somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না হওয়াই কি আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল?

০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন রাস্তার ধারে একজন প্রতিবন্ধী রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকলে, তাকে রাস্তা পার করিয়ে দেয়া আপনার মানবিক দায়িত্ব। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী লোকটি আপনার সাহায্য চাইলে, আপনি তাকে সাহায্য করবেন; না করলে আপনি খাস অমানুষ।
কিন্তু শক্তসমর্থ একজন মানুষ রাস্তা পার হতে আপনার সাহায্য চাইলে, আপনি আমি কেউই হয়তো তাকে সাহায্য করবো না। করা উচিৎও নয় একদম। রাস্তা পার হওয়ার ক্ষমতা তার রয়েছে।
আমাদের দেশের কোটা'র বেলায়ও ঠিক এমন উদাহরণই দেয়া যায়৷ প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা রাখা যেতে পারে, রাখা যেতে পারে উপজাতিদের জন্যও। তারা পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী, তাদের সাহায্য প্রয়োজন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কিংবা নাতিপুতিদের জন্য রাখা যাবে না সে সুবিধা। তারা প্রতিবন্ধী নয়৷ রাস্তা পার হতে তাদের অন্যের সাহায্যের হাত দরকার নেই।
এখনও, স্বাধীনতার এতোবছর পর, তাদের কোটা দরকার‍- এটা ডাহা মিথ্যা। নির্ভেজাল, নিষ্কলুষ মিথ্যা। ৭২ সাল থেকেই তারা কোটা সুবিধা পাচ্ছে। এতোদিন কোট সুবিধা ও ভাতা পেলে কেউ পিছিয়ে পড়ে থাকতে পারে না। আর সত্যি এতোদিন পরও তারা পিছিয়ে থাকলে, তারা অপদার্থ।

কিছুক্ষণ আগে, কোটার পক্ষের একজন দালালের কথা শুনলাম। তিনি বললেন, “যারা কোটায় চাকরি পাচ্ছে, তারাও প্রিলি, রিটেন এসবে পাশ করেই চাকরিগুলো পাচ্ছে। তারাও সমান মেধাবী! সমান মেধাবী না হলে এসব উতরে যেতে পারত না।“
মেনেই না হয় নিলাম তার কথা। কোটাধারীরা না হয় সমান মেধার অধিকারী। কিন্তু সমান মেধার অধিকারী হলে, তারা যোগ্য হলে, কেন তাদের কোটার দরকার? কোটাহীন বাকি লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থীদের সাথে কম্পিট করেই চাকরি নিক না! মেধাবীরা তো কারও সাহায্য ছাড়াই জীবনে উন্নতি করে। তাদের বেলায় এর ব্যতিক্রম হবে কেন?

কিছুদিন আগে প্রাইমারির শিক্ষক নিয়োগের জন্য সার্কুলার ছাড়া হলো। সে সার্কুলার বিশ্লেষণ করে জানা গেল, সেখানে নাকি ৯৬% কোটায় নিয়োগ দেয়া হবে! কল্পনা করুন ব্যাপারটা।
প্রতি উপজেলা থেকে ২৫.৭৫ জন শিক্ষক নেয়া হবে। তারমধ্যে কোটায় নিয়োগ পাবে ২৪.৯৬ জন। কোটাহীনদের জন্য রয়েছে মাত্র ০.৭৯ টি আসন৷ একটিরও কম। আপনি কোটাহীন হলে, সে চাকরির জন্য আবেদন করে কী ছিড়বেন?
আমাদের দেশের মাথামোটা নীতিনির্ধারকেরা বোঝেনা যে, রবীন্দ্রনাথের ছেলে আরেকজন রবীন্দ্রনাথ হয় না। সব্যসাচী হতে পারেনি নজরুল। তাদের বোঝা উচিৎ যে, একজন শিক্ষকের ছেলে কিংবা মেয়ে ভাল শিক্ষক হবে, এর বিন্দুমাত্র গ্যারান্টি নেই। পোষ্যকোটার মত অবান্তর একটা কোটাও তাই তারা রেখেছে।
সবচেয়ে মজার কথা হলো, নারীরা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেই শিক্ষক হতে পারবে। একজন ইন্টারপাশ শিক্ষিকার কতটা যোগ্যতা আছে, একটা ছেলেকে ভালভাবে পড়ানোর?
আপনি দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করলেও, এখন আপনার প্রাথমিকের ছাত্রদের পড়ানোর যোগ্যতা নেই। যোগ্যতা আছে কোটাধারী কারও, যে হয়তো টেনেটুনে কোন ডিগ্রী কলেজ থেকে পাশ করে এসেছে!
মানুষের জীবনে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব কতোটা, তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এটা বোঝার ও বোঝানোর জন্য সক্রেটিসকে কোট করতে হয় না। আর এখন দেশের সেই প্রাথমিক শিক্ষার দায়ভারটা পড়েছে কোটায় চাকরি পাওয়া শিক্ষকদের হাতে। এবং তারা হয় সেই মানের কোটাধারী, যারা বিসিএস কিংবা সে মানের কোন চাকরির পরীক্ষায় টেকে না। কেউ ইচ্ছে করে প্রাইমারির টিচার হয় না। ৩০% কোটা পেয়েও যারা বড় চাকরি জোটাতে ব্যর্থ, সেই অপগন্ডরাই হয় প্রাইমারির শিক্ষক। বাংলাদেশের শিক্ষার মান কেন এমন, বোঝার জন্য আর পিএইচডি করার দরকার নেই। গাছের গোড়াটাই পচা, ফল ধরবে কী করে?

