somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কলেজ জীবন এবং দুটি প্রেম।

০৪ ঠা জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২য় পর্ব
হিংসা হচ্ছিল মুন্না কে শালা দারুণ একটা প্রেম করছে। ঐদিকে উর্মি ও প্রেম করতো একটা ছেলের সংগে। মাঝে মাঝে তাকেও হেলপ করতে হতো ফোন করার জন্য। তাছাড়া সবচে দুষ্টুমিতে পাকা মিনা গল্পো করতো কে তাকে প্রেম নিবেদন করেছিল, কিভাবে সে তাদের এড়িয়ে গেছে ইত্যাদি। আমি এগুলো আর সইতে পারছিলাম না। খুব খারাপ লাগতো। একদিন আম্মাকে বলেই ফেললাম--- আম্মা গরিব হয়ে জন্ম নেয়া পাপ। অনেক অনেক টাকা হলে ভালো তাই না? আম্মা বুঝতেন কিছু একটায় আমার মন খারাপ হয়েছে। তবে তিনি ডাইরেক্ট এ্যাকশন এ বিশ্বাসি নন। একদিন আমাকে কথা প্রসংগে বুঝাতে লাগলেন। দেখ- তোর কাছে একটা সাইকেল আছে তার জন্য তোর অন্তঃত একটা সখ পূরণ হচ্ছে (সখ বলতে তখন আম্মাকে প্রায় বলতাম সাইকেল নিয়ে পুরো বাংলাদেশ ঘুরবো)। কিন্তু এমন ও আছে যার একটা সাইকেল কেনার ইচ্ছা কিন্তু তা সে পারছে না। তাছাড়া এখন তোর কাছে নেই তাই না পাওয়ার কষ্ট টা তোকে ভোগাচ্ছে, কিন্তু আজ যা তোর কাছে নেই তা যখন পাবি, দেখবি সেদিন তোর অনেক ভালো লাগবে। অপূর্ণতা পূরণ হয়েছে বলে। আসলে মায়ের কথা ঠিক। আজ চাইলে অনেক কিছু করতে পারছি। তখন যা ইচ্ছা বা স্বপ্ন ছিল, আল্লাহ তার অনেক কিছু পূর্ণ করেছে।
আসলে তখন মায়ের কাছ থেকে গাড়ি ভাড়ার টাকাটা নিয়ে কলেজে যেতাম আর আসতাম। অতিরিক্ত টাকা নিয়ে খরচ করার মতো আমার স্বামর্থ্য ছিল না। কলেজে বেশিরভাগ সময় মুন্না নাস্তা করার টাকা পরিশোধ করতো। আমার খুব লজ্জ্বা লাগতো। তবে এ ব্যাপারে মুন্নার কোন আক্ষেপ ছিল বা দেখেছি বলে মনে হয় না। তারপর ও টাকা থাকলে মুন্নার মতো অন্য এক আরবি কে নিয়ে রেষ্টুরেন্ট এ যেতে পারতাম।
ওসব বাদ দেন। মনের দুঃখ মনে পুষতে রইল। সেদিন সবাই ক্লাসরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছি। আড্ডায় সেদিন কে যেন একটা ধাঁধা বললো, তারপর শুরু হলো অন্যদের বলার পালা। আমি আবার কবিতা লিখতাম বেশ। আড্ডার সময় আমার একখানা কবিতা চালিয়ে দিতাম। নিজেকে আলাদা ভাবে সৃষ্টি করতাম সে সময়। এসবের মাঝখানে জুলি হঠাৎ বলে উঠলো রুবেল তোমার ছাত্রী কেমন আছে? আমি বললাম ভালো। আমি বললাম তুমি কেমনে জানলে আমার ছাত্রীর কথা? বুঝলাম আমাদের বাসার দুই বাসার পরের