somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা ভালো কাজ হাজার ভালো কাজের জননী

১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

..
নওগাঁর প্রাক্তন এসপি মোজাম্মেল হক।
মন ভাল হয়ে যাওয়া এক কাহিনী। পড়ে
দেখুন প্লিজ। পবিত্রতায় ভরে যাবে মন।
আশায় বুক বাঁধি। আলো আসবে একদিন
ইনশাআল্লাহ। চোখ দুটো ভিজে গেল।
"ভর দুপুরে একজন বৃদ্ধ দোকানে এসে
বললেন, ‘একটা কেক দাও তো মিয়া
ভাই!’ দুপুরটা রোদে খঁ-খাঁ করছে। এমন ভর
দুপুরে একটা মানুষ কেক খাবে?
ব্যাপারটা খটকা লাগলো! সহজ কঠিন সব
ব্যাপারেই পুলিশের খটকা লাগে!
এটা স্বাভাবিক!
‘চাচা মিয়া, দুপুরবেলা কেক খান
ক্যান?’
‘বাবারে, হোটেলে খাওনের ট্যাহা
নাই! কেকটা খায়া প্যাট ঠান্ডা করি!’
‘প্রতিদিন খান কই?’
‘বাড়িতে! কিন্তু দুপুরে যাওন যায় না।
মালিকের হুকুম। আধাঘন্টার মইধ্যে
দুপুরের খাওন শ্যাষ করন লাগবো! ইট
ভাটার কাম খুব কড়া! বেশি কড়া
ভাটার মালিক!’
‘তো বাড়িতে খেয়ে আসেন!’
‘নারে বাপ! যাইতে আইতে রিকশা
ভাড়া লাগে। আবার আধাঘন্টায়
কুলানো যায় না!’
আমি আশ্চর্য হলাম। এভাবে একটি বৃদ্ধ
কাজ করবে অথচ দুপুরে কেক দিয়ে পেট
ঠান্ডা করবে- বিষয়টি অদ্ভুত ! একটু
আগেই আমি খেয়েছি। বৈষম্যের
প্রাচীর ভেদ করে খাবারটুকু পেট
থেকে বমি হয়ে বের হতে চাইছে!
বললাম, ‘চাচা চলেন আমার সাথে!’
তিনি ভয় পেয়ে গেলেন! ভয়ার্ত
চোখে তাকিয়ে বললেন, ‘স্যার কই
নিয়া যাবেন?’
আমি বললাম, ‘স্যার বলতে হবে না!
আমি আপনার সন্তানের মতো। চলেন!’
রেস্টুরেন্টে লোকজন ভর্তি! পাশ
থেকে একজন বলছে, ‘শালার পুলিশের
ধর্ম নাই! বুড়া লোকটারে নিয়া যায়
কই?’ আমি শুনলাম। না জেনে হুটহাট করে
মন্তব্য করা একদল মানুষ আছে! এরা এই
দলের। মাথা গরম করলাম না। ছোটখাট
বিষয়ে মাথা গরম করা পুলিশের
বৈশিষ্ট্য না।
হোটেলের এক কোনায় বৃদ্ধ চাচাকে
বসালাম। চাচা ভয়াবহ দৃষ্টিতে
তাকিয়ে আছেন। এতোটা অবাক হয়তো
জীবনে কখনো হন নি। আমি জিজ্ঞেস
করলাম, গরু খাবেন না মুরগী?
গরুর কালো ভুনা। সাথে শসার সালাদ।
লেবুর টুকরাকে চিপে চিপে সব রস বের
করে দুই প্লেট ভাত খেলেন বৃদ্ধ! আমি
মুগ্ধ হয়ে তার খাওয়া দেখছি!
পৃথিবীতে এত সুন্দর দৃশ্যও থাকতে
পারে।
হোটেলের ম্যানাজার আসলেন।
বললেন, স্যার কোল্ড ড্রিংস দিব?
আরসি? সেভেন আপ? আমি জবাব
দিলাম না। রেস্টুরেন্টের
ম্যানাজাররা সাধারনত ক্যাশ টেবিল
ছেড়ে একচুলও এদিক-ওদিক হন না। আর
তিনি আমার কাছে এসে সেভেন আপ
অফার দিচ্ছেন! ব্যাপারটা আমার
কাছে খটকা লাগলো! ছোট খাট
ব্যাপারও পুলিশের কাছে খটকা
লাগে! এটা স্বভাবিক!
আমার নিরুত্তর তাকে চলে যেতে
বাধ্য করলো। হয়তোবা আরও কিছুক্ষণ
থাকতো। ক্যাশে টাকা দিতে গিয়ে
বাধলো বিপত্তি! ম্যানাজার আমার
টাকা নিবেন না! আশ্চর্য তো! জানতে
চাইলাম টাকা নিবেন না কেন?
ম্যানাজার খুব গুছিয়ে কথা বললেন,
‘সেবাই মানুষের ধর্ম! তো আপনি একাই
সেবা করে ধর্ম করবেন, আমি করবো না?’
বললাম, বুঝি নি! সোজা বাংলা
ভাষায় কথা বলো! পেচিয়ে কথা
বলার জন্য বাহান্নতে রক্ত দেয় নি
জব্বার রফিকরা!
ম্যানাজার সহজ ভাষায় বললেন, বৃদ্ধ
চাচাকে আপনি খাওয়াতে নিয়ে
এসেছেন। সুন্দর কাজ। এবার আপনার সুন্দর
কাজে আমিও যোগ দিলাম। দেড়শ
টাকা বিল নিবো না। হোটেল
মালিককে আমি টাকাটা দিয়ে দিব।
আমি বললাম, তা কি করে হয়? আমি
এনেছি!
ম্যানাজার বললেন, আমাকে কি
তাহলে ভাল কাজ করার সুযোগ দিবেন
না?
এবার আমি হেরে গেলাম। কিছু হার
মধুর! আনন্দের! হেরে গেলে জিতে
যায় মানবতা! একটি সুন্দর কাজ আর একটি
সুন্দর কাজের জন্ম দেয়!
রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলাম একটি
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। পৃথিবীটা
আরও কিছু দিন বেঁচে থাকুক। হাজার
কোটি বছর টিকে আছে এদের মত
ভালো মানুষগুলির জন্যই! এই মানুষগুলির
পায়ের স্পর্শ আছে বলেই, মনে হয়
পৃথিবীটা অবিরাম ঘুরছে। তা না হলে,
এত বড় সূর্যের চার পাশে ঘুরতে ঘুরতে
ক্লান্ত হয়ে যেত।
বৃদ্ধ চাচাকে তার কর্মক্ষেত্রে ফিরতে
হবে। ভরপেটে খেয়ে এই ভরদুপুরে হেটে
গেলে তিনি কাজ করতে পারবেন না।
একটা রিকশা ডাকলাম। ভাবলাম, একটু
দরকষাকষি করে দশ-বিশ টাকায়
রিকশাটা ম্যানেজ করে দিই!
রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম,
ভাড়া কত?
রিকশাওয়ালা যা জবাব দিল তার জন্য
মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। সে
জানালো, ভাড়া লগবো না স্যার!
বুড়া মানুষ যাইবো! আমি ভাড়া নিমু
না, স্যার! বহুত কামাই করছি!
মনে হল অদৃশ্য কেউ একজন আমার শার্টের
কলার চেপে ধরে গালে একটা চটাস
করে থাপ্পড় দিয়ে শাসাচ্ছে; ব্যাটা
ভাড়া কমানোর জন্য দরকষাকষির
চিন্তা করিস? মানুষ চিনলি না?’
চিলের মত ছোঁ মেরে রিকশাওয়ালা
বৃদ্ধাকে নিয়ে গেল! রিকশা চলছে!
চলন্ত চাকার দিকে হা করে তাকিয়ে
আছি। এই মহান মানুষ গুলোর পায়ের
স্পর্শে এই পৃথিবীটা রিকশার চাকার
মত ঘুরছে। মনে হল মানুষ মরে যাচ্ছে;
মানবতা বেচে আছে। হিসেবের
খাতা খুলে হিসেব করলাম, একটি সুন্দর
কাজ দুইটি সুন্দর কাজের জন্ম দেয়!
আমি ইট ভাটার মালিক কে ফোন
দিলাম। থানার দারোগা পরিচয়
দিয়ে বললাম, ‘আপনার ইট ভাটার
শ্রমিকদের দুপুরে খাবার সময় কম দেন
কেন? বেতনও নাকি কম দেন?’
‘স্যার! স্যার!’
‘আরে মিয়া স্যার স্যার করেন কেন?’
‘জ্বি স্যার! জ্বী স্যার!’
‘ভাটার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিব?’
‘না স্যার! না স্যার! দেইখেন কালকেই
সব ঠিকঠাক করে দিব!’
আমি ফোন রেখে দিলাম। খুব অল্প সময়ে
খুব অল্প চেষ্টায় কিছু কিছু অধিকার
এনে দিতে পারি। চাইলেই হয়; কষ্ট
করতে হয় না! নতুন করে হিসেব করলাম;
একটি ভালো কাজ তিনটি ভালো
কাজের জন্ম দেয়!
‘স্যার! স্যার!’
পিছনে তাকিয়ে দেখি রেস্টুরেন্টের
ম্যানাজার! কাছে এসে একটি মুচকি
হাসি দিল। বললো, স্যার আপনাকে
খবরটা জানাতে আসলাম। আমি অভিভূত
হলাম। রেস্টুরেন্টের মালিক তার
ম্যানাজার কে আজকের বিতর্কিত
বিলটি পাশ করাতে দেন নি। বৃদ্ধ
চাচার দুপুরের খাবারের টাকা
মালিক ম্যানাজারের কাছ থেকে
নেন নি! বরং মালিক তার
ম্যানাজারকে ধন্যবাদ দিয়েছে!
বেতনও বৃদ্ধি হয়েছে! বেচারা
ম্যানাজার আনন্দে আপ্লুত!
বিকেল হয়ে এল! ক্লান্ত সুর্য ঢলে পড়ছে
দিগন্তে! যেন লুকাতে চাইছে! অবসর
চাইছে! সারাদিনের ক্লান্তি
কাটাতে সে সারারাত ঘুমাবে!
আমার ডিউটি আপাতত শেষের দিকে।
থানায় ফিরবো। ফোর্স গাড়িতে
উঠলো। আমি হিসেবের খাতা ছুড়ে
ফেলে দিলাম। ফলাফল মুখস্ত। দিন
শেষে হিসেব হল, একটি সুন্দর কাজ
আরেকটি সুন্দর কাজের জননী!
‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’- বলে চীৎকার
করা একদল মানুষকে আজ খুব খুঁজতে ইচ্ছা
করছে। বলতে ইচ্ছা করছে,”দ্যাখ ব্যাটা!
মানবতা আজও মরে নি! মানুষ মরে;
মানবতা মরে না; মানবতা বেঁচে
থাকে! তোমরাই তাকে খুঁজে পাও
না…!”
দোয়া করা ফরজ এই মানুষটির জন্য।
পাথেয় হোক তিনি আমাদের সবার
জন্য।
(True story...cltd)
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×