সারা দেশ ভেসে গেছে এস এস সি এর ভালো ফলাফলের আনন্দে । পত্রিকায়, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী , আপনার নিজের আনন্দময় বক্তব্যও দেখলাম। খুশি হয়েছি ইতিবাচক নানা রকম পদক্ষেপ নিয়েছেন দেখে। এর ভিতর সৃজনশীল প্রশ্নপত্র ব্যবহারের অংশটি ভালো লেগেছে । মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী , অচিরেই আপনি ও আপনার মন্ত্রনালয় নতুন শিক্ষানীতির পূর্ণ প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন । নতুন শিক্ষানীতিতে নতুন প্রজন্মের অনেক আশা ও দাবীর প্রতিফলন ঘটেছে ঠিকই তবু এর সর্বশেষ রুপটিতে কি আছে জানি না বলেই কিছু অনুরোধ নিয়ে হাজির হয়েছি আপনার কাছে।
মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রসঙ্গে ঃ
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী , আমাদের শিক্ষা নীতির মূলে প্রথমেই রয়েছে "শিক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ" এবং শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো " হিউমেন রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট" বা " মানব সম্পদের উন্নয়ন। আমি এইখানে একটি বিষয়ে মনযোগ আকর্ষণ করতে চাই তা হলো , " মানব সম্পদ উন্নয়ন" তখনই সম্ভব যখন আমরা স্পষ্ট করে জানব বাংলাদেশের কোন খাতে কি ধরনের ( স্কিল বা দক্ষতা এবং কম্পিটেন্স বা ক্ষমতাসম্পন্ন ) মানব/কর্মী প্রয়োজন এবং আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সেই কর্মীর যোগান দিতে কতটা দক্ষ ও সফল। এর উপর নির্ভর করছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আসলে কতটা কার্যকরী।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী , হিউমেন রিসোর্স ডেভেলপমেন্টের সূত্রকে মাথায় রেখে প্রশ্ন হলো , বাংলাদেশে কোন হিউমেন রিসোর্স সার্ভে কি হয়েছে? আমরা কি জানি আমাদের কোন পেশায় , কোন সেক্টরে , কোন লেভেলের মানুষ ( অথবা কি ধরনের স্কিল ও কম্পিটেন্স) দরকার?
আমাদের শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও জনশক্তি বা শ্রম মন্ত্রনালয় কি শ্রম বাজারের ( লেবার মিনিস্ট্রি , লেবার মার্কেট) উপর কোন গবেষণা করে আপনাকে জানায় আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশে কয়টা ডাক্তার, কয়টা ইঞ্জিনিয়ার , কয়টা ব্যবসা প্রশাসক, কয়টা জেলে, কয়টা চাষী , কয়টা ম্যানেজার , কয়টা অপেরাটর , কয়টা প্রোগ্রামার , কয়টা ফ্যাশন ডিজাইনার লাগবে? কিংবা যারা আছেন এখনি, তারা আর কয়জন নতুন কর্মীকে কাজে লাগাবেন? শ্রম বাজারের প্রয়োজন (নিড) এবং আত্মস্থ (কনজিউম) করার ক্ষমতার সাথে সম্পূর্ণ সম্পর্কহীন এই শিক্ষা ব্যবস্থা তাহলে কোন ক্ষেত্রে কয়টা এবং কোন মানের "মানব" উন্নত করে ডেলিভারি দিলে আমরা ধরে নেব " মানব সম্পদের উন্নয়ন" হয়েছে?
