somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুবুনের গল্পঃ বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া

৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বুবুনের গল্প_ বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া

বুবুন আর আমার গল্পটা শুরু হয় ২৬ শে মে, ২০১৫ সকালবেলা। আমি অফিস যাবার জন্যে নিচে নামছিলাম। হঠাত শুনি একটা বিড়ালছানার চিৎকার। নিচে নেমেই দেখি কিছু নাই। মিউ মিউ করে ডাকছি, খুঁজে পাই না। হঠাত দেখি, আমার পায়ের পাতার উপর হাচোড় পাচোড় করে কিছু একটা ওঠার ট্রাই করছে। ওমা! এতো একটা ছোট্ট বিড়ালের বাচ্চা। বয়েস সপ্তাহখানেক হবে বড়জোর। আশপাশে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে মা বিড়ালকে খুজলাম। নেই। দারোয়ানকে বলে এলাম মা বিড়াল দেখলে আমাকে জানাতে। মা টা কে আর পাওয়া গেলো না। আর পোংটাটা থেকে গেলো আমার কাছে। তখনো খেতে শেখেনি। দুধে আংগুল ডুবিয়ে মুখে দিলে তবে খেতে পারে। বাটিতে খেতে দিলে ধপ করে দুধের উপরই পড়ে যায়। দিন যায়, আমি অফিস থেকে টানা ১০ দিনের ছুটি নিয়ে পোংটা বাচ্চার সেবাযত্নে লেগে থাকি। হিসু করে করে আমার বিছানার তোষক নষ্ট করে অস্থির অবস্থা। ১০ দিন পর যখন অফিসে যাওয়া শুরু করলাম। সারাদিন বেচারী আমার অপেক্ষায় বসে থাকতো একা একা। অফিস থেকে ফিরে বাসার লক খোলার সময়েই দেখতাম, ভিতরে চার পায়ের অস্থির পায়চারি আর মিয়াও মিয়াও!! দিনশেষে বাসায় আমার জন্যে এই তুলোর বলটা অপেক্ষা করছে ভেবেই এই দৌড়ে বাসায় চলে আসতে ইচ্ছে হতো।

এভাবে গড়িয়ে যায় চার বছর। একদিন আমার অস্ট্রেলিয়ার ভিসা হয়ে যায়। এতো জলদি হবে ভাবিনি। তবু ভিসা হাতে পেয়েই দুইটা কাজ করলাম, চাকরিতে ইস্তফা আর বুবুনেরও আমার সাথে যাওয়ার আয়োজন। বুবুনকে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাবার ব্যাপারে যতোজনের সাথেই কথা বললাম, ইতিবাচক তেমন কিছু পেলাম না। বেশ কয়েকজন বললেন ভেট ডাঃ সিয়ামাকের কথা। একমাত্র অপশন। সিয়ামাকের কাছে গেলাম। উনি বললেন, উনি আগেও অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়েছেন। কোন সমস্যা নাই। সব কাজ উনিই করবেন। কীসের পাল্লায় পড়েছি তখনও ধারণাই হয়নি। উনি মাইক্রোচিপ ইনস্টল করে দিলেন বুবুনের শরীরে আর সেই সাথে বুবুনের প্রথম র‍্যাবিস টাইটার টেস্টের জন্যে সেরাম পাঠালেন ইউকের Biobest Lab এ। কিছুদিন পর ল্যাব থেকে ইমেইল এলো। বুবুনের মাইক্রোচিপ নাম্বার ভুল লিখেছেন সিয়ামাক। আবার ফর্মটা পূরণ করে পাঠাতে হবে। সিয়ামাকের কাছে গেলাম। উনি ৮ হাজার টাকা দাবী করলেন। আমরা বললাম, ভুল তো আপনার। আমরা কেন টাকা দিবো। আর এটা তো জাস্ট একটা কাগজ। এর জন্যে এতো টাকা কেন? উনি বললেন টাকা না দিলে কাগজ সাইন করে পাঠাবেন না। এরকম ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে বাধ্য হলাম উনাকে টাকা দিতে। তবু কাজটা হোক...। কিন্তু উনি যে কতো বড় খারাপ তার প্রমাণ মিললো আরো কিছুদিন পর। রেজাল্ট পজিটিভ এলো। উনার ব্ল্যাকমেইল আমার পছন্দ না হওয়ায় আমি এবার নিজেই একটু পড়াশোনা শুরু করলাম। গুগল করতে করতে নানা ইনফো পেলাম। তারপর সরাসরি চলে গেলাম অস্ট্রেলিয়ান এগ্রিকালচার ওয়েবসাইটে। সেখানে সরাসরি ইমেইল করে তথ্য চাইলাম। ফিরতি ইমেইলে যা এলো সেটার জন্যে আমি প্রস্তুত ছিলাম না। সিয়ামাক যেই ল্যাবে সেরাম পাঠিয়েছেন, সেটা অস্ট্রেলিয়া কর্তৃক এপ্রুভড না। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের কেবল ৫ টা OIE এপ্রুভড ল্যাব থেকেই প্রথম র‍্যাবিস টাইটার টেস্ট অনুমোদন করে। ক্রস চেক করলাম অস্ট্রেলিয়া বেজড পেট ট্রাভেল এজেন্সি Jetfastpetexpress এর সাথে। তারাও একই কথা বলল। ইমেইল করলা খোদ biobest কে। তারাও জানালো যে তারা OIE এপ্রুভড না। সুতরাং এই টেস্ট রেজাল্ট কোন কাজেই লাগবে না। সিয়ামাককে ফোন দেয়ার পর উনি স্বীকার করলেন, উনি মিথ্যা বলেছিলেন এবং উনি এর আগে অস্ট্রেলিয়ায় কোন কুকুর বা বিড়াল পাঠান নি। এরপরে যা যা করা লাগবে, সব আমাদের নিজেদেরকে করতে হবে। উনি পরের স্টেপগুলো জানেন না। বাহ!!!

এই অবস্থায় যোগাযোগ করি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ভেট সাইফুল ইসলাম ভাইয়ের সাথে। উনি জানালেন, উনি সেরাম ড্র করে পাঠাতে পারবেন এবং অস্ট্রেলিয়ার বাকী প্রসেসিং আমাকে করতে হবে। সেই সাথে উনি আমাকে ভয়ংকর এক তথ্য দিলেন যে, আমার বিড়ালের মাইক্রোচিপ সিয়ামাক ইন্টারন্যাশনালি রেজিস্টার করেন নি। সুতরাং এই চিপে আমার কোন তথ্য নাই। আর বিড়াল হারিয়ে গেলে পাওয়া মুশকিল হবে। দ্রুত জানা দরকার কোন কোম্পানির মাইক্রোচিপ এটা। আবার সিয়ামাককে দিলাম ফোন। উনি আকাশ থেকে পড়লেন। উনি জানেনই না যে উনি কোন কোম্পানির মাইক্রোচিপ ব্যবহার করেন। এবং এটা যে ইন্টারন্যাশনালি রেজিস্টার করা লাগে, এই তথ্যটাও উনি জানেন না। মারহাবা!!!! কতো বড় প্রতারক এই দেশে ব্যবসা ফেদে বসেছেন! কতো বড় বাটপার! এবং তারপর উনি আমার ফোন রিসিভ করা বন্ধ করে দিলেন।

আপনারাই বলেন, এই মুহূর্তে আমার কী করার ছিলো?
চলবে...

#বুবুন
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×