আমাদের দেশের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা অবহেলিত ও বৈষম্যের শিকার হলেও জাতিকে সুশিক্ষা দানে তাদের নি:স্বার্থ ও নিরলস প্রচেষ্ঠাই প্রথম ও প্রধান। কথায় কথায় শিক্ষকদের জাতির বিবেক বললেও প্রতি পদে পদে তাদেরকে অমর্যাদা ও অবহেলা করি। এদেশের শিক্ষকরা এখনো ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী গ্রেডে অর্ন্তভুক্ত, বেতন কম, সকাল ৯.০০ পূর্বে স্কুলে যেতে হয়, ছুটি বিকাল ৫.০০, সপ্তাহে ৬ দিন, সরকারী ছুটি ২ দিন হলেও তাদের জন্য ১ দিন, এর জন্য অতিরিক্ত কোন ভাতা দাবী করেন নি বা সরকার স্ব-প্রনোদিত হয়ে প্রদান ও করেনি। সময়ে সময়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সরকার ঘোষিত যে কোন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে হয়।
শিক্ষক ছাড়া অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারির শিক্ষাগত যোগ্যতা যেখানে ৮ম শ্রেণী পাস, সেখানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে একজন পুরুষ প্রার্থীকে নূন্যতম অনার্স পাশ করতে হয়, আর নারীর জন্য এস. এস. সি. পাস থাকলেও সংশোধনী হল পরবর্তী নিয়োগ থেকে নূন্যতম যোগ্যতা এইচ. এস. সি. পাস থাকতে হবে। তারপরও তারা ৪র্থ শ্রেণী। অজ্ঞাত কারনে দীর্ঘদিন যাবত সহকারী শিক্ষক হতে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি বন্ধ রেখে প্রধান শিক্ষক পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা ছুটি নিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের কোন সুযোগ যেমন নেই, তেমনি উচ্চ শিক্ষিতদের জন্য কোন অতিরিক্ত ভাতাও নেই, যা অন্যান্য সরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে বৈষম্যমূলক। এভাবে রাষ্ট্রের অন্যান্য সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সাথে শিক্ষকদের মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধায় বৈষম্যমূলক আচরনের মাধ্যমে অসম্মান ও বঞ্চিত করছি। যেকারনে সরকারি প্রাথমিক স্কুলের দরিদ্র শিক্ষকরা কিছু ন্যায্য ও যৌতিক দাবী আদায়ের লক্ষ্যে সরকারের কাছে আবেদন করেছিল এবং সরকার তাদের ন্যায্য ও যৌতিক দাবীগুলো ১৪/০৯/২০১৩ তারিখের মধ্যে পূরণের আশ্বাসও দিয়েছিল। কিন্তু দাবীগুলো পূরণে ১৪/০৯/২০১৩ তারিখের মধ্যে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় শিক্ষক সমাজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গত ১৫/০৯/২০১৩ তারিখ থেকে কর্ম-বিরতি পালন করছে।
ইতিপূর্বে সরকার পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর ৩য় শ্রেণীকে ২য় শ্রেণী ও ২য় শ্রেণীকে ১ম শ্রেণীতে উন্নীত করেছে, সেখানে শিক্ষকদের পদমর্যাদা কেন বৃদ্ধি করা যাবে না ? পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন পদের মর্যাদা বৃদ্ধি যদি ন্যায় ও যুক্তি সংগত হয়, তাহলে শিক্ষকদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি কেন ন্যায় ও যুক্তি সংগত হবে না। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৩৮০০০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ও সহকারি শিক্ষকরা তাদের দাবী নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সামনে নির্বাচন, প্রতিটি স্কুলে নূন্যতম ৪ জন শিক্ষক ধরে (৩৮০০০* ৪) = ১৫২০০০ জন শিক্ষকের বিরুপ মনোভাব ভোটের রাজনীতিতে কি কোন প্রভাব ফেলবে না !!!
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির দাবীগুলো কি খুব অযৌক্তিক বা অন্যায্য!!!
তাদের প্রধান দাবীগুলো হল
১। প্রধান শিক্ষকের পদ-মর্যাদা ৩য় থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীতকরণ।
২। সহকারি শিক্ষকদের বেতন-ভাতার আপগ্রেড করা।
৩। সহকারি শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি (যা আগে চালু ছিল, কিন্তু অজ্ঞাত কারনে এখন বন্ধ আছে) প্রদান।
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারনে বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
শিক্ষক সমিতি কর্তৃক ঘোষিত কর্মবিরতি কর্মসূচি
১৫-১৭/৯/২০১৩: ৩ ঘন্টা কর্মবিরতি
১৯-২২/৯/২০১৩: ৪ ঘন্টা কর্মবিরতি
২৩-৩০/৯/২০১৩: পূর্ণ-দিবস কর্মবিরতি
১-লা অক্টোবর থেকে মহা-অনশন।
আজ ২৮/৯/২০১৩ তারিখ পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির দাবীর ব্যাপারে সরকারি কোন পদক্ষেপ জানা যায়নি। সামনে স্কুলের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক ও প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা। এভাবে শিক্ষকদেরকে আন্দোলনমুখী করলে ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষতিপূরণ কোন ভাবে সম্ভব হবেনা। প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষকদের ন্যায্য দাবী পূরণে সরকার ব্যবস্থা নিবে ও শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