আপনার শিক্ষা পলিসিতে উল্লেখিত, " quality improvements, policy measures and specific actions needed to reform the system. The main objective of reforms being proposed is to address systemic governance issues aimed at raising the quality and cost-effectiveness of service delivery, and improve equity of access in secondary education." - এই অংশটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, কোন বিদ্যালয় এর শিক্ষা কোন শিক্ষার্থীর পরবর্তী শিক্ষায় , জীবনে বা পেশায় কতটুকু কাজে লাগছে , এই কোয়ালিটি ইন্ডিকেটরটি কি দয়া করে যোগ করবেন ? বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেলায় জব প্লেসমেন্ট দিয়ে ঐ ভার্সিটির র্যাংকিং হতে পারে ।
কয়টা স্টুডেন্ট ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় নতুন আবিষ্কার , নতুন কোম্পানি, নতুন ব্যবসা , নতুন সার্ভিস চালু করতে পেরেছে , এইটিও রাংকিং এ যোগ করুন এবং এই র্যাংকিং ভিত্তিতে ঠিক করুন কোন বিদ্যালয় কত টাকা মঞ্জুরী পাবে।
বাংলাদেশের সকলেই লিখতে আর পড়তে শিখলেই তো দেশটা উন্নত হয়ে যাবে, তা তো না, বরং এই সব কয়টা লোক কোন না কোন ভাবে শ্রম বাজার , উৎপাদন ও উপার্জনের সাথে জড়িত হলে - তবেই না তাকে আমরা সম্পদ হিসেবে পাব! নইলে সে অশিক্ষিত মানব বোঝা বা ঝামেলা (লায়াবিলিটি) থেকে শিক্ষিত বোঝায় পরিণত হবে। তাই, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী , আপনাকে অনুরোধ, আপনার অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো যেন আখেরে মাটি না হয় - সেজন্য একটা হিউমেন রিসোর্স নিড এর উপর বেজ লাইন সার্ভে করুন, একটা হিউমেন রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এর ন্যাশনাল প্ল্যান করুন।
পরবর্তী জীবনে কাজে লাগে এমন বিষয় শিক্ষায় অন্তর্ভূক্তকরণ প্রসঙ্গে ঃ
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী , আমি ম্যাট্রিকে কিংবা ইন্টারে স্ট্যাটিস্টিক্স এর অংক শিখিনি , কেউ বলেনি এইটা দরকারী। এখন কর্মজীবনে এসে দেখি গণিতের কোন সূত্রই আমার দরকার হয় না কিন্তু সারাক্ষণ যেইটা লাগে তা হলো বায়োস্ট্যাটিস্টিক্স । বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমি স্কুল জীবনে কখনোই রিসার্চ মেথোডোলজি পড়িনি কিন্তু এখন এইটাই দিন রাত করতে হয়। আমি কখনোই সাইকোলজি, বিহেভিয়ার সাইন্স কিংবা বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পড়িনি কিন্তু এখন দেখছি একজন সফল বিজ্ঞানীকে হিউমেন সাইকোলজি ও বিহেভিয়ার জানতে হয় । একজন সফল ডাক্তার কিংবা রিসার্চারকেও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট করতে হয় । আমার আবিস্কার করা ইনোভেশনকে কি ভাবে নতুন বিজনেসে পরিণত করবো তা জানতে প্রপোজাল রাইটিং, পেটেন্ট ল , বিজনেস রুলস , কর্পোরেট কালচার, মার্কেট ও সেলস জানতে হয়! যেমন- আমি যদি আজকে গবেষণা করে একটা নতুন আম কিংবা নতুন কোন কম্পিউটার হার্ডোয়ার আবিষ্কার করি, তো সেই আবিষ্কার নির্ভর একটি ব্যবসা গড়ে তুলতে হলে এই সমস্ত বিষয় আমাকে করতে নাহলেও বুঝতে হবে।
সাম্প্রতিক ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি বিজয়-অভ্র বিতর্কে স্পষ্ট হয়েছে পেটেন্ট ল, কপিরাইট ল কিংবা বিজনেস রুলস জানাটা একজন ডেভেলপারের জন্য কেন দরকারী ।
আপনি কি বলতে পারেন, অত্যন্ত মেধাবী ও আগ্রহী ছাত্র হয়েও আমি কেন এইসব বিষয়ে জ্ঞান আহোরণের কোন সুযোগ বাংলাদেশে পেলাম না? আমার শিক্ষা কি তাহলে কার্যকরী হয়েছে?
