somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাজার বছর বেঁচে থাকা ও একটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র

০১ লা আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুইবছর আগে Troy দেখেছিলাম। গ্রীসের ট্রয় আক্রমণের কাহিনী নিয়ে সিনেমা, হোমারের ইলিয়াড অবলম্বনে। সেই সিনেমার একটা ডায়লোগ মনে পড়ছে।
গ্রিস যখন একত্রিত হয়ে ট্রয় আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক তখন বীর অ্যাকিলিস সিদ্ধান্ত নেয়, সে যুদ্ধে যাবে না। তখন তার মা তাকে বলে, “ If you stay in Larissa, you will find peace. you will have sons and daughters who will have children…… They will all love you and remember your name. But when your children are dead. And their children after them, your name will be forgotten….. But if you go to Troy, glory will be yours… They will write stories of your victories in thousands years and the world will remember your name. But if you go to Troy, you will never come back.”
ভেবেছিলাম, অ্যাকিলিস হয়তো ট্রয়ে যাবে না, যেহেতু তার মা আগেই বলে দিয়েছে, গেলে মৃত্যু অবধারিত। যদিও তার নাম হাজার বছর বেঁচে থাকবে মানুষের গল্পে, কথায়!
কিন্তু সে ট্রয় গিয়েছিল; যুদ্ধে গ্রীস জিতলেও তার আর বেঁচে ফেরা হয়নি। এবং আজও মানুষ জানছে তার নাম।
অ্যাকিলিস যদিও একটা কাল্পনিক চরিত্র, কিন্তু তার চরিত্রের মধ্য দিয়ে গ্রীসের ততকালীন বীরদের মানসিকতা বোঝা যায়। গ্রীসের রাজাদের, বীরদের জীবনের লক্ষ্যই ছিল অমর হওয়া, এর জন্য মরতেও তারা ছিল প্রস্তুত! হাজার বছর পরও মানুষ তাদের চিনবে, জানবে, এটাই ছিল তাদের পরম পাওয়া। অমর হতে রাজারা যুদ্ধ করত, যুদ্ধ জয়ের পর নতুন সভ্যতা সৃষ্টি করে তার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে দিত নিজের নাম। তৈরী করত বিজয়স্তম্ভ।
এমন অমর হওয়ার শখ ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসেও দেখা যায়। সম্রাট অশোক সারা ভারতে 'অশোকস্তম্ভ' তৈরী করেছিলেন, যাতে তার নামটা টিকে থাকে হাজার বছর। তার সে ইচ্ছে পূরণও হয়েছে। Lion Capital Of Ashoka আজ ভারতের জাতীয় প্রতীক।
এখন, আমাদের দেশে দেখা যায়, কেউ একজন সম্পদশালী হলে নিজের নামে স্কুল- কলেজ খুলেন, হাসপাতাল তৈরী করেন। স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা, হাসপাতাল নির্মান করা খুব ভাল কাজ সন্দেহ নেই, কিন্তু যারা এসব তৈরী করেন, তাদের লক্ষ্য জনসেবার পাশাপাশি অনেকসময় 'মানুষের মাঝে অনেকদিন বেঁচে থাকাও' হয়। অন্তত নিজের নামে যারা এসব করেন, তাদের ক্ষেত্রে এটা শতভাগ প্রযোজ্য। বিদ্যাসাগর শিক্ষা প্রসারের জন্য শত শত স্কুল তৈরী করেছিলেন, কিন্তু নিজের নামে একটাও স্কুল প্রতিষ্ঠা করেননি। হয়তো তিনি আজকালকার সমাজ-সেবকদের মত করে ভাবেননি।
গতকাল বোধহয় প্রধানমন্ত্রীর সন্তান জয়ের নামে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে। কে জানে তার নামে ভূ-উপগ্রহ স্থাপনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কী!
