ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সেজো কাকা (বাবার ৩য় ভাই) আর এই দুনিয়াতে নেই। আজ দুপুরে তিনি এই দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে গেলেন, তিনি অনেক দিন অসুস্থ্য ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের আগে চট্রগ্রাম অঞ্চলে ইপিআর/বিডিআরের সদস্য ছিলেন এবং সেখানে থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি জেড ফোর্সের অধীনে অংশ গ্রহন করেন, আমাদের পরিবারের যে দুইজন সদস্য সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন তিনি অন্যতম, আর এক চাচা আগেই গত হয়েছেন। আগামীকাল ২৯/০৭/২১ইং সকাল ১০ ঘটিকার সময় নিজ বাড়ীর দরজায় নামাজে জানাজা অনুষ্টিত হবে এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হবে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য এক অনন্য গৌরবের বিষয় ও সন্মান। নিঃসন্দেহে মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রের সর্বশ্রেষ্ট সন্তান। চাচাদের জন্য গর্বিত হলেও অনেক সময় আফসোস লাগে এই ভেবে যে, উনাদের জন্য সত্যই তেমন কিছু করতে পারি নাই, দোয়া করি সব সময়। আপনাদের দোয়া কাম্য।
২৯/০৭/২০২১ আপডেট ও কিছু কথা>
গতকাল চাচার দাফন সম্পন্ন হয়েছে, আমরা কয়েকজন ঢাকা থেকে গিয়েছিলাম, ভাড়া প্রাইভেট কারে, পথে কোন জিজ্ঞাসাবাদেও পড়ি নাই, আসার সময়েও একই অবস্থা। পরশু রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে পথ ঘাট ডুবিয়ে গিয়েছিল, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আচমকা বৃষ্টি থেমে যায় এবং ঠিক এই সময়েই উপজেলা থেকে ইউএনও এবং উনার পুলিশ বাহিনী আসেন এবং মৃতকে গার্ড অফ অনার দেন। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল সামনা সামনি এই বিষয়টা দেখা এবং সেটা পূর্ন হয়েছে। আমাদের বাড়িতে আর জীবিত কোন মুক্তিযোদ্ধা নেই বলেই জানি, তিনিই ছিলেন শেষ ব্যক্তি। আমার চোখে কয়েকটা বিষয় তুলে ধরছি।
১। কোন ব্যক্তিকে মৃত্যুর পর গার্ড অফ অনার দেয়া নিশ্চত সেই ব্যক্তি ও তার পরিবারের জন্য সন্মানের। জাতীয় পতাকায় মুড়িয়ে দেয়া নিশ্চিত গৌরবের, সাথে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ফুল দেয়া হয়।
২। উপজেলা থেকে ইউ এন ও এবং অন্যেকজনকে বক্তব্য দিতে দেখলাম, তবে উনারা এই ব্যক্তির জীবনী তেমন জেনে আসছেন বলে মনে হল না, কারন লোকের কর্ম জানলে বলতেও স্বাচ্ছন্দ বোধ হয়।
৩। গার্ড অফ অনার হচ্ছে কিছু কর্ম ধাপ, এই ধাপে পুলিশের কাজ বেশি, উনারা স্যালুট দেন এবং কসরতের মাধ্যমে বন্দুকের মাথা ডাউন করে অভিবাদন জানান, পরে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
৪। পুরো বিষয়টা কোন এডিট ছাড়া আপনাদের জন্য ইউটিউবে তুলে দিলাম, কমেন্টে লিঙ্ক দিলাম, দেখে নিতে পারেন। যে সময় গুলোতে আমি অংশ নিয়েছি সেটা সম্ভব হয় নাই। মৃত মুখের ছবি তুলি নাই।
কিছু ফ্যাক্টঃ শুনলাম আমাদের উপজেলাতে তালিখাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা আছেন ৩১২ জন (সঠিক সংখ্যা জানার কোন উপায় আপাত জানি না, ভুয়া কেহ আছেন কি না তাও জানা নেই) এবং, এর মধ্যে অনেকেই মারা গেছেন, গত কয়েক বছরে সব চেয়ে বেশি সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন বলে তিনি জানালেন এবং এর কারন বার্ধ্যক জনিত অসুস্থ্যতা। সত্য হিসাব করলে মুক্তিযুদ্ধের সময় উনাদের বয়স একদম সর্বনিন্ম ২০ বছর ধরলেও (যদিও আরো বেশি বয়সে গেছেন এমনই ধারনা করা হয়) এখন ৭০ বছরের উপরে উনাদের বয়স, কাজেই রোগ শোকে কাবু হবার কথাই।
কিছু আরো কথাঃ আমার যে দুই চাচা সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন উনাদের এক চাচা এই সব কিছু না জেনেই পরপারে গিয়েছেন, রাষ্ট্র যে সন্মান এবং মাসিক সন্মানি দেয় তার কিছুই তিনি পেয়ে যান নাই (তিনি খুব খেয়ালিও ছিলেন, তবে তার যুদ্ধে যাবার ইতিহাস সিনেমার মত, না বলে বিলোনিয়া দিয়ে ইন্ডিয়াতে চলে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন এবং লম্বা চুল দাড়ি নিয়ে একদিন যুদ্ধ জয় করে বাড়িতে আসেন, পুরাই সিনেমার সেই গল্প)। আর এই চাচাও এই সব সন্মান নেয়ার পক্ষে ছিলেন না, বলতেন, সুযোগ হয়েছে দেশে জন্য যুদ্ধ করেছি, কার কাছে কি চাইবো, কেন চাইবো? আমার মনে আছে তিনি তার সার্টিফিকেট পর্যন্ত সংগ্রহ করেন নাই অনেক দিন, ঢাকা থেকে ২০০০ সালের বা আগে পরের দিকে বিডিআর (এটা তৎকালীন ইপিআর এর নাম ছিলো) উনাকে ডেকে এনে সন্মান দিয়ে রিকোনাইজ করে দেয়।
* শ্রদ্ধাঞ্জলি বানান ভুল নিয়ে মনে কিছু করার নেই, ধরে নিচ্ছি উনারা ব্যস্ত থাকেন বা এখন প্রশাসনে ভাল বাংলা জানেন এমন লোকের সংখ্যা কমে গেছে। তবে আফসোস ইউএনও মহোদয় নিশ্চিত এটা দেখেই বুঝে যেতে পারতেন এবং সরি বলা যেত। আমি নিজেও অনেক বানান ভুল করি, তবে কিছু কিছু জায়গাতে ভুল চলে না, বিশেষ করে রাষ্ট্রের কোন কাগজ পত্রে তো নয়ই। সবাইকে ধন্যবাদ।
এখানেই প্লে বাটন চেপে দেখে নিতে পারেন, শুভেচ্ছা।