somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিবির বিরোধী আন্দোলন 5

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৬ ভোর ৫:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্যাম্পাস আবার স্বাভাবিক হইয়া আসতে শুরু করলো কয়দিন পর। ছাত্র-ছাত্রীরা আবার ক্যাম্পাসে আসে...ক্লাসে যাওনের কথা ভাবে। বিকালে সাইজা গুইজা বাইর হয় চৌরঙ্গী মুখে কিম্বা প্রান্তিকে। শিবির ভীতি কাইটা যাইতে শুরু করলো যেন। এই অবস্থাটা আসলে আমরাও চাইতে ছিলাম। কারন ঐ ভীতি নিয়া আর যাই হোক রাজনৈতিক জনসংযোগ হয় না। হলে প্রতিরাতে তখনো পাহাড়া দেওনের ব্যবস্থা থাকলো কিন্তু উদ্যমের অভাবটা একদম তাকাইয়া ছিলো। নজর দিলেই চোখে পরে।
আমাদের কমরেডদের মধ্যেও দেখি ক্লান্তি চইলা আসছে। এই অবস্থায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি জরুরী মিটিং করতে বসলাম। ক্যাম্পাসে জোর গুজব শিবির নাকি আবার আক্রমণ করবো। আর এই উপলক্ষ্যে তারা একটা হিটলিস্ট করছে। যার মধ্যে ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সব ছাত্র কমরেডরা আছে। দেখলাম কয়জন এই গুজবে আসলেই বিচলিত...কিচ্ছু করার নাই। তয় ভয়াবহ লাগলো পরিস্থিতিটারে যখন কমরেডদের দেহে মনে আর কথায় প্রকাশ পাইলো অস্ত্র আর নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টা। ভীতি আসলে কখনোই যুদ্ধ কৌশল হিসাবে খুব ভালো না। ভয় মানুষকে আত্মরক্ষা করতে সহযোগিতার চাইতে বিভ্রান্ত করে বেশি। যাউগ্গা রফিক ভাই ঐ মিটিং এর পর খোকন ভাই, রকিব ভাই, সেবাদি আর আমার সাথে বসলেন। আমরা আবার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলাম। দেখলাম শিবিরের সাথে অস্ত্র নিয়া মুখোমুখি হইলে আমরা আসলে কি অর্জন করতে পারুম, আমাদের উদ্দেশ্য কি? নির্ধারিত লক্ষ্যই বা কি?
মিটিং শেষে সব হল থেইকা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সমস্ত বিস্ফোরক...বা অস্ত্র যা ছিলো সেইসব সরাইয়া নিয়া যাওনের সিদ্ধান্ত নিলাম। কমরেডরা প্রথমে পাইলো ভয়। তারপর তাদের এখন বুঝাও...আসলে আমাগো মূল সাংগঠনিক উদ্দেশ্য কখনোই এইটা না। বরং সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যেও আমাদের বক্তব্য এখন মতাদর্শিক হওয়া উচিৎ। যাতে শিবির যেই ধর্মভিত্তিক অবিজ্ঞানরে ছড়াইতে চায়, সেইটারে প্রতিরোধ করা যায়। অস্ত্র দিয়া এই বেড়াজাল তৈরী করা কখনোই সম্ভবপর না। আমাদের কমরেডরা শুরুতে একটু গাইগুই করলেও প্রায় সাথে সাথেই রিয়েলাইজ করতে পারছিলো আমাগো সাংগঠনিক অবস্থান।
রকিব ভাই আর আমি তখন স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে কাজ করি। আর এই স্কুলের ছাত্র দের নিয়া কাজ করতে গিয়া আমাদের দুইজনেরই গ্রাম আর নবীনগর-ধামরাই কেন্দ্রীক কিছু শিল্প এলাকায়ও যোগাযোগ তৈরী হইতেছিলো। আমরা দুইজন পালা কইরা গ্রামের কৃষক আর শিল্প এলাকার শ্রমিকদের মধ্যে যোগাযোগরে ধারাবাহিক কইরা তুলুম বইলা সিদ্ধান্ত নিলাম। শিবির আক্রমণ করার পর 1মাস পর আমরা যখন গ্রামে যাওনের পথে হাটতে শুরু করলাম...আমার সত্যিই সেইদিন ভয় করতেছিলো...শিবিরের ভিত্তি সম্পর্কীত সব গুজব গুলি মাথায় কাজ করতেছিলো। কিন্তু বডি ল্যাংগুয়েজে তার কোন প্রকাশ করা যাইবোনা বিধায় আমরা স্বাভাবিক ভাবেই হাইটা গেলাম আমাদের স্কুল কমরেড হাকিমের বাসায়। হাকিমের বাবা ডেয়ারী ফার্মে চাকরী করেন। ভোরে সে প্রতিদিন ই আমাগো হলের সামনে দিয়া বাইর হইতো। কিন্তু শিবির আক্রমণের পর থেইকা সে বিভ্রান্তি এড়াইতে অনেক দূরবর্তী একটা পথ দিয়া কাজের জায়গায় যায়। আমাগো দুইজনরে 1 মাস পর দেইখা সে আইসা আমাগো বুকে জড়াইয়া ধরলো। বসাইয়া মুড়ি আর খেজুড়ের গুড় খাইতে দিয়া কুশলাদি আদান প্রদান। প্রথমে আমাগো মধ্যে একটু হয়তো আড়ষ্টতা ছিলো কিন্তু খানিক্ষণ পরেই সব কাইটা জল।
আমার মনে আছে ঐ সময় আমরা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিভিন্ন দৃষ্টি ভঙ্গী নিয়া কথা বলতে শুরু করলাম। একজন খাইটা খাওয়া মানুষের রাজনৈতিক উপলব্ধি যে সমাজের প্রিভিলেজড অংশের চাইতে কতোটা আগাইয়া থাকা সেইটা এক্কেরে অন্তর দিয়া বুঝছিলাম আমি। আজো মনে পরে হাকিমের বাবা, তার নামটা আমি ইতিহাসের নিষ্ঠুরতায় ঠিক এই সময়ে মনে করতে পারতেছিনা...কিন্তু তার কথা গুলি এখনো আমার কানে ভাসে...'বলছিলো ভাইসাব ধর্ম আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার...এইটার লেইগা তো মুক্তিযুদ্ধে যাই নাই...যুদ্ধ করছিলাম নিজের দেশের মাটিতে স্বাধীন মতো চলতে ফিরতে পারনের লেইগা...ভাবছিলাম যুদ্ধ শেষে সব পামু কিন্তু সব পাওনের স্বপ্ন এখন আর নাই, সব ভাইঙ্গা গেছে...কিন্তু তাই বইলা আশা ছাইড়া দেই না। হাকিম আমারে আপনেগো কথা বলে মাঝে মাঝে...আপনেরা আইসেন ...শিক্ষিত মানুষের কথা শুনলে মনটা ভালো হয়...'। তারপর থেইকা আমরা প্রতি সপ্তাহে একদিন পর একদিন যাইতাম গেরুয়া গ্রামে। বটগাছের ছায়ায় বসতাম। মানুষের অভিজ্ঞতার কথা শুনতাম। জীবন যাপনের কথা শুনতাম...
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৪২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

NVR (No Visa Required) এর জন্য জেনে রাখা দরকার

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৯
×