প্রথম থেকে অস্টম শ্রেনী পর্যন্ত একটি নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণ প্রসঙ্গে ঃ
অতি সম্প্রতি , অস্টম শ্রেনীতে জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষা চালু হয়েছে । অনুরোধ রইলো ৯০০ নম্বরের সাথে আরেকটি বিষয় যোগ করুন। বিহেভিয়ার সাইন্স । এর মধ্যে - সোশাল , কালচারাল ও ইকোনমিক বিহেভিয়ার তিনটি ভাগে বাচ্চাদের শিক্ষা দিন কোন ক্ষেত্রে তার বিহেভিয়ার কি হবে । কালচারাল বিহেভিয়ারে তাকে শেখান বাংলাদেশের মানুষের কালচার কি, কেন, কোনটা হওয়া উচিত। তাকে শেখান কি ভাবে বিজ্ঞানীরা চিন্তা করে , শেখে , পরীক্ষা করে দেখে আর তারপর সিদ্ধান্ত নেয়।
তাকে শেখান প্রবলেম সল্ভিং মেথড কি জিনিস, কি ভাবে ব্যবহার করতে হয় । তাকে শেখান তথ্য বা ডাটা সংগ্রহ ও এনালাইসিসের গুরুত্ব ও পদ্ধতি। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে, প্রতিটা ধাপে - তাকে শেখান কি ভাবে যুক্তি , তথ্য এবং টেকনোলজি ( কম্পিউটারসহ অন্যান্য টেকনোলজি) ব্যবহার করে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে হয় ।
বাংলাদেশের ছেলে মেয়েরা যেন একটি যুক্তি নির্ভর , তথ্য নির্ভর এবং আবিষ্কার (ইনোভেশন) ও টেকনোলজি নির্ভর সংস্কৃতি স্কুল থেকে শিক্ষা পায় ।
তাকে বুঝতে দিন , ফিলোসফি, ধর্ম আর বিজ্ঞানের মধ্যে লড়াই না করেও শেখা সম্ভব।
সোশাল বিহেভিয়ার এর ভেতর জেন্ডার সেন্সিটিভিটি , ইকুইটি কাকে বলে , কিভাবে , কোন আচরণের মাধ্যমে অর্জিত হয় - তা শেখান। বাপ, মা, ভাই বোন, প্রেমিক প্রেমিকা ( হ্যাঁ, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী , প্রেমকে অস্বীকার করে টিন এজারদের বিকাশ সম্পূর্ণ হবে না ) , বন্ধুদের সাথে কি ভাবে কথা বলা উচিত, কেমন আচরণ করা উচিত , আমাদের ঐতিহ্য -সংস্কৃতি কোন কোন ভালো আচরণ শিক্ষা দেয় বা দেওয়া উচিত তাই শেখান । ইভকে টিজ নয়, ভালোবাসতে শেখান , শ্রদ্ধা করতে শেখান। তাকে শেখান বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তার সোশাল দায় দায়িত্ব কোন গুলা । বাংলাদেশ নামক একটি সমাজকে টিকে থাকতে হলে কি কি করতে হবে , এই সমাজের উন্নয়নে একজন ছাত্রের ভূমিকা কি , আচরণ কি এগুলো তাকে করে দেখাতে বলুন। সামাজিক সম্পর্ক কি ভাবে উন্নত করতে হয় তার তরিকা তাকে হাতে কলমে শিখান। মাতৃত্ব, পিতৃত্ব, ভাতৃত্ব ইত্যাদি সামাজিক সম্পর্ক গুলোর রুপ নিয়ে তাকে ভাবতে , প্রশ্ন করতে বাধ্য করুন। বিয়ে ও সংসারের মতন সম্পর্ককে কি ভাবে ম্যানেজ করতে হয় , প্রেমের মত সম্পর্ককে কি ভাবে ম্যানেজ করতে হয় তাকে শেখান । এই সম্পর্কগুলোর আসল গুরুত্ব ও ফলাফল বুঝলে সে হয়ত অল্প বয়সেই প্রেম ও বিয়ের জন্য ক্ষেপে উঠবে না কিংবা বিফলে আত্মহত্যা করবে না। একটা ছেলে ও মেয়ের ভিতরে স্বাভাবিক বন্ধুত্ব কি ভাবে বজায় রাখতে হয় তাই শেখান । তাকে তার শরীর , মন, সেক্স , হেলথ ইত্যাদির সুস্থ , নিরাপদ ও স্বাভাবিক রুপ কেমন তা জানতে দিন, শিখতে দিন, বয়স অনুযায়ী চর্চা করতে দিন। তাকে বুঝতে দিন যে কাউকে ভালো লাগাটা ঠিক আছে কিন্তু সেই ভালো লাগাকে প্রেমে কিংবা সেক্সে পরিণত না করেও কিভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ ,সুন্দর, সুস্থ ও সুখী থাকা যায়।
