somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলকনার অশ্রুলিপি.........

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটা খুবই চঞ্চল প্রকৃতির। প্রথম দেখাতে বুঝে যায় জল। আজই জলের প্রথম দিন। কনাকে পড়াতে হবে বিজ্ঞান। প্রথম দেখাতে কনাকে বেশ দাম্ভিক ও মুডি মেয়ে বলেই মনে হল। জল তার মত করে পড়াতে লাগলো। ২ ৩ দিন যাবার পর জলের মনে হল মেয়েটার সম্পর্কে তার যে ধারনা সেটা সত্যি না। ক্রমেই বন্ধুত্বপূর্ণ হতে লাগল। কনা তার ফ্যামিলির অনেক কস্টের কিছু কথা জলের কাছে শেয়ার করে যা সে আগে বলে নি কাউকে। জল তাকে সান্ত্বনা দেয় এবং ধৈর্য ধরার জন্য বলে। জলের ভিতর একটা সিমপ্যাথি চলে আসে। মেয়েটা আসলে মোটেই হ্যাপী না তার বাবা মা কে নিয়ে। বাবা মার মাঝে থেকেও তার কেন জানি মনে হত কিছু একটা ঠিক নেই। তার বাবা এবং মা ২ জনই যেন অভিনয় করে চলেছে একে অপরের সাথে। পরীক্ষা চলে আসল কনার।

দেড় মাস যাবত পরীক্ষা চলল কনার। জল ফোন করে কনার পরীক্ষার খোজ নিত। কনা পড়াকালীন সময়ে বলেছিল সে ফেসবুকে যদি একাউন্ট খুলে তাহলে প্রথম ফ্রেন্ড করবে জলকে। কনার ভিতর কি জলের জন্য তখন কোন ফিলিংস ছিল কিনা সেটা লেখকের জানা নাই। তবে জলের যে ছিল না সেটা শিউর। কারন জল এইসবে বিশ্বাস করে না, তার কাছে সবই মেকি। যাই হোক হঠাত একদিন কনার ফোন, স্যার আপনাকে ফেসবুকে অ্যাড করব। আজই ফেসবুকে একাউন্ট খুললাম।

এরপর প্রায়ই ফেসবুকে কথাবার্তা চলতে থাকল। অনেক হাসি ঠাট্টায় জল কনা ২ জনেরই ভালই সময় কাটতে লাগলো। জল বুঝতে পারল হয়ত এই বন্ধুত্ব অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে। সে নিজেকে প্রকাশ করবে না সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু সাড়া যদি ওই পাশ থেকেও আসে তাহলে বিষয়টা কিন্তু কঠিনই হয়ে যায়। একদিন কনা ফেসবুকে একটি লাল গোলাপ দেয়। জল সেটা সিরিয়াসলি নেয় না। কিছুক্ষণ পর কনা জিজ্ঞেস করে, স্যার আমি তো কোন রিপ্লাই পেলাম না। জল বুঝতে পারে লাল গোলাপের মর্মার্থ। এর পর তাদের রাতে কথা হত। কনা তার ফ্যামিলির কস্টের কথাগুলো শেয়ার করে মন খারাপ করত জল তাকে বুঝাত, শান্তনা দিত। হয়তবা একারনেই কনা জলকে তার খুব কাছের মানুষ ভাবতে লাগল। শুরু হল স্বপ্ন বোনা। অসংখ্য রঙের অসংখ্য স্বপ্ন।


ভালই চলছিল সবকিছু। কিন্তু হঠাত বাধ সাধল কনার ফ্রেন্ড। কোন এক ঘটনার জের ধরে সে কনার ফেসবুক পাসওয়ার্ড দিয়ে দিল কনার আব্বুকে। কনার আব্বু কনা এবং জলের কনভারসেশন সব দেখে ফেলল। কনা চিটাগাং বেড়াতে গিয়েছিল, ওর বাবা ওই দিনই কনাকে নিয়ে ঢাকায় ফিরল। ইচ্ছামত বকাঝকা করল। মোবাইল কেড়ে নিয়ে গেল।


