ঘুমাচ্ছিলাম আরাম করে হঠাত ধাম করে একটা আওয়াজ শুনলাম,উঠলাম, দেখলাম, পানির জগটা পড়ে গেছে,গত তিন দিন ধরে এই কান্ড, কি অদ্ভুদ,মোবাইলে ঘড়ি দেখলাম, রাত ৩ টা,লাইট জ্বালালাম,নাহ কিচ্ছু নেই,লাইট নিভিয়ে বসে বসে ফেসবুক গুতাতে লাগলাম।হঠাত বুঝতে পারলাম কিছু একটা গলা জড়িয়ে রেখেছে,আমি তো ভয়ে মরেই যাই অবস্থা।
এসময়-
-এই ছবিতে লাইক মারো,কি কিউট মেয়ে,হি হি হিহহহহহহহহহহহহহ
িহ...
আমি বুঝতে পারছি না কই করবো,ভয়ে হাত পা পেটের মাঝে সেদিয়ে যাবার অবস্থা। আবারো-
-এই মেয়ে তোমার ফ্রেন্ড রেকুয়েষ্ট এপ্রুভ করে নাই,ওকে ব্লক মেরে দাও।
কিছু একটা কানের কাছে ফিস ফিস কড়ছে। আমি মনে মনে দোয়া দরুদ পড়ে শুরু করলাম।
-তুমি কি ভয় পাচ্ছো? (কোমল ফিসফিস)
-কে ?
-আমি
-আমি কে?
-আমি ভূত,সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে ভূতের বাচ্চা,আমার নাম ভুতুং।
এর ভেতর আমার ভয় মোটামুটি কেটে গেছে,বুঝতে পারছি যাই হোক,এ ক্ষতি করবে না।আমি ভুতুং এর সাথে কথা চালিয়ে যেতে লাগলাম।
-ভুতুং,ভূতেরা না নাকি গলায় কথা বলে?
-এ তোমাদের ভূল ধারনা,আমরা তোমাদের সাথে কথা বলি না আরকি, বাচ্চাদের সাথে কথা বলি,ওরা বোঝে দেখো না মাঝে মাঝে কেমন খিল খিল করে হাসে ওরা, আর তোমাদের মাঝে মাঝে ভয় দেখাই, তোমরা তো আমাদেরকেই বিশ্বাস করো না।
-আমার এখানে কিভাবে এলে?
-আরে আমি হারিয়ে গেছি,আমার বাবা কাকে যেন ভয় দেখাতে গেছে আমি তোমার এখানে ঘুরছিলাম,সমস্যা নাই আব্বা আসলে চলে যাবো,তুমি ভয় পাচ্ছো নাতো?
-নাহ
-তোমার নাম কি?
-অভি
যাই হোক,ভুতুং আমার সাথে থাকতে লাগলো,আমি মাঝে মাঝে ঘরে এসে দেখি ফ্যানে ঝুলে আছে,ও আচ্ছা আমি এখন ভুতুংকে দেখতে পাই,ভুতুং কিছুটা আবছা বেগুনী রঙ,খুবই বিরক্তিকর কালার, বেশীরভাগ সময় আমার গলা ঝুলে থাকে,পকেটে করে ঘোরে,রোদে বের হয় না,বলে গোলাপী হয়ে যাবে,গোলাপী হওয়া নাকি খুব খারাপ,ভূতেরা টিটকারী মারে,ও বন্ধু লাল গোলাপী বলে, আমি জিজ্ঞেস করি,ভুতুং কিছু খাবি? ও আচ্ছা,আমি এখন ভুতুংকে তুই করে বলি,ভুতুং বলে,আমরা তো ঘ্রান খাই,চলো ব্রোষ্টে চলো,তুমি খাবে,আমি ঘ্রান খাবো,আমি হতাশ হয়ে মানিব্যাগ হাতড়াই,আমি বলি,কেমন ভূত হলি আমাকে রসগোল্লামোল্লা কিছু এনে দিস না,ভুতুং বিরক্ত ভংগিতা মাথা নাড়ায়,বলে,আমি ভুত হতে পারি চোর নই।
ভালোই চলছিল,একদিন আমি ঘুমিয়ে আছি,হঠাত কারেন্ট চলে গেল,ভুতুং আমাকে জড়িয়ে কাদা হয়ে ঘুমাচ্ছে,বাচ্চা ভূত তো,বেশীরাত জাগতে পারে না,হঠাত বুঝতে পারলাম খাট নড়ছে,প্রবল ভাবে,লাইট জ্বালালাম,ফ্যানটা প্রবল ভাবে দুলে উঠলো,আমি ভুতুংকে ঠেলা দিলাম,ওঠ বেটা,কি হচ্চে এগুলো,ভুতুং চোখ কচলাতে কচলাতে বললো,আব্বা এসেছে,রেগে গেছে।
-চলে যাবি?
-হু
হঠাত সব খাট নাড়ানাড়ি বন্ধ হয়ে গেল।
-আব্বা আমাকে পিট্টি দিবে।
-কেন?
-মানুষের সাথে মেশা হারাম,কঠিন নিয়ম।
-কেন?
-মানুষেরা খারাপ,চোখের সামনে ক্ষতি করে।
-চল বাসায় চল ( হালকা গম্ভীর ফিসফিস,ভীতিকর ফ্যাসফ্যাসে)
-তোর বাবা আমার ক্ষতি করবে?
-নাহ
-চলে যাবি?
-হু
-চল তোকে এগিয়ে দেই।
-চলো
-আমি রাস্তায় বের হলাম,কি সুন্দর চাঁদ,আমি হাটছি ,আশে পাশের ল্যাম্পপোষ্টের বাতিগুলো নিভে যাচ্ছে,প্রবল জোছনায় সব কিছু কেমন নীরব,মনে হচ্ছে রাস্তাগুলো জোছনায় ভিজে গেছে,হঠাত ভুতুং আমার হাত ধরলো,বাচ্চা বাচ্চা হাত,শুকনো,ভুতুং আঙ্গুলে চিমটি দিয়ে বললো, যাই।
-যা,ভালো মতন খাওয়া দাওয়া করিস বেটা বুঝলি,ভুতুং আমার চুলে টান দিয়ে বুঝালো সে বুঝেছে।
-আমি আবার আসবো।
-আসিস, আমি চুপ হয়ে গেলাম, বিদায় সব সময় বিষাদের।
সা করে একটু বাতাস বইলো ,তারপর সব চুপ,লাইটগুলো জ্বলে উঠছে,বুঝলাম ভুতুং চলে গেল।
আমি বাসার দিকে হাটতে থাকি,রাস্তাগুলো জোছনায় ভেজা,বাসায় পৌছে দেখলাম,আমার টেবিল,দেওয়াল সব কিছুর কালার হালকা পেষ্ট থেকে ডীপ বেগুনী হয়ে বসে আছে,শালা ভূতের বাচ্চা ভূত, ধ্যাত।