ইকোনমিক বিহেভিয়ার মনে হয় সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । এইটা খুব কঠিন কিছু হওয়ার দরকার নাই।
খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান , শিক্ষা , চিকিৎসা ও বিনোদনের মত মৌল চাহিদা গুলো মিটানোর জন্য শিক্ষার্থী ও তার পরিবার কি কি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড করে; সেগুলো কি ভাবে করা উচিত , সে গুলোর প্ল্যানিং , বাজেটিং , এক্সেকিউটিং , ইভ্যালুয়েটিং ও মনিটরিং কি ভাবে করতে হয়; একটা পরিবার কি ভাবে পরিচালিত হয় ও হওয়া উচিত; বড় হয়ে কি ধরনের পেশায় নিয়োজিত হব এবং সেই পেশার সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান ( সুবিধা , অসুবিধা, বেতন বা আয়, টাইমিং, শ্রম বাজারে অবস্থান , বিশ্ব বাজারে অবস্থান ইত্যাদি) কিংবা বাবা -মা যেই পেশায় আছেন সেই পেশার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ; যে কোন পেশায় ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট করতে হলে কি কি বিষয়ে জ্ঞান থাকা দরকার; একটি সেলফ এম্পলয়েড ব্যক্তি কি ভাবে নিজেকে সফল ভাবে পরিচালিত করে , ফাইন্যানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট ( ব্যাংক কি, সমবায় কি, শেয়ার কি - এগুলো কিভাবে ব্যবহার করতে হয় ইত্যাদি) ।
তাকে বুঝান কিভাবে ব্যক্তির টাকা ট্যাক্স হিসেবে সরকারী টাকায় পরিণত হয় এবং তার খরচে নাগরিকের মতামত কি ভাবে প্রতিফলিত হওয়া উচিত তাও শেখান । পলিসি কি, কিভাবে তৈরী হয়, কি পদ্ধতিতে সোশাল পলিসি রাষ্ট্রীয় পলিসিতে ভূমিকা রাখে তাও শেখান। বাংলাদেশ কেন একটি ডেমোক্রেসি , এর মানে কি হওয়ার কথা ছিলো - তা তাকে জানতে দিন। অনেক বিস্তারিত হয়ে যাচ্ছে , এনিয়ে আপনি চাইলে আরো অনেক আলোচনা হতে পারে পরে।
কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষার বিষয়সমূহ মানব সম্পদ উন্নয়নের সাথে একীভূতকরণ প্রসঙ্গে ঃ
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী , এখনো বাংলাদেশের হিউমেন রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি ও ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান নিয়ে তেমন কিছু জানি না । কিন্তু এইটা বুঝি যে বাংলাদেশে যেই সব সাব্জেক্টের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি হওয়ার কথা ছিলো , সে সবের গুরুত্ব তেমন নাই বললেই চলে ।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী , আগের কালে মানুষের অস্ত্র ছিলো তীর ধনুক, বারুদ, বোমা কিংবা যুদ্ধ জাহাজ । আজকের দুনিয়ায় পারমাণবিক প্রযুক্তির জুজুর ভয় দেখালেও আসল অস্ত্র হলো অর্থনীতি । আর অর্থনীতির মূল অস্ত্র হলো জ্ঞান। আমাদের শিক্ষার লোগোতে আছে " শিক্ষা , শক্তি , প্রগতি" । কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ গুলো নতুন জ্ঞান তথা শক্তি আহোরণের পিছনে কতটুকু মেধা , শ্রম, টাকা ব্যবহার করে? আমাদের কয়টা শিক্ষার্থীর গবেষণা পত্র প্রগতির কাজে লাগে? কোন হিসাব কি আছে?
