গতকাল বিকেলে আমার আর মার্কেট এ যাওয়া হল না। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বেশ কয়েকবার কফি খেলাম। সারারাত আর ঘুম হল না। সকালে যখন গভীর ঘুমে আমি প্রায় মরার মত, সে সময় দেখি নাকে মুখে সুরসুর করছে। আমার কিছুতেই নড়তে ইচ্ছে করল না। এরপর দেখি প্রচন্ড ঝাঁকুনি।
চোখ বন্ধ করেই বললাম, ধুর যন্ত্রনা করিস না তো। যা ভাগ।
আমি জানি এই কাজটা করে আমার ফুফাত বোন মনি। আমি তো কি পাতলা, ও আরও পাতলা। ফুঁ দিলে নড়ে। সবাই আমাকে বলে ফুলমনি আর ও কে বলে হাফমনি।
ও এত সকালে কেন আসল বুঝলাম না। মা কি ওকে সব বলে দিয়েছে। কি জানি বলুক গে। মনি হল নাছড় বান্দা। যে টা মাথায় একবার ঢোকে সেটা করে দম। এখন ওর মাথায় ঢুকেছে মেহেদী দেবে। কানের কাছে ভন ভন করছে।
চোখ বন্ধ করেই বললাম, তোর পায়ে পড়ি, এখন বিরক্ত করিস না।
কিন্তু মনি কে আমি চিনি। সে আমাকে জ্বালিয়ে মারবে। আমার মুখের গন্ধ পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম গন্ধ। এখন এটা দিয়ে যদি মিনিট দশেকের মত ওকে সরান যায়, তাহলে রক্ষা। দশ মিনিট অনেক সময়। হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে ওর মুখের কাছে মুখ নিয়ে দিলাম একটা হা। আর যায় কই। কাজ হল। মনি ওয়াক ওয়াক করে ভাগল।
কিছুক্ষন পর চা বানিয়ে আনল। আমার এই বোনটার দুটো গুন। একটা হল সে খুব দারুণ চা বানাতে পারে। অন্যটা হল সে যেটা ধরে সেটা শেষ করে ছাড়ে।
মনির চা'র গন্ধেই বিছানা ছাড়লাম। দাঁত ব্রাস ছাড়াই চা খাওয়া শুরু করলাম। কারণ ব্রাস করতে গেলে চা ঠান্ডা হয়ে যাবে। আর ঠান্ডা হলে চা'র স্বাদ পাব না।
এরপর শুরু হল মনির বকবকানি। আমার সে দিকে খেয়াল নেই। আমি চা'র কাপটা নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুকছি। মাঝে মাঝে যা কানে আসল তা হল, ও আজকে মেহেদী দেবে, আমাকেও দিয়ে দেবে। পায়ে চা পাতি রং দেবে। এখন আমাকে নঁকশা আঁকতে হবে। আর বিকালে সে আমাকে নিয়ে কিছু কেনাকাটি করবে।
কেনা কাটির কথা মনে হতেই কালকের কথা মনে পড়ল। ভেতরটা কেমন জানি করে উঠল। মনি আপুর হাত থেকে খালি কাপ নিয়ে ডাইনিং স্পেসে গেলাম।
মনি আপুকে ঠিক কবে থেকে নাম ধরে ডাকি মনে নেই। ও আমার চে এক বছর সাত মাসের বড়। তাই কখনও মনিআপু কখনও মনি বলে ডাকি, ঠিক নেই। এক সাথে বড় হলে যা হয়, সে রকম আর কি।
(চলবে ৬)
২০০০ এ ডাইরী পর্ব ৭