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা বোধহয়, সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। ভর্তি পরীক্ষাগুলোর জন্য ছাত্ররা এই কয়েকটা মাস নাওয়া খাওয়া ভুলে পড়বে। খেতে খেতে পড়বে, বিড়ি টানতে টানতে পড়বে, হাসপাতালের বেডে শুয়ে পড়বে, রিক্সা কিংবা বাসে বসে পড়বে, কমোডে বসে পড়বে। এই সময়ে ভর্তিপ্রার্থীদের জীবনে আনন্দ বলে কিছু থাকে না, হর্ষ বলে কিছু থাকে না। থাকে শুধু টেনসন। এত পরিশ্রমের পরও দেখা যাবে অনেক ভাল ছাত্র কোন পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাচ্ছে না। অথচ এখানেও রয়েছে কোটার ব্যাপার স্যাপার। দেখা যাবে, ৭০ পেয়েও অনেকে চান্স পেল না। কিন্তু কোটাধারীরা ৫০ পেয়েই চান্স পেয়ে গেছে!
ভর্তি পরীক্ষায় অমূলক যে কোটাগুলো রয়েছে, যেমন পোষ্য আর মুক্তিযোদ্ধা কোটা, সেগুলো তুলে দিলে অন্তত আরো ৫০-৬০ টা সিট বেড়ে যায় প্রতিটা ভার্সিটির প্রতিটা ইউনিটে, মেধাবীদের জন্য। ভর্তি পরীক্ষাত ৫০-৬০টা আসন যে কত বড়, যারা পরীক্ষা দেয় তারাই বোঝে। কিছুকিছু ইউনিট আছে যেসব ইউনিটে মাত্র ৬০-৭০টা আসনের জন্য পরীক্ষা দেয় ৩০-৪০ হাজার ছাত্র৷ সেসব ইউনিটেও দেখা যায় কিছু আসন রাখা হয় কোটারীদের জন্য, যারা হয়তো ২০০-৩০০ সিরিয়ালের থাকলেও চান্স পেয়ে যাবে। অন্যদিকে ৬১-৭১ সিরিয়ালে থাকা একজন মেধাবী ছাত্র মুখ হাড়ি করে অন্য ভার্সিটিতে একটা সিটের জন্য দৌড়াবে।
একেই তো ভর্তিপরীক্ষা প্রতিটা ছাত্রের জন্য একটা অত্যাচার, তার উপর এই কোটার বৈষম্য- এসব চলবে কতদিন?

