বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা সকল বির্তক ও কলংক মুক্ত। মুক্তযুদ্ধের মহান ও সাহসী যোদ্ধাদের অবদান জাতি শ্রদ্ধা ভরে চিরকাল মনে রাখবে এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবে। রাজনীতির গ্যাড়াকলে আমাদের মহান সেনানীদের প্রতিনিয়ত অশ্রদ্ধা ও অবহেলা করছি। সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ ও এদের দোসররা মহান মুক্তিযুদ্ধকে নগ্নভাবে ব্যবহার করে জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত ও কলংকিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত।
১৯৭১ সালে পাকিস্থানের হানাদার বাহিনী ও এদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস ছাড়া এদেশের প্রতিটি নাগরিক (শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধনী, গরিব, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, মা-বোন) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে দ্রুত স্বাধীনতা অর্জনে ভূমিকা রেখেছিল। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি যে শোষন, বৈষম্য ও নির্যাতন স্বাধীনতা অর্জন বাংলাদেশীদের জন্য একমাত্র মুক্তির উপায় ছিল, যা অর্জনে অপরিসীম ক্ষতি ও মূল্যের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে এদেশের প্রতিটি নাগরিকের অংশগ্রহনে দ্রুত অর্জিত হয়। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল চেতনাবাজ যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় যুবক থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন না করে (জনশ্রুতি আছে হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করার) সময়ের বড় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাজ। যারা নিয়ত চেতনার দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে সকল ধরনের প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগে কোটা দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পিছিয়ে পড়া, অনগ্রসর শ্রেণীতে ফেলে দিয়েছে। আপনারা কি মনে করেন শৌর্য-বীর্যে, সাহসিকতা ও অফুরন্ত অদ্যমেভরা আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা পিছিয়ে পড়া, অনগ্রসর শ্রেণীর কেউ!
চাকুরীতে কোটা পদ্ধতি হচ্ছে পিছিয়ে পড়া ও অনগ্রসর জাতি, গোষ্টি বা শ্রেণীকে মূল শ্রোতধারায় ফিরিয়ে আনা বা ক্ষমতায়ন করার জন্য বিশেষ পরিস্থিতি ও সময়ের একটা অন্তর্বতীকালীন ব্যবস্থা। পিছিয়ে পড়া ও অনগ্রসর জাতি বা শ্রেণীর জন্য কোটা পদ্ধতি প্রাথমিকভাবে অসম্মানের বিষয় না হলেও দীর্ঘমেয়াদী তা সম্মানজনক বিষয় নয়। আমরা কি করেছি তাদের জন্য? আমাদের বীর সন্তানদের পুরস্কৃত না করে কোটা দিয়ে অনগ্রসর শ্রেণীতে রেখে অসম্মান, অপমান ও বিদ্রুপ করছি না?
সরকারী সকল ধরনের প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগে বিধিতে ৫৫ ভাগ কোটা থেকে নিতে হয়। এটা কি বৈষম্য নয়?
১। মুক্তিযোদ্ধা কোটা: ৩০ ভাগ। এই কোটায় কারা নিয়োগ পাবে? মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সন্তান পর্যন্ত এটা গ্রহনযোগ্য। কোন যুক্তিতে বা ভাবে তাদের নাতি-নাতনিরা এ কোটার জন্য যোগ্য? কোনভাবেই তাদের নাতি-নাতনির জন্য এ কোটায় নিয়োগ পাওয়া উচিত নয়। নাতি-নাতনির জন্য এ কোটা চালু থাকলে আগামী ২০-২৫ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৩০ ভাগ রাজাকারের নাতি-নাতনি দ্বারা পূর্ণ হবে। কেননা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সাথে রাজাকারের সন্তানের বৈবাহিক সর্ম্পক তৈরি এখন রমরমা। এছাড়াও ২ লক্ষ সনদধারী মুক্তিযোদ্ধাকে এ সুবিধা দিতে গিয়ে বঞ্চিত করছি ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ বীরাঙ্গনা , তাদের পরিবার ও সন্তানদের। বৈষম্য করছি তাদের সাথে, যে রাখাল বালক পাক হানাদার বাহিনীর গোপন খবর এনে দিয়েছিল, যে মা-বোন ক্ষুর্ধাত মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে খাইয়েছিল, যে যুবক চাষার বেশে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। মহান মুক্তিযোদ্ধের সময় এদেশের কোন মানুষ তাদের উপর অর্পিত দ্বায়িত্ব পালনে পিছপা হয়নি। সুতরাং, তাদের প্রতি এ বৈষমমূলক আচরন কেন? বরং রাজাকার, আলবদর ও আলশামস, তাদের সন্তান, নাতি-নাতনি এবং এদের সাথে বৈবাহিক সর্ম্পক স্থাপনকারীদের এদেশের রাজনীতি ও সরকারী চাকুরী থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হোক।
২। জেলা কোটা: ১০ ভাগ। রাজনৈতিক সুবিধা দেওয়া ছাড়া এটার আদৌ কোন প্রয়োজন আছে কি?
৩। নারী কোটা: ১০ ভাগ। সম-অধিকারের সাথে এই কোটা আদৌ সামজস্য বা সম্মানজনক কিনা তা বলতে পারবে নারী অধিকার বিষয়ে যারা কাজ করছেন।
৪। উপজাতি কোটা: ৫ ভাগ। উপজাতিদের মধ্যে চাকমারা প্রায় ১০০% শিক্ষিত ও চাকরী করার হার ও তাদের বেশি। বর্তমানে এ কোটা ভোগ করার জন্য তারা আদৌ উপযুক্ত কিনা তা পূনর্মূল্যায়ন করা উচিত। বরং এ কোটা চাকমা ছাড়া অন্যান্য উপজাতি ও পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি জনগোষ্টির মাঝে বন্টন করা উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৩ ভোর ৫:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



