somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন: বিরোধীতা নয়, আত্মজিজ্ঞাসা।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
দেশজুড়ে সাজ সাজ রব। দৈীড়ের ওপর আছে মোবাইল কোম্পানীগুলো। ভয়ে আছেন এখনো রি-ভেরিফিকেশন না করা মোবাইল ব্যবহারকারীরা। তারমন্ত্রী কঠিন আলটিমেটাম দিয়েছেন। আবার দেখলাম ফেইসবুকে ভিডিও ও পোস্ট করেছেন।
জীবনপণ সংকল্প, বাঁচা-মরার ব্যাপার...। বায়োমেট্রিক রি-ভেরিফিকেশন না করা সিম ব্যবহার করলে দেশ ও জাতির মহামারী ক্ষতি হয়ে যাবে-এমনটা প্রচার করা হচ্ছে প্রচারমাধ্যমে। ব্যাপারটা সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে, তাঁরাও গুরুত্ব বুঝেছেন ব্যাপারটার।
কোটি সাতেক সিম নিবন্ধন হয়ে গেছেও ইতোমধ্যে...কি ব্যাপক সাফল্য!! শুধু আমি’ই বুঝতে পারছি না, এমন অপচয়ের মাহাত্ম্য।
আমি কি টিউবলাইট হয়ে গেলাম?
২.
দেশজুড়ে নানা আলোচনা, পক্ষে আর বিপক্ষে। অনেকে আপত্তি তুলেছেন, তাঁদের মহামূল্যবান আঙুলের ছাপ তাঁরা বিদেশী বেনিয়াদের হাতে তুলে দেবেন না। আবার মন্ত্রীরা এর মধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধও পাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, এই প্রক্রিয়ায় কোন ঝুঁকি নেই। যারা বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের বিপক্ষে, তারা দেশবিরোধী, এমনটাও অবলীলায় বলে ফেলছেন তাঁরা। অনেকে আবার এর মধ্যে বিএনপি জামায়াত ও দেখে ফেলছেন। কারো মনে হচ্ছে, যারা বিরোধিতা করছে, তারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা’র চেতনায় বিশ্বাসী নয়।
আমার কিন্তু এতসব মনে হচ্ছে না। আমার শুধু মনে হচ্ছে, এইসব কি খুব দরকারী ছিলো? এই বিপুল পরিমাণ অর্থের শ্রাদ্ধ না করলে কি হতো না? নিবন্ধিত সিম, নিরাপদ সিম-এই স্লোগান আর কোন উপায়ে কি বাস্তবায়িত করা যেতো না?
আর একটা অনেক জরুরী ব্যাপার কিন্তু আমরা করে ফেলতে পারতাম, এই অদরকারী কাজটা না করে। সেটা হলো, সকলের জন্য স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র। এর চেয়ে কম পরিশ্রমে, কম খরচে সেটা অবলীলায় হয়ে যেতো। এই ব্যাপারটা কারো মাথায় এলো না?
৩.
খরচের ব্যাপারটা একটু আলোচনা করি।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় লাগছে এক কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, আর গ্রাহকের উপস্থিতি। এক কপি ছবির খরচ নিদেনপক্ষে দশ টাকা। পরিচয়পত্র ফটোকপির খরচ দুই টাকা। এই দুই প্রক্রিয়ায়ই যাতায়াতের একটা ব্যাপার আছে। সেটার খরচ না হয় বাদই দিলাম।
গ্রাহককে যেতে হবে নিবন্ধন করতে। আসতে হবে সেখান থেকে। এবারকার যাতায়াতের খরচটা আর বাদ দিচ্ছিনা। ধরে নিচ্চি, মাথাপিছু গড় খরচ ৪৮ টাকা। প্রত্যেক গ্রাহকের নিবন্ধন করতে গড় কর্মঘন্টা ব্যয় হবে নিদেনপক্ষে একটি। প্রতি কর্মঘন্টার দাম ধরে নিচ্ছি গড়ি চল্লিশ টাকা।
অর্থাৎ প্রতি সিম নিবন্ধনে একজন গ্রাহকের খরচ হবে গড়ে একশত টাকা।
তের কোটি সিম নিবন্ধন করার লক্ষ্য মাননীয় তারমন্ত্রী’র। সেই হিসেবে তেরশত কোটি টাকা খরচ হবে সাধারণ জনগণের।
মোবাইল কোম্পানিগুলোর যে কত খরচ হচ্ছে, সে বিষয়ে আমার স্পষ্ট ধারণা নেই। আর খরচ যেটা করবে তারা, সেটা যে গ্রাহকের কাছ থেকে কড়ায় গন্ডায় আদায় করে নেবে, সে বিষয়ে আমার ন্যূনতম সন্দেহ নেই। তাই সেই খরচটা ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাকলো।
এখন প্রশ্ন হলো, এই যে তেরোশত কোটি টাকা দেশের মানুষকে দিয়ে খরচ করাচ্ছেন মাননীয় তারমন্ত্রী মহোদয়া, এর বিনিময়ে কি উপকার হবে দেশের?