টি জুলির আত্বীয়ের। আর সে যে ছাত্রীর কথা বললো সে হলো আমার বাসার পাশের। অবশ্য আমাদের মালিকের বিিল্ডং এর পরের বিল্ডিং। যা হোক আমি আসলে আমার ছাত্রীকে নিয়ে কখনো এসব ভেবেছি বলে মনে হয় না। তাছাড়া এটি একটি অসম্ভব ব্যাপার। মেয়েটি এখনো ছোট। মাত্র সেভেন পড়ে। তবে এই একটি কথা যে আমাকে এত বেশি ভাবাতে থাকবে আমি ঘুর্ণাক্ষরে ও কল্পনা করিনি। দিন যেতে থাকলো। চলতে থাকলো আমার জীবনের চাকা। রাতে ঘুম হয়না। কখন কলেজে যাব। মুন্না, মুন্নার প্রেম, বন্ধুরা, আড্ডা, কবিতা সব কিছুই। তবে আমার জীবনে আরো একটি অধ্যায় এর মধ্যে যোগ হতে লাগলো ধীরে ধীরে। আমার অগোচরে জুলির কথাটি আমাকে ভাবিয়ে তুলতো বেশ। ধরুন পড়াতে গেলাম তবে ছাত্রীর দিকে তাকাতে পারছিলাম না। তাকালে ধ্রুম ধ্রুম আওয়াজ হতে লাগলো বুকের ভেতরে। অংক না পারলে তাকে বুঝাতাম আরো বেশি করে। মনে মনে ইচ্ছে করতো না পারুক অংক। আমি আছি না। এর মধ্যে আরো কিছু ব্যাপার অন্য ভাবে ঘটতে লাগলো। ঘটনা টি শুরু হচ্ছে ঠিক এভাবে।
ছাত্রীর মা অসুস্থ। তাও আবার শুনেছি কিছুদিন আগে ওনার ব্রেন এফেক্ট হয়েছিল। ছাত্রীর বাবা ও বিদেশে। তাদের বিল্ডিং এ শুধু ছাত্রীর মা, ছোট একটা বোন, সদ্য একটা জন্ম নেয়া ভাই আর সদ্য বিবাহিতা চাচী। চাচাও বিদেশে চলে গেছেন। ধূর ছাত্রী ছাত্রী করতে আর ভালো লাগছে না। তার নামটা দিই নাদিয়া। তাদের এমন একটা অসহায় অবস্থা কোন কিছু লাগলে কেউ নেই সে টুকু হেল্প করার। তাই ব্যাংকিং কোন কাজে লাগলে আমাকে যেতে হতো। এদিকে বা শহরে যেতে হলে তা ও আমাকে যেতে হতো। আমার মা ও বলতো একটু হেল্প করিস। আমি ধীরে ধীরে জড়িয়ে পরলাম তাদের সবকিছুতেই। আন্টি এর মধ্যে একটু সুস্থ হয়ে উঠছে। খাওয়া-দাওয়া, চা-পানি ও চলছে প্রায় তাদের ওখানে। মুন্না কে বললাম দোস্ত কিছু একটা কর। ও বললো দোস্ত আমার মাথায় যদি এই বুদ্ধি থাকতো তাইলে কি আমার বেলায় তোর হেল্প চাইতাম। আমি দেখলাম .. না যা করার আমাকেই করতে হবে। আচ্ছা ঠিক আছে। তুই একটা কাজ করবি। আমি যখন পড়াতে বসবো তখন ফোনে এই কথা গুলো বলতে পারবি? ওকে বলে দেয়। আমি আর মুন্না দুজনে ঠিক করে নিলাম কি কি বলবো না বলবো।
সন্ধ্যায় গেলাম পড়াতে। ওফ পড়াবার সময় ফোন। বিরক্তিকর একটা ভাব দেখালাম নাদিয়ার সামনে। (মনে মনে তো তার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম)।
-হ্যালো
-হ্যা দোস্ত তুই কোথায়?
