somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণতন্ত্রের মানসকন্যা, ভোটার ছাড়া ক্ষমতায়

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগামী ৫-ই জানুয়ারী, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আমাদের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের যুগোপযোগী কর্মতৎপরতায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সাংসদ সদস্য নির্বাচন করে বিশ্বে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় একটি বিরল নজির স্থাপন করেছে। আমরা এক রেকর্ড ভঙ্গকারী জাতী। কয়েকদিন পূর্বে আমরা ভেঙ্গেছি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা তৈরী করে। তেমনি নির্বাচনের পূর্বেই ১৫৪ (৫১.৩৩%) জন সাংসদ সদস্য বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে জনগণের ভোটাধিকার প্রদানের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে, রুদ্ধ করেছে গণতন্ত্রের বিকশিত হওয়ার পথ। বাকীগুলোও হয়ত প্রার্থীসংকট বা ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫-ই জানুয়ারীর পূর্বেই পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে দেওয়া হবে। এরপরও কোথাও ভোট প্রদানের প্রয়োজন হলে তা নব-গণতন্ত্রের সূক্ষ বা স্থূল ত্রুটি হিসেবে দেখা হবে। গণতন্ত্রের মানসকন্যা কর্তৃক উদ্ভাবিত এই ধরনের নব-গণতন্ত্র বর্তমানে প্রতিবন্ধী গণতন্ত্র নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এ ধরনের রোল-মডেল নির্বাচন নিকট ভবিষতে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে রপ্তানী করে দেশের সুনাম অর্থাৎ গণতন্ত্রের মানসকন্যার সুনাম শুধু বিশ্বে নয়, গ্যালাক্সি থেকে গ্যালাক্সিতে ছড়িয়ে পড়বে।পৃথিবীতে সীমাবদ্ধ না থেকে, বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডে স্থিতিশীল, ভারসাম্য ও শান্তি স্থাপনে এই ধরনের প্রতিবন্ধী গণতন্ত্র কার্যকর ভূমিকা রাখবে। ফলে বিশ্বশান্তি নয়, বিশ্বব্রাক্ষ্মশান্তি পুরস্কার প্রাপ্তি সহ ইতিহাসে তাঁর নাম শিখা চিরন্তনের মত অনন্তকাল জ্বল-জ্বল করবে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের উদ্ভাবনী গণতন্ত্র পরিবেশন ও পরিচালনার জন্য এ দেশ থেকে বহু লোকের কর্মসংস্থান সেসব দেশে হবে এবং অধিক হারে বৈদশিক মূদ্রা অর্জিত হবে। শান্তি, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে এ ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন অবাধ, সুস্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জনগণের অংশগহণ ছাড়া আয়োজন করা বিশ্বের কোন গণতান্ত্রিক দেশেই আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। গণতন্ত্রের মানসকন্যা মেয়াদোর্ত্তীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যতার্থই বলেছেন, প্রার্থীতা প্রত্যাহার করায় অনেকগুলো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবেনা। যারা আমাদের সঙ্গে সর্বদলীয় সরকারে আছে, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা এ পরিবেশ সৃষ্টি করেছি। যে কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না। বিএনপি এলেও আমরা একই প্রক্রিয়া অনসরণ করতাম। জনগণের অধিকারই আমার কাছে সবচেয়ে বড়।

গণতন্ত্রের মূলমন্ত্রই হলো, সকল ভোটাধিকার প্রাপ্ত জনগণের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহনে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠনে বহুদলীয় নির্বাচন করা। বাক-স্বাধীনতা সহ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং অন্যের মত ও বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। গণতন্ত্রের মানসকন্যার গণতন্ত্রের বৈশিষ্ঠ্য হলো জনগণকে বাদ দিয়ে পছন্দমত প্রার্থীকে নির্বাচিত করার জন্য একটা ভীতিকর পরিবেশ তৈরী করা যাতে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকে। বর্তমানে আওয়ামী লীগে এক ঝাঁক বিতর্কিত মুখকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে যাদের মূল যোগ্যতা হলো অর্থ, পেশীশক্তি ও আত্মীয়তা। এই প্রক্রিয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এতই আত্মতৃপ্ত যে আহ্লাদে বলেই ফেলেছেন, খালি মাঠে খেলোয়ার গোলকিপার নেই, গোল তো হবেই।

গণতন্ত্রের মূল কথাই হলো

By the people
Of the people
For the people- এর পরিবর্তে আলী কর্তৃক প্রবর্তিত মূল কথা হলো

Buy the people
Off the people
Far the people-গ্রহণ করাই হলো বর্তমান গণতন্ত্র।

Democracy-র এই মডিফাইড রুপটি কি নামে অবহিত হতে পারে বলে আপনারা মনে করেন!!!

