somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহাদাত উদরাজী
সাহাদাত উদরাজী'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - 'গল্প ও রান্না' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

আত্মকথাঃ ভিক্ষুক

০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভিক্ষুকদের সাথে আমার সম্পর্ক বেশ পুরানো। রাস্তায় বের হলে তাদের অনেকেই আমার দিকে হাত বাড়ায়, আমি অবশ্যই কিছু হলেও দিতে চেষ্টা করি, পাশ কেটে চলে যেতে আমার ভয় লাগে। আমার এমন হাত দেখলে সেই পুরানো গল্পের কথা মনে মনে পড়ে, এই হাত কি বিধাতা আমাকে টেষ্ট করতে পাঠিয়েছেন! যদি না দেই তবে কি বিচারের দিনে আমাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোর কাছে একজনকে পাঠিয়ে ছিলাম, তুই না করেছিস, এর জন্যই তুই দোজগে যাবি। কথা মনে পড়তেই আমি পকেটে হাত দিয়ে দেই।

তবে আমার সাথে কোন বন্ধু থাকলে, এভাবে টাকা দিতে আমার লজ্জা লাগে, তখন উলটা মাফ চাই। আমার অনেক বন্ধু আছে, এদের দেখলেই বলে, কিছু না করে ভিক্ষা করছেন কেন কিংবা ভিক্ষাকে কি ব্যবসা হিসাবে নিয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। কিংবা বন্ধু থাকতে দিলে বাহাদুরি দেখানো হবে বলেও চুপ করে যাই, মাফ চাই!

কোন কেহ যদি আমার কাছে কিছু খেতে চায়, ভাত খেতে চায় বা এমন কি চা কলা বিস্কুট খেতে চায়, এই সমস্ত ক্ষেত্রে আমি 'না' করি না। এই চাওয়া গুলো সাধারনত কোন খাবারের দোকান বা চা দোকানের সামনেই হয়ে থাকে। আমি অনেক বার একদম বসিয়েই খাইয়ে দেই, আর চা কেক বা কলা খাবারের পরে সিগারেটও সাধি পুরুষ হলে, বেশ কয়েকজন বেশ হাসি মুখে লাকি সিগারেট আমার সামনেই টেনেছেন, পুরানাপল্টন বা নয়াপল্টনের নানান গলিতে এমন ভিক্ষুক প্রায় দেখা যায়! এদের আমার বেশ ভাল লাগে, আমাকেও দারিদ্রতা টানে, ধনসম্পদ আমাকে কখনো টানে না, যদিও ধনসম্পদের পিছনে ঘুরেই সারা জীবন কাটিয়েছি বা কাটাচ্ছি!

বেইলী রোডের এক ভিক্ষুক চাচীকে (চাচী সন্মানের জন্য বললাম, আসলে তিনি আমার সমবয়সী হবেন) আমি গত প্রায় ৩০ বছর ধরে চিনি, তিনি আগে নাভানা বেইলী স্টারের আসে পাশে বসতেন, এখন রোডস এন্ড হাইওয়ের অফিসের গেইটের সামনে বসেন। আমরা সব বন্ধুরাই উনাকে চিনি, কারন উনাকে ঝড় বৃষ্টি বাদল যে কোন দিনেই দেখি, তিনিও আমাদের দেখতে দেখতে চিনে ফেলেছেন, তিনি তখন জোয়ান ছিলেন, আমাদের এক বন্ধু উনাকে দেখলেই বলত, বাসা বাড়িতে কাজ করেন না কেন? তিনি এটা শোনার পরে আর দাঁড়াতেন না, সোজা শান্তিনগরের দিকে রাওয়ানা দিতেন! তবে আমাদের এক ধনী বন্ধু ছিলো তার মন ভাল থাকলে সেই দিন উনাকে ৫০/১০০ টাকা দিত, ঈদে চান্দে আরো বেশী বেশী, কখনো দূর থেকেও ঢেকে দিয়ে দিত। এই ধনী বন্ধুর এমন দান দেখে আমাদের ১০/২০টাকা কোন টাকাই মনে হত না!

এখন তিনি বেশ বুড়ো হয়েছেন তবে এই বেইলী রোড ছাড়েন নাই, এখন বসে থাকেন, যারা চিনেন হয়ত তারা তাকে নিয়মিত দেন, উপরওয়ালা উনার রিঝিক কার মাধ্যমে পাঠান কে জানে! আমার সাথে এখন আর দিনে দেখা হয় না, রাতে দেখা হয়, আমি দেখি তিনি দেখেন কি না জানি না! তবে এখন প্রায় খেয়াল করি তিনি বসেই থাকেন, কারো কাছে হাত পাতেন, যা তিনি আগে করতেন। জানি না কি কারনে এখন উনার মন খারাপ থাকে বা কি না! আমি ভেবে আশ্চর্য্য হই যেই তিনি আমাকে দেখলেই হাত পাততেন, এখন আর হাত বাড়ান না! আমার কাছে রহস্য লাগে! আজ এই রাতে বার বার মনে পড়ছে, কেন তিনি আজকাল এমন করেন? আমি কাল বা পরশু গেলে দেখা পেলেই জিজ্ঞেস করবো। অল্প টাকার কোন সমস্যা থাকলে সমাধান করে দিব।

