আমরা সেই ক্রান্তিকালের মানুষ, যারা ইতিহাসের চৌর্যবৃত্তিতে নিঃস্ব, অথচ আঁকড়ে ধরে রেখেছি পোঁড়া ভিটের পোঁড়া খুঁটির শেষাংশ!!
ভাবতেও অবাক লাগে!!এই জনপদের বাঙালিরা সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র জাতি, যারা ত্রিশ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মাত্র তিন/চার বছরেই শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। যুদ্ধের সহায়ক কে নিয়ে তামাশা করেছে। যুদ্ধের নেতার নেতৃত্ব নিয়ে সন্দেহ করেছে। অবিশ্বাস করেছে। একসময় সন্দেহগুলো পাকাপোক্ত হয়ে সিদ্ধান্তে দাঁড়িয়ে গেছে। এই জাতি তার বীরাঙ্গনাদের নিয়ে অশ্লীল মস্করা করেছে। নয় মাসের যুদ্ধকে চাপিয়ে দেওয়া বলেছে। পবিত্র ভূমি (!) পাকিস্তান ভাঙার জন্য ভারতকে শত্রু বলে কাঠগড়ায় তুলেছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে বলেছে ভারতের ষড়যন্ত্র !
চতুর্দশ শতক থেকে উনবিংশ শতক জুড়ে ল্যাটিন আমেরিকার দেশে দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। ইনকা সভ্যতার ধারক ইন্ডিয়ানরা যুদ্ধ করেছে স্প্যানিশদের বিরুদ্ধে, ইংরেজদের বিরুদ্ধে, ফরাসি আর পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে। পুরোটা উনবিংশ এবং বিংশ শতক জুড়ে কালো আফ্রিকানরা সাদা ইউরোপীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। মাতৃভূমিকে মুক্ত করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগুনে পুড়ে পূর্ব ইউরোপীয়রা পুঁজিবাদ আর সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে। বিংশ শতকের মাঝামাঝি এশিয়া-পূর্ব এশিয়ার দেশে দেশে মুক্তিযুদ্ধ সগৌরবে জয়ী হয়েছে। ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, ইতালি, পর্তুগালের নিকট থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। এইসব এক একটি সংগ্রাম, এক একটি যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে স্বাধীনচেতা মানুষ তৈরি করেছে। আত্মমর্যাদাশীল জাতি তৈরি করেছে। হ্যাঁ এরা কেউই তাদের জন্মইতিহাস কলঙ্কিত করেনি। সন্দেহ করেনি। অস্বীকার করেনি। বেজন্মার মতো জন্ম নিয়ে তামাশা করেনি। কিন্তু এই বাংলা করেছে। এই বাঙালি করেছে। আর সে কারণেই এই বাঙালিকে তার সূর্যসন্তানদের আত্মবলিদানকে শ্রদ্ধা করার জন্য নতুন প্রজন্মকে করজোড়ে অনুরোধ করতে হয়! কখনো বা আইনি তকমা দিতে হয়। মনে করিয়ে দিতে হয়, তাদের পূর্বপুরুষরা একদা অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল। দূরবীন দিয়ে চেনাতে হয়, দেখো এ নয় ও যুদ্ধ করেছিল। এ নয় ওর নেতৃত্বে যুদ্ধ হয়েছিল।
আধুনিক প্রজন্মের অনেকের কাছেই মুক্তিযুদ্ধ মানে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। লাখ লাখ কৃষক-শ্রমিকের সন্তানদের আত্মত্যাগ মানে, #অ্যামেচার_ডিজাস্টার। আমি জন্মজন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী নই, হলে বলতাম, হে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সূর্যসন্তানরা পরজন্মের সময় এসেছে। উঠে এসে আমাদের অপবিত্র পাপবিদ্ধ সর্বশরীরে থু থু দিয়ে যাও, আমরা স্বাধীনতা ‘ভোগ’ করছি বেজন্মা ইতরের মতো, দাম না চুকিয়েই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



