-আর খেয়ো না
-এটাই লাস্ট পেগ, চানাচুর খাবে?
-না খাবো না। আর না, প্লিজ
-এটাই লাস্ট। তাহলে সিগারেট খাবে?
- উহু। কখন থেকেই তো বলছো এটাই লাস্ট, আর
কত?
-আচ্ছা শেষ করছি।
-তুমি এগুলো আর কখনো খাবে না।
- আচ্ছা না খাওয়ার চেষ্টা করবো।
-উহু, বল খাবে না।
-আমি খেলেই বা তুমি কি খবর পাবে?
এটা তিথি আর আমার গতকালের অসমাপ্ত
চ্যাটের কথোপকথন। অ্যালকোহলের
ঝাঁঝালো তীব্র স্বাদ নেয়ার ইচ্ছা আমার
সাধারনত হয় না। এর আগে অ্যালকোহলের
আশ্রয় নিয়েছিলাম এমনটাও
কখনো হয়নি বলেই মনে হয়।
সাথে নিকোটিনের ধোয়ায় নিজের আবেগ
উড়িয়ে দেয়া। এক চুমুক অ্যালকোহল আর এক চুমুক
নিকোটিনের একসাথে স্বাদটা অসাধারন।
অনুভুতিহীন করে দেয়া যায়
নিজেকে কিছুক্ষনের জন্য।
এই অনুভুতিহীন করে দেয়ার
খেলাটা আমি তিথির কাছেই
শিখেছি তবে ওর পদ্ধতিটা ছিল একটু ভিন্ন
প্রকৃতির।
খোলা মাঠ, চারপাশে মুক্ত আকাশ আর বুক
ভরে শ্বাস নেয়ার মত যথেষ্ট
জায়গা পেতে হবে। নিজেকে ক্লান্ত কোন
প্রানীর মত ভাবতে ভাবতে নরম ঘাসের উপর
শুয়ে পরা। সারাদিনের কাজ শেষে ঘাসের
উপর শুয়ে থেকে একেবারে নিজের মত
করে নিজেকে ভাবা। মুক্ত আকাশের
দিকে তাকিয়ে তারা গোনার মত
বৃথা চেষ্টা করা।
এমন করেই একসময় নিজেকে অনুভুতি শুন্য
করে ফেলা।
বিষয় একরকম রেখে কাজ ভিন্নরকম কাজ করার
পদ্ধতি মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই ভেবে আসছে।
আমিও তেমন কিছুই চেষ্টা করলাম। অনুভুতিহীন
করার চেষ্টা করলাম তবে তিথির
দেখানো উপায়ে না।
আচ্ছা, এই সময়টা তিথি কি করছে?
চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা জল পরছে, আর
তাকে পার্লারে নিয়ে যাওয়ার
চেষ্টা করছে তারই কিছু কাছের লোকজন।
সাথে শাড়ী সহ অন্যান্য সাজসামগ্রী।
হৈমন্তির গায়ের আটপৌরে শাড়ী না,
একেবারে ঝকঝকে নতুন শাড়ী যা গতকাল
অথবা তার আগেরদিন কেনা হইছে কোন
বিখ্যাত শপিং মল থেকে।
দেশের ভিতরে হতে পারে আবার দেশের
বাইরের ও হতে পারে। কপালে একটা লাল
রং এর ছোট্ট টিপ। গলায়, কানে আর
নাকে সোনার গহনা চকচক করছে হয়ত।
এই মেয়েটা কখনো সাজুগুজু পছন্দ করতো না,
ঝকঝকে নতুন শাড়ী নয়, হৈমন্তির
আটপৌরে শাড়ী তার পছন্দ। চোখে কাজল
পর্যন্ত দিতে চাইতো না,
এমনকি নখে হালকা রং এর কোন নেইল পলিশ
ও দিতে রাজি হয়নি কখনো। লিপস্টিক ছিল
দুচোখের শত্রু। চুল কাটানো ছাড়া আর কোন
সাজুগুজু করার জন্য
কখনো পার্লারে যেতে রাজি হয় নি।
মানুষকে নাকি অনেক ক্ষেত্রেই নিজের
মনের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়।
তিথি কি মনের বিরুদ্ধে করছে নাকি মনের
ইচ্ছায়?
নাকি নিজে অসহায় আত্মসমর্পন করেছে তার
পরিবারের কাছে অথবা আত্মীয় স্বজনের
কাছে।
এখন তিথির মস্তিষ্কে একটু
ঘুরে আসতে পারলে ভালো হত, দেখা যেত
সেখানে কতটা অংশ জুড়ে আমার অবস্থান
আবার কতটা অংশজুড়ে নতুন মানুষটার অবস্থান।
আমাকে নিয়ে ভাবতে থাকা মস্তিষ্কের
অংশ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করছে। কমতে শুরু
করছে কথাটা ঠিক না হয়ত, বলা যায় নতুন
মানুষটাকে নিয়ে ভাবা আমার
অংশটাকে রিপ্লেস করছে। একসময় আমি আর
সুযোগ পাবো না তার মস্তিষ্কে থাকার।
ততদিনে তার পুরোটা অংশজুড় হয়ত সেই
মানুষটা বসবাস শুরু করবে যাকে সে একসময়
আমার কারনে প্রচন্ড ঘৃনা করতো।
ভালোবাসা ঘৃনায় পরিনত হওয়ার সুযোগ পায়
এটা সত্যি, কিন্তু এটার উল্টোটাও
কি কখনো হয়? অর্থাৎ ঘৃনাও
ধীরেধীরে ভালোবাসায় পরিনত হওয়া।
আচ্ছা, তিথির গতকালের চ্যাটের
কথা মনে আছে? পারিবারিক আবেগের
বশিভুত হয়ে নিজের
আবেগকে ভুলতে বসা তিথি কি আমাদের এই
ঘন্টার পর ঘন্টার চ্যাট মনে রাখবে? হয়ত
মনে রাখবে নাহয় সময়ের পরিক্রমায়
চেষ্টা করতে করতে একসময়
সত্যি সত্যি ভুলে যাবে।
বিঃদ্রঃ নিজের কিছু অনুভুতির সাথে মিশ্রন
ঘটিয়ে একটা অর্থহীন গল্প লেখার চেষ্টা।
কারো সাথে তুলনা করলে নিজ
দায়ীত্ব্রে করবেন।