আরেক ধরনের দালাল দেখা যায় খুব। তারা সাধারণত হয় মোটিভেশনাল স্পিকার টাইপের। তারা বলে থাকেন, বেসরকারি চাকরি খোঁজার কথা, নিজেই নিজের কর্মসংস্থান গড়ে তোলার কথা। মাঝেমাঝে তারা এজন্য বিভিন্ন উপদেশও দিয়ে থাকেন। যেমন সিভি বাড়াও, দক্ষতা বাড়িয়ে তোল ইত্যাদি। তারা একটা বৈষম্যকে আমাদের মেনে নিতে বলে। প্রতিবাদ না করে পড়ার টেবিলে ফেরত যাওয়ার কথা বলে।
তাদের জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, একথাগুলো তারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কেন বলেন না! সরকারি চাকরি কি শুধু কোটাদারীদের জন্যই ছেড়ে দিতে হবে? আমাদের মধ্যে কেউ না হয় বেসরকারি জব করবে, কেউ না হয় গড়ে তুলবে নিজেই নিজের কর্মসংস্থান, তাই বলে তাদের সরকারি চাকরি পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অধিকার সরকারের নেই।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা কিংবা পোষ্য কোটা একটা বৈষম্য, সেটার প্রতিবাদ প্রত্যেকের কর্তব্য। আমি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে সড়ক দূর্ঘটনার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হইনি কখনো। তাই বলে নিরাপদ সড়কের জন্য কথা বলতে পারবো না আনি?
সিভি ভারি করার কথা বলে, কর্মসংস্থান তৈরির কথা বলে কোটা আন্দোলনকে হালকা করে দেখার উপায় নেই। এটা যত তাড়াতাড়ি এই ডিকহেডরা বুঝবে ততোই ভাল।

মাঝেমাঝে শুনছি, কোটা আন্দোলনকারীরা শুধুই নিজের স্বার্থের জন্য লড়ছে। তারা স্বার্থপর বলেই কোটা আন্দোলনে আজ জনসম্পৃক্ততা নেই বললেই চলে।
যারা বলছেন, তারা হয়তো জানেই না যে, স্বার্থ ছাড়া কোন আন্দোলন হয়। ক'দিন আগে কাতালোনিয়ায় যে স্বাধীনতা আন্দোলন হলো, তা ছিল স্বার্থের জন্যই। স্পেনের জাতীয় আয়ে তাদের, কাতালোনিয়ার অবদান বিশাল। কিন্তু তারা তার বদলে পাচ্ছে খুবই কম। আন্দোলনের মূল কারণ অর্থনৈতিক বৈষম্য। তাদের সে আন্দোলনে লাখ লাখ মানুষ শামিল হয়েছিল। কেন শামিল হয়েছিল? তাদের স্বার্থে আঘাত লেগেছিল বলেই।
স্বার্থপর আন্দোলনকারী হিসেবে কাতালানদের পিঠে ট্যাগ মারতে পারবেন?
বাংলাদেশের স্বাধীনতাও এসেছে যে গণ আন্দোলনের কারণে, সেটাও ঐ স্বার্থের দ্বারাই চালিত। পাকিস্তানিরা যে শোষণ করছিল, সেটা জনগণের স্বার্থে আঘাত করেছিল সরাসরি। তারা শুধু এদেশের শিল্পসাহিত্যের উপর খড়গ তুলে নিয়েছিল বলে মানুষ অসহযোগে নামেনি।
ছয়দফা দাবিগুলোর মধ্যে একটি ছিল, দুটি স্টেটের পৃথক মুদ্রা, যাতে করে একদেশের মুদ্রা আরেক দেশে পাচার না হয়ে যায়। পশ্চিম পাকিস্তানে যে মুদ্রা যে পাচার হচ্ছিল, সে তো আর নতুন করে বলে বোঝাতে হয় না। মুদ্রা পাচার থেকে শুরু করে ওদের সব কর্মকান্ডই ছিল জনগণের স্বার্থের বিপক্ষে।
কিন্তু আজকের এই 'স্বার্থ'তত্ত্ববিদদের কথা অনুসারে, আমাদের ছয় দফা আন্দোলনও ছিল স্বার্থপর আন্দোলন!
কোটা শুধু কতিপয় ছাত্রের ক্ষতি করছে না। সারা দেশে কোটা একটা বেকার গোষ্ঠি তৈরি করছে। আজ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কারণে অনেক তরুণ চাকরি পাচ্ছে না। কাল নাতিদের কারণে, পরবর্তী প্রজন্ম চাকরি পাবে না। টিএসসিতে কিন্তু গ্রামের একটা বেকার ছেলে অধিকারের জন্য নামেনি। নেমেছিল ঢাবির কতিপয় ছাত্র। তারা স্বার্থপর হলে, ছাত্রলীগের হাতুড়ি আঘাত সহ্য করে দিনের পর দিন আন্দোলন চালিয়ে যেত না। কারণ কোটা সংস্কার হলে তাদের ব্যক্তিগত লাভ কিছুই হত না। লাভ হতো গোটা দেশের চাকরিপ্রার্থীদের।
গত বছর বোধহয় চার লাখের মত চাকরিপ্রার্থী বিসিএস দিয়েছে। তার মধ্যে কতজন ছিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান? ২০ হাজারের উপরে হওয়ার কথা নয় তাদের সংখ্যা। বাকি ৩ লাখ ৮০ হাজার ছাত্র, ও তাদের পরিবার কোটা পদ্ধতির বিপক্ষে। আগামীতে যারা চাকরির জন্য দৌড়াবে, তারা ও তাদের পরিবারও তখন অবস্থান নেবে এর বিপক্ষে, যদি না সংস্কার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্ররাও কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছে। তাদের কারো আশু চাকরির প্রয়োজন নেই৷ তারা সংস্কার চাইছে, চেয়েছে কারণ তাদের এই কোটা বেকার করে দিতে পারে একদিন। বাংলাদেশের প্রতিটা পরিবারের সন্তান কোটার দ্বারা হতে পারে ক্ষতিগ্রস্থ।
কোটা যদি একজন ছাত্রেরও ক্ষতি করে, আর কারো না হোক, যারা আন্দোলন করছে, তাদের যৌক্তিক স্বার্থে আঘাত হেনে থাকে, তারপরও গোটা জাতির উচিত এই আন্দোলনে সহযোগিতা করা। কারণ একটা আদর্শ দেশের আইন একজন মানুষকে সুবিধা দিয়ে অন্যের অসুবিধা করতে পারে না। এটার প্রতিবাদ করতে হবে। মার্টিন লুথার কিং বলেছিলেন, “ Injustice anywhere is a threat to justice everywhere…. Whatever affects one directly affects all indirectly”। তিনি কথাটা ঘাস খেয়ে বলেননি। রেইসিজনের বিপক্ষে লড়েছিলেন তিনি। তিনি বুঝেছিলেন, রেইসিজমের প্রভাব শুধু ব্লাকদের উপর নয়, সারা বিশ্বের যে কোন ভাষার, যে কোন বর্ণের মানুষের উপর পড়তে পারে। কোটার ব্যাপারটাও এমন। যেকোন কোটাহীন হতে পারে এর শিকার, ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এর দ্বারা।
যারা জানে, এই কোটা বৈষম্যের ব্যাপারে, তারা অন্তত সবাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সমর্থন করে। বাংলাদেশের এমন কোন বুদ্ধিজীবী হয়তো নেই, যে কোটার বিপক্ষে কথা বলেনি।
তারপরও, যারা এখনও মনে করে, কোটার আন্দোলন হিমঘরে চলে গেছে; এখনও যারা ভাবে, জনগন “কোটা আন্দোলন” হোক চায় না, চায় না কোটা সংস্কার, তারা বাস্তবতা জানে না, বোঝে না। তারা অন্তত ৮ এপ্রিলের জনসমাগম দেখেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আরেকটা কথা মনে না করিয়ে দিলেই নয়। আজ যে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন হচ্ছে, সে আন্দোলনটা চালু হয়েছিল মূলত “বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ” নামের একটা গ্রুপের মাধ্যমে। সে গ্রুপ থেকেই একের পর এক পোস্টের মাধ্যমে পাবলিককে নিয়ে আসা হয়েছে মাঠে। সে গ্রুপটা কিন্তু কোটা আন্দোলনকারীদের। সাধু সাবধান।