“হাজার বছর বেঁচে থাকা” নিয়ে ক'দিন আগে একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম। সেটার মতে, মানুষ খেলোয়াড়দের খুব বেশিদিন মনে রাখে না। ১৯৩০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতার নাম কয়জন আমরা জানি? আজকে যারা জনপ্রিয়তার শেখরে, তাদের কথাও যে মানুষ ভুলবে না শতবছর পর, তার গ্যারান্টি নেই। সিনেমার নায়ক, নায়িকা, গায়ক, নর্তকী- এরা তো কালের গর্ভে কিছুদিন পরপর হারিয়ে যাচ্ছেনই। যত বড় ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবীই হোন না কেন, তাও লোকে ভুলবে। লেখক কবিদেরও ভবিষ্যত ভাল না। একদম ইউনিক কিছু না লিখলে তাদের একদম চান্স নেই। বাৎস্যায়ন কামসূত্র লিখে টিকে আছেন, কারণ কামসূত্রের বিকল্প আজও নেই। কিন্তু সহস্র বছর টেকার সম্ভাবনা আছে শুধু খুব বড় রাজনীতিবিদ আর ধর্মপ্রবর্তকদের। কারণ রাজনৈতিক আর ধর্মপ্রবর্তকদের জীবন নিয়ে ছড়িয়ে থাকে শত শত মিথ আর গালগল্প। আর মানুষ এসব ভালবাসে। আজও তাই, হাজার বছর পরও, গোপাল, রামপালকে মনে রেখেছে সবাই। মনে রেখেছে যিশু আর মোহাম্মদকেও। মরা মানুষকে বাঁচানো আর আধুনিক মহাকাশযান ছাড়া মহাকাশভ্রমণ- সবই যে গুল- এসব জেনেও ধার্মিকেরা আজও তাদের মানে; সবাই তাদের চেনে। কারণ তাদের আছে মিথের শক্তি। রবিনহুড তো বেঁচেই আছেন রুপকথায়!
সে হিসেবে, আজ থেকে হাজার বছর পর হয়তো মানুষ বঙ্গবন্ধুকে মনে রাখবে, মনে রাখতে পারে নেতাজীকেও। বাংলাদেশে লাখ লাখ নেতা-উপনেতা- পাতিনেতা জন্ম নিলেও, তাদের মত হতে পারেননি কেউ। যেহেতু রামায়ণ, মহাভারত, ইলিয়াড টিকে আছে; টিকে থাকতে পারে মধুসূদন ও তাঁর মেঘনাদবধও। রবি ঠাকুরের চান্স আছে। বাকি যারা আছেন- কবি, মহাকবি, লেখক, ঔপন্যাসিক, সব্যসাচী, নেতা, মন্ত্রী, নায়ক, গায়ক ও সাধারণ মানুষ- তারা হারিয়ে যাবেন নির্ঘাত। এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

সুতরাং, কারো যদি ইচ্ছে হয় হাজার বছর বাঁচার, তিনি যেন বঙ্গবন্ধু, নেতাজী বা রবীন্দ্রনাথ হওয়ার চেষ্টা করেন। নিজের নামে স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে কিংবা ভূ-উপগ্রহ স্থাপন করে লাভ খুব একটা হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:০৮
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য: টিপ

লিখেছেন গিয়াস উদ্দিন লিটন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৫




ক্লাস থ্রীয়ে পড়ার সময় জীবনের প্রথম ক্লাস টু'এর এক রমনিকে টিপ দিয়েছিলাম। সলজ্জ হেসে সেই রমনি আমার টিপ গ্রহণ করলেও পরে তার সখীগণের প্ররোচনায় টিপ দেওয়ার কথা হেড স্যারকে জানিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈশাখে ইলিশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৪০



এবার বেশ আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে । বৈশাখ কে সামনে রেখে ইলিশের কথা মনে রাখিনি । একদিক দিয়ে ভাল হয়েছে যে ইলিশকে কিঞ্চিত হলেও ভুলতে পেরেছি । ইলিশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×