somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোদ ড্রয়ারের গল্প

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাহিদ অফিস থেকে বাসায় ঢোকা মাত্র অন্তি বললো,মশারী এনেছো?
জাহিদ চুপচাপ জুতা খুলতে লাগলো।
-মশারী এনেছো?
-জাহিদ জুতার ফিতে মনোযোগের সাথে দেখছে,যেন পৃথিবীর অদ্ভুদ কোন রহস্য জুতার ফিতাটায়।
-আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করছি,মশারী এনেছো?
জাহিদ অন্তির দিকে তাকিয়ে শান্ত ভাবে বললো,অন্তি,আমি মশারী আনবো,আজ আনি নাই কাল আনবো।
-কালও তুমি এ কথাই বলেছিলে।
-তো?
-তো মানে,আমার আজই মশারী লাগবে।
জাহিদ বিছনা থেকে উঠে আলমারী খুললো,জাহিদের দামী শার্ট দুটো,একটা সাদা স্ট্যাইপের আরাকটা ব্লু, জাহিদ ব্লু শার্ট টা নিয়ে কয়েল জ্বালালো।
অন্তি কাদছে,জাহিদ অন্তির সামনে বসে শার্টের কাপড়ে কয়েল ঢোকাচ্ছে,পুরোটা শেষ হওয়ার পর শার্টটা অন্তির দিকে ছুড়ে দিয়ে শান্ত ভাবে বললো,এই নাও তোমার মশারী,এবার শান্তি হও,মশারী মশারী করে লাইফটা কয়লা বানিয়ে ফেললো,বাল।
অন্তি কাদছে,জাহিদ শুয়ে আছে,ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না,অন্তি চিন্তা করছে,বাসায় ঢোকা মাত্র মশারী মশারী না করলেও হতো।সেও আরেক,মানুষটা সারাদিন কাজ করে ফিরেছে,আর সে শুরু করলো মশারী মশারী।
রাত একটু গভীর হলে অন্তি উঠে পড়লো,অন্তি আর জাহিদের একটা ড্রয়ার আছে,নাম কাঠ গোলাপ,তাদের কেউ যখন রাগ করে আরাকজন ড্রয়ারটাতে কিছু একটা রাখে যাতে রাগ ভাঙ্গে।
অন্তি টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে চিঠি লিখছে,
এই যে বাবু,মশার এত রাগ করতে হয়? নাহয় মশারীই চেয়েছিলাম,তাই বলে শার্ট ফুটো করতে হবে?আমাদের কি এত টাকা আছে যে দামী শার্ট আরাকটা ধুম করে কিনে ফেলবো? হুহ? তাও ভালো যে স্টাইপটা জ্বালাও নি,ওটা আমি তোমার জন্মদিনে দিয়ছিলাম,ওটা জ্বালালে আমি তোমাকেই ফুটো করে দিতাম,আর তুমি তো চাও তোমার বঊটাকে মশা কামড়াক,ওকে কামড়াক,আর কিছু বলবো না।
করবে না করবে না ভেবেও,চিঠির উপর ঠোট বসিয়ে লিপষ্টিক লাগিয়ে দিলো।অন্তি নিজের কাজ দেখে নিজেই হেসে ফেললো।
জাহিদ ঘুমায় নি,দেখছে,অন্তি কি যেন লিখছে,সমস্যা নেই,জাহিদ জানে অন্তি চিঠি লিখছে,সকালে পড়া যাবে,তার কাছে আর অন্তির কাছে দুটো আলাদা চাবি আছে,জাহিদ চিন্তা করতে লাগলো,আসলেই মশারী আনাটা জরুরী,আসলে মনে থাকে না।জাহিদ ঘুমিয়ে পড়লো।
জাহিদের যখন ঘুম ভাংলো,দেখলো,অন্তি তার হাতের উপর এসে শুয়ে পড়েছে,জানালা থেকে আবছা ভোরের সকাল সকাল রোদ আসছে,কি অদ্ভুদ সুন্দর,কান্না করায় অন্তির চোখে কাজল লেপ্টে গেছে,জাহিদ হাত লম্বা করে দিলো,অন্তি মাথা ঘষে আরো কাছে চলে এলো,জাহিদ আস্তে করে অন্তির মাথাটা সরিয়ে ড্রয়ার খুলে চিঠিটা পড়লো,লিপষ্টীকের চুমু দেখে হাসলো,তারপর লিখতে বসলো,
প্রিয় মশারী উম্যান,আমি খুবই সরি,আজ মশারী আনা হবেই,তুমি যদি ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চা বানিয়ে আমাকে ডাকো আমি খুবই খুশী হবো,আর তোমার জন্য কাল রাতে সিল্ক চকলেট এনেছিলাম,দেওয়া হয়নি,এখন রাখলাম,ভালোবাসি
,ভালবাসি,ভালোবাসি।
জাহিদ ঘুমের ভান করে পড়ে আছে,চোখ ফাটা ফাটা করে দেখছে,অন্তি ঘুম থেকে উঠলো,জাহিদের চুল সরিয়ে ড্রয়ারটা খুললো,আচ্ছা ড্রয়ারটার নাম অন্তি কেন কাঠগোলাপ রেখেছিলো অন্তিকে কখনো জিজ্ঞাস করা হয়নি,আজ জিজ্ঞাস করতে হবে,জাহিদ দেখছে,অন্তি সিল্ক চকলেটটা একটু খুলে পিচ্চি মেয়েদের মতন খাচ্ছে,আর জাহিদের চিঠিটা পড়ছে,অন্তির মুখটা হাসি হাসি হয়ে উঠছে, তারপর বাসি মুখেই রান্না ঘরে চলে গেল,জাহিদ ভাবতে থাকলো,মেয়েরা বড় অদ্ভুদ,ছোট একটা ভালবাসি শব্দতেই কত খুশী,এত অদ্ভুদ কেন এরা,যখন মন থেকে খুশী হয়,পুরো পিচ্চি বাচ্চা। জাহিদ চা বসানোর ঘ্রান পেলো,জানালা দিয়ে শীতের সকালের গাঢ় কুসুম কুসুম রোদ ঢুকছে,রান্না ঘর থেকে ভেসে আসছে চামচ নাড়ানোর টুং টাং টুং টাং,আধো আবছা রোদ রোদ ভালোবাসার সকাল জুড়ে জাহিদ শুনছে,অন্তি ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলার গুন গুন একই লাইন বার বার, বার বার,
তুমি রবে নিরবে,হৃদয়ে মম............
তুমি রবে নিরবে,হৃদয়ে মম............
তুমি রবে নিরবে,হৃদয়ে মম........
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×