আস্তে আস্তে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হতে লাগলো। কনা এবং জলের যোগাযোগ আগের মত হতে লাগলো। কনা মোবাইলও ফেরত পেল। ২ জনের বাসা কাছাকাছি হওয়াতে মাঝেমাঝেই দেখা করত তারা ২ জন। একদিন কনা কলেজ ফাকি দিয়ে সারাদিন জলের সাথে ঘুরল। ২ জন বৃষ্টিতে ভিজল, চটপটি ফুচকা খেল। অনেক রোমান্টিক একটা দিন ছিল সেটি। নিউমার্কেট থেকে জলের জন্য একটা শার্ট পছন্দ করল কনা। জল সেটা নিয়ে নিল। জল এখনো ঐ শার্টটি পরে।

মাঝে কনার বাসায় অনেক চরাই উতরাই চলতে থাকে। কনা চুপচাপ খালি শুনেই যায়। কিন্তু বড় বাধা আসল কনার বাবা হজ থেকে ফেরার পর। কনাকে রুমে ডেকে জিজ্ঞেস করল, তোমার হাতে ২ টা রাস্তা, হয় জলকে ছাড় অথবা আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাও। কনা তার বাবাকে বার বোঝানোর চেস্টা করেও ব্যর্থ হয়। কনার গায়ে হাত তুলে তার বাবা। কনা তখন বলে, আমি থাকব না তোমার বাসায়। ব্লেড দিয়ে নিজের হাত খত বিক্ষত করে। ওর বাবা মা ওর পাশে সারা রাত বসে থাকে, ওকে ধরে রাখে এবং এও বলে যে সে যা চায় তাই হবে।

পরদিন কনা রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। জল তার ক্লাস বাদ দিয়ে কনার কাছে চলে আসে। ওকে বাসায় ফিরে যেতে বলে, অকে শান্ত করার ট্রাই করে। অবশেষে সে বাসায় ফিরতে সম্মত হয়। জল সেদিন খুব ভালভাবেই বুঝতে পারে এই মেয়ে তাকে কেমন ভালবাসে। জল কনার কাটা হাত দেখে শিউরে উঠে। কনাকে প্রমিজ করায় যে আর কোন দিন সে এভাবে নিজেকে আঘাত করবে না।


সব কিছু ঠিক চলছিল। কনার ক্লাস, জলের ক্লাস, তাদের প্রেম। কিন্তু কনার দেরী করে বাসায় ফেরা, রাত জেগে কথা বলা, মিথ্যা অজুহাত দেখানোটা বাবা মার কাছে সন্দেহের উদ্রেক করে। তার মা তাকে অনেক উল্টোপাল্টা বকাঝকা করে জল কে নিয়ে। কনা সব মুখ বুঝে সহ্য করে।


এবার ওর বাবা শক্ত পদক্ষেপ নেয়। জলের কাজিনের সাথে অর বাবার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। জলের ভাইয়াকে সব বলে দেয়। ভাইয়া জলকে ফোন করে খুব বকে ও হুমকিও দেয় এর পরও যদি রিলেশন রাখে তাহলে বাসায় জানানো হবে। জল চায় না তার বাসায় এসব জানুক, অর আব্বা অসুস্থ এইসব ব্যপার জেনে আরো টেনশনে পরে যেতে পারে। জল তার ভাইয়ার কাছে সময় চায়।


কনাকে সব কিছু খুলে বলে জল। কনাকে বুঝায় এখন একটু কথা কম বলতে দেখা কম করতে। কনা বুঝতে চায় না। অনেক কান্নাকাটি করে। কিন্তু এটা আর গোপন থাকল না। কোন একভাবে জলের মার কানে চলে যায়। জলের মা জলকে খুব বকাবকি করে, জলেরও ব্য্যপারটা খুব খারাপ লাগে। তার কারনে তার ফ্যামিলির বদনাম হচ্ছে। জল কথা বলা কমিয়ে দেয় কনার সাথে। ঐ দিকে কনার অবস্থা খুব খারাপ। বারবার সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছে। ঘুমের ট্যাবলেট দিয়ে ঘূম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে।


২ ৩ দিন পর। কনা আবার ক্লাসা যাওয়া শুরু করে। কনার মোবাইল ওর বাবা মা নিয়ে যাওয়ায় ফ্রেন্ডের ফোন থেকে কল দেয়। জল অকে এভয়েড করার ট্রাই করে। কিন্তু পারে না। জল বুঝতে পারে কনা যেভাবে তাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না, ঠিক তেমনি তার পক্ষেও কনাকে ছেড়ে থাকা সম্ভব নয়।