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী , বাংলাদেশ এখনো একটি কৃষিনির্ভর , পানিসম্পদ নির্ভর , মানব সম্পদ নির্ভর - এবং জলবায়ু নির্ভর দেশ । আমাদের সবচেয়ে বড় টেকনোলজি বা ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্র হওয়ার কথা ছিলো এগ্রো ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড টেকনোলজি, হাইড্রো ইঞ্জিনিয়ারিং, হিউমেন রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজি, এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ল্যান্ড এন্ড ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট টেকনলজি ইত্যাদি।
কিন্তু বাংলাদেশের সবচেয়ে মেধাবী মাথা গুলা পড়ে কম্পিউটার, নয়ত ডাক্তারি , নয়ত ব্যবসা । তাও আবার কৃষিপণ্য নির্ভর ব্যবসা না , অন্য কিছু। এখনো যেই সেক্টরগুলা উৎপাদক নয় , সহায়ক ইন্ডাস্ট্রি হিসেবেই রয়ে গেছে। এই মেধা গুলাকে কম্পিউটারের মাধ্যমে দেশের কৃষি , চাষী , পানি, জেলে , ধান -চাল , মাছ , তাত, কাপড়, পাট এর সাথে কবে আমরা জড়াবো ?
আমাদের কল কারখানা , আমাদের ইন্ডাস্ট্রি , আমাদের বড় বড় বিনিয়োগ ও গবেষণা হওয়ার কথা ছিলো কৃষিপণ্য নির্ভর , পানি সম্পদ, মানব সম্পদ নির্ভর ইত্যাদি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোও হওয়ার কথা ছিলো এই সব সম্পদের গবেষণায় ভরপুর। অথচ এখনো এই দেশে চাল , ডাল, চিনি , সবজি , দুধ পচে নষ্ট হয় । উৎপাদক চাষী ও খামারিরা হওয়ার কথা ছিলো মোস্ট প্রিভিলিজড । কিন্তু গার্মেন্টস মালিক পাজেরো হাকায় আর আমাদের চাষী - খামারিরা লুঙ্গির খূটে চোখ মুছে , সারের দাবীতে মিছিলে গুলি খায়। আসলে ঘাপলাটা কোথায়?
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী , শিক্ষা নাকি বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ সেক্টর । তো , আমাদের চাষী, জেলে , তাতী আর খামারি যারা ১৫ কোটি মানুষের খাবারের, কাপড়ের যোগান দেয় , তাদের নিয়ে শিক্ষালাভ করাটা আমরা কবে থেকে বাধ্যতামূলক করবো? কবে থেকে আমাদের কম্পিউটার , ইলেক্ট্রনিক্স , মেকানিকাল, সিভিল , ইন্ডাস্ট্রি , ডাক্তার , উকিল, ব্যবসা, প্রশাসন , টেক্সটাইল, ব্যাংক, টেলিকম - বড় বড় বিরাট বিরাট মেধাবী মাথা গুলা ওদের কাছে গিয়ে বলবো , " আমরা আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?"
আমরা যদি আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রকে -- যে সম্পদ আমাদের আছে সেখানে ফোকাস না করে-- সেইটার পিছনে মেধা, টাকা, গবেষণা , বিনিয়োগ , শ্রম , সময় ব্যয় না করে, যে সম্পদ আমাদের নাই সেইটা বিদেশ থেকে আমদানি করে উন্নত দেশ হওয়ার চেষ্টায় ফোকাস করি , তাহলে কি ভাবে পারবো?
