সৌতির প্রতি শৌনকাদির ঋষিগণের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা।
শৌনকাদি মুনিগণ নৈমিষকাননে।
দ্বাদশ বছর যজ্ঞ করে একমনে॥
লোমহর্ষণ-তনয় সৌতি নামধর।
ব্যাস-উপষেদশে সর্ব্বশাস্ত্রেতে তৎপর॥
ভ্রমিতে ভ্রমিতে গেল নৈমিষকাননে।
শৌনাকদি মুনি যজ্ঞে রত যেইখানে॥
মুনিগণে প্রণমিল সূতের নন্দন।
আশীর্ব্বাদ করি সবে দিলেন আসন॥
সৌতি দেখি সকৌতুকে কন মুনিগণ।
কোথা হ’তে হৈল সৌতি, তব আগমন॥
কোথায় বা এতকাল করিলা যান।
সবিস্তারে কহ, সবে করিব শ্রবণ॥
মুনিগণ-প্রশ্ন শুনি সূতের কুমার।
সবিনয়ে করপুটে কহেন বিস্তার॥
মহারাজ জন্মেজয় পরীক্ষিৎ পুত্র।
সর্পকুল-বিনাশার্থে কৈলা সর্প-সত্র॥
সেই যজ্ঞে মুনিশ্রেষ্ঠ শ্রী বৈশম্পায়ন।
ব্যাস-বিরচিত কথা করান শ্রবণ॥
বিস্তারে শ্রবণ করি ভারত-আখ্যান।
যাহার শ্রবণে নর পায় দিব্যজ্ঞান॥
নানা তীর্থ পর্য্যটন করি অবশেষে।
উপনীত হইয়াছি তোমা সবা পাশে॥
সূয্যাগ্নির সম তেজ তোমা সবাজনে।
ব্রহ্মরূপে অবতীর্ণ নৈমিষকাননে॥
ধর্ম্ম-ইতিহাস কিংবা পুরাণ-কাহিনী।
শ্রবণে মানস কিবা, কহ মহামুনি॥
আদেশ করুন, আমি করিব কীর্ত্তন।
যাহার শ্রবণে স্বর্বপাপ বিমোচন॥
সৌতির বচন শুনি কন মহামুনি।
তব তাত সূত ছিল সর্ব্বশাস্ত্র-জ্ঞানী॥
নানাচিত্র বিচিত্র কথন পুরাতন।
সূতমুখে বহু শাস্ত্র করেছি শ্রবণ॥
তাঁর পুত্র তুমি হে, জিজ্ঞাসি সেকারণ।
কি জাহ, কহ তুমি, করিব শ্রবণ॥
ভৃগুবংশ সমুৎপন্ন হইল কিমতে।
বিস্তার করিয়া কহ সবার অগ্রেতে॥
সৌতি বলে, অবধান কর মুনিগণ।
কহিব বিচিত্র কথা ব্যাসের বচন॥
ব্রহ্মার নন্দন হৈল ভৃগু মহামুনি।
পুলোমা নামেতে কন্যা তাঁহার গৃহিণী॥
গর্ভবতী পুলোমায় রাখি নিজঘরে।
ভৃগু মহামুনি গেল স্নান করিবারে॥
হেনকালে আসে তথা দৈত্য মহাকায়।
গুরুপতœী হরিবারে মনন করয়॥
কামেতে পীড়িত চিত্ত, নাহি অন্য ভয়।
কন্যা দিল ফল-মূল, কিছু নাহি লয়॥
বলেতে ধরিব বলি বিচারিল মনে।
গৃহে প্রবেশিতে দেখে দীপ্ত হুতাশনে॥
অগ্নিপানে চাহি বলে দানব দূরন্ত।
কহ বৈশ্বানর, তুমি জান আদি অন্ত॥
ইহার জনক পূর্ব্বে বরিলেক মোরে।
বিবাহ না নিয়া মোরে দিলেক ভৃগুরে॥
মিথ্যাবাদী ভৃগু নাহি করিল বিচার।
বিভা করি আনে কণ্যা বরণ আমার॥
মিথ্যা না কহিও তুমি কহ সত্যবাণী।
ন্যায়েতে এ কন্যা হয় কাহার গৃহিণী॥
দানবের বাক্য শুনি অগ্নি হৈল ভীত।
কেমনে কহিবে মিথ্যা, হইল চিন্তিত॥
সত্য কৈলে কন্যা লৈয়া যাইবে দানব।
ভাবিয়া তাহার প্রতি বলে জলোদ্ভব॥
জামি আমি, পূর্ব্বে তুমি পুলোমা কন্যায়।
বরণ করেছ, তাহা মিথ্যা কভু নয়॥
কিন্তু বিধিমতে তব বিভা না হইল।
তেঁই এ কন্যার পিতা ভৃগুরে অর্পিল॥
বিধিমন্ত্র পাঠ করি আমার গোচর।