কনারা বাসা ছেড়ে দিচ্ছে। কলেজের কাছে নতুন বাসায় উঠবে। কলেজ বাসা থেকে অনেক দূর। কনার মন এই জন্য খুব খারাপ থাকে। কারন বাসা চেঞ্জ হলে দেখা হবে খুব কম। জলও সেটা বুঝতে পারে।


হঠাত একদিন বাসা ছাড়ার ২ ৩ দিন আগে কনার আব্বু জলের মামাকে গিয়ে জলের নামে ইচ্ছা মত কথা বলে। জল খারাপ ছেলে, আমার মেয়ে্র জীবন নস্ট করতে চাই, ওর জন্য বাসা ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। ও যদি আর তার মেয়ের সাথে কন্টাক্ট করে তাহলে খুব খারাপ হবে এইভাবে জলের নামে অনেক বাযে কথা বলে জলের মামাকে লজ্জিত করে। জলের মামা তাৎক্ষণিক জলের বাসায় জানায়। জলকে ইচ্ছামত বকাবকি করা হয়। জলকে বলা হয় রিলেশন ভেঙ্গে ফেলতে। এমন ঘরের মেয়ে এই পরিবারে আসতে পারবে না কখনও। জল খুব রাগ করে এবং ফ্যামিলির সম্মানের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় এই রিলেশন আর সে রাখবে না কারন এর কোন ভবিষ্যৎ নেই। জল-কনার মিলন কখনই বাস্তবে এসে ধরা দিবে না।


জল কনার সাথে যোগাযোগ করে রিলেশন রাখবে না বলে জানায়। ফোনের ওই পাশ থেকে তীব্র কান্নার শব্দ জল ঠিকই শুনছিল। ফোন রাখার পর সে অঝর ধারায় কেদে ফেলে। মাকে জানায় যে সে সব শেষ করে দিয়েছে। নতুন করে আর কিছুই হবে না।


পরদিন। শেষ দিন............কনা জলকে অনুরোধ করে শেষ বারের জন্য দেখা করা জন্য। জলের একটা ক্যাপ কনার কাছে ছিল সেটা সে ফেরত দিবে আর কনা তার প্রিয় একটা জিনিস তাকে দিবে। জল রাজি হয়।


কনাকে খুব বিধ্বস্ত লাগছিল। বুঝা যাচ্ছিল সারা রাত ঘুম হয়নি। চোখগুলো ফোলাফোলা। অর হাতের দিকে তাকিয়ে থমকে যায় জল। বাম হাতে ২০-২৫ টা ব্লেডের তীব্র আচড়। জল জিজ্ঞেস করে কথা রাখলে না তুমি কনা। কনা বলে তুমিও রাখনি কথা। বলেছিলে কোনদিন যাবে না আমাকে একা ফেলে। তুমিই যখন নেই তোমার কথা রেখে কি হবে। অনেকগুলো পিল খেয়েছি। তারপরও কিছু হচ্ছে না............চুপচাপ কাঁদতে থাকে কনা। জল আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না। কাদতে আলাগল চুপচাপ। কনা শেষবারের মত জলের বুকে আসতে চাইল। জল না করল না। জলের বুকে মাথা রাখার সাথে সাথে কনা হাউমাউ করে কাদতে লাগলো। জলের বুক ভেসে গেল কনার চোখের জলে। জল কনাকে বলল আমাকে ক্ষমা করার দরকার নেই, আমাকে যত পার অভিশাপ দাও। আমি তোমার ভালবাসার মূল্য দিতে পারলাম না। আমাকে পারলে ভুলে যেও। কথা গুলো বলার সময় জল কাদছিল তীব্রভাবে। ২ জন ২ জনের দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। জল হঠাত উঠে দাঁড়ায়। বলে ভাল থেকো, নিজের যত্ন নিও। জল একথা বলে আর দেরী করে নি। সাথে সাথে বের হয়ে যায় কনার সবচেয়ে সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটিকে হাতে নিয়ে.........জলের চলে যাবার পথের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কনা............






শেষ কথা কেন এমন কথা হয়,

শেষ চিঠি কেন এমন চিঠি হয়,

ক্ষমা কর, ক্ষমা করো আমায়.........





সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ২:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×