somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যাখ দ্যাখ হিজড়া!!!

৩০ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন একটা গয়নার দোকানে গিয়েছিলাম। হঠাৎ পেছনে প্রচণ্ড হাসির আওয়াজ শুনে চমকে তাকালাম। দেখি বেশ কয়েকজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ(সাধারনত মানুষ এদের কয়েকজন বলতেও রাজি নয়, মানুষ বলে কয়েকটা...যেন এরা মানুষই নয়! (প্রচলিত শব্দে ‌হিজড়া';) দোকানে ঢুকেছে।আর তাই নিয়েই শুরু হয়েছে তামাশা আর হাসি ঠাট্টা। কেউবা তাদের সাথে অশ্লীল আচরণ করারও চেষ্টা করছিল। যত না বিরক্ত হলাম, তার চেয়ে বেশি খারাপ লাগলো। একজন মানুষ কিভাবে আরেকজন মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে হাসাহাসি করতে পারে!
হিজড়াদের নিয়ে সচেতনতামূলক একটি বিজ্ঞাপন টিভিতে প্রচারিত হয়। কিন্তু তাতে খোলাখুলিভাবে কিছুই বলা হয় না। এরা কেন এমন আচরণ করে তার পেছনের কারণ কিংবা এদের দৈহিক প্রতিবন্ধীত্বের দিকটিও খোলাসা করে বলা হয় না। তাহলে এই বিজ্ঞাপনের কি লাভ!
অন্যদিকে আজকাল মিডিয়ার বিনোদন দেবার একটা বাজে উপায় হল এরকম কোন চরিত্রকে নিয়ে নাটক বানানো। "ছাইয়া ছাইয়া" নাটকটির কথাই বলি। এই নাটকটি প্রচারের পর এই হতভাগ্য মানুষগুলোর প্রতি মানুয়ষর বিদ্রুপের মাত্রা আরো বেড়েছে। সেই সাথে ঝড়ের গতিতে বেড়েছে এই নাটক সিনেমায় এই নোংরা বিনোদনের ব্যবহারও।
মানছি, রাস্তাঘাটে হিজড়ারা খুব অদ্ভূত আচরণ করে। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন এরা কেন এমনটা করে। কোন মানুষ কি শখ করে নিজেকে মানুষের বিদ্রুপের পাত্র বানাতে চায়? সমাজে একঘরে এই মানুষগুলো তাদের লিঙ্গিয় প্রতিবন্ধীেত্বর জন্য কোথাও চাকরি পায় না, পারে না স্বাধীন ব্যবসা করতে, পারে না এই সমাজের আর দশটা মানুষের সাথে মিশে যেতে।তাই ভিক্ষা বা জোর করে টাকা আদায় করেই চলতে হয় এদের। কোন কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে এদের নাচগানের জন্য ডাকা হয় কিন্তু তাতেও তাদের সম্মান খুব বেশি রক্ষা হয় না।
নিজের একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। কক্সবাজারের রেহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের একটা বিয়ের ভিডিও দেখছিলাম। একটা জায়গায় এসে থেমে গেলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কি দেখছি এসেব। দেখলাম একজন হিজড়াকে অনা হয়েছে। বয়স ১৩-১৪ এর বেশি হবে না। চটুল হিন্দি গানের সাথে সে নাচছিল। আর তার চারপাশে আমন্ত্রিত নারী পুরুষ সবাই দাঁড়িয়ে দেখছিল। একটু পর কিছু পুরুষ তাকে ঘিরে নাচতে শুরু করলো এবং তারা বিভিন্ন ভাবে তার শরীরের বিভিন্ন সস্থানে স্পর্শ করছিল। লিঙ্গীয় প্রতিবন্ধী মানুষটা বার বার কুঁকড়ে গেলেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার আপ্রান চেষ্টা করছিল। এক পর্যায়ে একজন এসে তার পেছনে একটি লাথিও দেয় এবং বাধ্য করে তার সাথে অশ্লীল ভাবে নাচতে। এর পর কি হয়েছিল আমি জানি না। আমি ভিডিওটা আর দেখতে পারিনি...।
শুধু মনে হয়েছিল বিয়েবাড়িতে এবাবে লাঞ্ছিত হয়ে নাচগান করাটা আর যাই হোক তাদের পেশা হতে পারে না।
আবার এই প্রতিবন্ধী মানুষগুলোকে আবার কিছু বিকৃত রুচির মানুষ তাদের যৌন লালসা মেটাতে কাজে লাগায়। কি ভয়াবহ! ভাবুন তো একবার! প্রতিবন্ধী আসলে কারা?
প্রকৃতির খেয়ালে কিছু মানু ষ অসম্পূর্ণতা নিয়ে জন্মায়। কিন্তু এই মানুষগুলো হয়ত অন্য দিক থেকে অনেক বেশী সক্ষম। কিন্তু তা আমরা কখনোই খুঁজে বের করার চেষ্টা করি না। আর সেই হতভাগ্যকেও সুযোগ দিই না ভিন্নভাবে সক্ষম হয়ে ওঠার।
রাস্তায় একজন অন্ধ বা খোঁড়া লোক হেঁটে গেলে আপনার মনে কি একটুও মায়া হয় না? হয়। আমাদের সবার মনেই হয় । কারণ সে প্রতিবন্ধী। হিজড়াদেরও লিঙ্গীয় প্রতিবন্ধী বলে ভাবতে শিখুন। কেউ ইচ্ছে করে প্রতিবন্ধী হয় না। ভাবুন তো, আপনার খুব কাছের কেউই যদি এমনটা হতো, তবে কি আপনি পারতেন তার দিকে এমন নোংরাভাবে তাকাতে?এই হতভাগ্য মানুষগুলো এমনিতেই সমাজে পশুর মত আচরণ পায়। অন্তত আপনি আমি সেই নিপীড়কদের তালিকা থেকে সচেতনভাবে দূরে থাকি।
আমার এক সহপাঠী ক্যাম্পাসে একটা কারণে খুবই জনপ্রিয়। কারণ সে হিজড়ার অভিনয় খুব ভালো পারে। কিন্তু আজ বাদে কাল তার সন্তান যদি এরূপ প্রতিবন্ধীত্বের শিকার হয় আর তার সন্তানের অস্বাভাবিকতার অভিনয় যদি অন্য কেই খুব ভালভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে, সে কি পারবে তাকে বাহবা দিতে!
আমরা যেমন করে উপজাতি শব্দটা না বলে ভিন্ন জাতিসত্ত্বা বা আদিবাসী শব্দটা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছি, তেমনি আসুন হিজড়া না বলে লিঙ্গীয় প্রতিবন্ধী বলার অভ্যাস করি। আপনার আমার একটু সচেতনতা, একটু ভাল আচরণ, একটু সহানুভূতি যদি একটা মানুষের মুখে এক মুহূর্তের হাসি ফোটায়, অবর্ণনীয় অমানুষিক লাঞ্ছনা থে্কে একটুখানি মুক্তির স্পর্শ দেয় তবে এর চেয়ে ভালো কাজ আর কি হতে পারে?
আসুন কথায় না বলে আমরা ওদের পাশে দাঁড়াই। হতে পারে ওরা লিঙ্গীয় প্রতিবন্ধী। কিন্তু সবার উর্ধ্বে আমাদেরই মত মানুষ...।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৩২
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×