বিবাহ করিল কন্যা ভৃগু মুনিবর॥
তথাপি ন্যায়েতে কন্যা তোমার ঘরণী।
কহিলাম সত্যকথা যাহা আমি জানি॥
অগ্নির বচন শুনি দানব দুর্ব্বার।
নিমিষে ধরিল এক ভীষণ আকার॥
বলে ধরি কন্যা লয়ে চলিল তখন।
ভয়েতে বিকলা কন্যা করয়ে রোদন॥
গর্ভেতে আছিল পুত্র ভৃগুর ঔরসে।
রাক্ষসের অত্যাচারে তবে মহারোষে॥
দ্বিতীয় সূর্য্যরে প্রায় হইল বাহির।
বিখ্যাত চ্যবন নামে সেই মহাবীর॥
দৃষ্টিমাত্রে ভৃগুপুত্র দানব-দুর্ব্বার।
সেই দণ্ডে ভস্মীভূত কৈল একেবারে॥
ভৃগুর ঘরণী কোলে করি নিজ-সুতে।
আশ্রমে চলিল তবে কাঁদিতে কাঁদিতে॥
হেলকালে তথল আইল পদ্মযোনি।
ক্রন্দন নিবৃত্ত কৈল বলি প্রিয়বাণী॥
ক্রন্দনে বহিল অশ্র“জল পুলোমার।
তাহাতে জন্মিল নদী আশ্চর্য্য ব্যাপার॥
দেখিয়া বিস্ময়চিত্ত হইলেন বিধি।
নাম তার রাখিলেন বধূসরা নদী॥
বধূকে রাখিয়া গৃহে গেল প্রজাপতি।
পুত্রকোলে করিয়া আছয়ে দু:খমতি॥
হেনকালে স্নান করি এল ভৃগু তথা।
জিজ্ঞাসিল, কেন তব চিত্ত-বিরসতা॥
স্বামীরে দেখিয়া কন্যা করিয়া রোদন।
কহিলেক যতেক দানব-বিবরণ॥
তোমার তনয় এই কৈল প্রতিকার।
দানবে মারিয়া মোর করিল উদ্ধার॥
এত শুনি পুনঃ ভৃগু হেতু জিজ্ঞাসিল।
কি কারণে দানব ধরিয়া তোরে নিল॥
কন্যা বলে আচম্বিতে আসি দুষ্টমতি।
আমাকে দেখিয়া জিজ্ঞাসিল অগ্নিপ্রতি॥
বৈশ্বানর-বাক্যে মোরে হরিল দুর্জ্জন।
শুনিয়া হইল ভৃগু ক্রোধে অচেতন॥
আজি হৈতে সর্ব্বভক্ষ্য হও হুতাশন।
বলিয়া শাপিল তেজে তবে তপোধন॥
ত্রাসিত অনল শুনি ভৃগুর বচন।
সকাতরে দ্বিজবরে করে নিবেদন॥
কোন দোষে ভৃগুমুনি, শাপ দিলা মোরে।
বলিলাম যাহা জানি, তাহ দানবেরে॥
জানিয়া শুনিয়া মিথ্যা বলে যেইজন।
ইহকালে কুৎসা, অন্তে নরকে গমন॥
উভয় সপ্তমকুল নরকে প্রবেশে।
জানিয়া আমারে শাপ দিলা বিনাদোষে॥
মোর মুখে দিলা তৃপ্তি দেব-পিতৃগণ।
অনুচিত শাপ মোরে দিলে কি কারণ॥
এত বলি বৈশ্বানর দেবগণ লৈয়া।
ব্রহ্মারে সকল কথা নিবেদিল গিয়া॥
ব্রহ্মা বলে, অগ্নি, দুঃখ না ভাবিহ মনে।
সকল হইবে শুদ্ধ তোমার কারণে॥
ব্রহ্মার বচনে অগ্নি সন্তুষ্ট হইয়া।
পুনরপি জগতেতে ব্যাপিল আসিয়া॥
ভারত-পঙ্কজ-কবি মহামুনি ব্যাস।
পাঁচালী-প্রবন্ধে কহে কাশীরাম দাস॥
কাশীদাসী মহাভারত -০১
আলোচিত ব্লগ
গরমান্ত দুপুরের আলাপ
মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজীব নূর কোথায়?
আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=
©কাজী ফাতেমা ছবি
মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।
হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।
ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে
ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন