somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের বাস্তবতায় নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থার কোন বিকল্প নাই

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক প্রতীক্ষার পর সরকার ও বিরোধীদলের প্রধান নেত্রী মহোদয় ২৬/১০/২০১৩ তারিখে ৪০ মিনিটের এক টেলি-সংলাপে অংশগ্রহণ করেছেন। ৪০ মিনিটের এই টেলি-সংলাপে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাননীয় বিরোধীদলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দলীয় নেত্রবৃন্দসহ গণভবনে আগামী ২৮/১০/২০১৩ তারিখে আলোচনা ও নৈশভোজের আমন্ত্রন জানান। সরকারী সূত্রে জানা যায়, এসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাননীয় বিরোধীদলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেশ ও জাতির স্বার্থে জালাও-পোড়াও রাজনীতি বন্ধ ও হরতাল প্রত্যাহারের আহবান জানান। জাতীয় নির্বাচনে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা বহালে সরকারের আন্তরিকতা না থাকলেও জাতির স্বার্থে বিরোধীদল ২৯/১০/২০১৩ তারিখের সন্ধ্যা ৬.০০ টার পর যেকোন সময় সংলাপে বসতে প্রস্তুত। আরও জানানো হয় যে, কর্মসূচী প্রত্যাহারের যথেষ্ট সময় না থাকায় হরতাল বহাল থাকবে এবং হরতালের পর যেকোন সময় মাননীয় বিরোধীদলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণভবনে যাবেন। এই নিয়ে সরকারের মন্ত্রী, এম.পি, নেতা-নেত্রী ও আইনজীবিরা ব্যাপক শোরগোল তুলেছেন, মাননীয় বিরোধীদলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংলাপের সুযোগ হারিয়েছেন বা সংলাপ না হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।
এই টেলি-সংলাপে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মাননীয় বিরোধীদলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁদের নিজ নিজ প্রস্তাবের কথায় শুধু বলেছেন। সামনা-সামনি তাঁদের মাঝে কি আলোচ্য বিষয় হবে তা বলেননি। আমার দৃষ্টিতে টেলি-সংলাপটি ছিল একটি রাজনৈতিক চাল, কেননা, আওয়ামীলীগ সাংবিধানিক কাঠামো (১৫-তম সংশোধনী) তে থাকতে চায়। আবার কখনো বলে সর্বদলীয় সরকারের কথা যা সাংবিধানিক কাঠামোর বাহিরে যেতে পারে। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধীনে জাতীয় নির্বাচন আওয়ামীলীগ করতে চায় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করতে চান। আপামর জনসাধারণ কি ভাবছে তা নিয়ে তাঁদের কোন মাথা ব্যথা নেই। সহিংসতায় সারা দেশের জনগণ যখন আতংকিত, সংকট যখন জটিল আবর্তে আবর্তিত, জাতীয় সংকট উত্তরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কেন শেষ সময়ে ফোন করবেন? ২৭/১০/২০১৩ তারিখে আলোচনা প্রস্তাবের পরিবর্তে কেন ২৮/১০/২০১৩ তারিখে সন্ধ্যায় নৈশভোজের আয়োজন? তিনি বলতে পারতেন, হরতাল প্রত্যাহার করে আসেন ২৭/১০/২০১৩ তারিখ সকালে আলোচনায় বসি, জাতীয় নির্বাচন কিভাবে এবং কার অধীনে হবে? তা না করে, তিনি হরতালের ৩৬ ঘন্টা পর নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থায় জাতীয় নির্বাচনের সংলাপকে নামকাওয়াস্তে রেখে নৈশভোজকে প্রাধান্য দিলেন। আওয়ামীলীগ নেতারা মাঝে মাঝে বলার চেষ্ঠা করছেন বিরোধীদলের সাথে সংলাপটি অন্যান্য দলের সাথে সংলাপের মত। তাহলে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থায় জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে জনগণের দাবীটি কোথায় স্থান পেল?
তা সত্ত্বেও আমরা জাতীর অবহেলিত ভুক্তভোগী আমজনতা প্রতি দিন স্বপ্ন দেখি, মাননীয় দুই নেত্রী মহোদয় নিজেদের পছন্দ-অপছন্দকে প্রাধান্য না দিয়ে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে চলমান সংকট উত্তরনে ফলপ্রস্যু আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলের নেত্রীর মাঝে সমঝোতা না হলে , দুই দলের যত বড় নেতা আলোচনায় অংশগ্রহণ করুন না কেন, তা ফলপ্রস্যু হবে না। কারো ইচ্ছা-অনিচ্ছায় নয়, জাতীয় সংকট মোচনে তাঁদের মাঝে সমঝোতা হতেই হবে। জাতি গভীরভাবে তা বিশ্বাস করে। একদিনে এই আলোচনা ফলপ্রস্যু হবে না, তার জন্য চাই গোপন বা প্রকাশ্য হোমওর্য়াক, মত-পার্থক্য কমানোর কার্যকর পদক্ষেপ এবং চুড়ান্তভাবে নির্বাচনী সমঝোতা। সমঝোতা যত দেরী হবে দেশ ও জাতীর ক্ষয়-ক্ষতি তত বৃদ্ধি পাবে। প্রাণহানির ঘটনা যাবে বেড়ে। একটা প্রাণহানি একটা পরিবারের জন্য সারা জীবনের কান্না ও কষ্টের কারণ। আমরা প্রত্যাশা করি আর কোন প্রাণহানির ঘটনা ছাড়াই সমঝোতা হয়ে যাক।
কযেকদিন পূর্বে সিইসি বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আইস-ব্রেকিং শুরু হয়েছে। সুতরাং, চাপ এত বৃদ্ধি পাচ্ছে যে তাদের জেদ ভেঙ্গে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে চাপ ও তাপ এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে তাদের মিথ্যা অহমিকা ও জেদ ভেঙ্গে ও গলে এক নতুন সমঝোতা ও সমাধানে নিয়ে যাবে।
গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা শুধু বিরোধীদল দ্বারা সমালোচিত হয়েছে, জনগণের দ্বারা নয়। জনগণ মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে যে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা ছাড়া এদেশের জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হবে না। এই বাস্তবতায় রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য শুধু ব্যর্থতা নয়, লজ্জা ও কলংকময়। সুতরাং, এদেশের জাতীয় নির্বাচনে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটা কার্যকর ব্যবস্থা এবং জনগণের জন্যেও স্বস্তিকর।
নির্বাচনকালীন সরকারের রুপরেখা অনেকে অনেকভাবে দিচ্ছে। কেউ দিচ্ছে সংবিধানের মধ্যে থেকে, কেউবা দিচ্ছে বাহিরে থেকে। যেভাবেই হউক বা যে নামেই হউক নির্বাচনকালীন সরকার হতে হবে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও নিরপেক্ষ। বর্তমানে দেশে দুটি দল আছে, এক. সরকারি দল, দুই. বিরোধীদল। সুতরাং, সংবিধানের মধ্য থেকেই যদি করতে হয়, তাহলে নির্বাচনকালীন সরকারের (প্রধান উপদেষ্টা সহ ১১ জন সদস্য) রুপরেখাটি নিম্নরুপ হতে পারে :
বর্তমান সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের থেকে নিম্নলিখিতভাবে বাছাই করা যেতে পারে-
সরকারীদল থেকে উপদেষ্টা সংখ্যা হবে = ০৫
বিরোধীদল থেকে উপদেষ্টা সংখ্যা হবে = ০৫
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে টেকনোক্রাট কোঠায় সর্বজন শ্রদ্ধেয়, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ একজন ব্যক্তি নির্বাচিত করা।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×