বুবুনের গল্প_ বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া
বুবুন আর আমার গল্পটা শুরু হয় ২৬ শে মে, ২০১৫ সকালবেলা। আমি অফিস যাবার জন্যে নিচে নামছিলাম। হঠাত শুনি একটা বিড়ালছানার চিৎকার। নিচে নেমেই দেখি কিছু নাই। মিউ মিউ করে ডাকছি, খুঁজে পাই না। হঠাত দেখি, আমার পায়ের পাতার উপর হাচোড় পাচোড় করে কিছু একটা ওঠার ট্রাই করছে। ওমা! এতো একটা ছোট্ট বিড়ালের বাচ্চা। বয়েস সপ্তাহখানেক হবে বড়জোর। আশপাশে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে মা বিড়ালকে খুজলাম। নেই। দারোয়ানকে বলে এলাম মা বিড়াল দেখলে আমাকে জানাতে। মা টা কে আর পাওয়া গেলো না। আর পোংটাটা থেকে গেলো আমার কাছে। তখনো খেতে শেখেনি। দুধে আংগুল ডুবিয়ে মুখে দিলে তবে খেতে পারে। বাটিতে খেতে দিলে ধপ করে দুধের উপরই পড়ে যায়। দিন যায়, আমি অফিস থেকে টানা ১০ দিনের ছুটি নিয়ে পোংটা বাচ্চার সেবাযত্নে লেগে থাকি। হিসু করে করে আমার বিছানার তোষক নষ্ট করে অস্থির অবস্থা। ১০ দিন পর যখন অফিসে যাওয়া শুরু করলাম। সারাদিন বেচারী আমার অপেক্ষায় বসে থাকতো একা একা। অফিস থেকে ফিরে বাসার লক খোলার সময়েই দেখতাম, ভিতরে চার পায়ের অস্থির পায়চারি আর মিয়াও মিয়াও!! দিনশেষে বাসায় আমার জন্যে এই তুলোর বলটা অপেক্ষা করছে ভেবেই এই দৌড়ে বাসায় চলে আসতে ইচ্ছে হতো।
এভাবে গড়িয়ে যায় চার বছর। একদিন আমার অস্ট্রেলিয়ার ভিসা হয়ে যায়। এতো জলদি হবে ভাবিনি। তবু ভিসা হাতে পেয়েই দুইটা কাজ করলাম, চাকরিতে ইস্তফা আর বুবুনেরও আমার সাথে যাওয়ার আয়োজন। বুবুনকে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাবার ব্যাপারে যতোজনের সাথেই কথা বললাম, ইতিবাচক তেমন কিছু পেলাম না। বেশ কয়েকজন বললেন ভেট ডাঃ সিয়ামাকের কথা। একমাত্র অপশন। সিয়ামাকের কাছে গেলাম। উনি বললেন, উনি আগেও অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়েছেন। কোন সমস্যা নাই। সব কাজ উনিই করবেন। কীসের পাল্লায় পড়েছি তখনও ধারণাই হয়নি। উনি মাইক্রোচিপ ইনস্টল করে দিলেন বুবুনের শরীরে আর সেই সাথে বুবুনের প্রথম র্যাবিস টাইটার টেস্টের জন্যে সেরাম পাঠালেন ইউকের Biobest Lab এ। কিছুদিন পর ল্যাব থেকে ইমেইল এলো। বুবুনের মাইক্রোচিপ নাম্বার ভুল লিখেছেন সিয়ামাক। আবার ফর্মটা পূরণ করে পাঠাতে হবে। সিয়ামাকের কাছে গেলাম। উনি ৮ হাজার টাকা দাবী করলেন। আমরা বললাম, ভুল তো আপনার। আমরা কেন টাকা দিবো। আর এটা তো জাস্ট একটা কাগজ। এর জন্যে এতো টাকা কেন? উনি বললেন টাকা না দিলে কাগজ সাইন করে পাঠাবেন না। এরকম ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে বাধ্য হলাম উনাকে টাকা দিতে। তবু কাজটা হোক...। কিন্তু উনি যে কতো বড় খারাপ তার প্রমাণ মিললো আরো কিছুদিন পর। রেজাল্ট পজিটিভ এলো। উনার ব্ল্যাকমেইল আমার পছন্দ না হওয়ায় আমি এবার নিজেই একটু পড়াশোনা শুরু করলাম। গুগল করতে করতে নানা ইনফো পেলাম। তারপর সরাসরি চলে গেলাম অস্ট্রেলিয়ান এগ্রিকালচার ওয়েবসাইটে। সেখানে সরাসরি ইমেইল করে তথ্য চাইলাম। ফিরতি ইমেইলে যা এলো সেটার জন্যে আমি প্রস্তুত ছিলাম না। সিয়ামাক যেই ল্যাবে সেরাম পাঠিয়েছেন, সেটা অস্ট্রেলিয়া কর্তৃক এপ্রুভড না। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের কেবল ৫ টা OIE এপ্রুভড ল্যাব থেকেই প্রথম র্যাবিস টাইটার টেস্ট অনুমোদন করে। ক্রস চেক করলাম অস্ট্রেলিয়া বেজড পেট ট্রাভেল এজেন্সি Jetfastpetexpress এর সাথে। তারাও একই কথা বলল। ইমেইল করলা খোদ biobest কে। তারাও জানালো যে তারা OIE এপ্রুভড না। সুতরাং এই টেস্ট রেজাল্ট কোন কাজেই লাগবে না। সিয়ামাককে ফোন দেয়ার পর উনি স্বীকার করলেন, উনি মিথ্যা বলেছিলেন এবং উনি এর আগে অস্ট্রেলিয়ায় কোন কুকুর বা বিড়াল পাঠান নি। এরপরে যা যা করা লাগবে, সব আমাদের নিজেদেরকে করতে হবে। উনি পরের স্টেপগুলো জানেন না। বাহ!!!
এই অবস্থায় যোগাযোগ করি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ভেট সাইফুল ইসলাম ভাইয়ের সাথে। উনি জানালেন, উনি সেরাম ড্র করে পাঠাতে পারবেন এবং অস্ট্রেলিয়ার বাকী প্রসেসিং আমাকে করতে হবে। সেই সাথে উনি আমাকে ভয়ংকর এক তথ্য দিলেন যে, আমার বিড়ালের মাইক্রোচিপ সিয়ামাক ইন্টারন্যাশনালি রেজিস্টার করেন নি। সুতরাং এই চিপে আমার কোন তথ্য নাই। আর বিড়াল হারিয়ে গেলে পাওয়া মুশকিল হবে। দ্রুত জানা দরকার কোন কোম্পানির মাইক্রোচিপ এটা। আবার সিয়ামাককে দিলাম ফোন। উনি আকাশ থেকে পড়লেন। উনি জানেনই না যে উনি কোন কোম্পানির মাইক্রোচিপ ব্যবহার করেন। এবং এটা যে ইন্টারন্যাশনালি রেজিস্টার করা লাগে, এই তথ্যটাও উনি জানেন না। মারহাবা!!!! কতো বড় প্রতারক এই দেশে ব্যবসা ফেদে বসেছেন! কতো বড় বাটপার! এবং তারপর উনি আমার ফোন রিসিভ করা বন্ধ করে দিলেন।
আপনারাই বলেন, এই মুহূর্তে আমার কী করার ছিলো?
চলবে...
#বুবুন