Seventh Heaven (1937 film), যে ছবি এখনো সতেজ! সতেজ কথাটা এই জন্য বললাম যে, এই ছবি এখনো দেখলে মনে হবে, আরে এই গল্প নিয়ে তো এখনো ছবি হয় বা একই ধরনের গল্প নিয়ে তো শত শত ছবি হয়েছে! ছবিটা ১৯৩৭ সালে মুক্তি পেলেও ঘটনা কাল ১৯১৪ এবং গল্পের স্থান প্যারিস, ফান্স! সংক্ষেপে গল্প বলে দেয়ার আগে জানিয়ে রাখি আমি পুরানো ছবি দেখার আগ্রহী ব্যক্তি এবং সুযোগ পেলেই পুরানো ছবি নিয়ে বসে পড়ি। ছবি গুলো দেখে আমি নানান চিন্তায় চলে যাই, এত বছর আগে এমন ছবি কি করে বানানো হল, এমন কাহিনী কি করে চিন্তা করা হল তা নিয়ে ভাবনায় পড়ি! উপরন্তু আমি ছবি দেখে সেই আমলের আমাদের এই দুনিয়ার দৃশ্যপট চিন্তা করি, মানব সভ্যতার ধাপ গুলো আমার চোখের সামনে এসে পড়ে। পুরানো ছবি দেখাও একটা নেশা, এটা আমাদের এই যান্ত্রিকযুগে বই পড়ার মত ব্যাপার, বই যদিও এখন পড়তে পারছি না, তবে ভিজু্য্যালী সেই আমেজ পাওয়া যাচ্ছেই!
শুরুতেই গল্পের কাহিনী বলে দেই, যাতে আপনাদের ছবিটা দেখার আগ্রহ জন্মে এবং দেখতে বসে আগ্রহ না হারান। এই ছবির নায়কের নাম জিকো। জিকো পিতামাতাহীন একজন ভবঘুরের মত, থাকেন একটা প্রায় পরিত্যক্ত ভবনের ৭ তলায় ছোট একটা রুমে, কাজ করেন প্যারিসের মিউনিপাল্টিতে, ম্যানহোল পরিস্কার বা দেখবাহাল করেন, আগ পিছ নেই, এভাবে তার দিন কাল চলছে, রাত দিন এভাবেই কাটে! এর মধ্যে তার জীবনে এসে পড়ে ডায়না নামের এক মেয়ে, যে কিনা এক পপে দর্জাল মাসীর অধীনে কাজ করে কিন্তু এই কাজ তার পছন্দ না, একদিন এক বয়স্ক কাষ্টমারের সাথে ঝাগড়া বাঁধিয়ে সেই মাসীর থেকে মার খেয়ে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে, কোথায় যাবার জায়গা নেই। এইসময়ে জিকো তাকে সারিয়ে বাসায় নিয়ে আসে এবং সেবা দিয়ে তাকে ভাল করে তুলে। জিকো প্রথম প্রথম প্রেমে না পড়লেও ডায়না জিকোর প্রেমে পড়ে যায়, তার ভাল মানুষির প্রশংসা করে এবং তাকে সারা জীবনের সংগী হিসাবে নিতে চায়! উড়ালচন্ডি জিকো এই সবের ধার ধারে না, সে তার মত করে জীবন চলাতে থাকে তবে বাসায় এসে সময় মত খাবার দাবার পেয়ে জীবন নুতন করে চিন্তাও করে! ডায়ানা সকালে নাস্তা বানিয়ে দেয়, জিকো তিরিং বিরিং করতেই থাকে, এক সময়ে জিকোর মনে প্রেম জেগে উঠে, সে সিদান্ত নেয় ডায়ানাকে সে বিবাহ করবে!