জনসংযোগ প্রসঙ্গে ঃ
আপনারা এতমধ্যেই বেশ কিছু ভালো পদক্ষেপ নিয়েছেন যার কথা অনেকেই জানে না । খবরের কাগজে অতকিছু খেয়াল করি না বলেই অনেক সরকারী নির্দেশ ও অধ্যাদেশ আমার চোখে পড়েনি। আমার মত হয়ত অনেকেই এই সব নতুন নতুন ব্যবস্থা গুলোর খবর জানে না । অনুরোধ করবো আপনাদের জনসংযোগ বাড়ানোর ।
এর পাশাপাশি আরো বলতে চাই, হিউমেন রিসোর্স ডেভেলপমেন্টের জন্য চাই হিউমেন রিসোর্স প্ল্যানিং আর সেই জন্য অন্যান্য মন্ত্রনালয় সব কয়টারই সাহায্য লাগবে । প্রতিটা মন্ত্রনালয়ের সাথে এক সাথে বসেই কেবল এই হিসাব করা সম্ভব যে ১৫ কোটি মানুষের দেশে , ৫৬ হাজার বর্গমাইলে আমাদের কোন পেশার কয়টা মানুষকে ট্রেনিং দেওয়া প্রয়োজন ।
১। দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রনিক ওয়েবসাইট, ইমেইল এড্রেস সংক্রান্ত ঃ
দেশের সকল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইন্টারনেট সংযোগের , ইমেইল এড্রেস গ্রহনের নির্দেশ । উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট তৈরীর নির্দেশ । এর মধ্যে কলেজ গুলোর ইমেইল এড্রেস থাকার কথা ২০০৯ সাল থেকেই। সবার হয়েছে কিনা এমন কোন রিপোর্ট কোথায় পাব? এটা কিন্তু ওয়েবে পেলাম না।
আশা করছি দেশের সব কয়টা সরকারী ও বেসরকারী মেডিকেল, ডেন্টাল, নার্সিং এবং প্যারামেডিকেল বিদ্যালয়ের জন্য এই ওয়েবসাইট তৈরীর বাধ্যতামূলক একটি নির্দেশ আপনি দেবেন। কি কি তথ্য সন্নিবেশিত থাকতে হবে, সেই ব্যাপারেও একটা রুপরেখা নির্ধারণ প্রয়োজন। ভর্তি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনসহ ফি প্রদানের কাজগুলো অনলাইনেই করতে পারা উচিত। সেইসাথে , বাংলাদেশের সমস্ত ইউনিভার্সিটি লেভেল বা এইচ এস সি পরবর্তী শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটি মাত্র রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের আন্ডারে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করছি।
স্টুডেন্টদের একটি ন্যাশনাল ডাটা বেজ করা প্রসঙ্গে ঃ
এই অনুরোধটিও হিউমেন রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের সাথে জড়িত । বাংলাদেশের প্রতিটা নাগরিকের জন্য একটি করে ন্যাশনাল আই ডি নাম্বার থাকলে সেই নম্বরের বিপরীতেই এই ডাটা বেজটা হতে পারতো ।
তা না হলেও , একজন ছাত্র যেন একটি মাত্র স্টুডেন্ট নাম্বারের বিপরীতে ন্যাশনাল ডাটা বেজে অন্তর্ভুক্ত থাকে । এইখানে তার পূর্ণ পরিচয়, ছবি, সম্পূর্ণ ঠিকানা , পড়ালেখার বিষয়াদি , কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত , কোন বছর ভর্তি হয়েছে এবং কবে পাশ করে বেরুবে , ফলাফলের মান , কোথায় কত ফি দিয়েছে , কত স্কলারশীপ পেয়েছে , স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্টের হিসাব, একই সাথে একাধিক কোর্স (ডাবল অনার্স , ডাবল মাস্টার্স ইত্যাদি, ভিন্ন কোন বৈকালিক শিক্ষা বা ট্রেনিং) করছে কিনা ইত্যাদি তথ্য সংরক্ষিত হবে। কোথাও কোন ডিফল্ট হলে তাও উল্লেখ থাকবে। এতে করে বাংলাদেশের হিউমেন রিসোর্স এর অবস্থা নিয়েও একটা হিসাব পাওয়া যাবে।