-মুন্না আমি তো টিউশনি তে।
আসলে আমি আর মুন্না যা কথা বলছিলাম তা কিন্তু নাদিয়া শুনতে পাচ্ছিল। কারণ আপনারা জানেন মোবাইলের পাশে কেউ থাকলে সে কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পায়। তাই ও আমার শেখানো কথাগুলো বলে যাচ্ছিলো।
-টিউশনি মানে নাদিয়াকে পড়াচ্ছিস?
-ইয়ে মুন্না আমি তোকে পরে ফোন দিব।
-রাখ ব্যাটা তোর ফোন। পড়াচ্ছিস নাকি ওকে দেখছিস। আচ্ছা তুই একটা গাধা। তা না হলে নাদিয়া কে ভালবাসিস তা বলে দিতে পারছিস না। দেখ দোস্ত আমার মনে হয় না নাদিয়া তোকে না বলবে। কারণ আমি জানি তুই ওকে কতটুকু ভালবাসিস। সত্যি ভালবাসা কখনো বিফলে যাবে না।
-দোস্ত আমি বললাম তো তোকে পরে ফোন দেব।
-না আমি তোর সাথে এখনি কথা বলবো। তুই বল।
-দূর আমি পারছি নাতো। ঐ ব্যাপার টা যদি ওনি না বলেন তাহলে আমার পক্ষে মানা সম্ভব হবে না। কেন বুঝছিস না।
-পৃথিবীতে তাই বলে কি প্রেম হচ্ছে না। ওকে রাখ ব্যাটা ফোন। তোর মত কাপুরুষের সাথে কথা না বলাই ভাল।
মুন্না ফোন রেখে দিল। সাথে সাথে আমিও একটু উসখুস করতে লাগলাম।
নাদিয়া কিন্তু সব শুনেছে এটা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি। কিছুক্ষন পরে আমি তাকে বললাম-
-নাদিয়া আমি তোমার টিচার। তে টিচার হিসেবে নয়, তোমার পরিচিত ভাইয়া হয়ে যদি আমাকে একটা হেল্প করতে বলি তুমি কি পারবে?
-স্যার বলুন আমি চেষ্টা করবো।
-আমি জানি চেষ্টা করবে, তবে এমন ও হতে পারে যে তোমার জন্য সেটা অনেক কঠিণ হতে পারে। সে রকম কঠিন কিছু হলেও কি তুমি আমাকে হেল্প করতে পারবে।
সে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি সে বুঝে ফেলেছে। কি নাদিয়া করতে পারবে না।
-স্যার পারবো আপনি বলেন।
আমার প্ল্যান ছিল তাকে আমি আজ শুধু আমার আকাংখা টুকু বোঝাবো। পরে সরাসরি ভালবাসার কথা।
- ওকে তুমি হেল্প করবে শুনে একটু ভরসা পেলাম। তবে আমার আসলে বলার মতো মানসিক অবস্থা আজ নেই। আমি তোমাকে কাল বলবো। এই বলে আমি চলে গেলাম।
পরদিন গেলাম। অবলোকন করলাম তাকে। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না। সত্যি তখন আমার অবস্থা যে কি তা বলে বুঝাতে পারবো না।
- নাদিয়া আমি একটা মেয়ে কে পছন্দ করি। আচ্ছা আমি যদি সে মেয়েটিকে বলি তাইলে সে কি আমাকে পছন্দ করবে?
-স্যার আমি কিভাবে বলবো? এটা তো মেয়েটার ব্যাপার।
-তারপর ও তোমার কি ধারণা?
-স্যার আমি কিভাবে বলি।
এদিকে আমি নিজেও ঘামতে শুরু করেছি। যেভাবে প্ল্যান করেছি সব আউলিয়ে যাচ্ছে। আবার আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করলাম।
-আচ্ছা তুমি আমার জন্য কি করতে পারবে?
-স্যার আপনি আগে বলুন আমি দেখবো।
-
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৩৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×