আমরা যারা কোটা সংস্কার নিয়ে বারবার কথা বলি, টিএসসিতে কিংবা অন্য কোথাও আন্দোলনে নামি, আমাদের গায়ে “মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী” ট্যাগ লেগে যায়।
আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী হলে, চেতনাধারী কারা?
আমার তো মনে হয় না, যারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, তারা অতিরিক্ত সুবিধা লাভের জন্য বন্দুক তুলে নিয়েছিলেন হাতে। কিন্তু তারা যখন কোটা চাই, কোটা চাই করে মানববন্ধন করেন, তখন মনে হয়, সুবিধা লাভই ছিল তাদের যুদ্ধ করার প্রধান উদ্দ্যেশ্য। তাদের নিজের অর্জনে কালি লেপে দেন তারাই।
আমাদের দেশে বহাল তবিয়তে এখনও রাষ্ট্রধর্ম আছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশই ছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী সরকার কিন্তু এখনও রাষ্ট্রধর্ম তুলে দেয়নি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারাও এব্যাপারে কোনদিম সোচ্চার হননি। সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অর্জন?
পাকিস্তান আমলে বড় বড় সব পদ ছিল পশ্চিমাদের হাতে। যোগ্য বাঙালিরা খুম কম বড় পদে ছিল। এখন সেসব পদে বসেছে অযোগ্য কোটাধারীরা। আর যোগ্যরা এখনো আঙুল চুষছে। এটাকে মেনে নেয়াটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?
মাঝেমাঝে কোটাধারীদের কথা শুনলে মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যাপারটা পৈতৃক ব্যাপার। যেন মুক্তিযুদ্ধে চেতনা জন্মের সাথে সাথেই তারা পেয়ে গেছে বিভিন্ন দেহাংশের মত। আওয়ামীলীগও তাই মনে করে। ভাবে, মুক্তিযুদ্ধার সন্তানদের চাকরি দিয়ে বড় বড় পদে বসিয়ে দিলেই বোধহয় সে চেতনা দীর্ঘস্থায়ী হবে!
অথচ আমি এই মূহুর্তে অন্তত পনেরো জন বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধার নাম বলতে পারবো যারা জামাতে যোগ দিয়েছে। একটু সময় দিলে খুঁজে দিতে পারবো পাঁচশো জনকে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ – যা ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র, সেই মূলমন্ত্রকে নির্মূল করার অপচেষ্টাকারী জিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা হয়েও কিন্তু তিনি পাকিস্তান জিন্দাবাদের আদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ নিয়ে এসেছেন এদেশে। জিয়ার নাতিনাতনিরাও কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী? তারা কোটার সুবিধা পাবে তো?
কবি আল মাহমুদ মুক্তিযোদ্ধা হলেও জামাত। এবং কট্টর মুজিববিরোধী। রীতিমতো বখতিয়ার খিলজিকে নিয়ে কবিতা লেখা এই কবিও কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী?
আজ তো আওয়ামীলীগ দেশটা চালাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় টইটুম্বুর একটা দল। তারা তো চাদাবাজি, মাস্তানি, গুন্ডামি, টেন্ডারবাজি- সবই করছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী হওয়া কি এসব করা বোঝায়?
আমরা শালার নিজের অধিকারের কথা বলছি বলে হোলাই? আমরা সরকারের দুর্নীতি আর অপশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি বলে “চেতনাবিরোধী”? আমরা গেস্টাপো বাহিনীরুপী ছাত্রলীগ করছি না বলে শিবির?

অনেক ভেবেটেবে দেখলাম, আমরা যারা কোটাহীন, তাদের এদেশে জন্ম নেয়াটাই ভুল। আরও বড় ভুল, মুক্তিযোদ্ধার ছেলে হয়ে না জন্মানো। জন্ম না নিলে চাকরি না পেয়ে বেকার থাকার যন্ত্রণা সহ্য করতে হত না। যোগ্যদের ডিঙিয়ে অযোগ্যদের উঠে যাওয়া দেখতে হতো না। দূর্নীতি আর অপশাসন মেনে নেয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে হতো না। জন্ম না নিলে অন্তত জামাতশিবিরের ঘৃণ্য ট্যাগ লাগত না গায়ে।
কবি দাউদ হায়দারের মত বলতে ইচ্ছে করে, “জন্মই আমার আজন্ম পাপ!”

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৮
২৪টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×