এই তথ্য গুলো ন্যাশনাল ডাটা বেজে এন্ট্রির কাজটা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই করতে পারে । পরবর্তীতে জুনিয়র ও হাইস্কুলের তথ্যও যুক্ত করা যেতে পারে। একজন ব্যক্তির সম্পূর্ণ শিক্ষাজীবন এতে সন্নিবেশিত থাকবে। এই রকম তথ্য ভান্ডার তৈরী ও মেইন্টেইন করা খরচের ব্যাপার। এজন্য যে কোন উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে কারো সম্পর্কে তথ্য যাচাইয়ের জন্য এই ডাটা বেজ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা এবং একটা মিনিমাম ফি নেওয়া যেতে পারে। অথেন্টিক টেস্টিমনিয়াল বা ট্রান্সক্রিপ্টও এখান থেকে পাওয়া যেতে পারে। এই তথ্য ভান্ডার বা ডাটা বেজ পুলিশের ক্রিমিনাল অফেন্স ডাটা বেজ, অর্থ মন্ত্রনালয়ের ট্যাক্স ডাটাবেজ , ভূমি মন্ত্রনালয়ের ভূমি মালিকানা ডাটাবেজ ও শ্রম বা লেবার মন্ত্রনালয়ের এম্পলয়মেন্ট ডাটা বেজ ইত্যাদি বিভিন্ন ন্যাশনাল ডাটা বেজের সাথে ট্রায়াজ হিসেবে কাজ করতে পারবে।
কার্যকরী শিক্ষার অংশ হিসেবে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া প্রসঙ্গে ঃ
শুনলাম, এখন নাকি গণিতের ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়। আরও খুশি হবো যদি বাংলা ও ইংরেজিরও ব্যবহারিক পরীক্ষা নেন । সেখানে শিক্ষার্থীরা আই ই এল টি এস কিংবা টোফেলের মতন কথ্য (স্পিকিং) ও শ্রবণ দক্ষতার (লিসেনিং) এর পরীক্ষা দিতে পারে। লিখিত পরীক্ষায় রিডিং ও রাইটিং এর দক্ষতা হয়ত এখনি যাচাই হয়ে যায়। তারপরেও ভাইভাতে তাকে কোন কিছু পড়তে দিয়ে তার উপর ১০ -১৫ মিনিটের প্রশ্ন হতে পারে । এক্ষেত্রে তার পড়ে বুঝার দক্ষতা, প্রশ্ন শুনে বুঝার দক্ষতা ও গুছিয়ে উত্তর দেওয়ার দক্ষতা যাচাই হবে ।
সারা জীবন বাংলা ও ইংরেজি পড়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থীর নতুন করে স্পোকেন ইংলিশ শেখাটা দুঃখজনক! একই রকম দুঃখজনক একজন শিক্ষার্থী যদি না জানে কি ভাবে একটা সি ভি লিখতে হয়, কি ভাবে চাকুরীর দরখাস্ত লিখতে হয়, কি ভাবে বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা কোম্পানিতে কাজের জন্য মোটিভেশন লেটার লিখতে হয় ও ইন্টারভিউ ফেস করতে হয়। রিসার্চ মেথোডলজি এবং পোস্টার , পেপার , ওরাল প্রেজেন্টেশন কি ভাবে দিতে হয় , এইটাও হাইস্কুলেই জেনে যাওয়া উচিত । কেবল স্নাতক শ্রেনীতে এইসব বেসিক জিনিস শেখানোটা দুঃখজনক। প্রসঙ্গত বলে রাখি, বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি স্কুল ও কলেজ লেভেল থেকেই বাংলাদেশ থেকে যে সব দেশে মানুষ বেশি বেশি যায়, সেই সব দেশের ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করুন। ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, আরবী সহ অন্যান্য ভাষা শেখার সরকারী ব্যবস্থা থাকলে বাংলাদেশের জন্য আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা , মধ্যপ্রাচ্য সহ ইউ এন, হু, ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংস্থার চাকুরীর বাজার ধরা সোজা হত।
আধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কাজ করা প্রসঙ্গে ঃ
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী , আপনার কাছে অনুরোধ রইলো , শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষক, ছাত্র ছাত্রী , শিক্ষা ম্যানেজার ইত্যাদির কাছ থেকে নিয়মিত মতামত (সার্ভে) করে সেই মতের প্রতিফলন শিক্ষা ব্যবস্থায় ঘটানোর ব্যবস্থা নেবেন। এই ব্যবস্থাটিকে বাধ্যতামূলক করুন শিক্ষা ও শিক্ষা দান পদ্ধতির মান উন্নয়নে । একজন শিক্ষক কেমন পড়ান, সেইটার মূল্যায়নের ভার দিন শিক্ষার্থীর উপর।
