somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১১ ঘণ্টার হরতাল। সেই সাথে আমাদের প্রাপ্তি !

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বি এন পি- জামাত এর ১১ ঘণ্টার হরতাল শেষ হয়ে গেল। তবে উত্তাপ কিংবা জ্বালাও পোড়াও ছাড়াই এবারের হরতাল টি মোটা মুটি শান্তি পূর্ণ বলা চলে। বিগত দিন গুলোর হরতালে পুলিশের অ্যাকশন ছিল চোখে পড়ার মত। তবে এবারের হরতালে পুলিশ সেই মার মুখি অবস্থান থেকে বোধ হয় একটু সরে এসেছে। মূলত জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং শেয়ার বাজারের ধসের কারণে ১১ ঘণ্টা হরতাল পালন করলো বি এন পি- জামাত জোট সহ সমমনা আরও কটা রাজনৈতিক দল। কিন্তু রাজ পথে কেবল বি এন পি কেই দেখা গেল। বি এন পির শীর্ষ স্থানীয় অনেক নেতাকে এবার ও দেখা গেল অনেক টা গা বাঁচিয়ে চলেছেন। অনেক স্থায়ী কমিটির সদস্য কে দেখা যায়নি রাজ পথে। এবারের হরতালের কর্মসূচী ঘোষণায় বোধ হয় বি এন পির একটু শুভ বুদ্ধির উদয় ঘটেছিল। কেননা আজ ছিল বৃহস্পতি বার। সঙ্গত কারণে ঢাকা শহর থেকে প্রায় ১০ ভাগ মানুষ ছোটে তাদের দেশের বাড়িতে। আর প্রায় সকল কেই দেখা যায় অফিস শেষে দেশের বাড়িতে ফেরার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আমার মনে হয় এই কথা মাথায় রেখে বি এন পি হরতাল ২৪ ঘণ্টার পরিবর্তে প্রথমে ১২ ঘণ্টার ঘোষণা দেয়। কিন্তু পরে আর ১ ঘণ্টা কমিয়ে সকাল ৬ টা হতে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত করা হয়। যদি সত্যি এমন টি হয় যে জনগণের কথা ভেবে হরতাল ১ ঘণ্টা কমিয়ে আনা হয়েছে তবে সেটি সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য একটি নিয়ামক হিসাবে কাজ করতে পারে।


এবার আসা যাক হরতালে কে লাভবান হলেন? জামাত, বি এন পি না ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ? এইখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন যে হরতালে আম জনতার লাভবান হবার কোন সুযোগ কোন দিনও ছিলনা। বি এন পি আসলে ভেবেছিলেন এবারের হরতালে কিছু একটা হয়তো করা যাবে। কিন্তু কিছুই হলনা এবার ও। বরং বিগত দিন গুলির হরতালে বি এন পি যেই ভাবে শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে বিশেষ করে পুলিশি নির্যাতন উপেক্ষা করে যেই ভাবে রাজ পথে সোচ্চার ছিলেন এবার সেই বি এন পি কে দেখে মনে হল তারা বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। মনে হল কোন মতে দায় সারা ভাবে তারা তাদের কর্মসূচী পালন করলেন। সেই তেজ কিংবা বিদ্রোহ কোনটি ই দেখা গেলনা আজকের হরতালে। এই খানে একটি কথা স্পষ্ট ভাবে বলা চলে দুই দিন আগে কাকরাইলে জামাত শিবিরের যেই অ্যাকশন দেখা গিয়েছিল সেটি না হলে এবারের হরতাল বোধ হয় আর একটু উত্তাপ ছড়াতে পারতো। কেননা জামাত শিবির আজ ভয়ে মাঠে নামেনি। টি ভি নিউজ এর কোন চ্যানেলে দেখা গেলনা রাজ পথে তাদের সরব উপস্থিতি। দুই একটি বিক্ষিপ্ত মিসিল দেখা গেলেও তাতে লোক সংখ্যা ছিল খুব সামান্য। কাজেই আজ কের হরতালে জামাতের সমর্থন থাকলেও জামাত হরতালে ফ্লপ করলো। তবে শেষ পর্যন্ত বি এন পি ঢিলে ঢালা ভাবে তাদের কর্মসূচী পালন করার চেষ্টা করে গেছে।


জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি আসলে এই মুহূর্তে কতটা জরুরী ছিল সেটি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা চলছে বেশ। কেউ কেউ বলছে এই মুহূর্তে তেলের দাম বৃদ্ধির কোন যুক্তি ছিলনা। কেননা কিছুদিন আগেও একবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিন চার মাসের ব্যবধানে আবারো এই মূল্য বৃদ্ধি এটি স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ মানুষ ভাল ভাবে মেনে নিতে পারেন নি। ইতি মধ্যেই পরিবহন সেক্টরে ভাড়া নিয়ে আবারো সেই নৈরাজ্য শুরু হয়ে গেল। অর্থাৎ সরকার লিটার প্রতি দাম বৃদ্ধি করলো ৫ টাকা। কিন্তু পরিবহন সেক্টর গুলো জনগণের পকেট কেটে নিচ্ছে তার চার গুন। জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আজকের দৈনিক যুগান্তরে একটি রিপোর্ট করা হয়। যার শিরোনাম ছিল-
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির হিসাবে শুভঙ্করের ফাকি! আসলে ফাকি হোক আর এই সেক্টরে সরকারের ভর্তুকি প্রদানের খাত কমানোর উদ্দেশ্য হোক যেটিই হোক না কেন এই মুহূর্তে এই মূল্য বৃদ্ধি আমাদের সাধারণের জন্য মরার পরে খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা পরিবহন সেক্টরে এর আগের নৈরাজ্য কিন্তু যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সঠিক ভাবে হান্ডেলিং করতে পারেনি। কাজেই এবার ও দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন রুটে পরিবহন ভাড়া ইচ্ছা মত বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তবে আশা করি শেষ পর্যন্ত ভাড়া নৈরাজ্যর হাত থেকে আমরা রক্ষা পাবো।