আমাদের এই শহরের ভিক্ষুকদের নিয়ে আমার অনেক মজার কিচ্ছা জানা আছে। যে যেই জায়গাতে ভিক্ষা করেন কেহ সেই জায়গা ছাড়েন না, হাজার বছর ধরে সেখানেই ভিক্ষা করেন, একটা নিদিষ্ট সময়ে, নিদিষ্ট পরিসরে। এই শহরের অন্ধ ভিক্ষুকদের হয়ত সেই জন্য কাউকে ছাড়া হাটতে দেখেন, কারন সেই রাস্তা তার মুখস্ত।

এই রাতে এই লেখা লিখতে গিয়ে শান্তিবাগের প্রবেশের মুখে আমার এক ভিক্ষুক বোন আছে, তার কথা মনে পড়ছে, দুপুর ১২টার পরে আর তাকে পাওয়া যায় না। সকাল থেকে যোহরের আজান পর্যন্ত তিনি মাটিতে বসে ভিক্ষা করেন, আমার এই বোনের দুই পা প্যারালাইজড। একবার আমি উনাকে একটা হুইল চেয়ার কিনে দিতে চাইলাম, তিনি বললেন, ভাইয়া আমাকে এই টাকা দিয়ে দিন, আমি আমার ছোট ভাইকে গাড়ি চালনো শিখাবে, লাইসেন্স বানাবে, সে একটা চাকুরী পেলে ভাল হবে। আমি কোন কথা না বলে দিয়ে দিয়েছিলাম। বছর পরের ঘটনা, সেই ভাই ড্রাইভিং শিখে কোথায় যেন চাকুরী পেয়েছিল, তবে চাকুরী পেয়েই বিয়ে করে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। পুরা গল্প সময় পেলে আর একদিন লিখবো, বিরাট ইতিহাস।

ইউরোপ আমেরিকায় ভিক্ষাবৃত্তি একটা পেশা, যা আমাদের দেশে চালু থাকলেও পেশা হিসাবে স্বীকৃতি মিলে নাই! আজ প্রমিনেন্ট স্ক্যাম ডিডেক্টর মি কার্ল রকের একটা ভিডিও দেখলাম, তাতে ইউরোপে কিভাবে সিন্ডিকেট চক্র ভিক্ষুক নিয়োগ করে, স্থান সিলেক্ট করে এবং পরে তাদের থেকে কমিশন নেয় ইত্যাদি ইত্যাদি। মানুষ ভিক্ষা দেয় অথচ এর কমিশন পেয়ে অনেকে গ্যং চালায়, অবাক! ঘাটাঘাটি করলে আমাদের এখানেও তেমন দেখা যাবে হয়ত! তবে পাতিলে ভরে কাউকে ছোট বানিয়ে ভিক্ষা করালে সে বা সেই চক্রের হোতাদের মৃত্যদন্ড দেয়া উচিত হবেই। আজকাল অবশ্য এমন শোনা যায় না,আমাদের ছোট বেলায় এমন খবর প্রায় শোনা যেত!

যাই হোক, বিষয়টা নিয়ে আমার অনেক চিন্তা হয়, ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসাবে রাষ্ট্র মেনে নিলে কি সমস্যা!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১:২৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগ বর্তমানে বিজেপির বাংলাদেশি শাখা.....

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:২৭


হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে এমন মন্তব্য করেছেন কলকাতার সাংবাদিক ও লন্ডন ভিত্তিক একটিভিস্ট অর্ক ভাদুড়ী। ফাইনালি কলিকাতার একজন দাদা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যে হারে কলিকাতার ফাটাকেস্ট শুভেন্দু ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা জনমত জরিপ....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:৩১

একটা জনমত জরিপ....

নিজ উদ্যোগে একটা জরিপ কাজে গত কয়েক দিন বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষদের সাথে কথা বলেছি। নিজের রাজনৈতিক অবস্থান থাকলেও নিরপেক্ষ মতামত জানতে, বুঝতে নিজেকে শতভাগ নিরপেক্ষ রেখেছিলাম। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভাষা (বাংলা) তুমি কার? (বাঙ্গালী কে তবে আর কাহার বা বাংলা ভাষা ??)

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭


'পতিত ও পতিতা' নিয়ে ব্লগার 'ভুয়া মফিজ' বেশ ক্যাচালে জড়িয়ে পড়েছিলেন। খানদানী ভাষাবিদেরা তাকে ভাষা নিয়ে অনেক পাঠ দিয়েছিলেন। একথা মানতে দ্বিধা নেই যে, খানদানী ভাষাবিদেরা মনে করে শুদ্ধভাষা... ...বাকিটুকু পড়ুন

উপন্যাস 'কৃষ্ণকান্তের উইল' পড়েছেন?

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৬



রবীন্দ্রনাথ যখন বাচ্চা পোলাপান-
তখন বঙ্কিমচন্দ্র পুরোদমে লেখালেখি করে যাচ্ছিলেন। সেই সাথে করতেন চাকরি। রবীন্দ্রনাথ বঙ্কিমচন্দ্রের বই আগ্রহ নিয়ে পড়তেন এবং হয়তোবা মনে মনে ভাবতেন, আরে এরকম গল্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আপনি আমন্ত্রিত....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৯

প্রিয় সুহৃদ,

আচ্ছালামুয়ালাইকুম।
আমার গুম জীবন এবং গুম পরবর্তী সত্য ঘটনাবলী নিয়ে লেখা 'গুম এবং অতঃপর' এবং 'দ্যা আনটোল্ড স্টোরি' (২০২০-২০২১ সালে সিএনএন, আল-জাজিরা এবং বিবিসি চ্যানেলে আমার নাম/পরিচয় গোপন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×