কাছ থেকে দেখেছি , একবার ভুল ফল প্রকাশ হয়ে গেলে কিংবা এডমিট কার্ড এ ভুল করলে সেইটাকে ঠিক করার আইন কানুনের প্রয়োগ করা খুবই কঠিন। যেমন ক্লাসের ফার্স্ট গার্লের ভূগোলে কম নম্বর। কিংবা আরো ভয়ংকর- শিক্ষকদের ভুলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে না পারা। এই জিনিস গুলো ঠিক করার ব্যবস্থা নিন। ১০ বছর কষ্ট করার পরে অন্য কারো ভুলে শিক্ষার্থীদের জীবন নষ্ট হওয়ার শাস্তি কঠিন করুন এবং শিক্ষার্থীরা যাতে অন্যের দোষের মাশুল না দেয়, সেই ব্যবস্থা করুন।
পরীক্ষা পদ্ধতি ও খাতা দেখার পদ্ধতিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত জরুরী । ছাত্র ছাত্রী ভুল করলে তাদের জীবন নষ্ট হয় । শিক্ষক যখন ভুল করেন তখন আমরা এর প্রতিকার করবো কি ভাবে? একজন কর্মচারী যখন ভুল করেন , আমরা এর প্রতিকার করবো কি ভাবে? এই সব ক্ষেত্রেও শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরাই মাশুল দেয় যেন যত দোষ নন্দ ঘোষ।
কাগজ পত্রের পাশাপাশি , ছাত্রছাত্রীদের ডাটা (পরিচয়,নম্বর ইত্যাদি) এন্ট্রির কাজটা মোবাইল ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে অটোমেটিক করুন। যাতে দুটো পদ্ধতির একটা অন্তত সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ছাত্রছাত্রীরা কোন ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে নিজেরাই তো সরাসরি ম্যাট্রিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে পারে , যেমন সাস্টের ভর্তি পরীক্ষায় আমরা দেখেছি। কোন কারণে পরীক্ষা না দিলে , আবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে অটোমেটিক ডি-রেজিস্ট্রেশনও করতে পারে। এক্ষেত্রে ফি-টা জমা থাকবে এবং পরবর্তী দুই বছর নতুন কোন টাকা না দিয়েই উক্ত ছাত্র ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিতে পারবে। এর পরে নতুন করে ফি দিতে হবে।
শিক্ষকেরা তাদের খাতা দেখা হয়ে গেলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশেষ ভাবে সংরক্ষিত পোর্টালের মাধ্যমে নম্বর এন্ট্রি দিতে পারেন। এতে করে কাগজের ডাটা আর ইলেক্ট্রনিক ডাটার ভিতর অসঙ্গতি পরীক্ষা করা ছাড়া শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারীর আর কোন কাজ থাকে না ।
শুধু দ্রুত রেজাল্টই না , এতে করে বিভিন্ন রকম ট্রেন্ড এনালাইসিসও সহজ হয়ে যায়। আর বিপুল পরিমাণ ডাটা এন্ট্রির কাজটাও ভাগ ভাগ হয়ে যায়। কে কোন ডাটা এন্ট্রিতে ভুল করেছেন , তারও একটা ডিজিটাল রেকর্ড থাকে। কে সময় মত খাতা দেখছেন এবং নম্বর এন্ট্রি করছেন , তারও রেকর্ড থাকবে।
ম্যাট্রিক ও ইন্টারের খাতা যারা দেখেন , তাদের মধ্যে রিভিউয়ার এগ্রিমেন্ট কত % , এইটাও প্রকাশ করা উচিত। যেহেতু এই রেজাল্টের উপরেই নির্ভর করছে মানুষের পুরোটা জীবন।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী , আপনি দয়া করে হতদ্যোম হবেন না । যেই খসড়া শিক্ষানীতি আমরা পড়ে দেখেছি , সেইটাকে যদি সত্যি বাস্তবায়ন করতে পারেন, তাহলে সত্যি সত্যি বাংলাদেশের শিক্ষায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
-----------------------------------
তথ্য সূত্রঃ বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট
বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার অনলাইন ভার্শন
বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইট
গুগুল ইমেজ সার্চ
লেখকের ব্যক্তিগত গবেষণা পত্র
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১০ ভোর ৬:৩৩