ থাকার সময়ে প্রথম Windows 3.1 বের হয়েছিল, আমার এখনো মনে আছে সেই সফটওয়ার আমি প্রথম ৩৭৫ ডলার দিয়ে কিনেছিলাম, এর কারন ছিল আমাদের কোম্পানীর মালিক সফটওয়্যার বুঝত এবং তার আমার মতই আগ্রহ ছিল, ফলে যেদিন বের হয়েছিল, সেই দিনেই আমি তাকে বলেছিলাম, এটা কিনলে এই এই হতে পারে এবং সে সেটা বিশ্বাস করে আমাকে কোন চিন্তা না করেই টাকা দিয়েছিল। এটা কিনে আমি অফিসের অনেক গুলো কম্পিউটারে ইন্সটল করে দেই এবং অনেকে দেখিয়ে দেই কি করে এর সুফল নেয়া যায়। আমি নিজেও অফিসের অনেকের মধ্যে স্টার ছিলাম শুধু কম্পিউটার জানার কারনেই।হা হা হা। আজ অনেক কথাই মনে পড়ছে, আমাদের দেশের সরকারে থাকা লোকেরা সেই সময়েই প্রোগ্রামিং কি জিনিষ বা এর মাধ্যমে কি হতে পারে, সেটা সময়ে বুঝতে পারে নাই বলেই এখন 'ডিজিটাল ডিজিটাল' করছে, যা হাস্যকর বটেই! ১৯৯০ সালেই আমি দেখেছি উন্নত দেশ গুলোর সরকার এবং বেসরকারী অনেক ব্যাংক কম্পিউটারাইজড, মানে তাদের সব হিসাব কম্পিউটারেই রাখা হত, সেই ডাটা বেইজ এখনো এক্টটিভ! যাই হোক, এই সব অন্য কোন দিনে বলা যাবে। আজকের লেখা বড় করা যাবে না, উইন্ডোজ ১১ নিয়ে কিছু কথা বলে ফেলি।
ভাল দিকঃ
- ভিজুয়াল বেশ সুন্দর, চোখের পীড়া কমছে।
- আরো বেশি ইউজার ফেন্ডলী, মাত্র একদিন দেখেও যে কেহ অপারেট করতে পারবে।
- মোবাইল বা ট্যাব চালকেরা এখন এটা আরো ভাল বুঝতে পারবে।
- কিছুটা ফাষ্টার বলেই মনে হয়েছে।
- প্লাগ এবং প্লে ডিভাইস গুলোর সংযোগ আরো সহজ এবং সমুথ!
- পুরানো সব এপস বা সফটওয়ার গুলো কোন সমস্যা ছাড়া চলছে।
- কিছু নুতন অফশন আছে যা কাজের।
- আমাদের প্রিয় ‘অভ্র’ ভাই চমৎকার কাজ করছে, এই লেখা অভ্র ফনেটিকেই লিখছি।
মন্দ দিকঃ
- এটা অনেকটা উইন্ডোস ১০ বেইসড, মানে উইন্ডোস ১০ কে নুতন করে সাজিয়ে, মেকাপ করে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।
- ৩২ বিটের কম্পিউটারে এটা চলবে না।
- যত ভাল স্পেসিফিকেশনের হার্ডওয়ার তত ভাল চলবে।
- আমাদের ‘বিজয় ৫২’ কাকা এই উইন্ডোসের উপযুক্ত নয় (এটা যারা ফ্রেস ইন্সটল করবে তাদের জন্য সমস্যা হবে, যারা ইন্সটলের সময়ে আগের সব সেটাপ রাখবে তাদের জন্য সমস্যা হবে না, কি কারনে চলবে না তা জানি তবে বলছি না, শুধু বলব কাকাকে এই ভার্সানের জন্য আবার নুতন করে কিছু বিষয় আপডেট করতে হবে)।
উপসংহারে বলে ফেলি, এটা চমৎকার, আপনি চাইলে ইন্সটল করতে পারেন, আপনার আগের সব সেটাপ রেখে। আপনার কম্পিউটার ৩২ বিট সাপোর্টেট এবং ৪ জিবি র্যাম হলেই হল। যদিও মাইক্রোসফট একটা পিসি হেলথ চেক এপস দিয়েছ, সেটা আপনাকে ‘না’ বললেও আপনি বাইপাস করে এই ভার্সান ইন্সটল করতে পারেন এবং চলবেই। আমার যে কম্পিউটারে চলবে না দেখিয়েছিল, আমি সেটাতে ইন্সটল করে কাজ করছি। যারা একটু ভেতরের টেকনিক্যাল বুঝেন তারা এই সব আগেই জেনে গেছেন। তবে সর্বশেষ,আপনি যদি এই উইন্ডোস ১১ ইন্সটল না করেন,তবুও কিছু আসবে যাবে না বা আফসোসের কিছুই নেই, আপনার কাছে যদি উইন্ডোস ১০ থাকে তবেই হল!
(আপনাদের কোন জানার প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট জানাতে পারেন, আমি উত্তর দিবো)
আমবাগান, মালিবাগ, ২৯ জুন ২০২১
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০২১ রাত ১১:১৮