ধিরে ধিরে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়লেন! চোখের সামনে নিজের সবচেয়ে আপন ব্যক্তিটির মৃত্যু আমি সইতে পারলাম না! গগন বিদারী একটা চিতকার করলাম! জানি সেই চিৎকার কখনই পৌছাবেনা দেশের প্রধান্মন্ত্রীর কানে,আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কানে!
বূয়েটে ভর্তি হয়েছিলাম! পিতার রুজি খাওয়ার সোভাগ্য আমার কখনো হয়নি-কারণ তিনি অনেক আগেই এমন একটা গগন বিদারী চিৎকার করেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েছিলেন! কি জানি হয়তো তারো এদেশের প্রতি অনেক আক্ষেপ ছিলো! অনেক কস্টে মা আমাকে পড়াশুনা করিয়েছেন! সে ২০০৭ সালের সময় তিনি ৫০০০ টাকা বেতন পেতেন! আমি শহরের কলেজে পড়ি! আমাকে তিনি ২০০০ টাকা দিতেন,আর নিজে সংসার আর ছোটো বোনের জন্য ৩০০০ টাকা রাখতেন! কিন্তু সমস্যা হলো-নিয়তির একটা মারাত্মক বাজে অভ্যাস আছে! এটা যার সাথে খেলা করে তার সাথে আজীবন ই খেলা করে! তবুও বুয়েটে চান্স পেলাম! ভাবলাম এবার হয়তো নিয়তি আমার সাথে একটু বিরতি দিলো! আমার আম্মার তখন চোখ ভরা স্বপ্ন-কখন আমি ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হবো,কখন আমাদের একটু স্বচ্ছলতা আসবে!
কিন্তু নিয়তি তো নিয়তি ই! যেই বিদ্যাপীট টা ভেবেছিলাম রঙধনুর আলো দিয়ে ভরা সেখানে এসে দেখলাম ঘোর অমানিশার ঘনোঘটা! অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হলাম-৪ বছর পর ইঞ্জিনিয়ার হবো! আমাদের আর কোনো অভাব থাকবেনা! যেখানে চাকরী করবো সেখানে আম্মাকে নিয়ে একটা বাসা নিবো! ছোট বোন কে ভালো স্কুলে ভর্তি করাবো- ওর ও তো বুয়েটে চান্স পেতে হবে! না সবি গুড়ে-বালি,যেই টার্ম গুলোতে ৬ মাস করে লাগে সেই টার্ম এখন লাগতেছে ১০ মাস! আমি বুঝে উঠে পারিনা-আমরা তো ফীল করি যে এটা আমাদের প্রতিষ্ঠান,এটার তো সুনাম রক্ষা করতে হবে! কিন্তু যাদের ফীল করার তারাই করলোনা! নিজের স্বার্থ অন্বেষণে তার ভুলে গেলো-দেশের ৪৫০০ হাজার মেধা আজ ধ্বংসের পথে! কারোন তারা তো এই স্টেজ টা পার করে এসেছে! তাদের আজ কোটি কোটি টাকা! তাদের তো আর আমার মত অভাবী সংসার নেই যে ছোট বোনটাকে বুয়েটে ভর্তি করতে হবে! টাকা থাকলে ছেলে-মেয়েদের পৃথিবীর যেকোনো ভার্সিটি তে ভর্তি করানো যায়! আজ তাই তারা নিজেদের স্বার্থ অন্বেষনে ব্যস্ত! বুয়েট গোল্লায় যাক-কিন্তু তাদের স্বার্থ রক্ষা পেলেই হলো! কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের! বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে যেখানে এসেছি সেখান থেকে বের হতে ই পারছিনা!পারছিনা মায়ের জন্য কিছু করতে,আর মা মানেই তো দেশ!
এভাবে ৫ টা বছর কেটে গেলো –কিন্তু আমার থার্ড ইয়ার ও পার হলোনা! এক রাশ হতাশা নিয়ে যখন আমি হাল ছাড়লাম না ঠিক তখনি নিয়তি আমার সাথে সবচেয়ে নিষ্ঠুর খেলা টা খেললো! হঠাত করেই আম্মা স্ট্রোক করলেন! আর দুই দিনের মাথায় তিনি আমার নিজের চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লেন! যে সময় আমার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে মা কে বড় হাস্পাতালে ভর্তি করানোর কথা সেই সময় আমি তার জন্য কিছুই করতে পারলাম না! পৃথিবীর প্রতি এক রাশ অভিমান নিয়ে আমার মা চলে গেলেন,আমার পৃথীবী চলে গেলেন!
আজ আমি নির্বাক! আমার মুখ থেকে একটা কথা কখনই বের হয়না! অনেক চেস্টা করি কথা বলার জন্য,পারিনা! মাঝে মাঝে গোঙানির মত চিৎকার করি! সেই চিৎকার টা অভিশাপ হয়ে যায়! কিন্তু আমি বুঝি যাদের কোটি কোটি টাকা তাদের গায়ে কোনোদিন অভিশাপ লাগেনা!