মত-প্রকাশের স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা হরণকারী একদলীয় দূর্নীতি পরায়ন ও ন্যায় বিচার পরিপন্থি এই তন্ত্রের কিছু সুবিধা আছে-
১। নির্বাচনে সরকারী অর্থের সাশ্রয় হবে
২। প্রার্থীদের শারীরিক, আর্থিক ও মানসিক ক্ষতি হবে না
৩। জনগণকে কেউ বিরক্ত করবে না
৪। শব্দ দূষণ ও পরিবেশ দূষণ মুক্ত থাকবে
৫। ভোট দেওয়ার দুশ্চিন্তা থেকে জনগণ মুক্ত থাকবে।
৬। ভোটারের সময়, শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় হবে

সব ভালো ভালো বিষয় বা তন্ত্রেরই কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে বা আছে। আলী কর্তৃক প্রবর্তিত এই প্রতিবন্ধী গণতন্ত্রের ও কিছু কিছু ত্রুটি আছে-

১। জনগণ ৫ বছর পরপর ভোটের সিল মারার সময় বলে, দেখ শালা আমার ক্ষমতা কত্ত বড়-এটা আর বলতে পারবে না। কেননা এই তন্ত্রের মূল কথায় হল- আমরা যেহেতু এক ভাই, ভোটারের কোন দরকার নাই।
২। নির্বাচনের যেহেতু কোন দরকার নাই, সেহেতু নির্বাচন কমিশনের ও কোন দরকার নাই। ফলে নির্বাচন কমিশনে কর্মরতরা চাকুরিচ্যুত হবে।
৩। নির্বাচনকে ঘিরে যে ব্যাপক বানিজ্যিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়, তা আর হবে না, ফলে প্রেস, প্রিন্টিক এন্ড ডেকোরেটর ব্যবসা দেউলিয়া হয়ে যাবে।
৪। নির্বাচনে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, তা আর হবে না, ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে।
৫। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটবে। নির্বাচনের সময় চোর-ডাকাত, বাটপাররা নির্বাচনী কাজে এত ব্যস্ত থাকে যে তাদের পেশাগত কর্মটি করতে পারত না। নির্বাচন না থাকলে তাদের পেশাগত কর্মের কোন ক্ষতি হবে না।
৬। যেহেতু জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, সেহেতু জনগণ ও দেশের উন্নয়নে তাদের কোন ভূমিকা থাকবে না। জনগণ কোন দাবী ও করতে পারবে না।
৭। যেহেতু আপনি ভোট দেননি, সেহেতু তাদের শান্তি ও মনোরন্জের জন্য মাঝে মাঝে জান ও মাল দিয়ে সেবা করতে হবে।
৮। লাগাম ছাড়া কথা বলার জন্য মাঝে মাঝে লাল ঘড়ে যেতে হবে।

আলী কর্তৃক প্রবর্তিত এই গণতন্ত্রের গুণ-ত্রুটি আপনারাও যোগ করতে পারেন। ৫-ই জানুয়ারীর নির্বাচন হওয়ার পূর্বেই আলীতন্ত্রের ড্রেস রিহার্সেল শুরু হয়েছে এবং জনগণকে শংকিত করছে। গত ২৪/১২/২০১৩ তারিখে
বিএনপি-র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসী’-র জন্য ঢাকা অভিমূখে অভিযাত্রার আহ্বানের পরপরই আলীতন্ত্রে বিশ্বাসীদের রণ-হুংকার

১। বিএনপি-কে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে।(১৪-দল)
২। অসংযত কথা বললে বের হতে দেওয়া হবে না (জাহাঙ্গীর কবির নানক)
৩। বিএনপি খন্ড খন্ড হয়ে ব্রাকেট বন্দী হবে (হাছান মাহমুদ)
৪। এ লড়াই এসপার ওসপারের লড়াই। খালেদাকে আফগানিস্তান বা পাকিস্তানে পাঠানো হবে (হাসানুল হক ইনু)
৫। বিরোধীদলকে একাদশ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হলে শর্ত মেনে নির্বাচনে আসতে হবে (সুরন্জিত সেন গুপ্ত)
৬। দেশকে আফগানিব্তান বানাতে চায় বিএনপি-জামাত (দিপু মনি)
৭। বিরোধীদল নির্বাচনে না এলে যায় আসে না, সংসদ ৫ বছর থাকবে (সজীব ওয়াজেদ জয়)
৮। খালেদার বক্তব্য অবান্তর ও ভিত্তিহীন (আমু)
৯। ক্ষমতায় থাকলে সম্পদশালী হওয়া স্বাভাবিক (আবুল মাল আব্দুল মুহিত)
১০। সম্পদের তথ্য লুকানোর উপায় খুজছে ইসি (প্রথম আলো)

সুতরাং একথা নির্দ্বীধায় বলা যায় কি, জনগণের শান্তি, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের সাথে আলীতন্ত্র সাংঘর্ষিক এবং একসাথে চলতে পারে কি না।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×