কবি বলেছেন,
‘যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি
আশু গৃহে তার দেখিবেনা আর নিশীথে প্রদীপ ভাতি’।
আমরা এই নিদারুন অপচয় কেন করছি? দেশের একটা মানুষও এই ব্যাপারে কথা বললো না? আমার কেমন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না ব্যাপারটা।
৪.
ব্যাপারটা কি হচ্ছে?
রি-ভেরিফিকেশন। জাতীয় পরিচয়পত্রে আমি যে আঙুলের ছাপ দিয়েছিলাম, সেটার সঙ্গে মেলানো হচ্ছে আমার এখন দেয়া আঙুলের ছাপ। পারপাস কি সেটার? সিমটা যে আমি ব্যবহার করছি, সে ব্যাপারে আমার মুচলেকা নেয়া হচ্ছে।
যাতে পরবর্তীতে এই সিমের কোন অপব্যবহার আমি না করতে পারি। এই তো?
এই ব্যাপারটাতে আমার উপস্থিতি কি খুবই জরুরী? আমি যদি আমার মোবাইল থেকে আমার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার, আর জন্ম তারিখ লিখে এসএমএস করি, সেটা কি মোবাইল কোম্পানি ভেরিফাই করে দিতে পারবে না? রেকর্ড রাখতে পারবে না?
সত্য কথাটা হচ্ছে, বেশীর ভাগ সিমই বৈধ উপায়ে কেনা। সেগুলোর গ্রাহকের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি আর হাতের আঙুলের ছাপ মোবাইল কোম্পানির কাছে আছে।
মানুষ যখন একটা নাম্বার অনেকদিন ব্যবহার করে, সেটাকে তখন সে তার জন্য অনেক প্রয়োজনীয় মনে করে। সেই নাম্বারের অপব্যবহার সে কোন মতেই করবে না, করতে দেবেনা।
আর, অপব্যবহার করার জন্য যে সিমগুলো কেনা হয়েছে, সেগুলোর অপব্যবহার কোন মতেই বন্ধ করা যাবে না।
পৃথিবী থেকে সত্য আর ন্যায়কে যেমন বিদায় করা যাবেনা, অসত্য আর অন্যায়ও তেমনি।
তাই, এই অতি অপ্রয়োজনীয় কাজটা না করলেও চলতো।
আমি জানিনা, কতোজন আমার সাথে একমত হবেন।
৫.
জাতীয় পরিচয়পত্র আমাদের দেশে এক বিরাট সংকটের নাম।
যার জাতীয় পরিচয়পত্র নাই তার বিরাট বিপদ, মহা সংকট।
যার জাতীয় পরিচয়পত্র আছে, তারও বিড়ম্বনার সীমা নাই। ভুলেভরা পরিচয়পত্র ভোগান্তির কারণ হয়নি, এমন সৈীভাগ্যবান কমই আছেন। আর ভুল ঠিক করতে গিয়ে নিদারুন ভোগান্তির কথা মুখে মুখে ফেরে আজকাল।
ভেবে দেখুন, যে কষ্ট, খরচ আর প্রচার করা হলো সিম রি-ভেরিফিকেশনের জন্য, সেই খরচটা যদি প্রত্যেক নাগরিককে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেবার জন্য করা হতো, কেমন হতো ব্যাপারটা?
এক ঢিলে দুই পাখি মারা’র মজাটা আমরা পেতাম। আমরা প্রত্যেকে তো যাচ্ছিই একটা কেন্দ্রে, ছবি নিয়ে, পরিচয়পত্র নিয়ে। সময় লাগছে, টাকা খরচ হচ্ছে। বিনিময়ে পাচ্ছি অপ্রয়োজনীয় সিম রি-ভেরিফিকেশন।
একই জিনিস কাজে লাগিয়ে সরকার আমাদের উপহার দিতে পারতো স্মার্ট পরিচয়পত্র। কতো ভালোই না হতো!!
লোভ লাগছে না আপনার?
৬.
ভবিষ্যতে হয়তো আবার কোন প্রকল্প নেয়া হবে, যার মাধ্যমে আমরা ভুলভাল পরিচয়পত্র ঠিক করে স্মার্ট পরিচয়পত্র পাবো।
সেক্ষেত্রে আবার খরচের মচ্ছব হবে।
আবার আমাকে, আপনাকে দৈীড়াতে হবে কাজ ফেলে।
সেই দিন দেখার প্রতীক্ষায়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×