somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধা ভৌতিক আধা বাস্তবতার গল্প। (শেষ অংশ)

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম অংশ
মোবাইলের আলোর ওপাশে গাঢ় অন্ধকারের মাঝে একটা কাটা মুন্ডু পেন্ডুলামের মত দুলছে। সমস্ত শক্তি দিয়ে রিয়া রিক্সার হূডটাকে আঁকড়ে ধরে। অন্য হাতে মোবাইলের আলোটা ভালো করে তুলে নেয়। পরিস্থিতিটাকে সে বোঝার চেষ্টা করে। ছেলেটির পরনের কালো শার্ট, কালো প্যাণ্ট আঁধারের সাথে মিশে গেছে। ফলে মাথাটায় ঝুলন্ত পেন্ডুলামের অবয়ব ফুটে উঠেছে। ফিক করে হেসে ফেলে ছেলেটি। মোবাইলের আধো আলোয় তার দাঁতগুলি চিক চিক করে ওঠে। রিয়াকে অবাক করে দিয়ে ছেলেটি নিজেকে তার ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। সে অবশ্য তাকে চিনতে পারেনাই। এই কয়দিনে কটাই বা ক্লাশ পেয়েছে সে।



মনের অবস্থা কত ক্ষণে ক্ষণেই না পালটায়! টিচার্স ডরমেটরিতে থাকার সময় শেয়ালের হুক্কাহুয়া শুনে কি মজাই না সে পেত। কিন্তু এখন? বুকের রক্ত হিম করে দিয়ে নদীর দিক থেকে একটা শেয়াল দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে গেল। সম্ভবতঃ পথের ওপাশের জঙ্গলটায় তার কোন আস্তানা আছে।

বেশ হাসি খুশি আর প্রাণবন্ত ছেলেটি। ওর সাথে দেখা হতে পেরে যেন নিজে কে ধন্য মনে করছে। কথা বলে যাচ্ছে আনমনে যেন নিজেই নিজেকে শুনিয়ে চলছে। তার নিজের গল্প, পরিবারের গল্প, অভাব অনটনের গল্প। দিনের পর দিন না খেয়ে বড় হবার গল্প।বাবা আরেকটা বিয়ে করে তাদের ফেলে চলে যাবার পর কি করে সংসারের রঙ পালটে গেল তার গল্প। তাকে মানুষ করার জন্যে মায়ের প্রাণান্ত কষ্টের গল্প।


তারপর রিয়ার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, আফা জানেন, “আমার মা না খেয়ে খাবার গুলো নিত্যি আমার পাতে তুলে দ্যায়। কি করে দিনের পর দিন না খেয়ে বাঁচে ঐ মানুষটা। চেয়েছিলাম একদিন তার কষ্টগুলো ঠিক মুছে দেব।”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলেটি হঠাত করেই চুপ করে গেল। যেন তার সমস্ত গল্পের ইতি ঘটে গেছে। তারপর প্যাডেল ঘুরিয়ে আনমনে কেবল সামনের দিকে এগিয়েই যেতে লাগল। আবার সেই শুনশান নীরবতা। পথটাও আজ বড্ড দীর্ঘ লাগছে।।

নদীর ধার ঘেঁষে চলছে তারা।ওদিকে যাওবা দুই একজন মানুষ ছিল এদিকে কারো টিকিটাও দেখা যাচ্ছেনা। তাকাবেনা তাকাবেনা করেও নদীর দিকে তাকালো রিয়া। একরাশ থমথমে কালো ছাড়া নদীটার কোন অস্তিত্বই সেখানে নেই। বুকের ভিতরটা কেঁপে ওঠে রিয়ার। লক্ষ্য করে দেখল ঝি ঝি পোকাদের সেই ভয়ংকর একটানা ডাকটাও আজ নেই। গাছের পাতারা যেন কারো ভয়ে নড়াচড়া করতে ভুলে গেছে। ফিস ফিস করে তারা যেন একে অন্যকে কিছু বলছে। কোন অশরীরি আত্মারা যেন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তাদের অভিশপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে ফেলে। অনেকদিনের অনেক না পাওয়া ক্ষোভে যেন তারা এ পথে চড়ে বেড়াচ্ছে অনন্ত কাল ধরে। গোরস্তানের পাশ দিয়ে যাবার সময় মনে হল হঠাত একদল লোক হুড়মুড় করে নদীর ওপাশটায় মিলিয়ে গেল। তারপর হঠাত করেই সব চুপ। চারিদিকে হিম নিশির নিবিড় ঘন আঁধার চাঁদর বিছিয়ে দিয়েছে। নীরবতার ভয়াল থাবা ক্রমশ যেন গ্রাস করে নিচ্ছে।
রিয়ার শরীরটা ভীষণ ভারী ঠেকছে। ভৌতিক কোন ব্যাপারে সে কখনই ভয় পায়না। সেই রিয়ারই এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে বাহ্যিকভাবে কেউ তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। একটু নড়ে চড়ে বসতে চাইল সে কিন্তু পারলনা। তার সমস্ত সত্ত্বা কঠিন শক্ত হয়ে আসছে।

ঃআফা ভাড়াডা দ্যান।

ছেলেটির কথায় সম্বিত ফিরে আসে রিয়ার। ভাড়া মিটিয়ে রিক্সা থেকে নামতেই ছেলেটি হেসে ফেলল। বলল,

ঃআফা আমার মা-ডার জন্যি দোয়া কইরেন।

তারপর উত্তরের প্রতীক্ষা না করেই অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

মাঠটা পেরিয়ে আরো কিছুটা পথ হাঁটলেই কলেজের পিছনে তাদের হোস্টেল। হোস্টেলের ডান দিকে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের বাসা। কলেজের গেইটটা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই গুণ গুণ শব্দে রিয়ার ঘোর কেটে যায়। যেন হাজারটা মৌমাছি নীচে নেমে এসেছে তারা একই সাথে অথচ ভিন্ন সুরে কথা বলছে। হঠাত করে চারিদিক আলোকিত করে বিদ্যুৎ ফিরে আসে। কলেজ মাঠে হাজার হাজার মানুষ।।

মানুষ ঠেলে ঠেলে হাঁটতে থাকে রিয়া। টুকরো টুকরো কথা কানে ভেসে আসে। সারা বছরের বেতন আর ফরম ফিল আপের টাকা যোগাড় করতে না পেরে একটা ছেলে সন্ধ্যায় স্যারের বাসার সামনে আত্মহত্যা করেছে। সে নাকি আজই স্যারের পা ধরে খুব কান্নাকাটি করছিল।।

সমাপ্ত

রাতের আঁধারে ভালো থাক সব বিদাহী আত্মারা।।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৫৫
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×