গত ২৮/০৯/২০১৩ তারিখে ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ ভেজাল, নকল, মেয়াদোর্ত্তীন ও অনুমতি ছাড়া আমদানীকৃত নিম্নমানের ঔষধ ও খাদ্য সম্পূরক বিক্রির বিরুদ্ধে ঢাকার মিটফোর্ডের ৯ টি ঔষধের মার্কেটে অভিযান পরচালনা করে। উক্ত অভিযানে ভেজাল, নকল, মেয়াদোর্ত্তীন ও অনুমতি ছাড়া আমদানীকৃত নিম্নমানের ঔষধ ও খাদ্য সম্পূরক বিক্রির অভিযোগে ২০ জন কে ১ বছর করে কারাদন্ড, ৮৩ জনকে প্রায় সোয়া ১ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও গত বছরের অক্টোবর থেকে এবছরের আগস্ট পর্যন্ত ঔষধ প্রশাসন ১১৯ টি এই রকম অভিযান পরিচালনা করে ১২৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে এবং প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করে।
এসব আভিযানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি (বিসিডিএস) বিপরীতমূখী অবস্থান নিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া অসাধু ঔষধ ব্যবসায়ীদের মুক্তিসহ জব্দ করা ভেজাল, নকল, মেয়াদোর্ত্তীন ও অনুমতি ছাড়া আমদানীকৃত নিম্নমানের ঔষধ ও খাদ্য সম্পূরকের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবী করে গত বৃহস্পতিবার (০৩/১০/১৩) সারা দেশ ব্যাপী পূর্ণ দিবস হরতাল পালন করেছে। আসলে, ভেজাল, নকল, মেয়াদোর্ত্তীন ও অনুমতি ছাড়া আমদানীকৃত নিম্নমানের ঔষধ ও খাদ্য সম্পূরকের বিক্রির অবাধ লাইসেন্সের দাবী করে আমাদেরকে হত্যা করার অধিকার আদায়ের জন্যই কি বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি (বিসিডিএস) এই হরতাল ডেকেছে!!! তা না হলে কেন তারা এইসব অসাধু ঔষধ ব্যবসায়ীদের রক্ষার জন্য ও জীবন বিপন্নকারী ভেজাল, নকল, মেয়াদোর্ত্তীন ও অনুমতি ছাড়া আমদানীকৃত নিম্নমানের ঔষধ ও খাদ্য সম্পূরকের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে হরতাল ডাকবে??? ব্যবসায়ীরা কেন বার বার ঔষধ বিক্রির শর্ত ভঙ্গ করবে? কয়টি ফার্মেসী মালিক ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দেয়? একজন ফার্মাসিস্ট থাকার শর্তেই একটি ফার্মেসী খোলার অনুমতি দেওয়া হয় এবং খাদ্য সামগ্রী, প্রসাধনী ও অন্যান সামগ্রী বিক্রি সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। এই শর্তগুলো অধিকাংশ ফার্মেসী মালিক লঙঘন করে।
বিসিডিএস-এর হাস্যকর কথা হল, ব্যবসায়ীরা জানত না যে, সার্জিক্যাল আইটেম ঔষধ হিসেবে গন্য হয়। ঔষধের সর্বোচ্চ গুনগত মানের নিশ্চয়তা দিয়েই ব্যবসায়ীরা ফার্মেসী খোলার অনুমতি চায়। তাহলে কেন জীবন বিপন্নকারী ভেজাল ঔষধ বিক্রি করবে বা ফার্মেসীতে রাখবে? সরকার কখনও কি তাদেরকে এ ধরনের অনুমতি/অনুমোদন দিয়েছে? এ জন্য কি তাদের প্রচলিত শাস্তিই শুধু প্রাপ্য? অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে প্রচলিত শাস্তির পাশাপাশি রোগীকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা। অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে লঘু শাস্তির পরিবর্তে কঠোর শাস্তি প্রদান করা উচিত, কেননা ভেজার ঔষধের কারনে অনেক রোগীর মৃত্যু হয়।
বিগত ২০ বছরে বৈধ্য-অবৈধ্য ঔষধ, লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত করা কোম্পানীর কোন গেজেট না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে এসব অবৈধ্য কাজে উত্সাহী করে। কোন গেজেট প্রকাশ করতে না পারা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একটা বড় ব্যর্থতা। সুতরাং গেজেট প্রকাশে তাদের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও হর-হামেশায় হারবাল ঔষধের নামে অননুমোদিত নানা ধরনের ঔষধের বিজ্ঞাপন টিভির জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন চ্যানেলে দেখা যায়। এসব কি ভাবে সম্ভব? এইজন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত নজরদারী ও অভিযান পরিচালনা করে মানসম্মত ঔষধের নিশ্চয়তা প্রদান করা উচিত। অননুমোদিত ঔষধের প্রেসক্রিপশন লেখা বন্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। চোরের হুমকি-ধামকিতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি (বিসিডিএস)-র দায়িত্ব নয় অসাধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করা, বরং স্বল্পমূল্যে মানসম্মত ঔষধের বাজারজাত করা তাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য হরতাল দিয়ে সমিতির সুনাম ও মর্যাদাকে করেছে ম্লান। ফার্মেসী বন্ধ থাকায় কত জন মুমূর্ষ রোগী প্রাণ হারিয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা কি আমরা জানতে পারব? সমিতির উচিত ভেজাল ঔষধ দিয়ে মানুষ হত্যা না করে মুমূর্ষ রোগী প্রাণ কিভাবে রক্ষা পায় সেরকম ঔষধ বিক্রি করা। অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে সমিতি থেকে বহিস্কার করে আপনাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে পরিস্কার করা। নতুবা এদেশের মানুষ আপনাদেরকে খুনী হিসেবে ভাবতে দ্বিধা করবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



