কোন একদিন আমার আম্মা বললেন কোথাও যেতে। আমি দিন-ক্ষন এ মুহুর্তে ঠিক মনে করতে পারছি না। তবে এই গল্পটা আমার ছোটবেলার। আমার সরাসরি উত্তর ছিলো পারবোনা যেতে, কারন জায়গাটা আমি চিনিনা কোনদিন যাইনি ওখানে। আমার আম্মা আমাকে অনেক বোঝাতে লাগলেন যেনো কষ্ট হলেও আমি যাই। না চেনার কারনে কোথাও যাবোনা বললে আম্মা একটা কথাই বলতেন, "জিকাইয়া জিকাইয়া সোনারগাঁও যাওয়া যায়"।
আজ আমি ভাবি কি অদ্ভুত মোটিভেশনাল স্পিকার আমার আম্মা। এই যে সাহসী উচ্চারন। এই যে অজানাকে অবিষ্কার করার উৎসাহ। না চিনলেও কোন অসুবিধা নাই, তুমি মানুষ আর মানুষ এভাবেই অচেনাকে চিনে নেয়, অজেয়কে জয় করে নেয়।
আমি ভাবি নিশ্চয় পৃথিবীর সব মায়েরা এইরকম। নিজ সন্তানকে ভবিষ্যতের গল্প শোনান। বলেন তুমি অনেক বড় হবে, পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চেপে রাজকুমারর বেশে তুমি আসবে। নিজেদের কল্পনার সাইন্স ফিকশান তৈরি করে ঘুম পাড়ানি গান শোনান। অতীতের ইতিহাসকে সিনেমার উজ্জল পর্দার মতো তুলে ধরেন ছোট্ট শিশুর চোখের সামনে। আল মাহমুদের কবিতা 'বখতিয়ারের ঘোড়া'র মতো আমরা শুনতে পাই অশ্বখুরধ্বণি আমাদের বালিশের ভেতর। এর চেয়ে বড় মোটোভেশনাল স্পিকার আর কে আছে এই পৃথিবীতে।
আমাদের মায়েরা আমাদের সাহসী করে দিয়েছেন। ছেড়ে দিয়েছেন তার মায়ার আঁচল থেকে পৃথিবী জয়ের উদ্দেশ্যে। বুকে মুখে ফুঁ দিয়ে বলেন যা বাবা, যাত্রা পথে পিছনে তাকাতে নেই। শুধু সামনে যাওয়া, তাকাবে শুধু সম্মুখ পানে। আমি ভাবি, কি অদ্ভুত। মা বলতেন থেমো না কখনো, ঝড়-ঝঞ্জা, জলোচ্ছাসে ভয় পেয়োনা কখনো, সব বাধা জয় করো, চেয়ে দ্যাখো আকাশ পানে। আমার দোআ আছে তোমার সাথে। তুমি আমার সাত রাজার ধন। তুমি পারবেই। পিছনে আমার মা হয়তো শাড়ীর আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বলছেন "ফি আমানিল্লাহ"।
দ্যাটস মাই মোটিভেশনাল স্পিকার। দ্যাটস মাই মাম। আহারে মা।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:৪৮