অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম, এই শহরের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে লিখবো। আজ বসেই পড়লাম, যা দেখি বা উপলব্ধি করি তা না লিখলে মন ভার হয়ে থাকে! মোটামুটি এই ঢাকা শহর এখন গা/ঞ্জার নগরী, আ/লীগের আমলে যা পরিপূর্নতা পেয়েছিল, এখন তা পাতিল থেকে ফুটে উগলে পড়া দুধের মত মনে হচ্ছে, মানে একদম ষোলকলা আর কি! কয়েকদিন আগে একটা টিভি প্রতিবেদনে দেখেছি দেশের দিনাজপুর শহর নাকি একদম প্রায় শতভাগ মাদকে আক্রান্ত, যুবক থেকে বৃদ্ধ প্রায় সবাই কোন না কোন মাদকে জড়িত, তবে গা/ঞ্জা সবার শীর্ষে বলে দেখেছি, এই ঢাকা শহরেও তাই হচ্ছে। আসুন একদম প্যাক্টিক্যাল উদাহরণে যাই।
গত পরশু অফিস থেকে মাত্র সিঁড়ি দিয়ে বের হয়েই নাকে গা/ঞ্জার গন্ধ লাগে, রাত তখন ৮টা পার। পাশে দেখি দুই যুবক টানছে, হয়ত টানা শেষ হলে সামনেই আনোয়ার ভাইয়ের চা দোকান থেকে বেশী মিষ্টি দিয়ে চা খাবে। দেখেও না দেখার ভান করে এগিয়ে গেলাম। কারে কি বলবো, সন্ধ্যার পরে এই সব তেমন কিছু না এখন, আর কে কার দিকে তাকাবো, দরকারই বা কিসের। কিছু বলেও কি কাউকে ফেরানো যাবে। বলে আবার অহেতুক কি হয়ে যায়, দিকহারা মাদকে আসক্তেরা কখন কি করে বসে!
আজকাল শান্তিনগর দিয়ে আর বের হই না, মোড়ে লেফট টার্ন দিয়ে রিক্সা আবার অনেক দূর ঘুরে আস্তে হয়, যা ভাল লাগে না। ফলে রাস্তা পার হয়ে কাকরাইল হয়ে বাসার ফেরার রাস্তা ধরি, বা কাকরাইল হেঁটে এসে রিক্সা নেই। ঠিক রাস্তা পার হয়ে পল্টন মসজিদের দিকে এসে কয়েকটা রিক্সা জিজ্ঞেস করি, কেহ যেতে রাজী হচ্ছে না, আমি আবার এই পথে মেশিন রিক্সা পছন্দ করি, কারন সময় বাঁচে, মালিবাগ রেলগেইটে আস্তে মাত্র ১০/১২ মিনিট লাগে, যদি কম যানযট থাকে। যাই হোক, বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলাম, কেহ যাবে না, ফলে হাঁটা ধরলাম। সামনেই দেখি দুই রিক্সা খালি, একটা মেশিন অন্যটা প্যাডেল। রিক্সা দাঁড়া করিয়ে দুইজনে সিগারেট টানছে, কাছে গিয়ে যাবার কথা বললাম, দুইজনের কেহই ফিরেও তাকালো না, আসলে দুই ভাই গা/ঞ্জা টানছিল, আমি গন্ধ পেয়েই বুঝলাম, পরে ভাল করে হাতের দিকে দেখলেই বুঝলাম। আমার ধারনা রাজধানীর ৯০/৯৫ ভাগ রিক্সা চালক গা/ঞ্জা সেবক, বুঝাই যায়। ঠিক একই ভাবে শহরের বাস পরিবহনের চালকদেরও একই অবস্থা বলে মনে হয়। এটা বিশাল সংখ্যা! লিখলে খাতা ফুরিয়ে যাবে!
রিক্সা না পেয়ে হেঁটে বিজয়নগর মোড়ে এসে পড়লাম, উদ্দেশ্য আর একটু হেঁটে কাকরাইল মোড়ে গেলে অন্তত ১০টাকা কমে রিক্সা পাওয়া যাবে। জাতীয় সঞ্জয় অধিদপ্তর/ পেনশন বোর্ডের ফুটপাতে আসতে অনেক রাইডার চালকভাই কোথায় যাবো জিজ্ঞেস করলেন, আমি ভাড়া বেশী বলে 'না' 'না' করে এগিয়ে যেতে লাগলাম। ঠিক আঞ্জুমান মহিদুল বিল্ডিং এর আগে আবারো দেখলাম, দুজন টানছে, মানে নাকে গন্ধ পেলাম! এই এলাকাতে এমনিতে রাত হলে অনেক কিছু চলে, গা/ঞ্জা তো ব্যাপারই না। যাই হোক, রাত সন্ধ্যায় রিক্সায় ফেরার পথে আমি অনেক সময় দেখে মি বিষ্টেরা টেনে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে, মালিবাগ মোড় থেকে মালিবাগ রেলগেইট এলাকা পর্যন্ত প্রায় গন্ধ পাই। মালিবাগ মোড় টু মোছাকের রাস্তায় ডিভাইডারে খুব সুন্দর জায়গা এখন, এখানে দোকানের সেলসম্যানেরা বাড়ি ফেরার পথে এক পশলা টেনে ফিরে! এই এলাকাতে প্রচুর মার্কেট যা রাত ৮টায় বন্ধ হয়, ফুটপাতের দোকান গুলো আরো কিছু সময় চলে, এই টানকদের চেহারা দেখে বুঝি এরা নানান দোকানে কাজ করে। একঘুয়ে জীবন, টেনে হয়ত কিছু শান্তি খুঁজে!
যাইহোক, আপনিও সন্ধ্যার পরে শহরে বের হলে এবং দেখার চোখ থাকলে দেখবেন, আর আন্ধা হলে বা এসি গাড়িতে ফেরারী হলে কিছুই বুঝবেন না! সমাজে মাদক থামানোর কোন উপায় আমার জানা নেই, বিশেষ করে গা/ঞ্জাতো থামানোই যাবে না, কারন এটা অনেকটা সিগারেট টাইপ হয়ে গেছে, আর যারা এতে অভস্থ্য তারা এটা টেনেই নানান কাজ কর্ম করে, ব্যাপার না! বিনোদন নাই, সময় কাটানোর জায়গার অভাব, নানান টেনশন, অভাবের সংসার, বিবাহিতদের নানান সমস্যা, সব মিলিয়ে আসলে পুরুষ মানুষ কোথায় যাচ্ছে! ধনীরা হয়ত ক্লাবে জুয়ার আসরে, হোটেলে পানে, ডান্স দেখায় সময় নিচ্ছে, কিন্তু অভাগারা যাবে কই, অন্তত কিছু সময়ে যদি মহাকাশে থাকে, মন্দ কি! কিন্তু সার্বিকভাবে পুরা জাতির পুরুষেরা বিলীন হচ্ছে দিন দিন!
(আমি ভুল লিখলে আপনার অভিমত জানাতে পারেন, পুরা শহরে ঘুরার সামর্থ আমার নেই, তবে বুঝতে পারি, আপাতত সন্ধ্যার পরে একই অবস্থা চারিদিকে এই ঢাকা শহরে।)
মালিবাগ, ঢাকা, রাত ১২টা
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