জিকো একদিন ডায়নার জন্য একটা গাউন কিনে নিয়ে আসে এবং বিবাহের প্রস্তাব দেয় কিন্তু ভাগ্য সহায় হয় না। ফান্স প্রথম মহা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং দেশের সব পুরুষদের যুদ্ধে যোগ দেয়ার জন্য বলা হয়, চিঠি আসে। জিকো সেটা অমান্য করতে পারে না, সে বিধাতার কাছে ফরিয়াদ করে তবুও হিটলারের সেই যুদ্ধে চলে যায়। খুব সংক্ষেপে বলি, জিকো যুদ্ধের শেষ সময়ে আহত হয় এবং চিকিৎসায় স্থান পায়। এদিকে ডায়নাও যুদ্ধের সময় নার্স হিসাবে কাজ করে, যুদ্ধ জয়ে সবাইকে ফেরত পেলেও জিকোকে খুঁজে পায় না, সবাই ধারনা করে জিকো মারা গেছে, এমন কি সাথের লোকেরাও সঠিক কিছু বলতে পারে না কারন তারাও জিকোকে আহত দেখেছে। ডায়নার মন কিছুতেই মানে না, সে নানান স্থানে জিকোকে খুঁজতে থাকে।
এত নিষ্টূর গল্প না, এক সময়ে ডায়না জিকোকে খুঁজে পায় তবে জিকোর চোখ দুটো অন্ধ, যা সে যুদ্ধে হারিয়েছে। ডায়নার এতে কোন আপত্তি নেই, সে জিকোকে গ্রহন করে। এই হচ্ছে ছবির গল্প। তবে বেশি সংক্ষেপ করতে গিয়ে, অনেক কিছুই বাদ দিয়ে ফেলেছি, বেশ কিছু পাশ চরিত্রের কথা মোটেই বলি নাই, অথচ সেই সব চরিত্রও দেখার মত। জিকো যে সাত তলায় থাকে সেটা এক ভয়াবহ এপার্ট্মেন্ট, তার প্রতিবেশীরাও ভয়াবহ, এক বাসা থেকে অন্য বাসায় যাবার ব্যবস্থা দেখেই দর্শকের ভয় লাগবে। যাই হোক, বাকী অংশ দেখেই আনন্দ নিন।
পরিসংহারে এসে যাই। ছবিটা কেন দেখবেন? সেই ১৯১৪ সালে এমন গল্প কি করে চিন্তা করা হয়, সিনেমার ক্যামেরা দিয়ে ৭টা ফ্লোরের সিড়ি চিত্রায়ন কেমন করে করলো? এটা সত্যই দেখার বিষয়। সাত তলা থেকে নীচে দেখার বেশ কিছু দৃশ্য আছে। প্যারিসের রাস্তা, পরিবেশ তখনি দেখার মত ছিলো, তাদের তখনই আন্ডার গ্রাউন্ড ডেনেজ ব্যবস্থা ছিলো! মিউনিসিপালটি কত আধুনিক ছিল, যুদ্ধ, চিকিৎসা ইত্যাদি প্রসঙ্গে জানা যায়। তাদের পোষাক পরিচ্ছেদ, জীবন যাপন জানা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি! আরো কিছু ব্যাপার উল্লেখ করার মত, সিগারেট মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর এটা তখন মানুষ জানত না, হাসপাতালেও শুয়ে শুয়ে সিগারেট টানা যেত, যুদ্ধে আহত ব্যক্তিকে সিগারেট দেয়া হত! এমনি আরো কত কি! মানব সভ্যতার ইতিহাস জানতে চাইলে এমন ছবি অবশ্যই দেখা উচিত!
ছবিটা ইউটিউবে আছে, দেখে নিতে পারেন। বিশেষ করে যারা মানব সভ্যতার ইতিহাস খুঁজেন বা মানুষের বিবর্তন নিয়ে কাজ করেন। পরিশেষে বলি, এই ছবিতে তৎকালীন সামাজিক ব্যবস্থা ফুটে উঠলেও, মুলত মানব সভ্যতা আড়ালে আবডালে এখনো তেমনি, হয়ত সব কিছু নুতন মোড়কে!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১০:১৬