বর্তমান সরকারে অনেক ব্যর্থতার মধ্যে সীমাহীন ব্যর্থতা হচ্ছে দেশের পুঁজি বাজারের নিয়ন্ত্রণ হীনতা। কাকতালীয় ভাবে এটি যেন চাউর হয়ে গেছে যে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এলে দেশের শেয়ার বাজার ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে পথে বসেছিল হাজার দশেক মানুষ। তবে এবারের ভয়াবহতা ব্যাপক। প্রায় ৪০ লাখ বিনিয়োগকারী আজ পথে বসে গেছে। দিনের পর দিন হতাশার অথৈ সাগরে ডুবে যাচ্ছে কয়েক লক্ষ পরিবার। নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করতে এসে সব হারিয়ে আজ তারা সর্বস্বান্ত। মতিঝিল শেয়ার পাড়ায় আজ দেখা যায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মাথায় কাফনের কাপড় নিয়ে মিছিল করে। কেউ বলে আমাকে মেরে ফেলুন। কেউ বলেন আগামী নির্বাচনে জবাব পাবেন। কেউ করে ঝাড়ু মিছিল। দেশের অর্থ মন্ত্রী- অর্থ সচিব- বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এই ৩ ব্যক্তি আজ ৪০ লাখ মানুষের কাছে এক মূর্তিমান আতংকের নাম। অসহায় আজ পুঁজি বাজার। দেশের সকল নিউজ পেপার, অন লাইন ভিত্তিক নিউজ সার্ভিস, টি ভি চ্যানেল সব জায়গাতে প্রথম কভারেজ পায় শেয়ার বাজার। কাজেই দেশের পুঁজি বাজার নিয়ে সরকার এর ব্যর্থতা সীমাহীন। এক শেয়ার বাজার সরকারের বহু সাফল্য ম্লান করে দিয়েছে।

মূলত এই দুটি এজেন্ডা নিয়ে আজকের হরতাল টি হলেও এই হরতালে সরকারের টনক তো নড়েই নি। বরং সরকার আজ বেশি আত্ম বিশ্বাসী হয়ে গেল এই ভেবে যে বি এন পি জামাত হরতাল করে কোন লাভ করতে পারবেনা। আসলেই তাই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আর কোনদিন হরতাল বোধ হয় মানুষ কে খাওয়ানো যাবেনা। আগামীতে যেই সরকার ই ক্ষমতায় আসুক না কেন হরতাল নামের এই শব্দ টি রাজনীতির অভিধান থেকে উঠে যাবে। এখন কথা হচ্ছে যদি হরতাল নাই থাকে তবে বিরোধী দল প্রতিবাদ করবে কি ভাবে? প্রতিবাদের ভাষা হরতাল নয়। কেননা উন্নত দেশ কিংবা উন্নয়নশীল দেশে হরতাল নামের এই ব্যাধি টি নেই বললেই চলে। তবে প্রতিবাদের নানা মাধ্যম থাকা সত্ত্বেও সেই সংস্কৃতি আমাদের রাজনীতিতে আজও চালু হয়নি। আশা করি আগামীতে হরতাল এর পরিবর্তে ভিন্ন কিছু রাজনৈতিক শিষ্টাচার সমৃদ্ধ কর্ম কাণ্ড আমরা দেখতে পাবো।

লেখার শুরুতে বলেছিলাম আজকের হরতালে আসলে লাভ টি কার হল? আমার বিশ্লেষণে লাভ টি সরকারের ই হল। কেননা ইতি মধ্যেই আওয়ামীলীগের পার্টি অফিসে সবাই হাসা হাসি করছে এই বলে বি এন পি হরতাল দিয়ে সেটি সফল করতে পারেনি। রাজ পথে ক্ষমতাসীনেরা থেকেও প্রতিহত করার মত কোন সুযোগ তারা পায়নি। অন্য দিকে মির্জা ফকরুলের প্রেস ব্রিফিং দেখে মনে হল তিনি বেশ বিরক্ত। মুখে তৃপ্তির কোন ছাপ নেই। এন টি ভির মতন চ্যানেল যখন সংবাদের শিরোনামে বলে"- দুই একটা বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ছাড়া সারা দেশে ঢিলে ঢালা ভাবে হরতাল পালিত হল- " তখন বুঝি বি এন পির অতৃপ্তি আর বেড়ে যায়। অন্য দিকে আজকের হরতালে জামাতের কোন অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া গেলনা। কাজেই সব লাভ নিয়ে নীল সরকার। আর আমরা সাধারণ জনতার ভোগান্তি ভোগান্তিই রয়ে গেল। বরং অন্যদিনের চাইতে আজ প্রত্যেকের মানি ব্যাগ থেকে ৩ গুন অর্থ বের হয়ে গেছে। এখন দেখা যাক এই হরতালে সরকার জ্বালানি তেলের দাম আবারো কমায় কিনা? অন্য দিকে পুঁজি বাজার আদৌ স্বাভাবিক দিকে ধাবিত হয় কিনা?

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে। হরতালে আদৌ সরকার তার অবস্থান থেকে ফিরে আসবেনা। কাজেই আমরা আম জনতা সেই জাতা কলে পিষে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছি এবং যাব । আমরা কত অসহায় এই দেশে? আমাদের ১৬ কোটি মানুষ কে কিভাবে চার পাঁচটি রাজনৈতিক দল জিম্মি করে রেখেছে?

ভাবছি----------- !
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৯:০৪
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×