
সবাই যেহেতু কিছু না কিছু আবদার করছে, আমিও আমার অনুজদের জন্য আবদার করলাম। আমার কোনো সমন্বয়কারী নেই। যদি ভালো কোনো সমন্বয়কারী হতে চান, একটু আওয়াজ দিয়েন। আমি আপনাদের কাঁধে ভর দিয়ে নীতিনির্ধারকদের কাছে যাব। পারলে সচিবালয়ে ঘেরাও করে দাবি আদায় করব। এখনই দাবি আদায়ের মুখ্য সময়।
কেউ যদি বাস্তবায়ন করতে পারেন, আওয়াজ তুলুন। মাস্টারমাইন্ড হিসেবে আমি পর্দার আড়ালে কাজ করব। লেনিন আর মার্কসকে এক করে একটা নতুন মিশ্রণ তৈরি করে নতুন নতুন আইডিয়া দেব। কেউ জানবে না। যখন স্বাধীনতা অর্জিত হবে, তখন কেউ আমাকে বিদেশ মন্ত্রীর উপদেষ্টা করে দেবেন। আমি চুলও বড় রাখব নে।
আমার আন্দোলন হচ্ছে—
"বিদেশে পড়তে আসা বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্যের বিরুদ্ধে।"
প্রথম দাবি: বিদেশী যখন কোন শিক্ষার্থী আসবে সবাইকে আসার সময় একটা করে বউ অথবা জামাই ব্রিফক্যাসে করে ভরে দিতে হবে। যাহাতে বিদেশী এসে পড়াশুনায় মনোযোগ দিতে পারে। Tender বা MuzMatch এ জীবন সঙ্গী খুজতে না হয়।
দ্বিতীয় দাবি: যারা বর্তমানে চলে এসেছে কিন্তু সিঙ্গেল অবস্থায় পড়াশোনা করছে এবং হতাশ জীবনযাপন করছে, তাদের দ্রুত সঙ্গ দেওয়ার জন্য আমাদের বাংলাদেশে অবস্থানরত সিঙ্গেল আপুদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করতে হবে। এই কমিশনের প্রথম কাজ হবে সিঙ্গেল হতাশ এই ভাইদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা এবং খোঁজখবর নেওয়া। মাঝে মাঝে প্রক্সি প্রেমিকা সেজে বিদেশে থাকা এই ছাত্র ভাইদের হতাশা দূর করাই হবে তাদের মূল এজেন্ডা। কেউ যদি মনে করেন এটি হালাল নয়, তাহলে কমিশন এই প্রক্সি ডেটিংকে হালাল করার উদ্যোগ নিতে হবে।
শেষ দাবি.... Apart from the jokes above.....
আমাদের শিক্ষার্থীরা যখন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে আসার প্রস্তুতি নেয়, তখন তারা অনেক বড় আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা যেখানে সহজেই স্টুডেন্ট লোন পেয়ে তাদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে, সেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রায়শই নিজেদের সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য হয় বা পিতামাতার সঞ্চয় শেষ করে শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খায়।
এখন আপনি বলতে পারেন, বিদেশে যাওয়ার দরকার কি? সুন্দর বলেছেন। আসলেই দরকার নেই। কিন্তু একটা পরিসংখ্যানের দিকে একটু তাকিয়ে দেখুন...

উপরের পরিসংখ্যানে সবাই ভারতীয়। এরা বা এদের পিতামাতা কোনো না কোনোভাবে বিদেশে এসেছিল। আজ এখানে কিন্তু লাল-সবুজের কোনো ছাপ নেই।
ভারতীয়রা যখন আসে, অনেকে স্টুডেন্ট লোন নিয়ে আসে। তারা এসে আমাদের মতো এখান-ওখানে কাজ করে সময় নষ্ট করে না। তারা আগে সেমিস্টার শেষ করে। কেনই বা করবে না? তাদের তো আর সেই বিবেকের চাপ নেই যে, বাবার দোকানটা আমার কারণে বিক্রি করতে হয়েছে, সেই দোকানের টাকা ফেরত দিতে হবে। টাকা আয় না করলে হোস্টেলের খরচ জোগাড় হবে না, ইত্যাদি। তাই ভারতীয়রা পড়াশোনায় মনোযোগ সুন্দর ভাবেই দিতে পারে।
অর্থের বোঝা যখন বিদেশে গিয়ে আমাদের ওপর পড়ে, তখন সেই টাকা পরিশোধ করার জন্য আমরা প্রায়শই দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে বাধ্য হই। যার ফলে ২ বছরের মাস্টার্স কোর্স ৪ থেকে ৮ বছরে লেগে যায়। এটা সবার ক্ষেত্রে না।
আমাদের শিক্ষার্থীরা মেধার দিক থেকে কোনো অংশে কম নয়; তবে এই আর্থিক চাপ তাদের একাডেমিক এবং পেশাগত সাফল্যের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
তাই আমি মনে করি, বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা শুধুমাত্র তাদের ব্যক্তিগত সাফল্যের জন্য নয়, আমাদের দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যখন শিক্ষার্থীরা আর্থিক চাপমুক্ত হয়ে পড়াশোনা করতে পারবে, তারা দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জন করে ফিরে এসে আমাদের দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে। এছাড়াও, সরকারের সহায়ক ভূমিকা আরও শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য উৎসাহিত করবে, যা আমাদের দেশে একটি শিক্ষিত এবং দক্ষ কর্মীশক্তি গড়ে তুলবে, যা বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
এখন প্রশ্ন হলো, এখানে সরকার কী করবে?
বাংলাদেশ সরকার যদি শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ঋণ প্রদানের একটি প্রক্রিয়া চালু করতে পারে, সেটা হবে একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ।
এখন হয়ত অনেক চিন্তা করবে এই প্রশ্নটাও....
যদি শিক্ষার্থীরা ঋণ পরিশোধ না করে বা বাংলাদেশে ফিরে না আসে, তাহলে সরকার কীভাবে সেই অর্থ পুনরুদ্ধার করবে?
কোনো কিছু রাতারাতি সম্ভব নয়। তার জন্য দরকার বাস্তব উদাহরণ এবং যেসব দেশে এই ব্যবস্থা চালু আছে তাদের থেকে শিখতে হবে।
কয়েকটা দেশের শিক্ষার্থীদের ঋণ প্রক্রিয়া নিয়ম:
১. ভারত:
* ভারতের বিভিন্ন ব্যাংক যেমন স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (SBI), পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (PNB) শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়াশোনার জন্য শিক্ষা ঋণ প্রদান করে। এই ঋণটি টিউশন ফি, যাতায়াত খরচ এবং জীবনযাপনের খরচ কভার করে।
* শিক্ষার্থীদের একটি স্বীকৃত বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পত্র জমা দিতে হয়। ঋণটি সাধারণত সম্পত্তি, স্থায়ী আমানত বা তৃতীয় পক্ষের গ্যারান্টির বিপরীতে প্রদান করা হয়।
* পড়াশোনা শেষে ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ শুরু হয়, এবং ঋণ পরিশোধের মেয়াদ সাধারণত ৫-১৫ বছর হয়।
২. চীন:
* চীনে শিক্ষার্থীরা চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে সরকার-সমর্থিত শিক্ষা ঋণ পেতে পারে। এছাড়াও, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও বিদেশে পড়াশোনার জন্য ঋণ প্রদান করে।
* শিক্ষার্থীদের একটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রমাণ দিতে হয়। এই ঋণগুলো সাধারণত একজন সহ-স্বাক্ষরকারীর প্রয়োজন হয় এবং সম্পদের বিপরীতে নিরাপত্তা দেওয়া হয়।
* পড়াশোনা শেষে ঋণ পরিশোধ শুরু হয়, এবং শর্তাবলী অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে পরিশোধ করা হয়।
৩.মালয়েশিয়া:
* মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল হায়ার এডুকেশন ফান্ড কর্পোরেশন (PTPTN) দেশীয় এবং বিদেশী উভয় শিক্ষার্থীদের জন্য ঋণ প্রদান করে।
*স্বীকৃত প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা এই ঋণ পায়, যা টিউশন এবং জীবনযাপন খরচ কভার করে। সাধারণত, জামিনদারের প্রয়োজন হয়।
* স্নাতক হওয়ার ছয় মাস পর ঋণ পরিশোধ শুরু হয় এবং এটি ৫-১০ বছরের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়।
অর্থ ফেরত না দিলে বা বিদেশে থেকে গেলে করণীয় অনেক কিছু আছে। তারা যদি ফেরত না-ও আসে, দেশের জন্য বিদেশে বসেই অনেক ভূমিকা রাখতে পারবে। আজ যারা এত উচ্চ পর্যায়ে আছে, সেই ভারতীয়রা কি কোনো ভূমিকা রাখছে না? অবশ্যই রাখছে। আমাদের চিন্তা করতে হবে যে, শুধু আর্থিক স্বচ্ছলতারাই উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যাবে তা নয়; বরং মেধাবীদেরও উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানোর রাস্তা সহজ করে দিতে হবে। দেখবেন, এমন এক সময় আসবে যখন তারাই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব সেক্টরে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



